আমরা একদিন ক্ষমতায় যাব: রেজা কিবরিয়া

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-26 13:01:38

ড. রেজা কিবরিয়া। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৩৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে বি.এ., কুইন্স ইউনিভার্সিটি থেকে এম.এ. এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এম. ফিল ও ডি. ফিল ডিগ্রি লাভ করেন। পেশা জীবনে তিনি কাজ করেছেন আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাবা আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর গণফোরামে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। রাজনীতিতে যোগ দিয়ে একের পর এক চমক সৃষ্টি করে যাচ্ছেন ড. কিবরিয়া। হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে পরাজিত হন। রাজনীতিতে যোগ দিয়ে মাত্র ১৬৯ দিনের মাথায় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম প্রধান শরিক দল গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। গত ৫ মে এক সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। পুনর্গঠিত এ কমিটিতে সভাপতি পদে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ড. রেজা কিবরিয়া।

ড. রেজা কিবরিয়া নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর গণফোরাম, রাজনৈতিক জোট তথা দেশের সামগ্রিক রাজনীতির নানা ইস্যু নিয়ে বার্তা২৪.কম তার মুখোমুখি হয়। বার্তা২৪.কম-এর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় তিনি তুলে ধরেন, গণফোরামসহ দেশের রাজনীতি নিয়ে তার ভাবনা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বার্তা২৪.কমের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট শাহজাহান মোল্লা।

বার্তা২৪.কম: নতুন দায়িত্ব পেয়ে দল শক্তিশালী করতে আপনার পরিকল্পনা কী?

রেজা কিবরিয়া: ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে এই দলটির আরো অনেক কিছু দেওয়ার ছিল। ওনারা আমাকে একটি সুযোগ দিয়েছেন। আশাকরি, তাদের আশা পূরণ করতে পারব। দল শক্তিশালী করতে যারা কাজ করছে তাদের ভাল অবস্থানে নিয়ে আসব, পদ পদবি দিয়ে মূল্যায়ন করবো। আর যারা কাজ করছে না তাদের নিয়ে আমার তেমন দুশ্চিন্তা নেই।

বার্তা২৪.কম: আপনারা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, অন্যদিকে দলের দুইজন সদস্য সংসদে। তাহলে কি সংসদকে মেনে নিলেন?

রেজা কিবরিয়া: ৩০০ জনের সংসদে পাঁচজন সংসদে গেলেই বৈধতা দেওয়া হয় না। ওটাকে আমি নির্বাচন বলি না, ওটা একটা দুর্ঘটনা বা ‘সো কল্ড ভোট’। সেদিন ভোটের নামে কি হয়েছে সারাদেশের মানুষ দেখেছে। দেরিতে হলেও প্রধান নির্বাচন কমিশন নিজেই বলেছেন, রাতে অনেক ভোট পড়েছে। এরকম নির্বাচন নিয়ে মানুষের মনে একটু প্রশ্ন জাগাই স্বাভাবিক।

বার্তা২৪.কম: তৃণমূলকে কি চমক দিতে চান?

রেজা কিবরিয়া: চমক বলতে কিছু নেই, আমি তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কাজ করবো। তৃণমূলে শক্তিশালী কমিটি গঠন করবো। যারা কাজ করছে তাদের পদ পদন্নোতি দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে। যারা কাজ করছে না তাদের নিয়েও খুব বেশি দুশ্চিন্তা করি না।

বার্তা২৪.কম: বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনীতির জন্য কি বার্তা দিচ্ছে?

রেজা কিবরিয়া: সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমস্যা আছে। আমি মনে করি, সবচেয়ে ব্যাকফুটে আছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক দল, মানুষের ভোটের অধিকারের পার্টি। সেই পার্টি কীভাবে এটা করতে পারল। তাদের অনেক নেতা আমাকে বলেছেন, এটা কী? এটার কি দরকার ছিল? আওয়ামী লীগ-বিএনপি তারা সবাই ব্যাকফুটে। আমরা গণফোরাম চেষ্টা করছি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার। আশাকরি, অন্যান্য দলও চেষ্টা করবে দেশের মানুষের আস্থা ফেরাতে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমরা ক্ষমতায় যাব।

বার্তা২৪.কম: অর্থনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতি সম্পর্কে মূল্যায়ন কি?

রেজা কিবরিয়া: আরো অনেক কিছু হতে পারত। যেসব প্রকল্প দেখা যাচ্ছে, সেগুলোরখরচ কত তা সবাই জানে। ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প ৩০০-৪০০ কোটি টাকা হয়ে যাচ্ছে। অন্যদেশে হয়তো ১৫০ কোটি হতো। আর যদি উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ঠিক হয়, তাহলে তারা ভোটের নামে এটা করলো কেন? তাছাড়া প্রবৃদ্ধির হারে অনেক ত্রুটি আছে। দেশে ব্যাংকিং খাতে কি অবস্থা চলছে? আমি আইএমএফ কাজ করেছি, তাই আমার দুশ্চিন্তা লাগে।

ড. রেজা কিবরিয়া/ছবি: বার্তা২৪.কম

 

বার্তা২৪.কম: আপনার বাবা তো আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, তাহলে আপনি সেখানে কেনো গেলেন না?

রেজা কিবরিয়া: এটা ঠিক, বাবা আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করেছেন। আসলে তিনি দেশের সার্ভিস করেছেন। তিনি পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন, জাতিংসঘের মহাসচিব ছিলেন, তারপর অর্থমন্ত্রী ছিলেন। তিনি কিছু আদর্শে বিশ্বাস করতেন। সেই আদর্শ থেকে আওয়ামী লীগ অনেকটা সরে গেছে। গণতান্ত্রিক ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য লড়াই করেছেন। আমার মনে হয় না, বাবা থাকলে আজকে ‘সো কল্ড ভোটে’র পক্ষে থাকতেন। রাজনীতিতে দলের চেয়ে বেশি আদর্শ থাকা দরকার। তাই বাবার আদর্শ রেখেছি, যেহেতু আওয়ামী লীগ সেই আদর্শ থেকে সরে গেছে, তাই এখানে আসা।

বার্তা২৪.কম: আপনার বাবার হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। আবার সেই দলের প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করলেন। এ বিষয়ে যদি কিছু বলেন।

রেজা কিবরিয়া: নির্বাচনের আগে আমার দলের সভাপতি ধানের শীষ প্রতীকের বিষয়টি ‍চূড়ান্ত করে ফেলেছেন। কাজেই হঠাৎ এসে আমার কিছু করার ছিল না। তাছাড়া বাবা হত্যার ১৫ বছর কেটে গেছে। আমরা সব সময় বলতাম, সুষ্ঠু তদন্ত হোক। তদন্তটাতে অনেক ধরনের ত্রুটি আছে। বিএনপি দুই বছর ক্ষমতায় ছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর ক্ষমতায় ছিল। এরপর আওয়ামী লীগ ১০ বছর ক্ষমতায় রয়েছে। কাজেই তদন্তের দায়টা কার তা পরিষ্কার। চার্জশিটে ছিল বলেই যে থাকবে আমি এটা বিশ্বাস করবো? আমি মদদদাতাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করিনি। আসলে মদদদাতাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা হয়নি। আর গ্রেনেডের উৎস কোথায়? গুরুত্বপূর্ণ এই দুই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চায়নি পুলিশ।

বার্তা২৪.কম: আপনি তো বিদেশি সংস্থায় চাকরি করতেন, কখন মনে করলেন যে দেশের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া দরকার?

রেজা কিবরিয়া: আমি খুশি হতাম, যদি আমার হাত ছাড়া এই দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসতো। আমি আসার পর যে সব ঠিক হয়ে যাবে তাও না, তবে চেষ্টা চালাবো। আমি আইএমএফএ চাকরি করতাম। আমার কাছে মনে হয়েছে, দেশ যেভাবে যাচ্ছে তা ঠিক না। তাই রাজনীতিতে আসা। এই দেশটাকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ঠিক করতে হবে।

বার্তা২৪.কম: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

রেজা কিবরিয়া: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ

এ সম্পর্কিত আরও খবর