চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের সাফল্য ও অগ্রযাত্রার ৪২ বছর

, যুক্তিতর্ক

মো. রেজাউল করিম আজাদ | 2023-09-01 23:29:02

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদ এলাকায় অবস্থিত সম্পূর্ণ বেসরকারী উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত একটি স্বেচ্ছাসেবী, জনহিতকর ও স্বাস্থ্য সেবামূলক হাসপাতাল। ১৯৭৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক শিশু বর্ষ উপলক্ষে চট্টগ্রামের কিছু মহৎ প্রাণ সমাজ হিতৈষি ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

ইতোমধ্যে এই হাসপাতাল সফলতার সাথে তার প্রতিষ্ঠার ৪২ বছর পার করেছে। প্রাথমিক ভাবে শুধুমাত্র শিশু স্বাস্থ্য বহির্বিভাগের মাধ্যমে এই হাসপাতালের যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে এটি সকল বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা সহ ৬৫০ শয্যার একটি পূর্ণাঙ্গ জেনারেল হাসপাতাল হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। হাসপাতালের অন্তঃ ও বহির্বিভাগে বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা সহ সকল প্রকার চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

প্রতিদিন সকাল ৮.০০ টা থেকে রাত ৮.০০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এছাড়া ২৪ ঘন্টা ইমার্জেন্সি সার্ভিস, ব্লাড ব্যাংক, সাধারণ এ্যাম্বুলেন্স ও আইসিইউ এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ও ল্যাবরেটরী সার্ভিস সহ জরুরী সেবা সমূহ চালু রয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের অধীনে নিম্নবর্ণিত প্রকল্প সমূহ অত্যন্ত সফলতার সাথে পরিচালিত হচ্ছে।

১.       চট্টগ্রাম মা—শিশু ও জেনারেল হাসপাতাল

২.      চট্টগ্রাম মা—ও—শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ

৩.      চট্টগ্রাম মা—ও—শিশু হাসপাতাল ইনষ্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ

৪.      চট্টগ্রাম মা—ও—শিশু নার্সিং ইনষ্টিটিউট

৫.      CMOSH শামসুন নাহার খান নার্সিং কলেজ

৬.      CMOSH অটিজম এন্ড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার

৭.      CMOSH ক্যান্সার হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইনষ্টিটিউট

 

বৈশ্বিক মহামারী করোনা চিকিৎসা সেবা ও চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল: 

২০২০ সালের মার্চ মাসের ৮ তারিখ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হয়। এপ্রিল মাস থেকে দেশে আস্তে আস্তে করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকে। বিশ^ব্যাপী মহামারী করোনা ভয়াবহ আকার ধারন করতে থাকে। সারা দেশে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সংকট মারাত্বক আকার ধারন করে। চট্টগ্রামেও করোনা রোগীরা মারাত্বক চিকিৎসা সংকটে পথিত হয়। বেসরকারী হাসপাতাল গুলো কেউ করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় এগিয়ে আসেনি। এমনি এক অবস্থায় জাতির এই মহা ক্রান্তিকালে  চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় এগিয়ে আসে। নতুন হাসপাতাল ভবনের ২য়, ৪র্থ ও ৫ম তলায় করোনা ওয়ার্ড স্থাপন করে ৩২ বেডের আইসিইউ সহ ১৭২ বেডের করোনা ওয়ার্ড চালু করা হয়। করোনা আক্রান্ত প্রসূতি রোগীদের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে আলাদা প্রসূতি কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে। ভ্রাম্যমান করোনা টিম গঠন করে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। এপর্যন্ত ৫৬৮০ জন করোনা রোগীকে অত্র হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। হাসপাতালের করোনা রোগীদের এই চিকিৎসা সেবা দেশ বিদেশে ব্যাপক ভাবে প্রশংসিত হয়েছে। করোনাকালীন সময়ে করোনা রোগীদের কোভিড—১৯ টেষ্ট মারাত্বক সংকট সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রামের একজন মহানুভব ও দানশীল ব্যক্তির আর্থিক সহযোগীতায় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে একটি আরটি পিসিআর ল্যাব চালু করা হয়। এ যাবৎ আরটি পিসিআর ল্যাবে প্রায় ২৭ হাজার জনের কোভিড—১৯ পরীক্ষা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার অত্র হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে বিদেশগামী যাত্রীদের কোভিড—১৯ পরীক্ষার জন্য অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া অত্র হাসপাতালে রেপিড এন্টিজেন টেষ্টেরও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় চট্টগ্রামের আপামর জনসাধারণ ব্যাপক ভাবে এগিয়ে আসেন এবং করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় সর্বাত্বক সহযোগীতা করেছেন। আমরা কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

CMOSH ক্যান্সার হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট:

আমরা আরো আনন্দের সাথে জানাচ্ছি, চট্টগ্রামে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা সেবার জন্য আমরা চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের অধীনে অন্যতম একটি প্রকল্প হিসেবে একটি অত্যাধুনিক ক্যান্সার হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এই ক্যান্সার হাসপাতালের জন্য হাসপাতাল ক্যাম্পাসে প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। বাংকার নির্মাণ সহ বেইসমেন্টের অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা আশা করি প্রাক্কলিত সময়ের মধ্যেই এই ক্যান্সার হাসপাতালের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। আমি চট্টগ্রামবাসীকে ক্যান্সার হাসপাতালের নির্মাণ কাজে সর্বাত্বক সহযোগীতায় এগিয়ে আসার জন্য উদাত্ত্ব আহবান জানাচ্ছি।

৮৫০ শয্যা বিশিষ্ট নতুন হাসপাতাল ভবনের নির্মাণ কাজ:

আমাদের স্বপ্নের মেগা প্রকল্প ৮৫০ শয্যা বিশিষ্ট নতুন হাসপাতাল ভবনের ১৩ তলা পর্যন্ত ষ্ট্রাকচার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৬ষ্ঠ তলা পর্যন্ত ফিনিশিং কাজ শেষ হয়েছে। ৬ষ্ঠ তলা থেকে ১২ তলা পর্যন্ত ফিনিশিং কাজ চলমান আছে। ইতোমধ্যে নতুন হাসপাতাল ভবনের ১ম, ২য় ও ৩য় তলায় বহির্বিভাগ স্থানান্তর করা হয়েছে। আরটি পিসিআর ল্যাবের কার্যক্রম উক্ত ভবনের ২য় তলায় পরিচালিত হচ্ছে। নতুন ভবনের ৪র্থ ও ৫ম তলায় জেনারেল সার্জারী, অর্থোপেডিক সার্জারী, ইউরোলজি, চক্ষু, অনকোলজি ও হেমাটোলজি বিভাগ স্থানান্তর করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিভাগ সমূহ স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। নতুন ভবনে অত্যাধুনিক ক্যাথ ল্যাব, আইসিইউ, এইচডিইউ, সিসিইউ, এনআইসিইউ নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। খুব সহসা উল্লেখিত বিভাগ সমূহ সেখানে স্থানান্তর করা হবে। নতুন ভবনে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৫ হাজার কেভিএ সাব—ষ্টেশন ক্রয়ের জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া নতুন ভবনের জন্য লিফট ও জেনারেটর ক্রয়ও প্রক্রিয়াধীন আছে। চট্টগ্রামের একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী নতুন হাসপাতাল ভবনের জন্য করোনাকালীন সময়ে একটি লিফট অনুদান প্রদান করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে তিনি আরো ১টি লিফট অনুদান প্রদান করেছেন যা ইতোমধ্যে হাসপাতাল ক্যাম্পাসে এসে পেঁৗছেছে। আমরা তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

অত্যাধুনিক ক্যাথ ল্যাব স্থাপন:

আমরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের নতুন ভবনে একটি আন্তর্জাতিক মানের ক্যাথ ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে উক্ত ক্যাথ ল্যাব স্থাপনের জন্য ৪ লক্ষ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। চট্টগ্রামের একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী উক্ত ক্যাথ ল্যাব স্থাপনের জন্য সমুদয় অর্থ অনুদান হিসেবে প্রদান করছেন। আমরা চট্টগ্রামবাসী ও মা ও শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার কাছে আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞ। এই ক্যাথ ল্যাব স্থাপনের ফলে এখানে কম খরচে কার্ডিয়াক পেশেন্টদের সকল চিকিৎসা সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর ২০২১ তারিখ চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনে আপনারা জেনারেল সেক্রেটারী হিসেবে আমাকে এবং আমাদের পূর্ণ প্যানেলকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেন সম্মানীত ভোটারগণ। এজন্য আমি এবং আমার কার্যনির্বাহী কমিটি সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমরা আমাদের কার্যকালে নতুন হাসপাতাল ভবনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা, অত্যাধুনিক ক্যান্সার হাসপাতাল চালু করা, একটি আলাদা ডেন্টাল কলেজ/ইউনিট চালু, মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণ করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। এছাড়া চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালকে একটি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

৩১ শে ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ৪২ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে হাসপাতালের সকল আজীবন সদস্য, পৃষ্ঠপোষক, ডোনার, ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি রইল প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল তার স্বপ্নের অগ্রযাত্রায় বহুদূর এগিয়ে যাবে এই প্রত্যাশা করছি।

মো. রেজাউল করিম আজাদ, জেনারেল সেক্রেটারী, কার্যনির্বাহী কমিটি, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর