জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্ব উষ্ণায়নে গলছে হিমালয়ের বরফ

, ফিচার

কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 09:25:10

জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্ব উষ্ণায়নের বিপদ সম্পর্কে নিয়মিতই আলোচনা হচ্ছে মিডিয়ায়, আন্তর্জাতিক সংস্থায় ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। এবার এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল সাম্প্রতিক গবেষণায়। মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের (Climate Change) জেরে দ্রুত ক্ষয়ীভূত হচ্ছে হিমালয় তথা বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের (Mt Everest) বরফ। এভারেস্টের গায়ে যে বরফের চাদর জমতে সময় লেগেছিল ২০০০ বছর, তা গলতে সময় নিয়েছে মাত্র ২৫ বছর।

'নেচার পোর্টফোলিও জার্নাল অফ ক্লাইমেট অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক সায়েন্স'-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্র জানাচ্ছে, স্বাভাবিকের থেকে ৮০ গুণ দ্রুত হারে পাতলা হচ্ছে হিমালয়ের ওপর জমে থাকা বরফের স্তর। পাশাপাশি কমেছে তুষারপাতের পরিমাণও।

হিমালয়ের বরফ গলার কারণে নানামুখী বিপদের কথাও জানিয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৪৪০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত বিশ্বের সর্বোচ্চ আবহাওয়া কেন্দ্র থেকে পরিচালিত এই গবেষণা, যাতে অংশ নেন মেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।

মূলত বরফ গলনের হার এবং বরফের স্তরে জমে থাকে নুড়ি-পাথরের বয়স নির্ণয় করেই তৈরি করা হয়েছে গবেষণা দলের এই বিশেষ রিপোর্ট। তাতে দেখা যাচ্ছে, বিগত আড়াই দশকে গলেছে ৫৫ মিটার বা ১৮০ ফুট বরফের চাদর। আরও আশঙ্কার বিষয় শুধুমাত্র বিগত দু’ বছরেই কমেছে ১০ ফুট।

জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন তো বটেই, হিমালয়ের চূড়ায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি আরও ত্বরান্বিত করছে বরফগলনের হারকে। এখনও পর্যন্ত সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে তার প্রভাব হয়তো স্পষ্ট নয়। তবে কয়েক দশকের মধ্যেই, এই প্রাকৃতিক ‘দুর্যোগ’-এর জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হতে হবে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলেট কমপক্ষে ১৬০ কোটি মানুষকে।

'ভয়াবহ বিপর্যয়’ হিসাবেই এই ঘটনাকে সম্বোধন করছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ, হিমালয়ের বরফ গলা জলধারাতেই পুষ্ট দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অধিকাংশ নদী। যা শুধু পানীয় জলের উৎসই নয়, একইসঙ্গে সেই জলপ্রবাহের ওপরই নির্ভর করে রয়েছে অসংখ্য জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, কৃষি ও জীবনধারা। দ্রুত বরফ গলে গেলে, শুকিয়ে যাবে হিমালয় থেকে জন্ম নেওয়া নদীগুলোর গোটা উপত্যকা। ব্যাহত হবে চাষাবাদও। ফলে, খাদ্য ও জল সংকট দেখা দিতে পারে গোটা দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে।

পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল বিশ্বের সবথেকে ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় আকাশ ছোঁবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।

তবে এতকিছুর পরেও বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, উপযুক্ত পদক্ষেপ নিলে হ্রাস করা সম্ভব বরফ গলনের এই গতি। তাতে ধ্বংস আটকানো না গেলেও, প্রকৃতির থেকে পাওয়া যেতে পারে আরও কিছু বাড়তি সময়। কিন্তু গবেষকদের এই আবেদনে আদৌ কি সাড়া দেবেন বিশ্বনেতৃত্ব!  সেটাই গবেষকদের বড় ভাবনার বিষয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর