সন্ধিক্ষণের ২০২১ পেরিয়ে আসছে আশা ও শঙ্কার ২০২২

, ফিচার

ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 15:16:02

মহাকালের যাত্রারথে পেরিয়ে যাচ্ছে ২০২১ সাল। আসছে নতুন বছর ২০২২ সাল। প্রতিবারের মতোই বছরের শেষ সূর্যাস্ত অতীতের অতলান্ত গহ্বরে হারিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়। সারা বিশ্ব আশা ও শঙ্কার নতুন বছরকে বরণের জন্য উন্মুখ।

বৈশ্বিক মহামারি কোভিদের পুনর্প্রবর্তন বছরটিকে তীব্রভাবে আক্রান্ত করেছে। করোনার সঙ্গে ধেয়ে আসছে নতুন ভ্যারিয়্যান্ট ওমিক্রন। রোগের প্রাদুর্ভাবের মতোই দাঙ্গা, হাঙ্গামা, বাস্তুচ্যুতি ছিল বছরের আলোচিত বিষয়। আফগানিস্তান এসেছে মূল ফোকাসে। দক্ষিণ চীন সাগর ও এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে বেড়েছে উত্তেজনা। চলেছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রতিযোগিতা।

ব্যাপক সঙ্কটে কেটেছে ঝঞ্ঝা তাড়িত বিশ্বের তাপিত ও পীড়িত মানুষের জীবন। পরিবেশ, দুর্যোগের মতো সংঘাত আকীর্ণ শরণার্থী জীবন পূর্বের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পশ্চিমের লেবানন-লিবিয়া পর্যন্ত রক্তারক্তির স্মৃতি বহন করেছে। বছর শেষের প্রাক্কালে লিবিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় খোমস শহরের উপকূলে ভেসে এসেছে ইউরোপগামী ২৭ জন শরণার্থীর লাশ। বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রুটের এই ঘটনাকে বছরের সবশেষ ট্যাজেডি বলছে রেড ক্রিসেন্ট।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, দেশটির রাজধানী ত্রিপোলি থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরের উপকূলীয় শহর খোমসের দুটি পৃথক স্থান থেকে ২৫ ডিসেম্বর রাতে একটি শিশু ও দুই নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বাকিদের খোঁজে সন্ধান চালাচ্ছে উদ্ধারকারী দল। নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাতে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, অনেকের দেহে পচন ধরায় ধারণা করা হচ্ছে কয়েকদিন আগে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। লিবিয়ার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, উপকূলে সারিবদ্ধভাবে একাধিক মৃতদেহ ঢেকে রাখা হয়েছে। এদের কারও পরিচয় পাওয়া যায়নি।

বিশ্বের অন্যান্য স্থানের মতো বাংলাদেশের রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরে হত্যা ও সংঘর্ষ হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পথ ও নৌ দুর্ঘটনায় মরেছে অসংখ্য মানুষ। বেড়েছে রোমহর্ষক নারী ও শিশু নিপীড়নের ঘটনা। ধর্ষণ ও নৃশংসতার ক্রমবর্ধমান হার অতীতের মতোই কলঙ্কিত করেছে ২০২১ সালকেও।

নানা অর্জন ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে শেষ হতে যাওয়া বছরের খারাপ অভিজ্ঞতাকে পেছনে ফেলে ২০২২ সাল নতুন উদ্দামে শুরু করার পরিকল্পনা আরম্ভ করে দিয়েছেন বিশ্ব। তবে এই নতুন বছরকে সামনে রেখে এমন কিছু ভবিষ্যদ্বাণীর কথাও জানা যাচ্ছে, যেগুলো সুখকর নয়। বিশ্ব মিডিয়ার বরাতে আলোচিত এসব ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি বলে প্রমাণিত হলে নতুন বছর ২০২২ সাল নিয়েও জমবে আশঙ্কার কালোমেঘ।

ভবিষ্যদ্বাণী প্রসঙ্গে আলোচিত হচ্ছেন ভ্যাঙ্গেলিয়া পান্ডেভা গুশতেরোভা ওরফে বাবা ভাঙ্গা নামের একজনের নাম। যিনি একজন বিখ্যাত ভবিষ্যৎদ্রষ্টা এবং সাম্প্রতিক অনেক ঘটনার সঠিকভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন । বুলগেরিয়ান রহস্যময় এই ব্যক্তি শৈশব থেকে অন্ধ। তিনি তার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে এমন কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করে থাকেন, যার অনেকগুলো সত্য বলে বিবেচিত হয়েছে। Astrofame অনুসারে, বাবা ভাঙ্গা ২০২২ সালের জন্য বেশ কয়েকটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, যেগুলো সত্যিই উদ্বেগজনক। যার মধ্যে রয়েছে:

১. ভূমিকম্প এবং সুনামির বৃদ্ধি। ২. সাইবেরিয়ায় একটি প্রাণঘাতী ভাইরাসের আবিষ্কার। ৩. গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্বের জলবায়ুতে উষ্ণতার প্রবল বৃদ্ধি। ৪. বিশ্বব্যাপী পানীয় জলের তীব্র অভাব। ৫. অজানা এলিয়েনরা পৃথিবী আক্রমণ করবে। ৬. ভারতে পঙ্গপালের আক্রমণ শুরু হবে।

অতীতের অভিজ্ঞতায় ২০২২ সালের দিকে তাকালে এসব ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে আরও অনেক বিপদ যুক্ত হতে পারে। বিশেষত প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত বিপদের আশঙ্কা গত কয়েক বছর ধরেই দ্রুতবেগে বাড়ছে। এর ফলে গত কয়েক বছর ধরে, ভূমিকম্প এবং সুনামির সংখ্যা বেড়েছে এবং ২০২২ সালেও তাই এর সম্ভাবনা থেকেই যায়। কয়েক বছর আগে, সাইবেরিয়ার পারমাফ্রস্টে ৩০ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে সুপ্ত থাকার পরে বিজ্ঞানীরা একটি ভাইরাসকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। সেখানে বরফ গলার সঙ্গে সঙ্গে আর কি কি ভাইরাস লুকিয়ে আছে তা সময়ই বলবে। বিশ্ব এখন যে পানীয় জলের সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে তা ভালভাবে টের পাওয়া যাচ্ছে।  তাছাড়া গত দুই বছরে, ভারত নজিরবিহীন ভাবে বড় আকারের পঙ্গপাল আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছিল। সুতরাং, এসব ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ইতিমধ্যেই মানুষ ভার্চুয়াল দুনিয়ার সঙ্গে পরিচিতি হওয়ায় নতুন প্রাণির সঙ্গে বিশ্ববাসীর সাক্ষাৎ ঘটাতে পারে। এলিয়েন আক্রমণের ভবিষ্যদ্বাণীটি সত্যি হয় কিনা, সেটাও দেখার বিষয়।

প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতার  পাশাপাশি রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা বিশ্বের শান্তিকে অশান্তির অন্ধকারে ঠেলে দিতে পারে। বাড়তে পারে অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও শক্তির মহড়া। ফলে আশা ও শঙ্কায় ভর করেই আসছে নতুন বছর ২০২২ সাল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর