৬০০০ বছরেও অটুট কাঠের সেতু!

, ফিচার

কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 01:35:15

কতকিছু চোখের সামনে নষ্ট হয়ে যায়। বিনষ্ট হয় স্থাপনা, ঐতিহ্য ও কীর্তি। অথচ আশ্চর্যজনক এক কাঠের সেতু ৬০০০ বছরেও রয়েছে অটুট!

একদিকে পাহাড়। আরেকদিকে ছোট্ট একটি দ্বীপ। মাঝে অগভীর জলাভূমি। আর সেই বিস্তীর্ণ জলাভূমির মাঝ বরাবর চলে গেছে একটি কাঠের সেতু।

অবশ্য এই সেতু আকারে-আকৃতিতে সাধারণভাবে পরিচিত ব্রিজের থেকে অনেকটাই আলাদা। তাকে কাঠের পথ (Wooden Walkway) বলাই শ্রেয়। কারণ, তার প্রস্থ মাত্র এক ফুট। একের পর এক কাঠের পাটাতন পেতেই তৈরি হয়েছে এই পথ। নেই কোনো হাতলও।

ইংল্যান্ডের সমারসেটের (Somerset) শ্যাপউইক হিথ ন্যাশনাল নেচার রিজার্ভে গেলেই দেখা মিলবে এই কাঠের তৈরি সেতুটির। যার বয়স প্রায় ৬ হাজার বছর! ইংল্যান্ডের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম এই সেতু।

তবে বয়সের কারণেই ক্রমশ সংকটময় হয়ে উঠেছিল এই সেতুর অস্তিত্ব। সেতুটির নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল ইংল্যান্ডের ‘হেরিটেজ অ্যাট রিস্ক রেজিস্টার’-এর খাতায়। এবার সেখান থেকেই দুরন্ত প্রত্যাবর্তন করল এই প্রাগৈতিহাসিক পথ। দীর্ঘ কয়েক বছরের চেষ্টায় সেতুটির সংরক্ষণ কাজ সফলভাবে শেষ করলেন ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিকরা।

কার্বন ডেটিং অনুযায়ী, খ্রিস্টপূর্ব ৩৮০৬ অব্দে তৈরি হয়েছিল এই কাঠের সেতু। নিওলিথিক যুগে। অর্থাৎ, কিংবদন্তি স্টোনহেঞ্জের থেকেও বয়স বেশি কাঠের নির্মিত এই সেতুর। কোনও প্রকৌশলী নন, সেসময় ইংল্যান্ডের কৃষক সম্প্রদায়ের মানুষরা এই সেতু নির্মাণ করেন। সমারসেট জলাভূমির মধ্যে অবস্থিত দ্বীপের মাটি তুলনামূলকভাবে অনেকটাই উর্বর। সেই কারণেই পার্বত্য অঞ্চল ছেড়ে এই দ্বীপে কৃষিকাজ শুরু করেছিল তৎকালীন কৃষক সম্প্রদায়ের মানুষরা। যদিও তাঁদের বাসস্থান ছিল পার্বত্য উপত্যকা। দৈনন্দিন যাতায়াতের সুবিধার জন্যই তাই কাঠ পেতে তৈরি করা হয়েছিল ২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথ।

সাধারণত কাঠ পচনশীল হওয়ায়, কাঠের তৈরি যেকোনো স্থাপত্যই অত্যন্ত দ্রুত ক্ষয়ীভূত হয়। তবে সমারসেটের এই সেতুটির ক্ষেত্রে ঘটনাটা ঠিক বিপরীত। ১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকে প্রথম আবিষ্কৃত হয় ‘সুইট ট্র্যাক’-খ্যাত এই সেতু। তবে তার অবস্থা দেখে তখনও পর্যন্ত আন্দাজ করা যায়নি যে সেটির বয়স ৬০০০ বছর। এর নেপথ্যে রয়েছে জলাভূমির জলে পিট মস এবং প্ল্যাংটনের উচ্চ উপস্থিতি। যার কারণে জলে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায় অনেকটাই। ফলে হ্রাস পায় ক্ষয়ীভবনের হারও।

সেতুটি সংরক্ষণের পর, সংশ্লিষ্ট জলাভূমিতে এই ধরনের মসের পরিমাণ বৃদ্ধির চেষ্টা করা হবে বলেই জানাচ্ছেন সংরক্ষণ কার্যের পরিচালক তথা ‘ন্যাচরাল ইংল্যান্ড’-এর সিনিয়র রিজার্ভ ম্যানেজার জুলি মেরেট৷ পরবর্তীতে এই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রকেও সারিয়ে তুলবে বলে অভিমত তাঁর।

এ সম্পর্কিত আরও খবর