জাবি ক্যাম্পাস জুড়ে আগুন রঙা কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য

, ফিচার

আব্দুল্লাহ আল নোমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা) | 2023-09-01 20:14:40

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশে সারি সারি কৃষ্ণচূড়া গাছ। বসন্তের শেষে গ্রীষ্মের শুরুতে আকাশকে আবির রঙা করে ফোটে কৃষ্ণচূড়া, আর বাতাসে ভাসে তার পাপড়ি। ঢাকার অদূরে সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাস জুড়েই আগুন রঙা সেই কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য আলো ছড়াচ্ছে। গাছে গাছে নয়ানভিরাম রাঙা ফুলের মায়া। দূর থেকে দেখলে মনে হবে গাছগুলোতে আগুন লেগেছে, কাছে গেলে চোখ আটকে থাকে রক্তিম আভার ফুলের সমাহারে। গাছের নিচে অজস্র ঝড়াপাপড়ি যেন বিছিয়ে রাখে লাল গালিচা।

দূর থেকে দেখলে মনে হবে গাছগুলোতে আগুন লেগেছে

সবুজ জাবি চত্বরে গাঢ় লালের বিস্তার যেন বাংলাদেশের সবুজ প্রান্তরে রক্তিম সূর্যের প্রতীক আর বাংলাদেশের জাতীয় পতাকারই প্রতিনিধিত্ব করছে। অনিন্দ্য সুন্দর বাংলাদেশের মধ্যে এ চত্বর যেন এক টুকরো বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি। কৃষ্ণচূড়া যেন সূর্যের সবটুকু উত্তাপকে শুষে নিয়ে সৌন্দর্যের এক অভিনব উত্তাপ ছড়াচ্ছে পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে। সে উত্তাপেই পুড়ে যাচ্ছে সৌন্দর্য বিলাসীসহ সকল ক্যাম্পাসবাসী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবন থেকে শুরু করে বিশমাইল গেট পর্যন্ত রাস্তার অসংখ্য গাছ এ ফুলের রক্তিম আভায় ছেয়ে গেছে। আঁকাবাঁকা পথে ঝাঁক বাঁধা লাল কৃষ্ণচূড়ার মিতালি দেখে মনে হয় যেন গাছের পাতাগুলোতে আগুন লেগেছে। গন্ধহীন এ ফুলে পাপড়ি থাকে পাঁচটি। নমনীয় কোমল, মাঝে লম্বা পরাগ। ফুটন্ত কৃষ্ণচূড়া ফুলের মনোরম দৃশ্য দেখে যে কেউ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবেই!



ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার, বটতলা, পরিবহন চত্বর, মুন্নী সরণী, কয়েকটি অনুষদসহ বিভিন্ন হলের সামনের খোলা জায়গা, কোথায় নেই এই কৃষ্ণচূড়া! দেখে মনে হতেই পারে এ যেন কৃষ্ণচূড়ার ক্যাম্পাস। তবে রাধাচূড়া, সোনালু আর জারুল ফুলও আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে।

সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের শিক্ষার্থী তানজিনা আমান তানজুম বলেন, ক্যাম্পাসে যেদিকে তাকাই মনে হয় কৃষ্ণচূড়া গাছগুলোতে আগুন লেগেছে। কিছুদূর পরপরই একেকটা গাছ আর তাতে উজ্জ্বল লাল টুকটুকে ফুল। মনে হয় প্রকৃতিতে আধিপত্য বিস্তার তারাই করছে। কৃষ্ণচূড়ার নজরকাড়া এসব ছবি ঘুরছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফেইসবুকের বিভিন্ন গ্রুপেও। ঈদের ছুটিতে অনেক শিক্ষার্থী এখন বাড়ি আছেন। তাদের মধ্যে একজন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ঐন্দ্রিলা মজুমদার অর্ণা।

আবির রঙা করে ফোটে কৃষ্ণচূড়া, আর বাতাসে ভাসে তার পাপড়ি।

অর্ণা বলেন, ঈদের ছুটিতে এখনও বাড়িতে আছি। ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে ক্যাম্পাসের কৃষ্ণচূড়া ফুলের ছবি দেখে মন খুবই অস্থির হয়েছে। কবে ছুটি শেষ হবে, আর ক্যাম্পাসে যাব, এই অপেক্ষায় আছি। আগুনের মতো লাল দেখে হয়তো এই ফুলের নাম ইংরেজিতে 'ফ্লেম ট্রি' রাখা হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুল কবীর হিমেল বলেন, কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কার। ভিনদেশী এই ফুল আমাদের দেশে নতুন নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এর উচ্চতা খুব বেশি হয় না। সর্বোচ্চ ১১-১২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। তবে এর শাখা-প্রশাখা অনেক দূর পর্যন্ত ছড়ানো থাকে। বছরের অন্য সময়ে এ ফুলের দেখা পাওয়া না গেলেও বাংলাদেশে এপ্রিল-জুন মাসে দৃষ্টিনন্দন ফুলটির দেখা মেলে। সাধারণত বসন্তকালে এই ফুলটি ফুটলেও তা জুন-জুলাই পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

কৃষ্ণচূড়ার নজরকাড়া এসব ছবি ঘুরছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফেইসবুকের বিভিন্ন গ্রুপেও।

কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিখ রেজিয়া। এটি ফাবাসিয়ি পরিবারের অন্তর্গত যা গুলমোহর নামেও পরিচিত। কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো সাধারণত বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত হয়। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। শীতকালে পাতা ও ফুল ঝড়ে যায়, বসন্তে নতুন পাতা ও কুশিতে নতুন সাজে সেজে ওঠে গাছ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর