ডেঙ্গু জ্বরে আতঙ্ক নয়; দরকার সচেতনতা

, যুক্তিতর্ক

মুত্তাকিন হাসান | 2023-08-30 21:31:43

বর্তমান জীবনে এক আতঙ্কের নাম ডেঙ্গু। চলতি বছরে বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে । শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বহু দেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ প্রায় মহামারির পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে।

ডেঙ্গু প্রাণঘাতি কোনো রোগ নয়। বিশ্রাম ও নিয়মমাফিক চললে এ থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগটি মারাত্মক রক্তক্ষরী রূপ নিতে পারে যাকে ডেঙ্গু রক্তক্ষরী জ্বর (ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার) বলা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে ডেঙ্গু একটি বৈশ্বিক আপদে পরিণত হয়েছে। এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও অন্যান্য মহাদেশের ১১০টির অধিক দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হয়। প্রতি বছর পাঁচ থেকে পঞ্চাশ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে সংক্রমিত হয় এবং তাদের মাঝে ১০ থেকে বিশ হাজারের মতো মারা যায়। ১৭৭৯ সালে ডেঙ্গুর প্রথম উল্লেখপাওয়া যায়। বিংশ শতকের প্রথমভাগে ডেঙ্গুর ভাইরাস উৎস ও সংক্রমণ বিশদভাবে জানা যায়। মশক নিধনই বর্তমানে ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায়। সরাসরি ডেঙ্গু ভাইরাসকে লক্ষ করে ওষুধ উদ্ভাবনের গবেষণা চলমান রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশটি অবহেলিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগের একটি হিসেবে ডেঙ্গু চিহ্নিত করেছে।

ডেঙ্গু জ্বর হলে পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে এবং বেশি করে তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে। জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল দেওয়া হয়। প্রায়শ স্যালাইন দিতে হতে পারে। মারাত্মক রূপ ধারণ করলে রোগীকে রক্ত দিতে হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরে হলে কোনো ধরনের এন্টিবায়োটিক ও ননস্টেরয়েডাল প্রদাহ প্রশমী ওষুধ সেবন করা যাবে না।

ডেঙ্গু উপসর্গের বৈশিষ্ট্য হলো হঠাৎ জ্বর হওয়া, মাথাব্যথা (সাধারণতঃ দু’চোখের মাঝে), মাংশপেশি ও হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা এবং র‌্যাশ বেরোনো। ডেঙ্গুর আরেক নাম ‘হাড়-ভাঙা জ্বর’ যা এই মাংশপেশি ও হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা থেকে এসেছে। মেরুদণ্ড ও কোমরে ব্যাথা হওয়া এ রোগের বিশেষ লক্ষণ। সংক্রমণের কোর্স তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত: প্রাথমিক, প্রবল ও আরোগ্য।

প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে অত্যধিক জ্বর, প্রায়শ ৪০°সে (১০৪°ফা)-র বেশি, সঙ্গে থাকে সাধারণ ব্যথা ও মাথাব্যথা; এটি সাধারণতঃ দুই থেকে সাতদিন স্থায়ী হয়। এই পর্যায়ে ৫০-৮০% উপসর্গে র‌্যাশ  বেরোয়। এটা উপসর্গের প্রথম বা দ্বিতীয় দিনে লাল ফুসকুড়ি হিসেবে দেখা দেয়, অথবা পরে অসুখের মধ্যে (দিন ৪-৭) হামের মতো র‌্যাশ দেখা দিতে পারে। কিছু petechia (ছোট লাল বিন্দু যেগুলো ত্বকে চাপ দিলে অদৃশ্য হয় না, যেগুলির আবির্ভাব হয় ত্বকে চাপ দিলে এবং এর কারণ হচ্ছে ভগ্ন রক্তবাহী নালী) এই জায়গায় আবির্ভূত হতে পারে, এবং মুখ ও নাকের মিউকাস মেমব্রেন থেকেঅল্প রক্তপাতও হতে পারে।

এডিস মশা শুধু দিনের বেলায় কামড়ায় ফলে দিনের বেলায়ই এ রোগে আক্রান্ত হওয়া সম্ভাবনা বেশি থাকে। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি ও পরিষ্কার পানি ৪/৫ দিনের জমানো পানি হলো এডিসের বংশ বিস্তারের স্থান, তাই মশা বংশ বিস্তার করতে না পারলে এ রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনাও কম। দুই তিন দিন পর পর এডিস বিস্তারের সম্ভাবনাময় জায়গাগুলো পরিষ্কার করা জরুরি।

ডেঙ্গু জ্বরের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তাই প্রতিরোধই উত্তম ব্যবস্থা। ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্পর্কে জনসচেতনতাই এর বড় চিকিৎসা। চিকিৎসকের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে এখন থেকেই প্রচুর জনসচেতনতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। জনসচেতনতার অভাবেই মূলত এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়।

সামনে ঈদ। ঢাকার আতংক এখন সারাদেশে। কারণ ঈদে মানুষ ঘরমুখী হচ্ছে। ঈদে বিপুল সংখ্যক মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে গেলে ডেঙ্গু ভাইরাস সারা দেশে ছড়িয়ে পরার আশংকা রয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। তাই সরকারি বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি নিজেরাও সতর্ক হই। আতঙ্কিত না হয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নিজেদের সচেতন হই।

মুত্তাকিন হাসান: কবি, লেখক ও মানবসম্পদ পেশাজীবী

এ সম্পর্কিত আরও খবর