ঈদ মোবারক!

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

মনোয়ার রুবেল | 2023-09-01 18:57:20

ঈদ এলে পত্রিকাগুলো ঈদ ম্যাগাজিন নামে একটা সংযুক্তি প্রসব করে। বয়স হিসেবে দীর্ঘ দুই যুগ পত্রিকা পড়ি। দুই যুগ দেখছি একই রেসিপিতে এই ম্যাগাজিন বানানো৷

এসব ম্যাগাজিনের একটা অংশে থাকে আবুল হায়াত, লায়লা হাসান বা সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের তাদের ছোট বেলার মজার কাহিনী৷ প্রতিবছর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই গল্প। নতুনজামা পেলে আনন্দে নাচতেন তারা। সালামি না পেলে মামা কাকা খালার পায়ে চিমটি কাটতেন। এই বস্তা পচা গল্প শুনে শুনে আমাদের কান পচে গিয়েছে।

এসব ম্যাগাজিনে আরেকটি বিষয় থাকে। নব্য কোন তারকা ঈদে কী কী করবেন? পাঁচ ছয় জন তারকার ছবি দিয়ে ফিচার হবে। তারা সবাই প্রায় একই কথা বলবেন। তারা নতুনজামা পরবেন, তারা সেমাই খাবেন। কেউ আবার আহ্লাদী হয়ে ঈদ সালামির কথা বলবেন। জাহিদ হাসান, মৌ, তারিন, অপূর্ব, মাহজাবিন, তিশা, মীর সাব্বির এরা এই বিভাগের মুখ আলোকিত করেন। যারা এই বিভাগে বাদ যাবেন তারা ঈদ ফ্যাশন পেজে নানান জামা পরে ছবি অংশে অবদান রাখবেন।

ম্যাগাজিনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ঈদ রেসিপি। সেমাইয়ের বড়া, সেমাই জুস, ফুচকা, চটপটি, কেক, নুডলস ইত্যাদির রেসিপি দু পাতায় গুঁজে দিতে হবে। এভাবে আট পাতায় হয়ে যায় ঈদ ম্যাগাজিন।

এই গৎবাঁধা রেসিপি থেকে ম্যাগাজিনগুলো বের হবে কবে? ঈদ কি শুধুই সেলিব্রিটিদের? একটি ঈদ সংখ্যা এমন হতে পারে না, যেখানে একজন রিকশাওয়ালার ছোটবেলার ঈদের মজার গল্প থাকতে পারে। একজন ঝি এর গল্প থাকতে পারে। এসব গল্প আবুল হায়াতের গল্পের চেয়ে মজাও হতে পারে। ঈদ এসব লোকের জন্য আনন্দের। উৎসবের।এরা বছরে একবার নতুন জামা পরে। কারো বউ আলতা চুড়ির জন্য রাগ করে চাঁদ রাতে বিষ খায়। স্ত্রী শাড়ি পছন্দ করেনি দেখে কেউ রাগে ঈদে বাড়িই ফেরে না।

নিম্নবিত্তের ঈদ হাসি কান্নাময়। মান অভিমানে ঘেরা আনন্দ উপসর্গের। সেলিব্রিটিদের ঈদ নেই৷ তাদের ঈদ মানে বারোমাসি কেনাকাটায় সংযোজিত একটি উপলক্ষ মাত্র। বড়লোকের ঈদ মানে লা রি ভে, স্টাইলসেল, ইয়েলো বা আড়ং এ আড়ম্বর কেনাকাটা। ঈদের অর্থ তাদের কাছে অর্থময়।

বড়লোক কখনো দরকষাকষি আগেও করেনি, এখনো করে না। করে না বলেই আড়ং এর উৎপত্তি ও উৎপাত। যাও, জামা ধরো, যা চায় দিয়ে এসো। এটাই এতদিন হয়েছে। কোথাকার কোন ভোক্তা অধিকার এসে বলল আড়ং দাম বেশি রাখে৷ দুনিয়ার তাবৎ বড়লোক বাঙালি ফেসবুক উলটে ফেলল। আড়ং বর্জন করবে।

লা রিভে, ইয়েলো খুশি হলো। তাদের বর্জনের সিদ্ধান্ত হয়নি৷

দুনিয়ার সর্ববৃহৎ এনজিও গোষ্ঠীর কোম্পানি আড়ং। তাদের কোম্পানির জরিমানা হবে আর ম্যাজিস্ট্রেট এর কিছু হবে না তা হয়? তিনি বদলি হলেন। এবার মধ্যবিত্ত বাঙালি যারা আড়ং যান না তারাও সংক্ষুব্ধ হয়ে আড়ং বর্জনের ডাক দিলেন।

তারা অন্যায়ের প্রতিকার চান। প্রতিবাদ লিপিতে ফেসবুকের দেয়াল চিকা করেছেন। বরাবরের প্রতিটি ঘটনার মতো তীব্র উত্তেজনায় জোয়ার উঠলো। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ম্যাজিস্ট্রেটের বদলি বাতিল হলো। তিনি বদলি হবেন না৷ বর্তমান কর্মস্থলেই কর্মরত থাকবেন। ব্যাস! তাতেই আমাদের স্বস্তি।

এই বদলি আদেশ কেউ প্ররোচিত হয়ে করেছে কি না, একটি ছোট বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কেন যুক্ত হতে হলো, এসব প্রশ্ন না রেখে আমরা আবার ঘুরে ফিরে গেলাম জয়ের আনন্দে। আড়ং বা বেরং এর প্রতি আমাদের আর ক্ষোভ রইলো না।

হুজুগে হৈহৈরৈরৈ করাতেই আমাদের আনন্দ। ঈদের সময় এমন গণ্ডগোল হলে আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ হয়।

তবে যা-ই হোক, আমাদের জীবনে ঈদ এলো খুশির বার্তা নিয়ে। ঈদ মোবারক!

 

 

নোয়ার রুবেল: ফ্রিল্যান্স রাইটার

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর