উন্নয়নের শোভাযাত্রায় পদদলিত মানুষ

, যুক্তিতর্ক

ফিরোজ আহমেদ | 2023-08-26 16:17:00

পুঁজিবাদে-পুঁজিবাদেও বিস্তর ফারাক আছে। দেশের মানুষকে আপনি যদি কেবল সস্তা শ্রমিক হিসেবে ভাবেন, যাদের জীবনশক্তি নিংড়ে নেয়াটাই হবে মালিকের লক্ষ্য, রাষ্ট্রের কাজ ভাবেন এই বন্দোবস্তটাকে স্থায়ী করা—তাহলে আপনি দেশের কৃষককে দেবেন সবচেয়ে কম দাম। মানুষের চাহিদা ঠেকবে তলানিতে, এবং বাড়লেও বাড়বে খুব ধীরে। তখন আপনি পাবেন সবচেয়ে সস্তা শ্রমিক, কেননা নিজের জমিতে টিকে থাকতে অক্ষম চাষার সন্তানরাই শ্রমিকদের অফুরান উৎস। এই সস্তা শ্রম কিনতে আসবে কিছু দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারী। শ্রমিকের চাহিদার তুলনায় শ্রমিকের যোগান বিপুল থাকার কারণে শ্রমের দাম বাড়বে যথাসম্ভব ধীর গতিতে।

আবার আরেকদিকে, আপনি যদি দেশের মানুষকে সম্ভাব্য ক্রেতা হিসেবে ভাবেন, যার চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে আপনার নিজস্ব বাজার তৈরি হবে, সেই বাজারের চাহিদা মেটাবার মধ্য দিয়ে নিজস্ব শিল্পভিত্তি তৈরি করার সামার্থ্য-অভিজ্ঞতা এবং প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হবে, তাহলে আপনাকে ভিন্ন পথ ধরতে হবে। এখানেও শ্রম শোষণ হবে, কিন্তু রাষ্ট্রের লক্ষ্য থাকবে শ্রমিকের মজুরি ন্যূনতম কী হারে বাড়লে তার বাড়তি চাহিদাকে উপজীব্য করে দেশীয় শিল্পের ভিত্তি সৃষ্টি হবে, কৃষকের মুনাফা কী হারে বাড়লে গ্রামীণ বিশাল বাজারে চাহিদা সৃষ্টি হবে।

চীন-কোরিয়া-ভিয়েতনাম, এমনকি পুরনো জাপানও দ্বিতীয় ধরনের কায়দাটি কমবেশি অনুসরণ করেছে তাদের ইতিহাসে। ফলে স্থানীয় জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা ক্রমাগত হারে উচ্চ থেকে উচ্চতর মাত্রায় বেড়েছে। জাপানে এটা সম্ভব হয়েছে শাসকদেরই উদ্যোগে, সংস্কার প্রক্রিয়ায়। কোরিয়াতে এটা সম্ভব হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধত্তোর রাজনৈতিক মেরুকরণের কারণে, এবং শক্তিশালী শ্রমিক আন্দোলনের চাপের মুখেও। চীন-ভিয়েতনামে সম্ভব হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বাধীন জাতীয় জাগরণের কল্যাণে। মানে এই দুই দেশে শ্রমিকদের নেতৃত্বই পুঁজিবাদী শিল্পভিত্তি গড়েছে, জাতীয় বিপ্লব তারা সম্পন্ন করেছে। ভারত-বাংলাদেশ-পাকিস্তানে প্রথম ধরনের কায়দা অনুসরণ করা হয়েছে। মানুষ সেখানে সস্তা কাঁচামালের চাইতে বেশি কিছু না। ফলে জীবনমানের এই বৃদ্ধিটা ঘটেছে খুবই ধীর গতিতে।

২.
বছর দুয়েক আগে ২ জানুয়ারি ২০১৬ পত্রিকায় দেখলাম, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আলোচনাসভার প্রতিবেদন : সিলেট বিভাগে ৫০ ভাগ শিশু খর্বদেহ নিয়ে জন্মায়। এদিক দিয়ে বিশাল কৃতিত্বের দাবি করা খুলনা বিভাগ, তাদেরও ২৮ ভাগ শিশু খর্বদেহধারী! জাতীয়ভাবে এই হার ৩৬ ভাগ, মানে প্রতি একশোটি শিশুতে ৩৬ টি শিশু, মানে তিন জনে একজনের বেশি খর্বদেহী।

কিন্তু এদিকে মোসাহেবদের কয়েকজনকে দেখেছি বাংলাদেশের নাগরিকদের গড় আয়ু বৃদ্ধি নিয়ে বাগাড়ম্বর করতে। তারা কি জানে, গড় আয়ু বৃদ্ধি দুনিয়াব্যাপী একটা সাধারণ ঘটনা? যুদ্ধবিধ্বস্ত না হলে কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত না হলে গড় আয়ু সব অঞ্চলেই বাড়ছে। একটু খোঁজ নিলেই দেখবেন, আইয়ুব খান, খালেদা জিয়া কিংবা শেখ হাসিনা কারো ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নেই গড় আয়ু বৃদ্ধির পেছনে। এটা একদিকে কতগুলো বৈশ্বিক প্রক্রিয়ার ফল, আরেকদিকে স্থানীয় পর্যায়ে প্রকৃতিকে আরো বেশি কার্যকরভাবে ব্যবহার করার, সামন্ত থেকে পুঁজিবাদী প্রক্রিয়ার উৎপাদন বৃদ্ধির ফল। কিন্তু একটু সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করলেই দেখবেন, এই প্রতিটা খর্বদেহী শিশুর সাথে শাসকদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের, লুটপাটের ধরনের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে।

এই উৎপাদনের প্লাবনের কালে এত এত ভবিষ্যত প্রজন্ম, তিনটিতে একটি, স্বাভাবিক আকার নিয়ে বেড়ে উঠছে না, কারণ সম্পদ তো সীমিত। আপনি যদি উড়াল সেতু বানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি খরচ করেন, সেটা তো কোনো না কোনো খাত থেকে কেটে যোগাতে হয়। আপনি যদি পদ্মাসেতু বানাতে বরাদ্দ কয়েকগুণ বাড়িয়ে নেন, সেটা কোত্থেকে আসবে? আসে তেলের দামের বাড়তি রাজস্ব থেকে, যার কারণে বেড়ে যেতে পারে শিশুর দুধের দাম। আসে আরো সব কল্যাণখাত কেটে ছেঁটে নেওয়ায়, যাতে গর্ভবতী মা রক্তহীন থেকে যেতে পারেন। এই টাকার যোগান হয় ৫৩০০ টাকার ন্যূনতম মজুরির যাঁতাকলে। এই টাকা আসে সর্বনিন্ম ৮০০০ টাকার সরকারি বেতনেও। বিদ্যালয় শিক্ষকরাও কি চুরি করে না পড়ালে স্বাস্থ্যবান সন্তানের পিতা-মাতা হতে পারবেন?

ফলে ভদ্রলোকরা উন্নয়নের ভাগ পেতে লুণ্ঠনটা নিয়ে চুপ থাকেন। শিশুদের হাড়-পাজরের চুরি যাওয়া অংশ দিয়ে বানানো উন্নয়নের খুঁদকুড়ো খেতে জড়ো হওয়ারা হয়তো কোনো সরকারি অর্থকরী প্রতিষ্ঠানের ‘এটাসেটা’ হওয়ার লোভে সত্যি কথাগুলো বলছেন না। বলছেন না কোনো পদপদবীর মূলো দেখে। কবি সাহিত্যিকরা কেন বলছেন না, জানি না। হয়তো তেমন ভালো সাহিত্যের উপাদান এগুলো নয়।

শ্রমিকদের আয়ের তুলনায় জীবনযাত্রা এত ব্যয়বহুল যে শহুরে পোশাক কর্মীদের একটা বড় অংশও তাদের সন্তানদের নিজেদের কাছে রাখতে পারেন না, গ্রামে মা বাবার কাছে পাঠান। অথচ ন্যূনতম মজুরি এমন হওয়া উচিত যেন, শ্রমিক তার সন্তানদের নিজের কাছেই রেখে যথাযথ শিক্ষা তাকে দিতে পারেন, আধুনিক নাগরিক সুবিধাগুলো যেন সে পায়। ভাববেন না এখন আর গ্রামে পুষ্টির কোনো স্বাভাবিক উৎস আছে। খেতের ধারে কোনো শাক এখন আর নেই। নেই নদীতে জাল ফেললেই মাছের রমরমা দিন। হয়তো এগুলো সব এলাকায় ততটা ছিলও না কোনো কালে। কিন্তু এখন আর কোনো এলাকাতেই গ্রামীণ পুষ্টির স্বাভাবিক সরবরাহ বলে কিছু নেই। সম্ভাব্য প্রতিটা ছটাক জমি এখন কোনো না কোনো ধরনের অর্থকরী উৎপাদনের আওতায়। প্রতিটা জিনিস আপনি কিনেই খান, ফলে গ্রামে টাকার সরবরাহ বাড়লেও সব চাহিদা মেটাতে গিয়ে অপুষ্ট শিশুর এই জাতীয় দুর্যোগ আমাদের ভবিতব্য হয়ে দাঁড়াল।

৩.
গ্রামের মানুষদের চিকিৎসার কী অবস্থা? সিলেট নিয়ে একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি। একবার নেত্রকোনা থেকে ময়মনসিংহ যাবার পথে সহযাত্রীকে পেলাম, সিলেটি। জেলে, ভাসান পানিতে মাছ ধরেন। দুর্বোধ্য তার ভাষাতে আলাপ আগায়। ময়মনসিংহ যাচ্ছেন, কারণ তার ভাইয়ের পা ভেঙেছে দুর্ঘটনায়, তাকে সিলেট থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, অস্ত্রপচার হবে। তিনি টাকাপয়সা জোগাড় করে দুই দিন বাদে যাচ্ছেন। কেন ভাই, সিলেটেও তো সরকারি মেডিকেল কলেজই আছে? জিজ্ঞেস করতেই বললেন, সেখানে এত বড়লোকরা থাকেন, চিকিৎসা খুব ব্যয়বহুল। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ কিভাবে কম-বেশি হতে পারে? তিনি জানালেন, হতে পারে। সরকারি খরচের বাইরের আনুষাঙ্গিক খরচ, নার্স, ওয়ার্ডবয়, বাইরের পরীক্ষা, ঘুষ, বকশিস, খাওয়ার ব্যয়, আশেপাশে থাকার ব্যয় এই সব কুলায় না বলে সেখানকার বহু গরীব মানুষ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে আসেন; বিশাল হাওড় পাড়ি দিয়ে, নেত্রকোনা জেলার ওপর দিয়ে অতদূর যাওয়া তাদের দিব্যি পোষায়।

‘উন্নয়ন’ যখন এমন মূর্তিমান চেহারা নিয়ে আসে—যারা একটু পিছিয়ে থাকে টাকা কামাইয়ের দৌঁড়ে, উন্নয়নের চাকাটা তার ওপর দিয়েই যায়। উন্নয়নের শোভাযাত্রাটা আমরা দেখছি, চাপাপড়া মানুষগুলোকে না দেখার প্রাণপণ চেষ্টাও চলছে একই সাথে।

এর বাইরেও খুব কম মানুষই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার মতো পরিস্থিতিতে আছেন। হাতের কাছে যে চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া যায়, বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসা ব্যবস্থা, তাও একদিকে যেমন শ্রমজীবী মানুষটির রক্তশোষণের একটা যন্ত্র, আরেকদিকে অত্যন্ত মানহীন।

৪.
খুব পুরনো না, এই ছকটা ওইসিডির ২০১৭ সালের একটা হিসাব, কোন জাতি মাথাপিছু কতটুকু মাংস খায়, তার তালিকা। গোটা দুনিয়াতে তিনটা মাত্র দেশ বাংলাদেশের আগে উল্লেখ পেয়েছে, ভারত মূলত নিরামিষভোজী, ডাল ও দুগ্ধজাত দ্রব্যাদি তাদের আমিষের চাহিদা মেটায়। সেখানেও মুরগি ও ডিম বাংলাদেশের চেয়ে মাথাপিছু বেশি। আছে যুদ্ধ বিধ্বস্ত সুদান, ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। এছাড়া কাছে থাকা মোজাম্বিক ও ঘানা তিন ধরনের মাংস বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি খায়।

অর্থাৎ, যুদ্ধহীন স্বাভাবিক দশাতে বাংলাদেশ মাংস, এবং সকল ধরনের আমিষ খাওয়াতে পৃথিবীর মাঝে পিছিয়ে আছে। এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রায় সকল দেশও বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। ইথিওপিয়ারও বহু পেছনে বাংলাদেশ। এটা হয়েছে বাংলাদেশে মাছ উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হবার পর, পোলট্রি উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধির পর। এর কারণ উৎপাদনের অক্ষমতা নয়, বরং অধিকাংশ মানুষের দারিদ্র্য। বিশেষ করে ভূমিহীন ও শহুরে শ্রমিকরা আগেকার প্রাকৃতিক উৎস থেকেও পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়েছেন। এই দরিদ্র শ্রমিক ও দিনমজুরদের চাহিদা ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে মাংস-মাছ উৎপাদনের শিল্পটা রাতারাতি বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে, অজস্র নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে কেবল আমিষ উৎপাদনের জন্যই।

কিন্তু তার আগে গণমানুষের এই ক্রয়ক্ষমতা সৃষ্টির বন্দোবস্তটা করতে হবে। কাগুজে দারিদ্র্য দূর করে তা হবার নয়। পোশাক শ্রমিক কিংবা আর সব শহুরে শ্রমিকের মজুরি যদি বৃদ্ধি না করা যায়, দেশে যা দুধ ও ডিম উৎপাদিত হয়, তাই বাড়তি ঠেকবে, সেগুলো বিক্রির বাজার সৃষ্টি করা যাবে না। অর্থাৎ, শহুরে মজুরদের মজুরি বৃদ্ধি না করা হলে একদিকে তাদর জীবনমান বৃদ্ধি পাবে না, আরেকদিকে গ্রামেও যথেষ্ট কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না।

আমিষের এই গল্পটি বাংলাদেশের শিক্ষা-স্বাস্থ্য-যোগাযোগসহ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য সত্য। আমাদের চেয়ে বহু বহু পেছনে থাকা দেশগুলো গত বিশ বছরে আমাদের ছাড়িয়ে বহুদূর গিয়েছে। কিন্তু আমরা শুধু পিছিয়েই পড়িনি, বিচারবিভাগ, আইন, নিরাপত্তাসহ আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও ধ্বংস হয়েছে।

৫.
তো, কার্যত আমরা কতদূর এগুলাম? ভিয়েতনামের সাথেই তুলনা করা যাক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্র বাহিনী পুরো ইউরোপ জুড়ে মোট ২৮ লাখ টনের কিছু বেশি পরিমাণ বোমা ফেলেছিল ৬ বছরে। শুধু দশ বছরে (৬২-৭২) ভিয়েতনামে মার্কিনীরা ৭৬ লাখ টনের বেশি বোমা ফেলেছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো দেশ এর চেয়ে বেশি ক্ষতবিক্ষত হয়নি।

ক্ষমতাসীনেরা যদি দেশকে জাতীয় পুনর্গঠনের জন্য এগিয়ে নিয়ে যান, কোনো কিছুই বাধা না, কোনো অজুহাত দেখানোর দরকার হয় না। আর যদি চলে লুণ্ঠন, শতমুখে বলতে থাকবেন অমুকে ভিক্ষা দেয়নি, তাই দুর্ভিক্ষ সামলাতে পারি নাই।

সবাইকে খুশি রাখার নীতি মানে হলো সব পরাশক্তির পায়ের নিচে পিষ্ট হওয়া। স্বাধীন থাকা মানে নিজের প্রয়োজন চাহিদা অনুযায়ী নীতি নির্ধারণ—গায়ে পড়ে না আসলে কেউই শত্রু নয়, কখনোই জাতীয় স্বার্থের কোনো বিসর্জন নয়। এই মন্ত্র নিয়েই ভিয়েতনামও আমাদের ছেড়ে বহুদূর এগিয়েছে। অপেক্ষায় থাকলে দেখা যাবে ভিয়েতনামের কাছেও বিনিয়োগ ভিক্ষা করবেন নীতিনির্ধারকরা।

চীনের একটা বাস্তবতা সামনে আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমার বহু বন্ধু গত বছরও তর্ক করতেন চীনের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নাই, এই আপ্ত বাক্য নিয়ে। বাণিজ্যের বিকাশই যে আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্বের, ফলে রাজনীতিরও মূল উদগাতা, এটা তারা খেয়াল করেননি। চীন নতুন সাম্রাজ্যিক বাসনা নিয়ে আগাবে।

আর সাথে আমরা দেখতে পাচ্ছি ভারত, কিংকর্তব্যবিমূঢ় খানিকটা। নিজের দেশের অধিকাংশ মানুষকে ভূখা নাঙ্গা রেখে তথাকথিত উন্নয়নের কাকতাড়ুয়াটি কিভাবে সামলাবে এই হুমকি, কেউ জানে না। দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি কৃষকদের আত্মহত্যা ঘটে এই দেশটিতে, যদিও কয়েকটি শহরে আলোর রোশনাই দুনিয়ার যে কোনো বড় শহরের সাথে পাল্লা দিতে পারবে। ভারতীয পত্রপত্রিকায় মৃদু আভাস মেলে, চীনের বাণিজ্যনীতির সুবিধা ব্যবসায়ীদের একটা অংশ নিতে চায়। রাজনীতি আর অর্থনৈতিক বাস্তবতার দ্বন্দ্বে তার অস্থির দশা আরো বাড়বে। কিন্তু সুবিধাজনকভাবে সে পাশে পাবে চীনের নতুন কিংবা পুরনো ঈর্ষাকাতর প্রতিবেশীদের, ভিয়েতনাম মালয়েশিয়া জাপান, কোরিয়া—সকলের।

আমরা এই দৌড়ঝাঁপের শিকার হব, চীন কিংবা ভারতের মুখের দিকে তাকিয়ে তাদের সকল স্বার্থ পূরণ করে নিজেদের হতশ্রী দশা আরো বাড়াতে থাকব, নাকি নিজেদের ভবিষ্যত গড়ব, সেটাই তরুণতম প্রজন্মের সামনে সবচে বড় বিষয় হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

ফিরোজ আহমেদ
রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য, গণসংহতি আন্দোলন
সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন

এ সম্পর্কিত আরও খবর