বর্ষা আসছে, আমরা কতটুকু সতর্ক?

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 05:55:20

দক্ষিণ এশিয়ার দরজায় টোকা দিচ্ছে বর্ষা। উপমহাদেশের সর্বদক্ষিণের জনপদে বর্ষা আসার পূর্বাভাস ঘোষিত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থাগুলোর বুলেটিনে বলা হয়েছে, মধ্য-জুন থেকে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় বৃষ্টি ও বর্ষা নিয়ে ঢুকে পড়বে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু৷ ভারতের মূল ভূখণ্ডেও বর্ষা চলে আসবে কিছুদিনের মধ্যেই।

এদিকে বর্ষা আগমনের খবরে কেরালার কয়েকটি জেলায় 'কমলা সতর্কতা' বা 'অরেঞ্জ অ্যালার্ট' জারি করেছে রাজ্যের প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ৷ কেরালার তিরুঅনন্তপুরম, কোল্লাম, আলাপ্পুজা এবং এরনাকুলাম এই চারটি জেলায় কমলা সতর্কতা জারি হয়েছে৷

বর্ষা ঢোকার পর কেরালার চার জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে মৌসুম ভবন৷ পূর্বাভাস অনুযায়ী এবারের বর্ষায় প্রবল বৃষ্টিপাত হবে৷ সেজন্যই আগাম সতর্কতা।

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঋতুচক্রের স্বাভাবিক কারণে গ্রীষ্ম শেষে শুরু হবে বর্ষা। উপমহাদেশের দক্ষিণাংশ ছুঁয়ে অল্প কয়েক দিনের মধ্যে বাংলাদেশেও হানা দেবে বর্ষাকাল। শুরু হবে অবিরাম বর্ষণ।

বাংলাদেশে বর্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঋতু। সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত হলেও দেশের অন্যান্য স্থানের বৃষ্টির পরিমাণ কম হয় না। বৃষ্টিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম শহরে সৃষ্টি হয় চরম জলাবদ্ধতা। চট্টগ্রামে পাহাড় ধস হয়। সিলেটে পাহাড়ি ঢল নামে। হাওরাঞ্চল এবং দেশের নিম্নাংশ তলিয়ে যায়।

বন্যা ও জলাবদ্ধতা বাংলাদেশের বর্ষাকালের এক স্বাভাবিক বিড়ম্বনা বলে জনজীবনে পরিচিত হলেও এ সমস্যা মোকাবেলায় নেই কোনও আগাম প্রস্তুতি ও সতর্কতা। বরং বাস্তব অবস্থা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, বর্ষার প্রাক্কালে চলছে 'উন্নয়ন' কাজ। ঢাকার রাস্তা হয়ে আছে 'মৃত্যুকূপ' সদৃশ।

আরও পড়ুন: রাজধানীর রাস্তায় ‘মৃত্যুকূপ’

এমন অবিবেচনাপ্রসূত কাজকারবারের মধ্যে আসছে বর্ষা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, বর্ষাজনিত বন্যা ও জলাবদ্ধতায় আমরা কতটুকু সতর্ক? দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা কতটুকু প্রস্তুত?

পাশাপাশি আরেকটি বিষয়ও সামনে আসে। তা হলো, আগাম 'সতর্কতা' ও 'প্রস্তুতি' বলতে যে দক্ষতা ও সচেতনতাকে বোঝায়, তা আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে একেবারেই নেই। সমস্যায় গলা পর্যন্ত ডুবে গেলে দায়িত্বশীলদের বোধোদয় হয়।

শুধু বন্যা, বর্ষা, জলাবদ্ধতা, দুর্যোগের সময়ই নয়, যে কোনও মানবসৃষ্ট বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা দুর্যোগের মধ্যে হাবুডুবু খেতে খেতে কর্তারা নানা আশাবাদ ও পদক্ষেপের কথা জানান। বিপদ ও বিপর্যয় আগাম আঁচ করার ব্যাপারে তারা থাকেন অন্ধ ও বধিরের মতো। তাদের হলো, ইংরেজি গ্রামারের 'ডাক্তার আসিবার পূর্বেই রোগী মারা গেলো' অবস্থা।

এতো সব মন্ত্রণালয়, সংস্থা, অধিদফতর, প্রতিষ্ঠান তাহলে কী করে? বিপদ দেখে তারপর কিছু করার বাইরেও তাদের কাজ আছে। আগাম বিপদ সম্পর্কে সর্তক ও প্রস্তুত হওয়ার সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করার ক্ষেত্রে কখনোই তারা মনোযোগী হয় না।

বরং চরম উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতায় তারা বরং এমন কাজ করে, যাতে বিপদ বৃদ্ধি পায়। বর্ষাকালে সতর্ক ও প্রস্তুত হওয়ার বদলে উন্নয়নের নামে গর্ত করা ও বিভিন্ন কাজ আরম্ভ করার তেমনি কিছু অবিবেচনাপ্রসূত কার্যক্রম।

ফলে প্রস্তুতি ও সতর্কতা দূরে থাকুক, সংশ্লিষ্টদের অবিমৃষ্যতা ও খামখেয়ালিতে জনদুর্ভোগ ও বিপদই বরং বাড়ে। বছরের পর বছর এমন অদক্ষতা ও ভ্রান্তি মেনে নেওয়া যায় না।

পাশের দেশ ভারত যখন বর্ষার প্রাক্কালে 'কমলা সতর্কতা' জারি করে প্রস্তুত হচ্ছে, তখন আমাদের প্রস্তুতিহীনতা মোটেও কাম্য নয়। এমনকি, প্রস্তুতি ও সতর্কতার বদলে আরও বিড়ম্বনা বাড়ানোর সামান্যতম পদক্ষেপও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সংশ্লিষ্টদের এখনই সজাগ হতে হবে। নিতে হবে পর্যাপ্ত পূর্ব-প্রস্তুতি ও আগাম সতর্কতা

এ সম্পর্কিত আরও খবর