যে কারণে দেশের সেরা চা ‘টি গোল্ড’

, ফিচার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-09-01 23:34:56

‘চা’ বাঙালির প্রিয় পানীয়। বাজারে রয়েছে নানা জাতের চা। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন এসে যায়– কোন চা সেরা? কোন চা-ই বা সর্বোৎকৃষ্ট? এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করে এক কথায় জবাব চাওয়া হলে এর উত্তর হবে- বিটিআরআই অর্থাৎ বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের ‘টি গোল্ড’ চা।

কারণ, এটি স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। রঙেও চমৎকার। একবার এই চা খেলআবার খেতে মন চায়। এমন শ্রেষ্ঠত্ব নিয়েই দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) এর প্রস্তুতকৃত ‘টি-গোল্ড’ চা।

চা প্রেমীরা একবার এই চায়ে চুমুক দিয়ে এর চূড়ান্ত ভালোলাগা থেকে আর মুখ ফেরাতে পারেন না। এই টি-গোল্ডের পাতা মিল্ক-টি (দুধ চা) বা র-টি (লিকার চা) দুই ধরণের চায়ের মাঝে সমানভাবে স্বাদের ভূমিকা পালন করে থাকে।

সবুজ বর্ণের পাতাগুলো প্রক্রিয়াজাত হয়ে রূপান্তরিত হয় কালো দানায়। এর সংক্ষিপ্ত নাম ‘টি-গোল্ড’ বা ‘টি-জি’ হলেও অফিশিয়াল নামটি কিন্তু তা নয়। ‘DMP5 ক্লোন বিটি-২ স্পেশাল টি-গোল্ড’ হলো এর অফিশিয়াল নাম। নামটি বৃহৎ হওয়ায় ছোট্ট ‘টি-গোল্ড’ নামেই ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।

টি-গোল্ড চা এর প্যাকেট। ছবি: বার্তা২৪.কম


 

চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল। প্রতি সপ্তাহে সারাদেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটক আসেন এখানে। শ্রীমঙ্গলে এসেই অনেকেই উন্নতমানের চা ক্রয় করে নিতে আগ্রহ হয়ে উঠেন। এ ধারণা থেকেই খোঁজ পরে উন্নতমানের চায়ের। ইতোমধ্যে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া বিশেষ চায়ের নাম টি-গোল্ড বা টিজি চায়ের নাম।

চলতি বছর অনুষ্ঠিত ‘টি টেস্টিং প্রোগ্রাম’ এর এক ফাঁকে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) এর মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সিএসও) ড. মো. ইসমাইল হোসেন ‘টি-গোল্ড’ সম্পর্কে বলেন, “ফ্রেভার (ঘ্রাণ) এবং টেস্ট (স্বাদ) এর জন্য এই চায়ের ‘হটকেক’র মতো চাহিদা। এটি বিটি-২ ভ্যারাইটির উন্নতমানের চা। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় এবং সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক গুণাগুণ সমৃদ্ধ চা টি-গোল্ড।”

তিনি আরো বলেন, “এই চায়ের দানার গ্রেডের নাম জিবিওপি। ইংরেজিতে এর অর্থ দাঁড়ায় ‘গোল্ডেন ব্রোকেন অরেঞ্জ পিকো’। এর দানাগুলো অন্য চায়ের দানা থেকে তুলনামূলক বড় এবং দেখতে সুন্দর। অল্প পাতায় গাঢ় এবং অধিক স্থায়ীত্ব লিকার হয়ে থাকে। যারা অভিজাত শ্রেণির রুচিশীল ব্যক্তি তারা এই গ্রেডটি ভীষণ পছন্দ করেন।”

এর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে চা বিজ্ঞানী ড. মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘টি-গোল্ড’ জিবিওপি গ্রেডের চা। জিবিওপি গ্রেডের বৈশিষ্ট্য হলো ডিপনেস, ভেরি স্ট্রং লিকার অ্যান্ড স্ট্রেংথ। ডিপনেস এখানে সজীবতা। এই সজীবতাটাই খুব বেশি এই চায়ে। যারা ফ্রেভার (ঘ্রাণ) পছন্দ করেন আবার স্ট্রং লিকারের (কড়া রঙ) চাও চান তাদের কাছেই এই চা খুবই পছন্দের। আর ‘গোল্ড’ কথাটা এসেছে ‘গোল্ডেন ব্রোকেন অরেঞ্জ পিকো’ এর গোল্ডেন থেকে। চায়ের অরিজিন যেহেতু চীন, তাই চায়ের এই অভ্যন্তরীণ শব্দগুলো কিন্তু এখনো চাইনিজ লেংগুয়েজেই ব্যবহৃত হয়।

‘টি-গোল্ড’ এর পাতা চয়ন সম্পর্কে এই চা গবেষক বলেন, বিটি-২ ক্লোন চা গাছের একেবারে নরম দু’টি পাতা একটি কুঁড়িগুলো প্রথমে নির্বাচন করা হয়। তারপর এই চা-কে আরো উন্নতমানে রূপান্তরিত করতে চায়ের গ্রেডটি ‘জিবিওপি’ গ্রেডে রাখা হয়। এক কথায় বলা চলে, এই চায়ে ফ্লেভার, লিকার, টেস্ট এবং ফ্রেসনেস এ সবই অন্য চায়ের থাকে অনেক বেশি। এ কারণেই চা প্রেমীরা এই চায়ে চুমুক দিলেই উপলব্ধি করতে পারেন এর শ্রেষ্ঠত্ব।

বিটিআরআই ফ্যাক্টরিতে তৈরি হচ্ছে টি-গোল্ড। ছবি: বার্তা২৪.কম


 

কি করে একই চা গাছে বেশি লিকার (রঙ), বেশি ফ্রেভার (গন্ধ), বেশি টেস্ট (স্বাদ) পাওয়া সম্ভব– এই উদ্দেশ্য থেকেই আমরা বহু রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিটি-২ নামের একটি উন্নতমানে বিশেষ ক্লোন চা গাছ উদ্ভাবন করেছি।

এখন পর্যন্ত বিটিআরআই এর ‘বিটি-২০’ নামের বিশটি ক্লোন চা আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু সেই বিটি-২ এর গুণগতমান সবগুলো ক্লোন থেকেই আগে। আর এই বিটি-২ ক্লোন দিয়েই বিশেষভাবে প্রস্তুত হয়ে থাকে ‘টি-গোল্ড’ চা। যা সব চায়ের থেকে অধিক উন্নত বলে জানান চা বিজ্ঞানী ড. মো. ইসমাইল হোসেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর