ইতিহাস গড়ল আওয়ামী লীগ

বিবিধ, নির্বাচন

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-09 20:11:56

টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে নতুন ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে টানা তৃতয়ীবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। একই সঙ্গে সব মিলিয়ে চতুর্থবার আর টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ওয়াজেদ, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড। আর সপ্তমবারের মতো সংসদ সদস্য হওয়ায় দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চবার জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

রোববার (৩০ ডিসেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সারা দেশে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে ভোট গ্রহণ হয়। এবারের নির্বাচনে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল (৩৯টি) অংশ নেয়। গত ৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এরপর ঘোষিত পুনঃতফসিলে ভোটের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর করা হয়।

নির্বাচনি সহিংসতায় সারাদেশে ১২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে নির্বাচন কমিশন। অনিয়মের কারণে নির্বাচনে প্রায় ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২২টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। তবে কোনো কোনো সংসদীয় আসনের ফল স্থগিত হয়নি।

নির্বাচনের ২৯৯টি আসনের মধ্যে বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত ২৯৯ আসনের ২৬৫টিই পেয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। মাত্র নয়টি আসনে জয়লাভ করেছে ঐক্যফ্রন্ট। অপরদিকে ২২টি আসন জিতেছে জাতীয় পার্টি। মহাজোটের জেতা ২৬৫ আসনের মধ্যে এককভাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ২৫৯ জন। আর ঐক্যফ্রন্টের জেতা ৯ আসনের মধ্যে সাতটি বিএনপির। এছাড়াও স্বতন্ত্র দুইজন প্রার্থী জয়লাভ করেছেন।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধারাবাহিক জয়ের সূচনা করেছিল আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে ২৬৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী ২৩০ আসনে জয় পেয়েছিল। প্রতিপক্ষ বিএনপি ২৬০ আসনে লড়াই করে ৩০টিতে জয় পেয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। ওই নির্বাচনে ২৪৭ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগ ২৩৪টিতেই জয় পেয়েছিল।

নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ভোটগ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় ফলাফল ঘোষণার আগে বলেন, সারদেশে ভোট উৎসব হয়ে গেলো। তিনি বলেন, ২৯৯টি আসনে ৪০ হাজারের মতো কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে গোলাযোগ ও অন্যান্য কারণে ২২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। বাকি সকল কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ও ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণের মধ্যে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সারাদেশে কিছু সহিংস  ঘটনা ঘটেছে। এসব কমিশনের নজরে এসেছে। প্রত্যেকটি ঘটনা তদন্ত করে আইনানুগ করে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন। তিনি বলেন, সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে; যাতে ভোটকেন্দ্র থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে নিরাপদে ফল পৌছানো যায়।

গত ৮ নভেম্বর এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিএনপি, যুক্তফ্রন্টসহ কয়েকটি দলের দাবির মুখে পুনঃতফসিল ঘোষণা করে ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করা হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মারা যাওয়ায় গাইবান্ধা-৩ আসনে আগামী ২৭ জানুয়ারি ভোটের পুনঃতফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।

ইসি সূত্র জানিয়েছে,  এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে ২৭২জন ও বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ২৮২জন লড়েছেন। এর মধ্যে সরাসরি আওয়ামী লীগ দলীয় ২৬০জন ও বিএনপির ২৫৭জন (জামায়াতের ২২জনসহ) প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা বাকিরা জোটভুক্ত শরিক দলের। এ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলে থাকা ৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ধানের শীষ প্রতীকে লড়েছেন। পক্ষান্তরে মহাজোট ও ১৪ দলীয় জোটে থাকা ৪টি দল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেছেন।

এদিকে বিশ্বের দীর্ঘমেয়াদী সরকার প্রধানের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর দলের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম নির্বাচনে অংশ নেন ১৯৮৬ সালে। মিডিয়া ক্যু করে এরশাদের সামরিক সরকার আওয়ামী লীগকে হারিয়ে দেয়। ওই তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মত বিরোধী দলীয় নেতা হন শেখ হাসিনা। পরে, স্বৈরাচার পতনের পর ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদেও তিনি বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসেন। ১৯৯৬ সালে সপ্তম সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। ২০০১ সালে অষ্টম সংসদে তিনি আবারো বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন। এরপর, ২০০৮ সালে নবম ও ২০১৪ এর দশম সংসদে তিনি বিজয়ী হয়ে টানা ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে দেশকে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর