পাখিদের বাসা তৈরির তরুণ নায়ক

, ফিচার

মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 23:14:31

তিনি বাড়ি তৈরি করেন। তবে পাখিদের জন্য। ফার্ম হাউসে লক্ষ্মীপেঁচাদের 'নেস্ট বক্স' তৈরি করে 'পাইলট প্রজেক্ট' বানিয়েছেন। পাখিদের নিরাপদ আবাস দিতে চান তিনি।

কেন এমন অদ্ভুত উদ্যোগ? কারণ, নগরায়ণের ফলে গাছের সংখ্যা দিন-দিন কমছে। প্রকৃতি ভারসাম্য হারাচ্ছে। ঘরহারা হচ্ছে পাখিরা। চড়াই, শালিখ, বুলবুলিকেও এখন সহজে দেখা যায় না। অন্যান্য পাখির সংখ্যাও কমছেই। পাখিদের জীবনে এমন অচলায়তনের মধ্যে তিনি এগিয়ে এসেছেন এক তরুণ।

তার কাজ প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি ভারতের গুজরাট রাজ্যের হিন্দোল আহমেদ। থাকেন চণ্ডীতলার আঁইয়া পঞ্চায়েতের আঁকুনি গ্রামে। সেই গ্রামে পাখিদের জন্যও নিজস্ব ‘বসত’ রয়েছে। নানান আকৃতির কাঠের বাক্স দিয়ে তৈরি সেই সব ঘরে টিয়া, কুঠুরে পেঁচা, লক্ষ্মীপেঁচা, বসন্তবৌরি, কাঠঠোকরা, দোয়েল, শালিখ খেলে বেড়ায়। এখানেই এখন সংসার পেতেছে তারা। সকালে বের হলেও ঠিক সন্ধ্যা হওয়ার আগে ফিরে আসে তারা। ঘরগুলি সব নিজ হাতে গড়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন হিন্দোল।

শুধু বাড়ি নয়, পাখি নিয়ে নানান ওয়ার্কশপও চালান হিন্দোল, যাতে গৃহস্থালির নানা পরিত্যক্ত জিনিস দিয়ে এমন পাখির বাসা তৈরি শেখানো হয়েছিল। এতে শামিল হয়েছিল সাতটি স্কুলের ৫০ জন পড়ুয়াও। পক্ষী বিশারদ হিন্দোল আহমেদের সঙ্গে সেদিন উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান বন বিভাগের আধিকারিক কাজল ঘোষ, শিক্ষা সেবা ফাউন্ডেশনের সদস্য ওয়েসি সিংহ রায়, পশু চিকিৎসক মুর্শিদ আলি প্রমুখ। ওয়ার্কশপে প্লাস্টিকের বালতি, কাগজ বা কাঠের বাক্স দিয়ে বাসা তৈরির সহজ পদ্ধতি শেখানো হয় পড়ুয়াদের। এককথায় হাতেকলমে পাখির বাসা তৈরি শেখানো হয়েছিল সেই ওয়ার্কশপে।

হিন্দোলের কাজের পেছনে রয়েছে পরিবেশচিন্তা। যেহেতু নগরায়ণের ফলে গাছ কমায় পাখি তার বাসস্থান হারাচ্ছে এবং প্রতিদিন আধুনিক নকশার বাড়ির দাপটে মাটির বাড়ি হারিয়ে যাচ্ছে। সেহেতু পাখিরা বাসা করার জায়গা পায় না এই আধুনিক নকশার কংক্রিটের বাড়িতে।

হিন্দোল মনে করেন, কৃত্রিম বাসা তৈরি করে গাছ ও বাড়ির দেওয়ালে ঝুলিয়ে দেওয়া হলে পাখিরা থাকতে পারবে। বংশবৃদ্ধি হবে তাদের। পরিবেশে পাখির সংখ্যা বাড়বে। আর এটাই হিন্দোলের উদ্দেশ্য। স্কুল পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পাখির বাসা তৈরি হোক, এমনটা চান তিনি। কৃত্রিম বাসাগুলি গাছের ডালে, উঁচু বাড়িতে কিংবা স্কুলের দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখার কৌশল শেখানোর লক্ষ্যই তাঁর।

বন্যপ্রাণ নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থার সদস্যও হিন্দোল আহমেদ। পাখিদের পছন্দমতো কাঠ ও কাগজের বাক্স দিয়ে এমন সব বাসা তিনি তৈরি করেন পাখির আকার অনুযায়ী। বাজার থেকে এর জন্য ফলের বাক্স কিনে আনেন। এরপর হাতুড়ি, ফিতে, বাটালি দিয়ে সহজেই তৈরি করে ফেলেন বাসগুলি।

১২ বছর ধরে নিরলসভাবে এই কাজ করে চলেছেন হিন্দোল। অনন্য এই কাজের স্বীকৃতিও মিলেছে। তাখে শ্রমজীবী হাসপাতাল তুলে দিয়েছে 'সুদক্ষিণা লাহা স্মৃতি পুরস্কার'। স্মারক ছাড়াও তাকে দেওয়া হয়েছে নগদ ২৫ হাজার টাকা। পুরস্কারের অর্থমূল্য পাখিদের সংরক্ষণে খরচ করেছেন হিন্দোল।

নগরায়নের থাবায় বহু পাখিই যখন 'ঘর'-ছাড়া, হিন্দোল তাদের ফিরিয়ে আনছেন স্বগৃহে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর