হোটেল ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় দুই লাখ এমপ্লয়ি প্রয়োজন – ড. বদরুজ্জামান ভুঁইয়া

, যুক্তিতর্ক

মারিয়া রিমা | 2023-09-01 11:02:08

ড. বদরুজ্জামান ভুঁইয়া নিউলি আ্যপোয়েনটেড চেয়ারম্যান, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, ফ্যাকাল্টি অব বিজনেস স্টাডিজ, ঢাকা ইউনিভার্সিটি। ডিপার্টমেন্ট, ট্যুরিজম, ক্যারিয়ার ইত্যাদি বিষয়ে বার্তাটোয়েন্টিফোরের পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মারিয়া রিমা

২০০৭ সালে ঢাকা ইউনিভার্সিটি বিজনেস ফ্যাকাল্টির অন্তর্ভুক্ত হয় ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট। ড. বদরুজ্জামান ভুঁইয়া সরাসরি এই ডিপার্টমেন্টের রিক্রুটেড টিচার হিসেবে জয়েন করেন ২০০৯ সালে এবং রিক্রুটেড টিচারদের মধ্যে তিনিই প্রথম বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত হন।

ড. বদরুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন,

আমি যে ডিপার্টমেন্টে জয়েন করেছি সে ডিপার্টমেন্টে আজ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিতে পেরেছি। এই পার্সপেক্টিভে আমার যারা সহকর্মী আছেন তারা হ্যাপি এবং আমি নিজেও খুবই আনন্দিত। আমি মনে করি এখানে আমার কন্ট্রিবিউশন এবং কাজ করার অনেক সুযোগ আছে।

ঢাকা ইউনিভার্সিটি বা যে কোনো গুরু দায়িত্বে এত বড় পোস্টে ইয়াংদের দেখতে পাওয়া যায় না। এই ব্যাপারে আপনার মতামত জানতে চাই।

দায়িত্ব যে কাউকে নিতেই হয়। দায়িত্বের সময় সুযোগ আসলে সে দায়িত্বের ভার পালন করতে হয়। ইয়াং বললে বলতে হয়, ঢাকা ভার্সিটি এবং বিভিন্ন ভার্সিটিতে আমার শিক্ষকতার প্রায় ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা। ১৪ বছর খুব কম সময় না। বিভিন্ন ভার্সিটিতে এবং ঢাকা ভার্সিটিতে আমার কাজ করার অভিজ্ঞতা দিয়ে এবং ভবিষ্যতে আমি আমার কাজের মাধ্যমে দায়িত্বের প্রমাণ দেবো।

ডিপার্টমেন্টের এক্স-স্টুডেন্ট হিসেবে আমরা দেখেছি আপনার ক্যারিয়ার গ্রাফ দ্রুত উন্নতি করেছে মানে আপনি প্রতিটা স্টেপে সফল এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে এগিয়ে গেছেন। আপনার সফলতার পেছনের কারণগুলো কী?

আমার চেষ্টা এবং যে কোন ব্যাপার নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ আমাকে কাজে সফলতা দেয়। আমি যেখানেই যে কাজে যাই সবসময় বিদ্যমান পরস্থিতির স্ট্রেংথ্, অপরচুনিটি এবং প্রবলেমগুলো কী তা নিয়ে চিন্তা করি। সেক্ষেত্রে কী করা যায়, কী করতে হবে, কী করা উচিত এমন ভাবনা আমার ভেতর সবসময় কাজ করে। ভাবনার সমাধান আমার সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

আপনার ক্যারিয়ার হিস্ট্রি জানতে চাই স্যার।

আমার স্কুল, কলেজ ভার্সিটি জীবনে আমি খুব পরিশ্রম করে গেছি। ছোটবেলা থেকে এ বিষয়টা বেশি গুরুত্ব দিয়েছি—ক্লাসে কিভাবে ফার্স্ট হওয়া যায়, পজিশনে থাকা যায়, আলোচনায় থাকা যায়। ঢাকা ভার্সিটিতে জয়েন করার আগে আমি জগন্নাথ ভার্সিটিতে ২০০৮ সালে শিক্ষকতা করেছি। তার আগে আরেকটি পাবলিক ইউনিভার্সিটি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানে আমি ডিপার্টমেন্টের দায়িত্ব পালন করেছি, আমি সেখানে সহকারি প্রকটর ছিলাম। সর্বপ্রথম আমি একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেছি। ধীরে ধীরে একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমি আজকের অবস্থানে এসেছি।

আপনি একজন সংগঠক এবং রাজনীতি কর্মী। আপনি কি মনে করেন রাজনীতি সফলতার চাবি হিসেবে কাজ করে?

রাজনীতি করলে অনেক মানুষের সাথে মেশা যায়, অনেক শেখা যায়, অনেক মানুষের সাথে কানেক্টিভিটি বিল্ডআপ হয়। আমি মনে করি এটা আমার প্লাস পয়েন্ট। আমার বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলের সাথে যোগাযোগ আছে। ডিপার্টমেন্টের উন্নয়ন উন্নতির জন্য এই কানেক্টিভিটি খুব ইমপর্টেন্ট। সুতরাং রাজনীতিটাও আমার জন্য আমি মনে করি সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।

আপনি দেশে বিদেশে অনেক টুরিজম ডেসটিনেশান ঘুরে দেখেছেন। বাংলাদেশে এর ভবিষ্যৎ কী দেখতে পান?

বাংলাদেশে এর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। আমাদের দেশ একটা সমতল বেষ্টিত দেশ। আমাদের মুনসুন ওয়েদার। অনেক দেশের মতো ছয় মাস বরফ বেষ্টিত, খুব শীত বা তাপমাত্রা বেশি এমনও না। যার জন্য টুরিস্টরা আমাদের দেশ খুব পছন্দ করবে এবং আমি মনে করি পর্যটকদের জন্য আমাদের দেশ স্বর্গ হিসেবে কাজ করবে।

ঢাকা ইউনিভার্সিটি ট্যুরিজম ডিপার্টমেন্ট দেশের ট্যুরিজমে কী ভূমিকা পালন করছে?

ঢাকা ইউনিভার্সিটি দেশে প্রথম পর্যটন শিক্ষা চালু করে। আমাদের টিচাররা দেশে বিদেশে বিভিন্ন জার্নাল, পত্রিকায় বিভিন্ন সেমিনার, কনফারেন্সে বাংলাদেশের পর্যটনের সম্ভাবনা, সমস্যা নিয়ে আলোচনা, গবেষণা করে যাচ্ছে। আমাদের স্টুডেন্টরা যারা পাস করে বের হয়েছে তারা দেশের পর্যটনে ইন্ডাস্ট্রিতে সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

এখন দেশের অনেকগুলো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে এবং ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতেও ট্যুরিজম ডিপার্টমেন্ট চালু হয়েছে। ট্যুরিজমের স্টুডেন্টদের ভবিষ্যৎ কতটা উজ্জ্বল হবে বলে আপনি আশা করেন?

তাদের ভবিষ্যৎ খুবই ভালো। এ মুহূর্তে আমার কাছে যে স্ট্যাটিস্টিক আছে, হোটেল ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় দুই লাখ এমপ্লয়ি প্রয়োজন। আমাদের স্টুডেন্ট সে অনুযায়ী নাই বলা চলে। হোটেলিয়াররা এমপ্লয়ি খুঁজছে। বিভিন্ন পর্যটন সেক্টরগুলো কাজ করার জন্য লোক চাওয়া হচ্ছে কিন্তু আমরা সে পরিমাণ দিতে পারছি না। এ সেক্টরে যদি তারা কাজ করে তাদের ক্যারিয়ার তাদেরকে অনেক দূর নিয়ে যাবে।

ট্যুরিজম ডিপার্টমেন্টগুলোতে থিউরিটিক্যাল পড়াশোনার পাশাপাশি প্র্যাকটিক্যাল শিক্ষা গুরুত্বের সাথে রাখা হয় বা হচ্ছে কিনা যেহেতু ট্যুরিজম প্র্যাকটিক্যাল নির্ভর সাবজেক্ট?

থিউরিটিক্যালের পাশাপাশি প্র্যাকটিক্যাল শিক্ষা কিভাবে ডেভেলপ করা যায় এ ব্যাপারে আমরা খুবই গুরুত্ব দিচ্ছি। NHTTI এবং ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে বিভিন্ন হোটেলের সাথে, পর্যটন সংশ্লিষ্ট যে অর্গানাইজেশনগুলো আছে—বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এই সেক্টরগুলোতে আমাদের স্টুডেন্টদের পাঠাচ্ছি প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিংয়ের জন্য। আমরা আমাদের নিজস্ব ল্যাবের জন্য কাজ করছি। ইউজিসির সেক্টরকে ইনক্লুড করেছি যে কিভাবে ল্যাবগুলোকে সাজাতে পারি, উপযোগী করে তুলতে পারি। প্রজেক্টটা কমপ্লিট হয়ে গেলে আমাদের স্টুডেন্টদের বাইরে যেতে হবে না আর ট্রেনিংয়ের জন্য।

ঢাকা ইউনিভার্সিটির ট্যুরিজম ডিপার্টমেন্টের বয়স খুব কম। ডিপার্টমেন্টের উত্থান পতন বা গড়ে ওঠার পেছনে বিভিন্ন শিক্ষকের, আপনাদের অবদান আছে। আপনার কাছ থেকে এমন ক’জনের নাম শুনতে চাই।

সুন্দর প্রসঙ্গ। এই ডিপার্টমেন্টের শুরু থেকে যারা কাজ করেছেন তাদের আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে চাই। যেমন : প্রফেসার সৈয়দ রাশিদুল হাসান স্যার, যিনি পর্যটনের আইকন বাংলাদেশের, গুরু হিসেবে যাকে চিহ্নিত করা হয়। দেশে বিদেশে তাঁর অনেক সুনাম, সম্মান আছে। আমাদের ডিপার্টমেন্টে আছেন প্রফেসার আফজাল হোসাইন স্যার উনি পর্যটন নিয়ে নিত্তনৈমিত্তিক কাজ করে যাচ্ছেন। প্রফেসর শাকের আহমেদ স্যার, উনি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, প্রফেসর আশরাফুল ইসলাম চৌধুরী উনিও সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন, প্রফেসর মুবিনা খন্দকার ছিলেন এবং প্রফেসর মুজিব আহমেদ স্যার আছেন। উনারা সবাই এই ডিপার্টমেন্টের জন্য, দেশের পর্যটনের জন্য কাজ করছেন।

বাংলাদেশের ট্যুরিজম সেক্টরের উন্নতিতে কোন কোন বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন আপনি?

আমার প্রথম সাজেশন হলো, একটা পর্যটন ম্যাপ, একটা মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা যেটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আছে। নাম্বার টু, পর্যটন সেক্টরে যারা কাজ করছে তারা যেন আরো ইফেক্টিভলি, ইফিশিয়েন্টলি কাজ করতে পারে সে ব্যাপারে গভঃমেন্টকে নজর দিতে হবে, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। থার্ড, টুরিস্ট গাইড তৈরি করতে হবে। পর্যটনের লোকেশান, ইনফরমেশন সহজলভ্য করার জন্য ওয়েবসাইটগুলো ডেভেলপ করতে হবে।

আপনার ভবিষ্যৎ কর্ম পরিকল্পনা কী? নিজেকে কোন জায়গায় দেখতে চান।

আমি বর্তমানকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে যাই এটাকেই আমার ভবিষ্যতের পুঁজি মনে করি। আজ আমি যে জায়গায় আছি এখানে সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারলে ভবিষ্যতে অন্য আরেকটা জায়গায় বা আরেকটু বড় জায়গায় কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। সুতরাং আমার বর্তমানকে সুনামের সাথে, সবাইকে নিয়ে একত্রে কাজ করাকে আমার সফলতা মনে করি।

সম্প্রতি আপনি এসিস্ট্যান্ট প্রকটর হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। এত দায়িত্বের মাঝে শিক্ষক হিসেবে ক্লাসরুম এবং স্টুডেন্টেরদের সাথে সম্পর্ক বিষয়াদি কিভাবে মেইনটেইন করবেন বা করছেন?

আমাদের কাজ হলো দায়িত্ব পালন করা। ক্লাসে, ডিপার্টমেন্টে, ইউনিভার্সিটিতে প্রতিটা কাজ কিন্তু ইন্টার-রিলেটেড, একই জায়গায়। সুতরাং একই জায়গার কাজ যেহেতু তাই আমি মনে করি, আমার সব দায়িত্ব পালন করতে কোনো সমস্যাই হচ্ছে না। আমি বরং এনজয় করছি। যখন ক্লাসরুমে তখন ছাত্রদের সাথে, যখন ডিপার্টমেন্টে থাকি তখন টিচারদের সাথে, যখন সহকারি প্রকটর হিসেবে ইউনিভার্সিটিতে মুভমেন্ট করছি তখন সেখানে সে কাজের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।

ইয়াং যারা আপনার মতো সফল হতে চায় তাদের কী পরামর্শ দেবেন?

চেষ্টা, চেষ্টা, চেষ্টা। পরিশ্রম এবং একাগ্রতা। কাজের প্রতি একনিষ্ঠতা। এবং খুবই অপটিমিস্টিক, নিজের ভেতর কোনো নেগেটিভিটি যেন কাজ না করে এবং ভিশনারি হওয়া। জীবনে চ্যালেঞ্জ আসবে, বাধা বিপত্তি আসবে সেখানে ডিমোটিভেটেড না হয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

আপনার সফলতার পেছনে কার কার ভূমিকা রয়েছে? আপনি কাউকে আইডল ভাবেন কিনা?

আমার বাবা একজন ভিশনারি মানুষ ছিলেন। আমার ফ্যামিলি সবসময় আমাকে গাইড করত এখনো করে যাচ্ছে। সবসময় ভালো কিছু করতে হবে, বড় হতে হবে। কিন্তু আমার পরিবার কখনো এই শিক্ষা দেয়নি যে, অন্যের ক্ষতি করে বড় হতে হবে। চেষ্টার মাধ্যমে বড় হওয়াটা আমাদের পরিবারের শিক্ষা ছিল। এককথায় বলতে গেলে, যখন কেউ সফল হয় তখন আমি তাকে আইডল ভাবি। যেমন, যখন আমি ফুটবল খেলা দেখি, যে সফলভাবে এগিয়ে যায় তাকেই আমি আইডল মনে করি। সফল মানুষদের দর্শন, এগিয়ে যাবার গল্প আমি পড়ি।

থ্যাংক ইউ স্যার। অনেক ব্যস্ততার মধ্যে সময় দিয়েছেন।

তোমাকেও ধন্যবাদ। তোমার বই আমাকে দিবে। আমি কবিতা পড়তে পছন্দ করি। ক্রিয়েটিভিটি আমার ভালোলাগে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর