দারুণ রহস্যময় অপূর্ব সুন্দর পাখি এশীয়-শাবুলবুলি

, ফিচার

বিভোর বিশ্বাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-08-31 14:20:16

সৌন্দর্যে এ পাখিটি অপূর্ব! সবাইকে ছাড়িয়ে। পাখিটির এমন সৌন্দর্য খুব কম পাখির মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায়। বিশাল লেজ আর মাথার ঝুঁটি এই দু’টি জিনিসই তার মূল সৌন্দর্য-সম্পদ। সে এতোটাই অপূর্ব যে - সব পাখিকে সে হার মানিয়েছে তার শারীরিক সৌন্দর্য দিয়ে। ঝুঁটি আর দীর্ঘ লেজ এ দুটোর দ্বারাই সে একক আধিপত্য বিস্তার করে রয়েছে পক্ষীরাজ্যে।

এই অপূর্ব সুন্দর পাখিটির নাম ‘এশীয়-শাবুলবুলি’। তবে দুধরাজ নামেও এর পরিচিতি রয়েছে। অঞ্চলভেদে সাহেব বুলবুলি, শাহ বুলবুল, সুলতান বুলবুল প্রভৃতি নামেও লোকজন একে চিনে। এর ইংরেজি নাম Asian paradise flycatcher এবং বৈজ্ঞানিক নাম Terpsiphone paradisi। এরা ছোট আকারের পতঙ্গভুক পাখি। পৃথিবীতে তিন প্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশে দু’ প্রজাতির দেখা মেলে।

তবে সৌন্দর্যই শুধু নয়। এ পাখির রয়েছে রহস্যময় রঙের আধিপত্য। নিজের শরীরের রঙ পাল্টে ফেলার রয়েছে বিশ্ময়কর এক ক্ষমতা! পুরুষ পাখিটি কেন রঙ পাল্টে ভিন্ন রঙের হয়ে যায় তা আজ পর্যন্ত জানা যায়নি। অধিকাংশ ছেলে-মেয়ে উভয় পাখিই ‘লাল’ রংয়েরই হয়ে থাকে। তবে কোনো কোনো ছেলেপাখি আবার ধবধবে ‘সাদা’ রংয়েরও হয়। তবে সাদার সংখ্যা নগণ্য।

পুরুষ শাবুলবুলি লাল ও সাদা দুই রঙেরই হয়। ছবি: এবি সিদ্দিক


 

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রথমবার এই পাখিটিকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। এ যেন স্বর্গীয় সৌন্দর্যে রাঙা! আত্মপ্রশ্নে জড়িয়ে পড়েছিলাম- এতো সুন্দর পাখি আছে পৃথিবীতে? পাখিটি চোখে পড়লে সত্যিই নজর ফেরানো দায়। প্রথমবার দেখে পিছু নিয়েছিলাম তার। কিন্তু আর পেরে উঠতে পারিনি। মুহুর্তে আমাকে বোকা বানিয়ে সে হাওয়া হয়ে গেল।

গবেষক ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং পাখি পর্যবেক্ষক তারেক অণু বলেন, শাবুলবুলিরা সাধারণত লাল হয়ে থাকে। এর মধ্যে কয়েকটা পুরুষ পাখি লাল থেকে একসময় সাদা রঙে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। কিন্তু এটা কেন হয় এবং কখনো হয় এটা আমাদের আজ পর্যন্ত জানা নেই।

সাদা হলে সে বেশি করে নারীদের আকৃষ্ট করতে পারে। কিন্তু সাদা হলে সে আবার শিকারীদের চোখেও চট করে পড়ে। কিন্তু সে নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে নারী পাখিদের আকৃষ্ট করে থাকে। কিন্তু এটা সে কেন করো তা আমাদের আজ পর্যন্ত জানা নেই। এটা নিয়ে গবেষণা চলছে বলে জানান তিনি।

তারেক অণু বলেন, কিছু দিন আগেও এটি আমি দেখা গেছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় অর্থাৎ নদীর ওই পাশে। কুষ্টিয়া থেকে শুরু রাজশাহী, দিনাজপুর, পঞ্চগড় এ সব অঞ্চলগুলো বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে আম বাগান প্রধান এলাকায় একে দেখা যায়। এর কারণ হতে পারে এরা আম গাছের পোকা খায়।

স্ত্রী শাবুলবুলি সবসময় লাল রঙের হয়ে থাকে। ছবি: এবি সিদ্দিক


 

স্ত্রী-পুরুষ পাখির শারীরিক বর্ণনা সম্পর্কে তিনি বলেন, কিছু কিছু পুরুষ শাবুলবুলি লাল থেকে সাদাতে পরিণত হয়। যারা সাদাতে পরিণত হয় এরা কিন্তু আর চেঞ্জ (পরিবর্তন) হয় না। ওই সাদা রঙই থাকে। তবে নারী পাখিটি সবসময় লালই হয়। পুরুষ পাখিটিও লাল হয়। কিন্তু এর মধ্যে কয়েকটা পুরুষ পাখি মাঝে মাঝে আবার রঙ পরিবর্তন করে সাদা হয়ে যায়।

তারেক অণু আরো বলেন, এশীয় শাবুলবুলি বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি। এদের লেজছাড়া দৈর্ঘ্য ২০ সেমি। ওজন প্রায় ২০ গ্রাম। লেজ ১০ সেমি। তবে পুরুষপাখির লেজের দৈর্ঘ্য ৩৫ সেমি। মেয়েপাখির চেয়ে ছেলেপাখির লেজ তিনগুণ বেশি লম্বা। এরা ঘাস, লতাপাতা, মাকড়সার জাল দিয়ে পেয়ালা আকৃতির খুব সুন্দর বাসা বানায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর