ব্যক্তিত্ববানরা শ্রদ্ধার পাত্র হবেন-এটাই স্বাভাবিক 

, যুক্তিতর্ক

মুত্তাকিন হাসান | 2023-08-29 01:35:42

 

ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব একটা ভাবি না বিধায় পরিবার থেকে আমাকে অনেক কথা শুনতে হয়। নিজের কাজগুলোকে ভালোভাবে উপভোগ করাটাকেই আমি মুখ্যভাবে দেখি। পারিবারিক জীবনের পাশাপাশি পেশাগত জীবনেও এর প্রতিফলন ঘটে বলে আমি মনে করি।

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন কর্মকর্তা হিসেবে অনেকের সাথে মেলামেশা করতে হয়।মানুষের সাথে মেলামেশা করতে ভালোই লাগে। যদিও মানুষের সঙ্গে মেশা ও মানুষকে জানার আগ্রহ ছিল ছোটবেলা থেকেই। খুব সহজেই পরিচিত-অপরিচিত সবার সঙ্গেই মিশতে পারি, সেজন্য বন্ধুর সংখ্যাও কম নয়।

পারিবারিক হোক আর পেশাগত হোক আমরা মাঝে মাঝে কিছু মানুষকে দেখতে পাই যাদের ব্যক্তিত্বের সৌন্দর্যে আমরা আটকে যাই-বিমোহিত হই। মানুষের চলাফেরা, কথাবার্তা, অঙ্গভঙ্গি এবং তার চিন্তাধারায় ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে। আচরণই যেহেতু ব্যক্তিত্ব, তাই আমরা চাইলেই আমাদের ব্যক্তিত্ব পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে পারি। বেহুদা যুক্তিতর্ক না করে ব্যক্তিত্ব উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন নিজের কথার সাথে কাজের মিল রাখা। সময় ও অবস্থান বুঝে আচরণ করা। উদাহরণ স্বরূপ-পরিবারের মানুষের সঙ্গে একরকম আচরণ, প্রতিবেশীদের সঙ্গে একরকম, বয়সভেদে একরকম এবং পরিচিতদের সঙ্গে একরকম ও অপরিচিতদের সঙ্গে একরকমের আচরণ হওয়া উচিত।

কোন সমস্যার সন্মুখীন হলে অভিযোগ করার পরিবর্তে কীভাবে সমাধান করা যায় তার চেষ্টা করা দরকার। যিনি নিজের সমস্যা নিজে সমাধান করতে পারেন, তিনি শুধু নিয়োগকর্তা কর্তৃক নয় পারিবারিকভাবেও প্রশংসিত হোন। সমস্যার সন্মুখীন হয়ে যদি কেউ তা কোন অভিযোগ ছাড়াই উতরানোর চেষ্টা করেছেন-যদি তিনি সমাধান করতে ব্যর্থও হোন তবুও তাতে তার জানার আগ্রহ প্রকাশ পায়।

প্রখর বাস্তব বুদ্ধি, চতুরতা ও সহিষ্ণুতা থাকলে পুঁথিগত বিদ্যা না থাকা সত্ত্বেও উন্নত ব্যক্তিত্বের অধিকারী হওয়া যায়।

তাই কারো করুণার পাত্র না হয়ে নিরপেক্ষভাবে বুদ্ধিমত্তার সাথে কথা বলার অভ্যাস করতে হবে। ব্যক্তিত্ব বিকাশের মূল উৎস হচ্ছে মানসিকতা আর বিবেক ও আবেগ দ্বারাই মানসিকতা গড়ে ওঠে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বেরিয়েছে পৃথিবীর ৮৭% লোক তাদের অ্যাটিচুডের কারণে সফল হয়। আর এই অ্যাটিচুড দুই প্রকার। যথা:- ১.রি-অ্যাক্টিভ Vs ২.প্রো-অ্যাক্টিভ।

দেয়াশলাই এর একটি কাঠি দিয়ে যেমন ঘর পোড়া যায় আবার আলোকিত হয় তেমনি একটি গ্লাস দিয়ে মদ খাওয়া যায় আবার দুধ খাওয়া যায়। একইভাবে একটি সেলফোন দিয়ে সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক তৈরি করা যায় আবার প্রয়োজনীয় যোগাযোগ করা যায়। তাই প্রো-অ্যাক্টিভ হওয়ার জন্য পাঁচটি জিনিস অন্যকে দিতে হবে। যথা:- ১.Respect (সম্মান) ২.Influence (উৎসাহ) ৩.Help (সহযোগিতা) ৪.Gratitude (কৃতজ্ঞতা) ৫.Experience (অভিজ্ঞতা)।

ব্যক্তিত্বের অনুভূতি অন্য রকম। আমরা বলে থাকি-তিনি চমৎকার কথা বলেন, তার চমৎকার ধৈর্য, মানুষকে সহজেই মেনে নিতে পারে। আহা! তার মতো যদি হতে পারতাম...।  

ব্যক্তিত্ববানরা সকল ভয়, হীনম্যনতা ও অসুখীর মায়াজাল থেকে মুক্ত থাকতে পারে বিধায় তারা সফল এবং সন্মানের যোগ্য। জীবনে সফল হওয়া সহজতর না হলেও ব্যক্তিত্ববানরা এক্ষেত্রে এগিয়ে থাকেন। কেবল সুন্দর পোশাক আর বিলাসিতায় মজে থাকলে ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে না, প্রয়োজন শুধু ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।

ব্যক্তিত্ববানরা অনেক সাধারণ পোশাক যেমন সুন্দরভাবে পরিধান করে, আবার অনেক সাধারণ কথাও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে। তাদের তাকালেই শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছে করে। ব্যক্তিত্ববান মানুষ ধনী-গরীব, জাত-কুল নির্বিশেষে মানুষের শ্রদ্ধার পাত্র হয়। তাই ব্যক্তিত্ববানরা আমাদের উপর বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারেন। যে মানুষগুলো এত সংযম রেখে চলেন-তারা আমাদের ওপর প্রভাব ফেলবেন এবং শ্রদ্ধার পাত্র হবেন এটাই স্বাভাবিক। 

মুত্তাকিন হাসান: কবি, প্রাবন্ধিক ও মানব সম্পদ পেশাজীবী   

এ সম্পর্কিত আরও খবর