শিকার ধরে একই স্থানে ফিরে আসে ‘সবুজ সুঁইচোরা’

, ফিচার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-09-01 20:19:49

অদ্ভুত রকমের বৈশিষ্ট্য তার! মুহূর্তে শিকার ধরে আবার আগের স্থানে অর্থাৎ যেখানে সে বসা ছিল, সেখানেই ফিরে আসে। দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার শিকার ধরলেও ওই একই নীতি প্রকাশিত হয় তার চরিত্রের মাঝে। এমন আশ্চর্যজনকভাবে শিকার ধরে ফিরে ফিরে আসার পালা চলতেই থাকে সারাক্ষণ। তবু ক্লান্তি নেই যেন। 

এই পদ্ধতিকে বলে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দিয়ে পাখি চেনা। কেননা, কিছু কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য শুধুমাত্র হাতেগুনা কিছু কিছু পাখিদের মাঝেই আছে। এদের মাঝে ‘সবুজ সুঁইচোরা’ অন্যতম।

আরো একটি বিশেষ দিক হলো- দুটি পাখি অর্থাৎ পুরুষ পাখি এবং স্ত্রী পাখি যখন একত্রে বসে তখন তাদের বসার ভঙ্গি এতটাই দৃষ্টিনন্দন যে বারবার দেখতে ইচ্ছে করে। বিশেষত, একত্রে বসা সবুজ সুইচোরা দম্পতির দুই দিকে তাকানোর ভঙ্গিমা সত্যি বিরল এক দৃশ্য। যা হৃদয়কে দারুণভাবে নাড়া দেয়।

প্রকৃতির দিকে চোখ মেলে তাকালেই মাঝে মাঝে দেখা যায় – দু-চারটি পাখি উড়ে উড়ে পোকা ধরে খাচ্ছে। উড়ে এভাবে পতঙ্গধরা পাখিদের বেশিভাই সুঁইচোরার দল। তাদের এ বিরামহীন শিকার দক্ষতা আর নৈপুন্যে গাঁথা।

উড়ে উড়ে খাবার ধরে খায় ‘সবুজ সুঁইচোরা’। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

উড়ে উড়ে খাবার ধরে খায় ‘সবুজ সুঁইচোরা’। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

বসে থাকার স্থান থেকে হঠাৎ ডানা মেলে দিয়েছে আকাশের পানে; বিশ্বস্ত লম্বা ঠোঁটে উড়ন্ত পতঙ্গ ধরে আবার পরক্ষণেই যথাস্থানে ফিরে আসা। তাদের এমন শিকারপ্রক্রিয়া জন্মসূত্রে অর্জিত। এরা দ্রুত ডানা ঝাপটায় এবং মুক্ত আকাশে সুন্দরভাবে উড়াউড়ি করতে দেখা যায়।

আমাদের দেশের আবাসিক পাখি ‘সবুজ সুঁইচোরা’। এর ইংরেজি নাম Green Bee-eater এবং বৈজ্ঞানিক নাম Merops orientalis। এরা Meropldae পরিবারভুক্ত পাখি। তবে এই পাখিটির আরো একটি সুন্দর বাংলা নাম হলো ‘বাঁশপতি’। অপরূপ সুন্দর দেহ। তার দেহের অপূর্ব সবুজ রঙে জুড়িয়ে যায় চোখ।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি গবেষক ইনাম আল হক বলেন, এই ‘গ্রিন বি-ইটার’ পাখিটি শুধুমাত্র পোকামাকড়ই খায়। তবে এ প্রজাতির অন্যপাখিগুলো অবশ্য ফুলের মধুসহ অন্যকিছুও খায়। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে মৌমাছি, পিঁপড়া, প্রজাপতি, মথ, ফড়িং, ইউ পোকা, গুবরে পোকা প্রভৃতি। কোনো জায়গা থেকে দ্রুত ছোঁ মেলে শিকার ধরে খায়। 

বসবাস স্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিক্ষিপ্তভাবে গাছপালা, আবাদিজমি, বেলাভূমি, চরণভূমিতে বিচরণ করে। সচরাচর ছোট দলে ভাগ হয়ে দলগতভাবে বসবাস করে। মাঝে মাঝে এদের বিভিন্ন গাছপালা, আবাদি জমি, বৈদ্যুতিক তার এগুলোতে বসে থাকতে দেখা যায়।

এই পাখির আকার-আকৃতি প্রসঙ্গে এ গবেষক বলেন, এর দৈর্ঘ্য ২১ সেন্টিমিটার এবং ওজন ১৫ গ্রাম। পুরো দেহই সবুজ; মাথার চাঁদি, ঘাড় ও কাঁধ-ঢাকনি সোনালি, বাকি দেহ সবুজ। চঞ্চু কালচে। চোখ বরাবর কালো লাইন। গালে নীলচে আভা। গলায় সরু কালো লাইন। আর একটি বিশেষ দিক হলো- এ পাখিটির লেজের মাঝখানের পালক সুঁইয়ের মতো সরু ও লম্বা। তবে অপ্রাপ্তবয়ষ্ক পাখির ফ্যাকাসে গাল এবং সারাদেহ ফিকে সবুজ রঙের হয়ে থাকে।

প্রাকৃতিক পরিবেশের নানামুখী দূষণ, কীটনাকশ ব্যবহারসহ বনের গুণগত অবস্থা পরিবর্তন হচ্ছে বলেই নানা ধরণের কীটপতঙ্গ-পোকামাকড় আগের থেকে অনেক কমে গেছে। আর পোকা-মাকড়ের উপর নির্ভরশীল পাখিগুলো হুমকি মুখে পড়ছে বলে জানান প্রখ্যাত পাখিবিদ ইনাম আল হক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর