ওমিক্রন ঠেকাতে কী করছে ব্যাংককের সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্ট?

, ফিচার

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা | 2023-08-31 03:51:28

ব্যাংকক থেকে: নভেম্বর মাস থেকেই ব্যাংককে বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের জন্য ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। স্যান্ডবক্স এরিয়ার আওতায় ব্লু-জোনে বাংলাদেশিদের বিবেচনা করে ৭ দিনের কোয়ারান্টাইন মেনে চলতে হবে। কোয়ারেন্টাইনের জন্য নির্দিষ্ট হোটেল বেঁধে দেয়া হয়েছে। এই হোটেলগুলোতে নির্দিষ্ট হাসপাতালের স্টাফ থাকেন।

হোটেলে প্রবেশের প্রথম দিনে করোনা টেস্ট করা হয়েছে। এর ফল দেয়া হচ্ছে ১২ ঘণ্টা পর। যদি রেজাল্ট নেগেটিভ আসে, তাহলে বাকি ৬ দিন আমি ব্যাংককে ঘুরে বেড়াতে পারবো। আর ৬ষ্ঠ দিনে আবারো কোভিড টেস্ট করে ৭ম দিনে নেগেটিভ রেজাল্ট পেলে ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়াতে পারবো থাইল্যান্ড। আর যদি কোন একটা রেজাল্ট পজিটিভ আসে, তাহলে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।

barta24

করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন হানা দেয়ার পর এই দেশে ঢুকতে বাংলাদেশিদের যাবতীয় তথ্যের সঙ্গে যোগ হয়েছে ৫০ হাজার ইউএস ডলারের হেলথ ইন্সুরেন্স। এইসব কিছু জমা দিলে থাইল্যান্ডে উড়াল দেয়ার ৩ দিন আগেই মিলবে থাই পাস।

তবে বাংলাদেশ ছাড়া বেশ কিছু দেশের করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হলেও তারা একদিনের হোটেল কোয়ারেন্টাইন করেই বের হতে পারছে। কিন্তু আমাদের জন্য ৭ দিনের কোয়ারেন্টাইন প্রমাণ করে, দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক মুখের কথার মতো জোরদার নয়।

barta24

বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) ব্যাংকক সময় সন্ধ্যা ৫ টা ১৫ মিনিটে যখন সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্টে নামলাম, শুনশান নীরবতা চারদিকে। বাংলাদেশ বিমান যে গেটে থামে, সেখান থেকে ইমিগ্রেশন প্রায় ৮০০ মিটারের দূরত্ব। বিমান থেকে নেমে কিছুদূর যেতেই চোখে পড়লো দুই সারিতে লাইন করে ফাঁকা চেয়ার বসানো হয়েছে। চেয়ারগুলোর মধ্যবর্তী দূরত্ব ৩ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত। সেখানে বসে যেতে নির্দেশনা দেয়া হলো আমাদের। এরপর দ্বায়িত্বরত ব্যক্তিরা এসে হাতে থাকা সব কাগজপত্র চেক করলো। সঙ্গে শুধুমাত্র করোনার জন্য আরটি-পিসিআর টেস্টের রেজাল্ট এবং থাই পাস রাখতে বললো।

barta24

ঢাকায় বিমানবন্দরে তো কয়েকটা কাউন্টারে সবকিছু চেক করা হলো। হেলথ ইন্সুরেন্স, হোটেল বুকিংয়ের মতো কাগজগুলো এখানে এগুলো দেখাতে হবে না? উত্তরে নিরীক্ষারত নারী জানালেন, এগুলো না থাকলেতো আপনি থাই পাস পেতেন না। তাই এগুলো চেক না করলেও হবে। এরপর কোন ডেস্কে যেতে হবে, দেখিয়ে দিলেন আরেকজন। সেখানে কর্মকর্তারা চেক করলেন থাই পাসটি সঠিক কিনা! ফল দেখে সামনে এগিয়ে যেতে বললেন। জমজমাট এই বিমানবন্দর এখন অনেকটাই থমকে আছে।

এর আগে ব্যাংকক সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্টে দেখেছি ইমিগ্রেশনের অনেক ডেস্ক খালি থাকতে। কিন্তু এবার দেখলাম, যাত্রীর সংখ্যা কম, কিন্তু ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা বসে আছেন ডেস্কে। তাই ভীড় হচ্ছেই না। একটি লাইনে ২ থেকে ৪ জন যাত্রীর বেশি নেই। সেটা শেষও হয়ে যাচ্ছে দ্রুত।

ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে সঙ্গেই আফ্রিকার ৬ টি দেশ থেকে ইতিমধ্যে থাইল্যান্ডে যাত্রী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

খুব দ্রুতই শেষ হলো ইমিগ্রেশন। এবং চলে গেলাম ব্যাগ নিতে বেল্টে। সেখানে ইতিমধ্যে ব্যাগ আসতে শুরু করেছে। কাস্টমস পার হয়ে বের হলেই সেখানে সব হোটেলের ডেস্ক বসানো। সেখানে একটা ডেস্কে জানতে চাইলেই দেখিয়ে দিলো আমার বুক করা নির্দিষ্ট হোটেলের কোন ব্যক্তি অপেক্ষা করছেন। তার কাছে যেতেই নিয়ে গেলেন ভ্যানে এবং যাত্রা করলো শহরের পথে। ভ্যানে যাত্রীও আমি একজন।

শহরে প্রবেশ করতেই গাড়ির চাপ বাড়তে শুরু করেছে। এখানে জীবনযাত্রা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে স্থানীয়দের জন্য। তবে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তুলনায় এখানকার সুবর্নভূমি বিমানবন্দরের করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনায় আকাশ পাতাল পার্থক্য মনে হয়েছে আমার।

এ সম্পর্কিত আরও খবর