"আমি ও আমার অফিস দুর্নীতি মুক্ত!"

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

মাহমুদুল হক আনসারী | 2023-08-31 13:09:27

ইদানিং কিছু সরকারি অফিসে গেলে একটি বক্তব্য নজরে পড়ে, “আমি ও আমার অফিস দুর্নীতি মুক্ত”। প্রশাসনের কিছু সেক্টরে দুর্নীতির লাগাম কোনো অবস্থায়ই নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। এর মধ্যে পাসপোর্ট বিভাগ ও ভূমি অফিস অন্যতম। এ দু’টি বিভাগে মানুষকে কী পরিমাণ ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হতে হয়, সেটা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝবে না।

পাসপোর্ট নাগরিকের একটি আবশ্যকীয় জাতীয় প্রমাণপত্র। পাসপোর্ট ছাড়া কোনো নাগরিক নিজ দেশের সীমানা পেরিয়ে অন্য দেশে যেতে পারে না। শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান ও ভ্রমণের জন্য যেকোনো নাগরিককে স্বদেশী নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে পাসপোর্ট সঙ্গে রাখতে হয়। দেশের বাইরে কর্মসংস্থানের জন্য যেতে হলে পাসপোর্ট লাগে। দেশে প্রতিবছর যে হারে বেকার সংখ্যা বাড়ছে, তাতে করে দেশের বাইরে কর্মসংস্থান ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। প্রতিবছর লাখ লাখ কর্মজীবী মানুষ দেশের বাইরে গিয়ে রোজগার করে দেশের অর্থনীতিকে সাবলম্বী করছে, কোটি কোটি টাকার রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে।

একজন নাগরিক যখন পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য পাসপোর্ট অফিসে যান, তখন তার ভোগান্তি কত প্রকার তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝবে না। পাসপোর্ট অফিসের নির্দিষ্ট ফরম রয়েছে। ফরমে অনেকগুলো নিয়ম রাখা হয়েছে। আবেদনপত্র পূরণ করে আবেদনকারীকে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা কর্তৃক কাগজপত্র সত্যায়িত করে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, এসব কাজ পাসপোর্ট আবেদনকারী নিজে করে পাসপোর্ট অফিসে আবেদনপত্র জমা দিলে সেটা মাসের পর মাস টেবিলে টেবিলে ঘুরতে থাকে। ২০ দিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে সাধারণ পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার কথা থাকলেও এ হিসেবের কোনো মূল্য বাস্তবে দেখা যায় না। তাই পাসপোর্ট অফিস ও এর কর্মকর্তারা দুর্নীতিমুক্ত বলে সাইনবোর্ড দিয়ে আবেদনকারীদের আশ্বস্ত ও চিন্তামুক্ত করার বক্তব্য দিলেও বাস্তবতা ভিন্ন। তবে, সবাই দুর্নীতিবাজ বিষয়টি সেরকম নয়।

নির্দিষ্ট এজেন্ট ও দালাল ছাড়া আবেদনপত্র জমা দিলে সেখানে হাজার রকমের সমস্যা তৈরি করা হয়। সব কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলেও আবেদনপত্রে তাদের নির্দিষ্ট সোর্স অথবা এজেন্টের চিহ্ন না থাকলে সে আবেদনপত্র পরে খুঁজে পেতেও মাসের পর মাস লেগে যায়, পাসপোর্ট পাওয়া তো দূরের কথা। ফরম জমা দেওয়ার পর ডেলিভারির যে তারিখ দেওয়া হয়, সে তারিখে পাসপোর্ট পাওয়া যাবে এমন কোনো কথা নেই। অফিস থেকে একটা কথা বলে দেওয়া হয়- আপনার মোবাইলে অফিস থেকে মেসেজ যাবে। সে মেসেজ কবে আসবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

ডিজিটাইলাইজেশন হয়েছে, কিন্তু তারপরও জনগণ পাসপোর্ট বিভাগের দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে কিছুতেই মুক্ত হতে পারছে না। কোনো না কোনোভাবে আইনের মারপ্যাচে ফেলে অনৈতিক অর্থ আদায় করবেনই তারা। একইভাবে ভূমি অফিসের জনভোগান্তি বলেও শেষ করা যাবে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী কঠোর নির্দেশ দিলেও ঘুরে ফিরে জনভোগান্তি আছেই। কোনো অবস্থায়ই ভোগান্তি থেকে নিস্তার পাচ্ছে না দেশের মানুষ। যখন এর কোনো প্রতিকার দেখি না, তখন নিজেকে অসহায় মনে হয়। সব কিছু দেখেও না দেখার ভান করছি। এসব দুর্নীতি বিরুদ্ধে নেই কোনো প্রতিবাদ, প্রতিরোধ। কেন এসব গুটিকয়েক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না সেটা জনগণ জানতে চায়।

মাহমুদুল হক আনসারী: গবেষক, প্রাবন্ধিক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর