পাতার সবুজে মিশে থাকে ‘সোনাকপালি-হরবোলা’

, ফিচার

বিভোর বিশ্বাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 01:35:17

চা বাগানের বাঙলোগুলো গাছগাছালিতে পূর্ণ। তার কোনো একটিতে দুপুর নির্জনতা। উত্তাপ নিয়ে দীর্ঘতর হচ্ছে দুপুর। ধেয়ে আসা বাতাসের দেখা নেই। গরম তার সীমাকে অতিক্রম করেছে তখন।

একটু স্বস্তির জন্য খোলা বারান্দায় আসতে অদূরের ডাল কেঁপে কেঁপে ওঠে। সেই সাথে মধুর ডাকও। কৌতুহলি চোখ ওদিকে তাকাকেই কিছুই তেমন দেখা যায় না; কেবল গাছের পাতা-ডালগুলো নড়ে ওঠা ছাড়া। রহস্যে ঢাকা সময় গাড়ায়। বস্তুটিকে দেখার আগ্রহ ক্রমশই অদম্য হচ্ছে!

কিছুক্ষণ পরে ঘনপাতাময় স্থান থেকে শুনকো ডালে গিয়ে বসতেই রহস্য উন্মুচন হলো। সে আর কেউ নয়; সবুজের মাঝে মিশে থাকা এক সবুজময় পাখি। তার নাম ‘সোনাকপালি-হরবোলা’। অবশ্য তাকে ‘সোনাকপাল পাতাবুলবুল’ও বলা হয়ে থাকে। ইংরেজিতে তাকে Golden-fronted Leafbird এবং তার বৈজ্ঞানিক নাম Chloropsis aurifrons।

এরা আমাদের দেশের ‘সুলভ আবাসিক পাখি’ ঠিকই। তবে প্রায়শই পাতার সবুজে মিশে থাকে বলে তাকে গাছের ডালে শনাক্ত করা কঠিন।

ক্লান্ত হয়ে গাছের উঁচুডালে বসে আছে এই পাখিটি। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বলেন, এরা Chloropsis গণের পাখি। পৃথিবীতে ৮ প্রজাতির মধ্যে আমাদের দেশে যে ৩টি প্রজাতির পাওয়া যায় তার মধ্যে ‘Golden-fronted Leafbird’ একটি। এরা ছোট আকারে বৃক্ষচারী পাখি। দেহ প্রধানত সবুজ। ঠোঁট সরু ও বাঁকা।

তিনি আরো বলেন, তাদের ঠোঁটের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- ফুলের মধু সহজে খাওয়া জন্য তাদের ঠোঁটের আগায় উপযোহী খাঁজ থাকে। তাদের নাকে ছিদ্র ডিম্বাকার। ডানগুলো গোলাকার ও পা ছোট। 

পাখিটির স্বভাব ও খাদ্য তালিকা সম্পর্কে ইনাম আল হক বলেন, ‘Golden-fronted Leafbird’ গুলো চিরসবুজ ও পাতাঝরা বন এবং বৃক্ষবহুল অঞ্চলে বিচরণ করে। এর একা থাকে না; তবে জোড়া বা ছোট দলে বিচরণ করে। গাছের ঘন পাতা বা উঁচু বনে এরা খাবার খায়। তাদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে- নানান জাতের পোকা, ফুলের মধু ও রসালো ফল।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো- তাদের গলায় সুমিষ্ট সুর রয়েছে। এরা মাঝে মাঝে এরা অন্যপাখির ডাক অনুকরণ করে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, চীনসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

জানুয়ারি-আগস্ট ‘Golden-fronted Leafbird’দের প্রজনন মৌসুম। তখন এরা বনের সুবিধাজনক গাছগুলোর ডালে ঘাস, পাতা ও শেওলা মাকড়সার জাল দিয়ে বেঁধে হালকা বাটির মতো বাসা বানিয়ে দুটি থেকে তিনটি ডিম পাড়ে বলে জানান প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর