সত্যি মিথ্যে এবং গল্পের ঘনঘটায় পরীমণি

, ফিচার

তানিয়া চক্রবর্তী | 2023-09-01 21:44:49

এটা নিয়ে লিখতাম না.... কিন্তু মেয়েটির কান্নাটা দেখে লিখতে ইচ্ছে করলো। বাংলাদেশের দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালক অসাধারণ কথা বলেছেন পাড়ায় পাড়ায় ঘরে ঘরে বহু অন্যায়কারী বসে আছেন তাদের নিয়ে কোথাও কোনো প্রতিবাদের ঘনঘটা নেই।

যেহেতু একজন সুন্দর মেয়ে বিপাকে পড়েছে অতএব তাকে নিয়ে গল্প বানাও।

ধরেই নিলাম তার বিরুদ্ধে সমস্ত কথা সত্যি তাই বলে তাকে যেন অন্যায়ের শীর্ষস্থানীয় ক্রিমিনাল বানিয়ে দেওয়া হলো! সোশ্যাল মিডিয়া সমস্ত মানুষ তাকে নিয়ে মজা দেখছেন।

একটার পর একটা কাহিনী বেরিয়ে আসছে।হতেই পারে সত্যি কিংবা মিথ্যে কিন্তু এতে যে একটা অন্য অনুভূতির আনন্দ মানুষ পাচ্ছেন সেটা অস্বীকার করা যায় না! আমাদের মস্তিষ্ক অনেক সময় একটা স্বচ্ছতা হারিয়ে যা যা শুনেছি, বুঝেছি তার ওপর ভিত্তি করে চলতে থাকে.....এই অভ্যাসটা মনে হয় বদলে দেওয়া উচিত....

এই তো ৭ / ৮ বছর লিখছি,কেই বা চেনে কতজন বা চেনে কিন্তু  এইটুকু বৃত্তেই কত ধারণাহীন গুজব নিজেই শুনে তাজ্জব বনে যাই! যে যার মতো ধারাবাহিকতায় গল্প বানায়...কারণ এই শব্দভিত্তিক মনোহর পরিসরে সত্যি কষ্ট করে বোঝার চেয়ে মিথ্যের রসাস্বাদন অনেক সহজতর....

আমার কবি বন্ধুরা, বিশেষত মেয়েরা সেই একই কথা বলেন কত ক্ষেত্রে তারা বানানো হাস্যকর গল্পের উপাদান।

কেউ একাধিকবার বিয়ে করেছেন তাকে কটাক্ষ, কাউকে কোথাও কারো সঙ্গে কফি খেতে দেখা গেছে, কেউ কোথাও কারো পাশে দাঁড়িয়েছে, কারো ডিভোর্স হয়েছে, কারো বাবা -মা সঙ্গে নেই ইত্যাদি কত কত কথা! কথারমালা শুরু হলে আর যদি কোনোক্রমে মেয়েটি একটু আকর্ষণীয় হয় তাহলে তো কেল্লাফতে বানাও দেদার গল্প যত ইচ্ছে....

সাম্প্রদায়িকতা, শিশুপাচার, রেপ, খাদ্যেভেজাল এইসমস্ত ভয়ঙ্কর অন্যায় মানুষকে সতর্ক করতে পারে না কিন্তু মেয়ে সম্পর্কিত গল্প হলে তা টানটান করে দেয় মানুষজনকে! কেন আমরা যতখানি খারাপটা শুনি ততখানি জোর দিয়ে ভালটা শুনি না কেন??? কেন ভাবি না দুটোদিকই?

আমি শুধু দেখছিলাম পরীমণির লাইভটি, সে মেয়েটি সত্যি মিথ্যে ন্যায় অন্যায় যাই করুক তার বিচারযোগ্য না হলেও বিচার হবে এটাই সামজিকতা।

সে কথা থাক আমি দেখছিলাম পাবলিক কমেন্ট ও প্রতিক্রিয়া ...মানুষ কত বিকৃত হলে ক্রমাগত খারাপ কথা ও খিল্লির পর খিল্লি ও অশ্লীল মন্তব্য পেশ করতে পারে একটা আপাত চাক্ষুষ ভাবেও একটি মেয়েমানুষের অসহায় অবস্থা দেখে!

ফলত তথাকথিত শিক্ষা ও অশিক্ষা দুটোরই দুরবস্থা বড় প্রকট।

মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীর অনেক অনেক ভাল কাজ দেখেছি, তার জন্যই বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে একজন অভিনেত্রীকে ধরতে এত সরঞ্জামের প্রয়োজনকে আটকে দিলে ভালো হত। খুব শান্ত একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে কী যাওয়া যেতোই না?

এমনি মেয়েরা অনেকক্ষেত্রে কেবল ভয়েই আটকে গেছে জীবনের অনেক সম্ভাবনা নিয়ে! এই ঘটনা দেখে কী কোনো মেয়ে ভয় পাবে না আগামীদিনে তারা কী ভাববে না যদি যড়যন্ত্রের স্বীকার হই!

একটি শিশুকে তারা কোনো বাবা -মা মেরে ধরে শাসন করেন কেউ বা ভালবেসে বুঝিয়ে। উদ্দেশ্য যদি সাধু, প্রক্রিয়াকে নিয়ে ভাবা উচিত।

অযথা শব্দ,কাহিনী, গল্প একজন সুস্থ মানুষের জীবন তছনছ করে দিতে পারে, সেখানে কেউ যদি এলোমেলো হয় তার ক্ষতির সম্ভাবনা আরো বাড়ে!

সে পরীমণি বড় সারির অভিনেত্রী হোক, খুব ছোট কেউ হক কিম্বা পর্নো স্টার যাই হোক না কেন তাকে যদি অন্যায়কারীর রানী বানানো হয় তাকে সাহায্যকারীদের নাম নেই কেন? অন্যায় সমাজে একক ভাবে ঘটে না।আর যখন অন্যায়ের ক্ষুদ্র পরিসরে মহা আয়োজন করে বিচার হয় তখন লুকোনা ক্রাইমরা হাসতে থাকে আরো বেড়ে ওঠার প্রশ্রয় পেয়ে।

অন্যান্য অন্যায়ের যথাযথ বিচার করা হলে এটা নিয়ে বাড়াবাড়িতেও প্রশ্ন উঠত না।

সারল্য ও সৌন্দর্য্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় কারণ চারপাশ তার ব্যবহারকারী হয় পরিপোষক হয় না....এটাই অনেক ধ্বংসের কারণ।

সিনেমাটির নাম "ট্রায়াল বাই ফায়ার" ---একজন বাবা তার তিন শিশুকে হত্যার দায়ে বিচারে মৃত্যুদণ্ড পেল। শেষে বোঝা যায় তিনি নির্দোষ কিন্তু তবুও তার বিচারে মৃত্যু হয় কারণ ছেলেটি মদ খেতো, ঝগড়াঝামেলাও করত। তো কোনো স্বচ্ছতার দরকার নেই, মানুষ ভাবল এরম ছেলে সন্তানকে খুন করতেই পারে! আন্দাজে, ধারণায় প্রতিবেশীরা তাকে খুনির তকমা দিল। শেষে দেখা যায় প্রশাসন সব বুঝেও শুধু নিজস্ব তাগিদে ছেলেটির মৃত্যু হতে দেখল।

ফলে আমরা নিজেরাই বিচারের অযোগ্য আর বসেছি বিচারকের আসনে....।

লেখক পরিচিতি:

তানিয়া চক্রবর্তী, মেইল- chak.taniya@gmail.com

কাব্যগ্রন্থ -) কিছু একটার জন্য (পাঠক প্রকাশনী, ২০১৩কলকাতা বইমেলা) ২) পুরুষের বাড়ি মেসোপটেমিয়া (সৃষ্টিসুখ প্রকাশনী, ২০১৫ কলকাতা বইমেলা) ৩) রাহুকেন্দ্রিক ঋতুকাল (শুধু বিঘে দুই প্রকাশনী, ২০১৬) ৪) লম্পট-(ছোট কবিতা প্রকাশনী, বাংলাদেশ একুশে বইমেলা ২০১৭)৫/ আমিষ বিবাহ (২০১৭ নভেম্বর, আত্মজা প্রকাশনী) ৬/ জুনিপোকার আলোয় বাঁধা ঘর (কারিগর প্রকাশনী ২০১৮) ৭/ পুতুল মানুষ (সিগনেট ,২০১৯)

গদ্যগ্রন্থ- কাঠপুত্‌লির বৈতরণি ও অন্যান্য (বই তরণি প্রকাশনী ২০১৮) ২০১৬ তে কালিমাটি পত্রিকার “সমকামীতা-রূপান্তরকামীতা” ও ২০১৭ তে “অতিপ্রাকৃত” এই বিশেষ সংখ্যা সম্পাদনা। আত্মজা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত পূর্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য্য বিরচিত “মহাভারত ও অন্যান্য” বইটির সম্পাদনা। 

সম্মাননা -১/কালকথা পত্রিকার সৌজন্য “কালকথা সম্মান ২০১৪”। ২/ ইতিকথা পত্রিকার সৌজন্য “ইতিকথা যুব সম্মান ২০১৬”। ৩/শব্দসাঁকো সাহিত্য সম্মাননা ১৪২৪। ৪/ বিনয় মজুমদার সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্রের “চাকা সাহিত্য সম্মান ২০১৭”। ৫/রাঢ় বাংলা আন্তরিক সম্মাননা ২০১৮ ইত্যাদি। ৬/ভাষানগর মল্লিকা সেনগুপ্ত পুরস্কার, ২০১৯। ৭/সময়ের শব্দ স্মারক সম্মান ৮/ বসিরহাট লিটল ম্যাগাজিন মেলা পদ্য পুরস্কার ২০২০।

এ সম্পর্কিত আরও খবর