কসবা সীমান্ত হাটে লোকসানে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

আল মামুন, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 16:43:46

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: কিছুদিন আগে জমজমাট থাকলেও বর্তমানে জমে উঠছে না ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ মালিকানাধীন সীমান্ত হাট। কৌশলে অধিকাংশ লোকজনকে হাটে আসতে দিচ্ছে না ত্রিপুরার সীমান্তে নিযুক্ত নিরাপত্তারক্ষীরা। আর এতে করে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা পড়েছে লোকসানে। প্রতিদিন লোকসানে পড়া ব্যবসায়ীরা হাটে আসতে আগ্রহ হারাচ্ছে। তাই তাদের দাবি, দুই দেশের নীতি নির্ধারকরা বিষয়টি সুরাহা করবেন। অন্যথায় হাটে আসবে না বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সীমান্তের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে যাদের বাড়ি তাদের জন্য বেচাকেনার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে দু’দেশের যৌথ মালিকানায় সীমান্ত হাট নির্মিত হয়। কসবায় ২০৩৯নং পিলার সংলগ্ন কমলাসাগর দীঘির উত্তরপাড়ে তারাপুরে ২০১৫ সালের জুন মাস থেকে সপ্তাহের একদিন সীমান্ত হাট বসে। বাংলাদেশের ৬৯.৬৬ শতাংশ ও ভারতের ৬৯.৬৬ শতাংশ ভূমিতে বসছে এই হাট। সীমান্ত হাটে বাংলাদেশের ২৫ ও ভারতের ২৫ জন ব্যবসায়ী নির্ধারিত পণ্য দ্রব্য বিক্রয় করছে।

বাংলাদেশ সময় রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলে হাটের কার্যক্রম। বিকিকিনি হচ্ছে বাংলাদেশের ১৫ ও ভারতের ১৬টি পণ্য। ভালোই চলছিল সবকিছু। এরই মধ্যে হঠাৎ করে কয়েক মাস যাবৎ ত্রিপুরার সীমান্তরক্ষীরা তাদের দেশের সীমান্তের ৫ কিলোমিটারের ভেতরের লোকজনকে ছাড়া অন্যকাউকে হাটে ঢুকতে দিচ্ছে না। এছাড়াও মাত্র ২৫-৩০ জনকে হাটে ঢুকতে দিচ্ছে। এতে করে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা পড়েছে লোকসানে। ভারতীয় লোকজনের আসা কমে যাওয়ায় তাদের ব্যবসা বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে ধস।

এদিকে বাংলাদেশি পর্যটকরা অহরহ হাটে ঢুকতে পারায় দেরারসে বিক্রি করছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। তাই লোকসানে পড়েছে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।

সীমান্ত হাটে বাংলাদেশি কাপড় ব্যবসায়ী অলিউল্লাহ সরকার অতুল বার্তা২৪.কমকে বলেন,‘আগে প্রতি হাটে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বেচাকেনা হতো। বর্তমানে সেখানে প্রতি হাটে মাত্র ৫শ থেকে ৮শ টাকা বেচাকেনা হচ্ছে। এছাড়া আমাদের হাটে আসা যাওয়া ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি হাটে লোকসান হয় দুইশ থেকে পাঁচশ টাকা। অচিরেই বিষয়টি সুরাহা করে হাটে দু’দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমতা ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি।’

বাংলাদেশি শুঁটকি ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ চন্দ্র দাস বার্তা২৪.কমকে জানান, এভাবে হাটে লোকসান গোনার চাইতে না আসাই ভালো। ভারতীয় পর্যটক কমে যাওয়ার কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ত্রিপুরার সীমান্তরক্ষীরা তাদের দেশের পর্যটকদের হাটে ঢুকতে না দেয়ার কারণে ব্যবসায় এমন ধস নেমেছে।

জাহাঙ্গীর নামে এক ক্রোকারিজ ব্যবসায়ী বার্তা২৪.কমকে বলেন,‘বার বার আমাদের দেশের নীতি নির্ধারকদের বলেও কোনো লাভ হচ্ছে না। আমরা এভাবে লোকসান গুনতে হাটে আসিনি। আমরা চাই আবারো এই হাটটি জমে উঠবে। এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সুরাহা করার জন্য চেষ্ট করবেন। অন্যথায় আমরা হাটে আর নাও আসতে পারি।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান বার্তা২৪.কমকে জানান, শুধু ব্যবসায়িক উদ্দেশে নয়, ভারত বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটিকে আরও জোরদার করার জন্যই এই বর্ডার হাট। তারপরেও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। আসা করা যায় খুব দ্রুতই দু’দেশের নীতি নির্ধারকরা বিষয়টির সুষ্ঠু সুরাহা করবেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর