বিএনপির রোগমুক্তি ও খালেদা জিয়ার কারামুক্তি

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

এরশাদুল আলম প্রিন্স, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | 2023-08-27 20:45:35

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে কি হবে না সেটি আজ আইনের প্রশ্ন। বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরাও বলেছেন যে আইনের পথে বেগম জিয়াকে মুক্ত করার আর কোনো পথ খোলা নেই। তবে এ কথাটি বেগম জিয়ার আইনজীবীরা যতোটা না বলেছেন, সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা বলেছেন তারচেয়েও বেশি। কিন্তু আইনের পথ কখনোই কি চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়? ফাঁসির আসামিকেও মুক্ত হতে দেখেছি। রাষ্ট্রপতির বিশেষাধিকারের কথা না হয় বাদই দিলাম। কাজেই খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন কি পাবেন না সেটি আইনের প্রশ্নতো বটেই, সাথে সাথে এটি একটি রাজনৈতিক প্রশ্নও বটে। সে রাজনৈতিক প্রশ্নের সুরাহা শুধু সমাবেশে হবে কি না সেটি সময়ই বলে দেবে। কিন্তু, জনগণ যা নিয়ে উদ্বিগ্ন তা হচ্ছে, আন্দোলন ও সমাবেশের নামে যেনো ২০১৩-১৪ সালের পুনরাবৃত্তি না হয়। সেটি হলে বিএনিপর জন্য তা হবে মহাসংকটের কারণ। 

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণীত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এটি বিএনপিও জানে, সরকারও জানে। কিন্তু রাজনৈতিক মামলা বলে এর আইনগত আমলযোগ্যতাকেতো আর অস্বীকার করার উপায় নেই। এতিমের টাকার  মামলার আর্থিক মূল্য যাই হোক এর রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক। তার চেয়েও বড় বিষয়, আগামী দিনের রাজনীতির দিক নির্দেশেও এ মামলার রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। হতে পারে ভবিষ্যত রাজনীতির শুদ্ধি অভিযানে এ মামলা একটি বিশেষ রেফারেন্স হিসেবে কাজ করবে। টাকার পরিমাণ যাই হোক না কেন, ক্ষমতার অপব্যহার করাও যে দুর্নীতির অন্তর্ভুক্ত হতে পারে সেটি বরং আমাদের দুর্নীতি হ্রাসের পাশাপাশি রাজনীতিতেও একটি ইতিবাচক ফলাফল বয়ে নিয়ে আসবে। জানি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন দুর্নীতিমুক্ত মানুষ। কিন্তু তার সব নেতা-মন্ত্রীইতো তার মতো নন। সেটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানেনও বটে। হয়তো তিনি নিজেও তার দলের মধ্যে একটি শুদ্ধি অভিযান চান। হয়তো তারই একটি পথ রচনা করেছেন মাত্র। তাঁর রাজনৈতিক দুরদর্শীতার ওপর জনগণের আস্থা অপরিসীম।

ফলে এ মামলার আজকের রাজনৈতিক গুরুত্ব যতোটা বেশি, এর ভবিষ্যত গুরুত্ব তারচেয়েও বেশি। আওয়ামী নেতৃবৃন্দ সে কারণেই খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রাজনৈতিক পথের প্রেসক্রিপসন দিয়েছেন বিএনপিকে। আর বিএনপি এখন সে পথেই খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রাজনৈতিক আন্দোলন করতে চাইছে। কিন্তু শেষ বেলায় এ আন্দোলন বিএনপির জন্য কি কোনো সুফল বয়ে আনবে? সময় গেলে সাধন হবে কি? তবে, আইনে বেগম জিয়ার মুক্তির পথ অনেক কঠিন হয়ে গেছে। তবুও বিএনপিকে সেই কঠিনকেও ভালোবাসতে হবে। তার জন্য আর সহজ কোনো পথ খোলা নেই। বিএনপির আন্দোলনের শীতলতায় দলটি আরো শীতল-কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই আজকের সমাবেশের মাধ্যমে দলটি তার শক্তির একটা মহড়া দেবে এটাই স্বাভাবিক।

বিএনপির আজকের সমাবেশের মূল বক্তব্য হচ্ছে খালেদা জিয়ার কারামুক্তি। কবে এ কারামুক্তি? বিএনপি বলছে, নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি দিবে হবে। নির্বাচনর আগে তার মুক্তি না হলে বিএনপি কি তবে নির্বাচনে যাবে না? বিএনপি অবশ্যই এবারের নির্বাচনের যাবে। খালেদা জিয়া কারাগারে থাকুক আর বাইরে থাকুক, বিএনপির জন্য নির্বাচন ছাড়া আর কোনো ভালো অপশন নেই। যদি তাই হয়, তবে সরকার তাকে মুক্তি দিয়ে কেন নিজের দুর্বলতা জাহির করবে? সরকার কি এতোই দুর্বল হয়ে গেছে যে একটা সমাবেশ দেখে ভয় পেয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে দেবে? তবে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন কি পাবেন না তা নির্ভর করে আগামী তিন মাস রাজনীতির মাঠের অবস্থার ওপর। নির্বাচনকালে কুশীলবদের কার কি ভূমিকা হয় সেটিই বিবেচ্য। নির্বাচনকালীন সরকার এখানে একটি বড় ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে, এতে সন্দেহ নেই। ভোট ও জোটে শক্তির ভারসাম্য যে দিকে যায় ফয়সালা সেদিকেই হবে।

এ সমাবেশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঝিমুনিভাব থেকে হয়তো একটু চাঙ্গা করতে পারলো। নেতা-কর্মীদের বক্তব্য ও উপস্থিতি বিএনপির ঝিমুনি কমাতে হয়তো সাহায্য করবে। একথা ঠিক যে গত এক দশকে সরকার একটু বেশিই কড়া ছিল, তাই বিএনপিকে মূল্যও দিতে হয়েছে চড়া। কিন্তু সব দায় আওয়ামী লীগের ওপর চাপিয়ে দিলেই হবে না। তৃতীয় বিশ্বের দলগুলোর জন্য রাজনীতির পথ অনেক কঠিন, আর গণতন্ত্রের পথতো আরো কঠিন। বিএনপির জন্য সে পথ আরো কঠিন হবে না সহজ হবে তা নির্ভর করবে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত দলটির কার্যক্রম ও সেই সাথে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর।

২০১৪ সালের নির্বাচনে না আসাটা বিএনপির বড় ভুল ছিল। সেই ভুলের খেসারত আজও দিতে হচ্ছে। ফলাফল যাই হোক-একটি অজুহাত অন্তত থাকতো যে তারা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করেছে। তাহলে আজকের এ রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হতো না। ফলে, আজকের রাজনৈতিক সংকট থেকে বাচঁতে হলে নির্বাচন ছাড়া গতি নেই।

আজকের সমাবেশে বিএনপি তার একক শক্তির আংশিক পরিচয় দিয়েছে। এটি নির্বাচনের আগে ২০ দলীয় জোট তথা তথাকথিত ঐক্যজোট নেতাদের জন্য একটি বড় বার্তা। বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিএনপির দুরবস্থা ভেবে নিজে ১৫০ আসনের দাবী করে বসেছেন। মাহমুদুর রহমান মান্নাও দুই বছরের জন্য ক্ষমতার ভারসাম্যের নামে দেশে শাসন করতে চান। ফখরুল ইসলামের মতো বড় নেতা আজ সন্ধ্যায় এর বাড়িতে যান তো কাল সন্ধ্যায় ওর বাড়িতে চা খেতে যান। রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা বিএনপিকে পারলে এ ভুইফোড়রা দু’চারটা আসন দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণি পার করতে চায় আর কি! কিন্তু সত্য হলো, ভালো বলি বা মন্দ, ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ ও বিএনিপর বাইরে এসব জোটের গুরুত্ব সবারই জানা। কিন্তু এই জোটের নেতারা সে কথাটা ভুলতে বসেছিলেন। বিএনপি আজ তাদের সে কথাই মনে করিয়ে দিল। ফলে, আগামী দিনে জোটের শরীকানার বিষয়টি হয়তো তারা নতুন করে ভাবতে শিখবে।

কিন্তু এসব কিছুই নির্ভর করে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না। নির্বাচনের আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বিরাজ করলে হিসেব এক রকম। সে পরিবেশ না থাকলে সব হিসেবই বদলে যাবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর