মফস্বলের সড়কে আরেক মৃত্যু ঝু্ঁকি!

, যুক্তিতর্ক

মোস্তফা কামাল, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 00:09:03

সড়কপথে এখন সহজলভ্য দুটি প্রধান বাহন হচ্ছে সিএনজিচালিত ও ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা। বাহনগুলো এখন মারাত্মক ঝুঁকির ভেতর দিয়ে চলাচল করছে। বিশেষ করে মফস্বলের জনচলাচল ব্যবস্থায় সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, সিএনজি গ্যাসের বদলে এলপি গ্যাসে চলাচলকারী এইসব যান ভয়ঙ্কর বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কে বিদ্যমান নৈরাজ্য দূর করার ক্ষেত্রে লাইসেন্সবিহীন, অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক এবং ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি এলপি গ্যাসের ব্যবহার কঠোর হস্তে দমন করা দরকার।

কিশোরগঞ্জের অভিজ্ঞতায় দেখতে পাওয়া যায়, মানুষজন যে কোন সময় যে কোন স্থানে যেতে চাইলেই হাতের কাছে পেয়ে যাচ্ছে এ দুটি বাহন। ফলে জেলার বিভিন্ন সড়কে এ দুটি বাহনের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর এ কারণে কেবল সড়কে তীব্র যানজট হচ্ছে তাই নয়, দুর্ঘটনাও বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি বিভিন্ন সিএনজিচালিত অটোরিক্সায় সিএনজি সিলিন্ডারের পাশাপাশি এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারও ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। এর ফলে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটারও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

কয়েকজন সিএনজিচালিত অটোচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ জেলা সদর বা শহরতলিতে কোন সিএনজি ফিলিং স্টেশন নেই। সিলিন্ডার খালি হয়ে গেলে তাদেরকে গ্যাস নিতে ছুটতে হয় ৪০ কি.মি দূরে ভৈরবে অথবা ময়মসিংহ জেলার বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে। ফলে তাদের পোষায় না। কারণ প্রত্যেক অটোরিক্সার যাত্রী পরিবহনের নির্দিষ্ট রুট থাকে। ভৈরব বা ময়মনসিংহে গ্যাস আনতে গেলে যাত্রী নিয়ে যাওয়া যায় না, আবার ফেরার পথেও খালি গাড়ি নিয়ে ফিরতে হয়। আর সেই কারণেই তারা এলপি গ্যাস ব্যবহারের সহজ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। যাত্রীদের পেছনের যে আসনটি রয়েছে, এর পেছনে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারটি খাড়া করে বেঁধে রাখা হয়। গাড়ি যখন বন্ধ থাকে বা থেমে থাকে, তখন গ্যাসের  সরবরাহ লাইনের চাবিটি ঘুরিয়ে গ্যাস বন্ধ রাখা হয়। গাড়ি চলার সময় আবার সরবরাহ লাইন চালু করে দেয়া হয়। যাত্রীরাও এর জন্য সবসময় চরম উৎকন্ঠায় থাকেন। এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বললে কয়েকজন অটোচালক জানান, এখন পর্যন্ত কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। আর কপালে লিখা থাকলে সিএনজির সিলিন্ডারেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

এ ব্যাপারে জেলা বিআরটিএ’র সহকারি পরিচালক প্রকৌশলি শফিকুল আলম সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জানান, এ ধরনের এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ ব্যাপারে অনুসন্ধান চালানো হবে। যেসব সিএনজিচালিত অটোরিক্সায় এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হবে।

সম্প্রতি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভায়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এলপি গ্যাস ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সড়ক নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে তীব্র জনক্ষোভ ও অচলাবস্থার প্রেক্ষাপটে শুধু ঢাকা নয়, পুরো দেশের যানবাহনের বিপজ্জনক সমস্যাগুলো খতিয়ে দেখা দরকার। প্রয়োজন একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিশন করে বিভিন্ন ধরনের সড়ক দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সময়ের দাবি। আমরা যে কোন মূল্যে নিরাপদ সড়ক চাই এবং সড়কে প্রতিদিন আহত-নিহতের বিভৎস চিত্র দেখতে চাই না।

সভাপতি, জেলা প্রেস ক্লাব, কিশোরগঞ্জ, সিনিয়র সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর