মৌমাছির চাক পেলেই মধুর লোভে আঘাত হানে ‘উদয়ী-মধুবাজ’

, ফিচার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,সিলেট | 2023-08-31 14:55:01

একটি গাছের কোণে মৌমাছি উড়ছে ক্রমশ। দু’টি-চারটি বা তারও বেশি। দ্রুততায় এর ডানা ছাপটানোর সাথে সাথে একটা চমৎকার মৃদুধ্বনি চারপাশকে মুখরিত করে তুলেছে। তবে এই বিপজ্জনক মৌমাছিদের ডেরায় অতর্কিত হামলা চালনার জন্য প্রস্তুত একটি পাখি।

দুর্ধর্ষ এই পাখিটির নাম ‘উদয়ী-মধুরাজ’। এর মৌমাছির চাকে টার্গেট করে একটি পাখি মধু আর চাক খাওয়ার লোভে আক্রমণ করে থাকে। এর ইংরেজি নাম ওরিয়েন্টাল হানি বার্জাড এবং বৈজ্ঞানিক নাম পার্নিস পিটলহর্নকাস।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি গবেষক ইনাম আল হক বলেন, ‘হানি-বার্জাড’ এক প্রকারের শিকারী পাখি। সারাবছর এদের দেখতে পাবেন না। সারাদেশে আছে; তবে শীত মৌসুমে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। ‘হানি-বার্জাড’ এর প্রিয় খাবারও হলো মৌচাক। এর মৌমাছির মধুচাকে অতর্কিত হামলা চালিয়ে মধু খায় এবং চাকটা টুকরো টুকরো করে খেয়ে থাকে।

মধুচাকে আঘাত এনেছে ‘উদয়ী-মধুরাজ’। ছবি: জোনাথন কুয়া

ইনাম আল হক আরোবলেন, ওর শরীর পুরোপুরিভাবে পালক দিয়ে ঢাকা। ফলে মৌমাছির চাকে আক্রমণ করলেও মৌমাছিরা ‘হানি-বার্জাড’ এর শরীরে হুল ফুটাতে পারে না। কারণ, পালকের উপর তো হুল ফুটানো সম্ভব নয়। শুধু ওর শরীরের একটি জায়গা তাহল চোখের পাশ অর্থাৎ চঞ্চু’র (ঠোঁট) ছোট্ট জায়গাটা। আর থাকল পায়ের শক্ত অংশ; এটাতেই হুল ফুটানো সম্ভব নয়। আসলে ওর শরীরে খোলা জায়গা নেই; সবই পালকে ঢাকা। তাই মৌমাছিরা সুবিধা করতে পারে না মৌচাক ছাড়াও মাটিতে ইঁদুর, ছুঁচো, আহত ছোটপাখিসহ অন্যান্য ছোট প্রাণীদের ‘হানি-বার্জাড’ ধরে ধরে খায় বলে জানান।  

নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ইনাম আল হক বলেন, গাছের ডালে, দালান কোঠার কার্নিসের নিচে বাসা হলে ভালো করে লক্ষ্য করলে অনেক সময় দেখা যায় এগুলোর আশেপাশে ‘হানি-বার্জাড’ চুপ করে বসে রয়েছে। আমি বেশ কয়েকবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের মৌচাকে ‘হানি-বার্জাড’কে বসে থাকতে দেখেছি। সুযোগ পেলেই সে মৌচাকে দ্রুত আক্রমণ করে বসে। তারপরও মৌমাছিদের আক্রমণের বিষয়ে ‘হানি-বার্জাড’ প্রচুর সর্তক থাকে। হিসেব-নিকেশ করেই সে মৌমাছিদের দুর্গে হামলা চালায়। চাক ভেঙে নিয়ে পালিয়ে যাবার পর কিছু কিছু মৌমাছিদেরও তার পিছনে উড়তে দেখেছি। তবে পাখিটিকে মৌমাছির দ্বারা আক্রান্ত হতে কখনো দেখিনি।

শারীরিক বর্ণনায় তিনি বলেন, এদের আকার প্রায় ৬০ সেন্টিমিটার এবং দেহ কালচে-ধূসর। থুতনিতে লম্বা সাদা রং। ডানার নিচে সারি সারি কালো লাইন। চোখ কমলা লাল এবং পায়ের আঙ্গুল হলুদ। পুরুষ পাখিটির লেজে দুটো প্রশস্ত কালো ফিতা এবং স্ত্রী পাখিটির লেজে দু’টি কালো ফিতা রয়েছে।

কোনো গাছের গোপন জায়গায় মৌমাছির নতুন বাসা হয়েছে এমন কোনো স্থানে আপনি যদি কয়েকদিন যান তবে এই ‘হানি-বার্জাড’ মৌচাকের আশেপাশে খুঁজে পাওয়া যাবে বলে জানান প্রখ্যাত পাখিগবেষক ইনাম আল হক।

 

 

 

 

 

 

 

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর