হুলুস্থুল অভিযানে আমি?

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

তুষার আবদুল্লাহ   | 2023-08-25 20:32:09

চারদিকে হুলুস্থুল। এদিকে অভিযান, ওদিকে অভিযান। স্কুলে শিক্ষক নেই। হাসপাতালে নেই চিকিৎসক। খাবারের মান নেই। নদী দখল করে তোলা প্রাসাদের বিরুদ্ধে অভিযান। চলছে অভিযান কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে। গণমাধ্যমের বড় একটা অংশ দখলে এখন এসব অভিযানের খবর। সঙ্গে পুলিশ সপ্তাহও যোগ হয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য এসব কোনো খবরই নতুন নয়, পুরনো।

নদী, জলাশয়-খেকোদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে দশকের পর দশক। তবু নদী হত্যা থামেনি। হাসপাতালে চিকিৎসকদের পাওয়া যায় না। জেলা –উপজেলা পর্যায়ে নিয়োগ দিলেও, চিকিৎসক সেখানে থাকতে চান না। শিক্ষকরা ক্লাস রুমের চেয়ে কোচিং ঘরে থাকতে পছন্দ করেন বেশি।

পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের জন্য বিদ্যালয়ের চেয়ে কোচিং’এর ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। খাবারের মান রেষ্টুরেন্ট গুলো রক্ষা করছে না। বিভিন্ন সময়ে হোটেল –রেস্তোরার বিরুদ্ধে অভিযান চলে।

ট্রাফিক আইন মানতে রাজি নয় চালকেরা। অবৈধ পার্কিংও চলছে।এসব খবরই পুরনো। আমাদের সাধারণ নাগরিকদেরতো জানাই। রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করেন, তারাও জানেন। তারপরও কিছুই থেমে  নেই।


রাষ্ট্রের অতি খুঁদে কর্মচারি দেড় হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে যান। পাঁচ হাজার কোটি টাকা উড়ে চলে যায় ভিনদেশে। ব্যাংক ফতুর হতেই থাকে। ঘুষ অনানুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পেয়ে গেছে। বিশেষ বিনিময় ছাড়া কোনো কাজে উদ্ধার পাওয়া অসম্ভব।


দুর্নীতির ওঠা-নামা আছে। আন্তর্জাতিকভাবে কোনো কোনো সংস্থা অবস্থান জানায়, কার অবনমন হলো, আর কে উর্দ্ধমুখী। তবে আম মানুষের কোনো সংস্থার রিপোর্টকার্ডের  প্রয়োজন হয় না। ঘরে-বাইরে প্রতি মূহুর্তে জানা হয়ে যাচ্ছে দুর্নীতির মহাসমুদ্র কতোটা গ্রাস করে নিচ্ছে আমাদের।

দৃশ্যমান অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে শূন্য সহনীয়তার কথা বলা হয়েছে। তবু অনিয়ম, দুর্নীতি, দায়িত্বে অবহেলা কমছে না কেন? কারণ একটাই- সামাজিক অস্থিরতা। এবং সকলে আজব এক প্রতিযোগীতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছি আমরা। আমাদের এগিয়ে থাকতে হবে। এগিয়ে যেতে না পারি সমান্তরালে চলতে হবেই। সম্পদে-ক্ষমতায় লক্ষ্য আমাদের শীর্ষে পৌঁছার। সেখানে পৌঁছতে হলে বেপরোয়া হওয়া ছাড়া উপায় নেই।


নিজের কাছে, পরিবারের কাছে, সমাজের কাছে, রাষ্ট্রের কাছে আমাদের কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। শপথ নেই।  আমরা সর্বভুক হয়ে গেছি। ফলে সবাই মিলেমিশে আপোষে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য সম্পদ লুট করছি, নদী থেকে শুরু করে প্রিয়জনকে হত্যা করছি দ্বিধাহীনভাবে। আমরা টপকে যেতে শিখেছি। শিখিনি স্থির থাকতে, সহিষ্ণু হতে। ফলে সার্বিক অস্থিরতার মধ্যে আছি আমরা। সবাই সবার অস্থিরতার কথা জানি।  কে কাকে দমাবো?  দৃশ্যমান অভিযান চলছে, এক সময় ক্লান্তি আসবে অভিযানে। কিন্তু লুট-হত্যা-দুর্নীতির কোনো ক্লান্তি নেই।


রাজনীতিবীদ থেকে শুরু করে সকল পেশার মানুষ নিজ নিজ কাজের প্রতি যে মূহুর্ত থেকে দায়িত্বশীল হবে, জবাবদিহীতার মধ্যে আসবে। দলীয় লেবাস উপড়ে যাবে। ঐ মূহুর্ত থেকে দেখা যাবে  এক প্রশান্ত জলাশয়ে পাড়ে দাঁড়িয়ে আছি আমরা , কোন খাদের কিনারে নেই।

তুষার আবদুল্লাহ: বার্তা প্রধান, সময় টেলিভিশন

এ সম্পর্কিত আরও খবর