বর্ষার চট্টগ্রাম বিপন্ন জনপদের নামান্তর

, যুক্তিতর্ক

ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-31 06:03:29

বৃষ্টি আশীর্বাদের সঙ্গে চরম ভোগান্তি নিয়ে আসে চট্টগ্রামে। বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ও যানজট পরিণত হয় এক নৈমিত্তিক চিত্রে। বর্ষার চট্টগ্রাম বিপন্ন জনপদের নামান্তর।

বাংলাদেশের অনলাইন সাংবাদিকতার জনক আলমগীর হোসেন চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা ও নাগরিক সমস্যা নিয়ে এক আলোচনায় রসিকতা করে একবার বলেছিলেন, ‘জল জমে চট্টগ্রামের পথগুলো জাহাজ চলাচলে উপযোগী হয়ে যাবে।’

সম্ভবত তেমন পরিস্থিতি তৈরি হতে আর বাকি নেই। গত কদিনের প্রবল বর্ষণে চট্টগ্রামবাসী তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছে। নগরীর অধিকাংশ এলাকা ও প্রধান পথগুলো হাঁটু ও কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। সে সঙ্গে চলেছে তীব্র যানজট। সাধারণ নাগরিক ও ভুক্তভোগীরা নগরীর জলাবদ্ধতা ও যানজট নিয়ে জানিয়েছেন নির্মম অভিজ্ঞতার কথা।

ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসায় জড়িত আগ্রাবাদের আজহারুল ইসলাম চৌধুরী বার্তাটোয়েন্টিফোরকে জানান, মঙ্গলবার (৯ জুলাই) জরুরি প্রয়োজনে ঢাকা যাওয়ার জন্য সকাল ৮.৩০ মিনিটে বন্ধুকে নিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশে বের হলাম। ফ্লাইট ছিল সকাল ১০.১৫ মিনিটে। বন্দরভবন পার হওয়ার পর শুরু হলো জ্যাম। সকাল ৯ টায় জ্যাম ঠেলে ইপিজেড বাজার আসতে সময় লাগল প্রায় ১ ঘণ্টা ৩০ মি। এরই মধ্যে ইপিজেড বাজারে গাড়ি ছেড়ে দিয়ে দুজন হাঁটা শুরু করলাম। সিমেন্ট ক্রসিং পার হয়ে রিকশা নিলাম। নারিকেলতলা যাওয়ার পর আবার হাঁটা শুরু। কেইপিজেড যাওয়ার পর নিলাম বাস। কাটগড় বাজার পর্যন্ত গেলাম। এরপর নিলাম টমটম। তাতে করে ১২.১৫ মিনিটে এয়ারপোর্টে পৌঁছলাম।

বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে আজহারুল ইসলাম চৌধুরী পরামর্শ দিয়েছেন, জরুরি প্রয়োজনে এবং যারা হজযাত্রী তারা যেন এয়ারপোর্ট, রেলস্টেশন বা গন্তব্যে পৌঁছার কমপক্ষে ৫ ঘণ্টা আগে রওয়ানা হন।

দক্ষিণের আগ্রাবাদ, বিমানবন্দর এলাকার মতোই শোচনীয় অবস্থা উত্তরের শোলকবহর, নাসিরাবাদ, মুরাদপুর অক্সিজেনের। সাধারণত এক বা দেড় ঘণ্টায় এসব এলাকা পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া সম্ভব হলেও ৫/৬ ঘণ্টা সময় লেগেছে বৃষ্টির সময়। পানি ও জটলা ভেঙে গাড়ি চলেছে শম্বুকগতিতে। অনেক ছোট-বড় গাড়ির ইঞ্জিনে পানি প্রবেশ করায় সেগুলো অকেজো হয়ে রাস্তায় পড়ে থেকেছে। প্রবল বৃষ্টি ও গভীর জলাবদ্ধতার কারণে সেগুলোকে রাস্তা থেকে সরানোও সম্ভব হয়নি।

জলাবদ্ধতার কারণে চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষের চরম দুর্ভোগের বিষয়টিই গত ক’দিন চট্টগ্রামের ‘টক অব দ্য টাউন’। অফিস, পাড়া-মহল্লা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উপচে পড়েছে চট্টগ্রামের প্রধান নাগরিক সমস্যার নানা দিক নিয়ে। সিরিয়াস আলোচনার পাশাপাশি চলেছে হাস্য রসিকতাও। বর্ষায় চট্টগ্রামের পথে বের হওয়ার সময় গামছা, লুঙ্গি সঙ্গে নেওয়ার কথাও বলেছেন কোনও কোনও ভুক্তভোগী।

শহর চট্টগ্রামের প্রধান সড়ক ও আবাসিক-বাণিজ্যিক এলাকায় তীব্র জ্যাম ও জলাবদ্ধতার পাশাপাশি শহরের কিছু উচ্চ এলাকায় বিরাজ করছে পাহাড় ধসের আশঙ্কা। সেখানকার বস্তি ও কাঁচা বাড়িঘরে বসবাসকারী হাজার হাজার মানুষ রয়েছেন চরম নিরাপত্তাহীনতায়।

প্রতি বছরই বর্ষার মৌসুমে চট্টগ্রামে যে বিপন্নতা দেখা দেয়, তার অবসান কবে হবে? চট্টগ্রামের নগরজীবন ও নাগরিকসমাজ এই প্রশ্নের উত্তরের দিকে তাকিয়ে আছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর