সংযমের মাসে অপচয়ের মহোৎসব

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

প্রভাষ আমিন | 2023-08-22 23:32:46

ইসলাম শব্দের অর্থই শান্তি। ইসলাম হলো শান্তির ধর্ম। কিন্তু বিশ্বজুড়ে ইসলামের নামে অল্প কিছু সন্ত্রাসীর নানান সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ইসলামের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। ইসলাম সম্পর্কে অন্য মানুষের কাছে ভুল বার্তা যায়। শান্তির ধর্ম ইসলামকে সন্ত্রাসীদের ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠার একটা স্থুল ষড়যন্ত্র পশ্চিমারা চালিয়ে আসছে অনেক দিন ধরেই। সেই ফাঁদে পা দিয়েছেন মুসলমানদের কেউ কেউও। মুসলমানদের আচার, আচরণ, কথাবার্তা এমন হওয়া উচিত; যা দেখে অন্য মানুষ শিখবে, অনুপ্রাণিত হবে। আর বাংলাদেশে ইসলাম মানেই ছিল শান্ত আর সৌম্য সুফিবাদের চেতনা।

কিন্তু ইদানীং বাংলাদেশের মুসলমানদের কারো কারো মধ্যেও উগ্রতার বিষ ঢুকে পড়েছে। ভিন্ন ধর্ম বা ভিন্ন মতকে তারা মোকাবেলা করতে চায় গায়ের জোরে আর চাপার জোরে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ ইসলাম বিরোধী কিছু লিখলেও সেটা যুক্তি দিয়ে জবাব দেয়া বা মোকাবেলা করা যায়। কিন্তু ইসলামকে যারা ডিফেন্ড করতে আসেন, তারা আসেন উগ্র মূর্তি নিয়ে, গালির তুবড়ি ছুটিয়ে আর হুমকি দিয়ে। তাদের দেখলে বা গ্রামে হুজরদের ওয়াজ শুনলে অমুসলিম যে কেউ ইসলামকে ভয়ঙ্কর হিসেবেই ধরে নেবে। অথচ তারা জানতেই পারবে না, ইসলামের আসল শান্তির চেতনা, সৌম্য রূপ। আমরা মুখে ইসলামের কথা বলি বটে। কিন্তু কথায়, আচরণে করি সব অনৈসলামিক কাজ। এই যেমন রমজান ইসলামে সংযমের মাস। কিন্তু এই রমজানে বাংলাদেশে কী হয়? আপনারা সবাই জানেন। দুর্নীতি, মজুদদারি, জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেয়া, ভেজাল, অপচয়েরমহোৎসব বসে এই মাসে।

ইসলাম নিছক একটি ধর্ম নয়। একটি খুবই বিজ্ঞানসম্মত জীবন বিধান। একজন মানুষ যদি ইসলামের সবগুলো বিধান নিয়ম করে মেনে চলেন, তাহলে তিনি অবশ্যই শারীরিক-মানসিকভাবে সুস্থ ও উন্নত মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠবেন। শুধু ব্যক্তি নয়; পরিবার, সমাজ, ইসলামের সত্যিকারের চেতনার প্রয়োগে এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও আসতে পারে দারুণ পরিবর্তন। ইসলামের পাঁচ ফরজের একটি হলো নামাজ। পাঁচ বার নামাজ পড়তে হলে আপনাকে সারাদিন পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, অন্তত সব নামাজের আগে আপনাকে অযু করে পরিচ্ছন্ন হতে হবে। তার মানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে আপনি মোটামুটি সারাদিন পরিচ্ছন্ন থাকবেন। ইসলামে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়। ধর্মীয় বিবেচনা বাদ দিলেও সুস্থতার জন্য পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব সবাই স্বীকার করবেন।

খাবার আগে হাত ধোয়া নিশ্চিত করতে আমরা কত আয়োজন করি, কত বিজ্ঞাপন বানাই। ইসলাম অনুসরণ করলে পরিচ্ছন্ন থাকতে আপনাকে আর আলাদা করে ভাবতে হবে না। আর পরিচ্ছন্ন থাকলে আপনি দূরে থাকবেন জীবানু থেকে। পরিচ্ছন্ন থাকলে ইউরিন ইনফেকশন থেকে রক্ষা পাবেন। পেটের, লিভারের, কিডনির নানা অসুখ থেকেও আপনি রক্ষা পাবেন। এত কিছু পেতে আপনাকে কিছুই করতে হবে না, খালি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরতে হবে। নিয়মিত নামাজ পড়তে হলে আপনাকে ভোরে উঠতে হবে। ভোরে উঠলে যে স্বাস্থ্য ভালো থাকে, সেটা নিশ্চয়ই আলাদা করে বলার দরকার নেই। ভোরে যদি আপনি মসজিদে নামাজ পড়তে যান, মর্নিং ওয়াকটা পেয়ে যাবেন বোনাস। আর সকালের প্রকৃতিতে যে নির্মল বাতাস থাকে, তার মূল্য টাকার অঙ্কে হবে না কখনোই। ভোরে ঘুম থেকে উঠে মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে এলে আপনার মনে যে ফুরফুরে পবিত্র ভাব আসবে তা বদলে দিতে পারে, আপনার দিনটাই।

ইদানীং আশপাশে খালি ব্যাকপেইনের রোগীর কথা শুনি। ব্যাকপেইন কেন হয়? আমরা যে নিয়ম না মেনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকি, তাতেই ব্যথা আমাদের পিছু নেয়। বয়স হলে আরো কত যে অসুখ বাসা বাঁধে শরীরে। কারো রক্তে চিনি বেশি, কারো বা কোলেস্টেরল। ডাক্তারের পরামর্শে কেউ হাঁটে, কেউ সাঁতরায়, কেউ জিমে যায়, কেউ ডায়েটিং করে।

কেউ যদি নিয়ম করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, ব্যাকপেইন সহজে তাকে ছুতে পারবে না। পাঁচ ওয়াক্ত মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়লে আপনাকে জিমে যেতে হবে না, মর্নিং ওয়াকও হয়তো করতে হবে না। আমি বলছি না, নিয়মিত নামাজ পড়লেই আপনার কোনো অসুখ হবে না। কিন্তু ডাক্তাররা এখন আপনাকে যা বলেন, ১৪শ বছর আগেই ইসলাম তা বলে রেখেছে। নিয়মিত মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করলে আশেপাশের মানুষের সাথে যোগাযোগ বাড়ে, সৌহার্দ্য বাড়ে।

যুগে যুগে, দেশে দেশে, মানুষে মানুষে বৈষম্য আছে। এই বৈষম্য ঘোচাতে যুগে যুগে তাত্ত্বিকরা অনেক তত্ত্ব দিয়েছেন, অনেক বিপ্লব হয়েছে। কিন্তু সঠিকভাবে ইসলাম অনুসরণ করলে বৈষম্যকে একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় নামিয়ে আনা সম্ভব। নির্ধারিত জাকাত দেয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন মুসলমানরা তার পাশের দরিদ্রজনকে সাহায্য করতে পারেন। পরিকল্পনা করে জাকাত দিলে অনেকের দারিদ্র বিমোচনও সম্ভব।

ইসলামে মিথ্যা বলা মহাপাপ। একবার ভাবুন সব মুসলমান যদি সত্যি কথা বলেন, তাহলেই তো সমাজের অনেক সমস্যা মিটে যাবে। ইসলামে মজুদদারি, মানুষ ঠকানো, ঘুষ খাওয়া পাপ। কিন্তু সমস্যা হলো, আমরা সত্যিকারের ইসলাম অনুসরণ করি না। এমন অনেকে আছেন, নিয়মিত নামাজ পড়েন ঠিকই। কিন্তু নামাজ পড়েই ঘুষ খান, লোক ঠকান, দেদারসে মিথ্যা কথা বলেন। তার নামাজ কি আল্লাহ কবুল করেন? বাংলাদেশের মুসলমানদের অনেকের মধ্যে একটা প্রবণতা দেখি, সারাজীবন ঘুষ খাওয়া, লোক ঠকানো, মিথ্যা বলা- সব পাপ ইচ্ছামত করেন। আর শেষ বয়সে মক্কা শরীফে গিয়ে হজ্জ করে হজরে আসওয়াদে চুমু খেয়ে ভাবি সারাজীবনের সব পাপ বুঝি মুছে গেল। কী হাস্যকর ভাবনা। এমন পরিকল্পনা করে পাপমোচনের ব্যবস্থা ইসলামে আছে বলে মনে হয় না।

আমরা নামে মুসলমান। কিন্তু আচার-আচরণে ইসলামবিরোধী। ইসলাম আমাদের পরমতসহিষ্ণুতা শেখায়, পরধর্ম সহিষ্ণুতা শেখায়। আর আমরা ইসলামের নামে ভিন্নমতাবলম্বীদের গলায় চাপাতি চালাই। কথায় কথায় নাস্তিক ট্যাগ লাগাই। আপনার যেমন ইসলামে বিশ্বাস করার অধিকার আছে। আরেকজনের তো ভালো নাও লাগতে পারে। ইসলামে ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা করার কথা বলা আছে। বলছিলাম ইসলামের চেতনার কথা। রোজা মুসলমানদের অবশ্য পালনীয় পাঁচ ইবাদতের একটি। অথচ এই মাসেই ইসলামের চেতনার সবচেয়ে বড় ব্যত্যয় ঘটে। রমজান রহমত, বরকত আর মাগফেরাতের মাস। ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীদের কাছে রমজান খুবই পবিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ মাস। রমজান মানুষকে মূলত সংযম শিক্ষা দেয়।

হাদিসে বলা হয়েছে’, ’রমজান মাসে এলে জান্নাতের দ্বারসমূহ উন্মুক্ত রাখা হয়, জাহান্নামের দ্বারসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের শৃঙ্খলিত করা হয়।’ এত গুরুত্বপূর্ণ রমজান মাসের মূল ইবাতদ হলো রোজা। দৃশ্যত রোজা হলো, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা। ধর্মীয় বিবেচনা বাদ দিলেও বছরের নির্দিষ্ট একটা সময় উপোস করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। আমরা যে সুস্থ থাকার জন্য ডাক্তারের কথা শুনে ডায়েটিং করি। রোজা তো সেই ডায়েটিঙেরই ধর্মীয় বিন্যাস। ইদানীং ডাক্তাররা অনেক গবেষণা করে সুস্থ থাকতে একটা নির্দিষ্ট সময় উপোস থাকার কথা বলেন।

অথচ ইমলাম এই কথা বলেছে চৌদ্দশত বছর আগে। রোজার মূল চেতনা হলো সংযম। তবে এই সংযম শুধু না খেয়ে থাকার নয়, এ সংযম হলো আত্মশুদ্ধির। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মাৎসর্য্য- সব ধরনের রিপু থেকে নিজেকে সংযত রাখাই, পরিপূর্ণ সংযম। শুধু জিহবার সংযম নয়, হতে হবে আত্মার সংযমও। কী করলে রোজা ভাঙবে, কী করলে রোজা পোক্ত হবে; তার বিস্তারিত বিবরণ আছে ধর্মে। কিন্তু আমরা খালি সকাল-সন্ধ্যা উপোস থাকাকেই রোজা হিসেবে ধরে নিয়ে আত্মপ্রসাদে ভুগি। মুখে বলিও, এবার অনেক গরম পড়েছে, এবার দিন বড়, রোজা রাখতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। সারাবছর পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ পড়েন না, কিন্তু রমজানে খতমে তারাবিতে মসজিদে নিয়মিত যান, এমন মানুষের সংখ্যা অনেক। কেউ ভাববেন না, আমি কাউকে খতমে তারাবি পড়তে নিরুৎসাহিত করছি। আমি খালি বলতে চাইছি, ইসলামে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ, মানে অবশ্য কর্তব্য। তারাবি ফরজ নয়, তবে পড়লে অনেক সওয়াব হবে। আর প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়লে গুনাহ হবে। তাই আগে বছরজুড়ে আল্লাহর বিধান মেনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে প্রকৃত মানুষের মত জীবন যাপন করা সব মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য। তবে রমজানে সংযমের যে ধারণা, তার সাথে সংযমের প্রকৃত চেতনার মিল খুব সামান্যই।

আমি অনেককে চিনি, যারা রোজা রেখে সারাদিন সময় কাটান হিন্দি সিনেমা দেখে। চিত্তের সংযম তিনি কতটা রাখতে পারছেন? রোজা রেখে ঘুষ খান, মিথ্যা কথা বলেন, মানুষের ক্ষতি করেন, দুর্নীতি করেন; এমন মানুষ তো ভুরি ভুরি। বরং রমজান এলে ঘুষের রেট বেড়ে যায়। পুলিশের ঈদ বাণিজ্য চলে দেদারসে। ইফতার পার্টির নামে মাসজুড়ে চলে দারুণ রাজনীতি। এসব আয়োজনে রাজনীতিবিদরা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সত্য-মিথ্যা নানা অভিযোগ তোলেন।

অন্য দেশের কথা জানি না, বাংলাদেশে রমজানে সবচেয়ে অসংযমী আচরণ হয়। রমজান এলেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের। রমজানে বাড়তি লাভের আশায় মজুদ করেন। রমজান এলে তাই কর্তৃপক্ষকে অভিযান চালাতে হয়। অভিযান তো চলে, ভেজাল বা মেয়াদোত্তীর্ণ খাবারের বিরুদ্ধে। কিন্তু অপ্রয়োজনে দাম বাড়িয়ে দিলে আপনি কী করবেন? অন্য সব রিপু সংযমের কথা না হয় বাদই দিলাম, খালি খাওয়ার সংযমের কথাই যদি বলি, তাহলেও এর চেয়ে অসংযমের মাস আর নেই। অন্য সাধারণ মাসের তুলনায় রমজানে খাওয়ার পেছনে আমাদের দেশের মানুষের খরচ অনেক বেশি হয়। রমজানে আমরা এমন অনেক খাবার খাই, যা সারাবছর
খাইনা। আরবের খোরমা খেজুর ছাড়া আমাদের ইফতার হয় না। ছোলা, বেগুনি, জিলাপি, হালিম- এমন অনেক আইটেম আছে; যা সারা বছরে যা বিক্রি হয়, রমজানে হয় তার কয়েকগুণ বেশি। বছরে একটা নির্দিষ্ট সময় উপোস থাকা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু রোজা ভেঙ্গে আমরা ইফতারে যে খাবার খাই, তা মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। সারাদিন না খেয়ে যতটুকু উপকার হয়, ইফতারে ভাজা-পোড়া, তৈলাক্ত খাবার খেয়ে ক্ষতি হয় তারচেয়ে অনেক বেশি। এই যে ইফতার মাহফিলের কথা বললাম, এটা অসংযম আর অপচয়ের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে।

প্রতিদিন ঢাকায় অসংখ্য ইফতার মাহফিল হয়। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ইফতার মাহফিলে দাওয়াত থাকে। ঢাকার অসহনীয় যানজট ঢেলে এসব ইফতার আয়োজনে যেতে ভালো লাগে না আমার। যানজট আসলে অজুহাত। আসলে এসব ইফতার আয়োজনে অপচয়ের মহোৎসব দেখতে আমার কুৎসিত লাগে, তাই যাই না। এসব ইফতার আয়োজনে থাকে হরেক আইটেম। ইফতার শেষ হওয়ার সাথে সাথেই থাকে ব্যাক টু ব্যাক ডিনারের আয়োজন। এসব আয়োজনে কার আইটেম কয়টা তা নিয়ে রীতিমত প্রতিযোগিতা হয়। কোনো সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের পক্ষেই সব কিছু খাওয়া সম্ভব হয় না। বাড়তি অংশ ফেলনাই হয়।

ইফতারের সময় ঢাকার কোনো রেস্টুরেন্টেই বসার জায়গা পাওয়া যায় না। দেখে মনে হবে, কেউ বুঝি ঘরে ইফতার করেন না। গত ব্ছর এক পাঁচ তারকা রেস্টুরেন্টে ইফতার আয়োজনে গিয়ে মনটাই খারাপ হয়ে গেল। অন্তত একশো আইটেমের বুফে। কয়টা মানুষ ছুঁয়ে দেখতে পারবে? অথচ এখনো দেশের কত মানুষ দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জোগাড় করার জন্য কত কষ্ট করে।

ইদানীং ঢাকায় আরেক সংস্কৃতি চালু হয়েছে সেহরি পার্টি। মধ্যরাতের পর যেন জেগে ওঠে ঢাকার নির্দিষ্ট কয়েকটি এলাকা। জমজমাট সেহরি পার্টিতে গাড়ির লম্বা লাইন লেগে যায়। অনেকে রেস্টুরেন্টে বসার জায়গা পাওয়া যায় না। যুদ্ধ করে সেহরি খাওয়া শেষে বাসায় ফিরে ফরজ ফজর নামাজ না পড়েই ঘুমিয়ে পড়েন অনেকে।
ঈদ এলেই ঢাকার শপিং মলগুলোতে পা ফেলার জায়গা থাকে না। মানুষ দেদারসে কেনাকাটা করে। দেখে মনে হয়, সত্যি বাংলাদেশে মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে গেছে। কিন্তু শপিং শেষে বেরিয়ে সামনের রাস্তায় শিশুদের ভিক্ষা করতে দেখলে বুঝি কতটা ফাঁকি আর কতটা বৈষম্য এই চাকচিক্যে। আলোর নিচেই লুকিয়ে থাকে কতটা অন্ধকার। সংযমের মাসেই চলে কতটা অসংযম আর অপচয়।

আমাদের সবকিছুতেই দেখনদারিটা অনেক বেশি। আমরা যে কবে দেখনদারি থেকে ধর্মকে আত্মার কাছে নিতে পারবো? কবে যে খাওয়া আর সোশ্যাল স্ট্যাটাসের প্রতিযোগিতা ছেড়ে ভালো মানুষ হওয়ার প্রতিযোগিতায় নামবো? হে সৃষ্টিকর্তা, তুমি আমাদের হেদায়েত করো।

প্রভাষ আমিন: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

এ সম্পর্কিত আরও খবর