‘ডাহা মিথ্যা ও মানহানিকর’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনের অভিযোগ

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

সৈকত রুশদী | 2023-09-01 10:53:12

বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় স্থান পেতে অর্থ দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ডিনের অভিযোগ ‘ডাহা মিথ্যা ও মানহানিকর’ বলে মন্তব্য করেছে ঐ তালিকা প্রণয়নকারী লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ সাময়িকী।

সম্প্রতি লন্ডনে প্রকাশিত সারা বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯ সালের তালিকায় বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্থান না পাওয়ায় দেশের বহু মানুষ যখন ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন লন্ডনে এক সভায় অভিযোগ করেন, তালিকা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠানের দাবি করা অর্থ প্রদানে সম্মত না হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঐ তালিকায় স্থান দেওয়া হয়নি।


এই অভিযোগের সত্যতা জানতে চাইলে, টাইমস হায়ার এডুকেশন-এর মুখপাত্র ফিল ব্যাটি সোমবার (২০ মে) এক ইমেইলে আমাকে জানিয়েছেন, ‘এই অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা ও মানহানিকর’।


মে মাসের ১ তারিখে এই তালিকা প্রকাশের পর এনিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা, বিতর্ক, ক্ষুব্ধ ও ব্যঙ্গাত্মক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ হয়ে আসছে।

বিশ্ব তালিকায় ৮৬টি দেশের এক হাজার ২৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তালিকায়, বিশেষ করে একসময়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ও দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় বলে বিবেচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, উঁচু মানের জন্য সুপরিচিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটিও, স্থান না পাওয়াতে আলোচনা বিশেষ মাত্রা পায়।

এর মধ্যে লন্ডনে ১৭ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াৎ উল ইসলামের অভিযোগ করেন, যুক্তরাজ্যভিত্তিক টাইমস হায়ার এডুকেশন সাময়িকী এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে তালিকা তৈরি করেছে ‘আর্থিক দাবি না মেটানোর কারণে’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেই তালিকায় স্থান পায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের এক সভায় তিনি এই অভিযোগ করেন।

অধ্যাপক ইসলাম আরও বলেন, জরিপকারী প্রতিষ্ঠানটি তাদের তালিকায় স্থান পাওয়ার জন্য এককালীন ৪২ হাজার পাউন্ড স্টার্লিং (৪৩ লাখ ২০ হাজার টাকা) এবং বাৎসরিক ১৫ হাজার পাউন্ড স্টার্লিং (১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা) দাবি করেছিল।

ঢাকা থেকে প্রকাশিত অনলাইন গণমাধ্যম ‘বাংলা ট্রিবিউন’-এর ১৮ মে ২০১৯ সংস্করণে সংবাদটি দেখে আমি সেদিনই ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’-এ পাঠানো এক ইমেইলে এই অভিযোগের সত্যতা সহ সুনির্দিষ্ট তিনটি প্রশ্ন করি।

প্রশ্নগুলো হচ্ছে:

১. ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় তালিকা ২০১৯’-এ বাংলাদেশের কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত না করার পিছনে কারণ কী?

২. বাৎসরিক এই তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য কোনো ফি আছে কিনা এবং থাকলে তার পরিমাণ কতো?

৩. এছাড়া ১৮ মে ২০১৯ ‘বাংলা ট্রিবিউন’ পত্রিকায় ‘আর্থিক দাবি না মেটানোয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তালিকায় নেই’ শিরোনামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াৎ উল ইসলাম-এর যে অভিযোগ প্রকাশ করেছে সেই অভিযোগের সত্যতা কতোটুকু?

টাইমস হায়ার এডুকেশন-এর মুখ্য তথ্য কর্মকর্তা (Chief Knowledge Officer) ফিল ব্যাটি সোমবার (২০ মে ২০১৯) এক ইমেইলে আমাকে জানান, ‘অভিযোগগুলো অবশ্যই সর্বৈব মিথ্যা ও মানহানিকর’।

ইমেইলে তিনি আমাকে লিখেছেন,

প্রিয় সৈকত,

অভিযোগগুলো অবশ্যই সর্বৈব মিথ্যা ও মানহানিকর।

টাইমস হায়ার এডুকেশন-এর বিশ্লেষণের জন্য তালিকার সকল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাতিষ্ঠানিক উপাত্ত জমা দেয় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য নির্ধারিত মানদণ্ড ও কর্মতৎপরতা মেটাতে পারলে প্রতিষ্ঠানগুলো তালিকায় স্থান পায় এবং সেটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।

তালিকায় স্থান পাওয়ার জন্য অংশগ্রহণ প্রক্রিয়াটি স্বেচ্ছামূলক এবং সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। গতবছর ৮৬টি দেশের এক হাজার ২৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় এই বিশ্ব তালিকায় স্থান পাওয়ার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চায়। আর এই তালিকাটি সমগ্র বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারগুলোর কাছে ব্যাপকভাবে বিশ্বাসযোগ্য। ২০২০ সালের তালিকায় আগের চেয়ে বেশি বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নেবে এবং সেপ্টেম্বর মাসে তা’ প্রকাশ করা হবে।  টাইমস হায়ার এডুকেশন-এর উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া বহিঃনিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায় এবং বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাইওয়াটারহাউস কুপার্স এই বহিঃনিরীক্ষা সম্পাদন করে।

বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে আমরা বছরে একবার উপাত্ত সংগ্রহের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করি (আর তৎপরবর্তী সকল তালিকা, যেমন এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তালিকা, সেই বাৎসরিক প্রক্রিয়া থেকে উদ্ভুত হয়)। যখন ‘বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় তালিকা ২০১৯’-এর উপাত্ত সংগ্রহ প্রক্রিয়া চলছিল (জানুয়ারি থেকে মার্চ ২০১৯) তখন আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের উপাত্ত জমা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাই, যেমনটি তারা তার আগের বছরে দিয়েছিল। উপাত্ত দল উপাত্ত জমা দেওয়ার জন্য (ইমেইল ও টেলিফোন-এর মাধ্যমে) তাদের পিছনে লেগে থাকলেও তারা এখনও উপাত্ত জমা দেয়নি। এর ফলে, ২০১৯ সালের কোনো তালিকায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশের অপর যেসকল বিশ্ববিদ্যালয় তাদের উপাত্ত জমা দিয়েছিলো, দুর্ভাগ্যবশত: টাইমস হায়ার এডুকেশন-এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য ন্যূনতম মানদণ্ড তারা মেটাতে পারেনি। এক্ষেত্রে গবেষণার যুক্তিসিদ্ধ মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে আমাদের চাহিদা হলো, পাঁচ বছর সময়কালের মধ্যে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপক্ষে এক হাজার গবেষণাপত্র প্রকাশ হতে হবে।

ফিল ব্যাটি

টাইমস হায়ার এডুকেশন-এর এই বক্তব্যের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনের অভিযোগ অসত্য বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে যদি অর্থ দাবির অভিযোগের সপক্ষে কোনো প্রমাণাদি থাকে তা’ এখনই প্রকাশ করা উচিত।

নতুবা বাণিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক রুবাইয়াৎ উল ইসলামের অভিযোগ যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য নয় এব্যাপারে একটি ব্যাখ্যা দেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমার সাবেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (১৯৭৭-১৯৮১) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এই সততাটুকু আমার প্রত্যাশা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর