গাছের উপকারী পাখি ‘খয়রালেজ-কাঠশালিক’

, ফিচার

বিভোর, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-09-01 14:39:48

চা বাগানের সকালটা উজ্জ্বল হয়েছে সবেমাত্র। তাতে ঝিরঝির সুমন্দ-বাতাস। চায়ের ছায়াবৃক্ষতে তখন পাখিদের প্রাতঃসভা। যুক্তিতর্কের বাকবিতণ্ডায় মুখর এরা। এক প্রজাতি পাখি একটি দলে একত্রিত হয়ে সাতসকালে বোঝাপড়ায় মেতেছে।

শিরিষ নামক ছায়াবৃক্ষতে প্রভাতীসভার এই আয়োজকরা ‘খয়রালেজ-কাঠশালিক’। চিৎকার-চেঁচামেচি করে সারাদিনের কর্মসূচি নির্ধারণে ব্যস্ত। এরা পরিবেশবান্ধব এক প্রজাতির উপকারী পাখি।

খয়রালেজ-কাঠশালিক আমাদের দেশের সুলভ আবাসিক পাখি। সর্বত্রই দেখা যায়। কিন্তু এর কার্যকলাপ সম্পর্কে আমরা তেমন অবগত না। এ পাখিটির ইংরেজি নাম Chestnut-tailed Starling এবং বৈজ্ঞানিক নাম Sturnia malabarica।

বাঁশের উপর বসে আছে ‘খয়রালেজ-কাঠশালিক’। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বলেন, খয়রালেজ-কাঠশালিক গাছের পাতা ফাঁকে ফাঁকে ঘুরে পোকা ধরে খায়। তারা আমাদের দেশের গাছের বড় বন্ধু। চা বাগানের ছোট ছোট গাছে বা আমাদের সবজি ক্ষেতে আমরা নানা জাতে কীটনাশক দিয়ে পাতাগুলোকে রক্ষা করি। কিন্তু আমাদের চারপাশের বড় বড় গাছগুলোতে তো আমরা কীটনাশক দিতে পারি না। এই যে এতো এতো গাছ রয়েছে; যারা অক্সিজেন তৈরি করে বলে আমরা বেঁচে আছি। সেইসব অক্সিজেন সরবরাহকারী গাছদের প্রধান শত্রু হলো পাতার নিচে ঘুড়ে বেড়ানো নানা জাতের পোকা-কীটপতঙ্গ। কারণ এ সকল পোকাই প্রতিদিন তাদের পাতা খেয়ে ফেলে। সেই সব ক্ষতিকর পোকাদের ধ্বংস করার জন্য প্রকৃতিতে পাখিদের যে বিশাল বাহিনী রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ‘খয়রালেজ-কাঠশালিক’।

ফুলের মধু আহরণ প্রসঙ্গে ইনাম আল হক বলেন, ‘এই পাখিগুলো একেকটা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে একেকটা গাছে এসে নামে। সব পাতার ফাঁক দিয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। যেন একটি পোকাও বাদ না যায়। এভাবেই তারা বড় বড় গাছের জীবন রক্ষা করে চলেছে। আপনি দেখবেন- আমাদের যে ফুলের গাছগুলো রয়েছে, বিশেষ করে শিমুল ফুল, পলাশ ফুল এগুলো ফুটলেই এ পাখিগুলো চলে আসে। এরা ফুলে এসে কিন্তু মধু খায় না। ফুলের পাশে দেখবেন পোকা ধরার জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফুলের কারণে বহু পোকারাও আসে। সেই সব পোকাদের ধরার জন্য এই পাখিরা সদা তৎপর থাকে। বন এবং বাগানের বড় বড় গাছের সুস্বাস্থ্যের এই পাখিগুলো বড় সেবা দিয়ে যাচ্ছে।’

সবজি ক্ষেতের পোকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওরা সবজি ক্ষেতেও পোকা ধরার জন্য নামে। সিমগাছের মাচায় ওদেরকে সব সময় পাওয়া যায়। ওরা সিমের ফুলের পাশে পোকা ধরে খায়। কারণ সিমের ফুলে অনেক পোকা হয়। আমরা যারা সিম গাছ লাগাই তাদেরও কিন্তু একটা সেবা সে দিচ্ছে। ফুল গাছেও এসে পড়ে ওরা। এটাও পোকা ধরার কারণে।’

রাগান্বিত হয়ে ডাকার মুখভঙ্গি। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

এদের স্বভাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খয়রালেজ-কাঠশালিক দলবদ্ধ পাখি। সচরাচর ৫ থেকে ২০টি পাখি একত্রিত হয়ে খাবারের সন্ধানে ঘুড়ে বেড়ায়। এরা গাছের কোঠরে বাসা করে। ঝুঁটি-শালিক, ভাত-শালিক, গাঙ-শালিক প্রভৃতি পাখি কিন্তু মানুষের বানানো কাঠামোতে বাসা করে। কিন্তু এরা গাছের গর্তে বাসা করে।’

এরা উচ্চতায় প্রায় ২০ সেন্টিমিটার। ধূসর বাদামি দেহ। তবে মাথা, কপাল, গাল ও গলা সাদাটে। এদের হালকা খয়রা রঙের লেজ থাকে বলে জানান প্রখ্যাত পাখি গবেষক ইনাম আল হক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর