গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপির ১৫ দফা দাবি

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

মো. জাকির হোসেন | 2023-08-29 23:02:45

ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে ‘লিভ নো স্টোন আনটার্নড’ যার অর্থ চেষ্টার কোনো কিছু বাদ না রাখা বা সম্ভাব্য সকল উপায়ে চেষ্টা করা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতৃবৃন্দ আক্ষরিক অর্থেই প্রবাদকে ধারণ করে পৃথিবীর এক গোলার্ধ থেকে আরেক গোলার্ধ ছুটে বেড়াচ্ছেন। সার্বভৌম রাষ্ট্র থেকে শুরু করে অধিজাতীয় প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘের দ্বারস্থ হচ্ছেন। ক্লান্তিহীন ছুটে চলা এ মিশনের নাম ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’।

দেশি-বিদেশি নানা জনের অনুকম্পা অন্বেষণের পাশাপাশি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের রোডম্যাপ হিসেবে বিএনপি ১৫ দফা দাবি সম্বলিত একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে বলে একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। পত্রিকার ভাষ্য অনুযায়ী এ মাসের শেষ ভাগে তাঁরা একটি ‘বৃহত্তর ঐক্য’ গঠনের আশা করছেন। এরপর দাবি-দাওয়ার বিষয়টি আসবে। বিএনপির পক্ষ থেকে ১৫টি দাবি দেওয়া হবে। বিএনপির ১৫ দফা দাবিকে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে- এক. বিরোধীদের ওপর জুলুম, হামলা, মামলা, হয়রানি বন্ধ ও বন্দীদের মুক্তি দেওয়া। দুই. নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি। তিন. ক্ষমতায় গেলে যেসব কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

এক নজরে দেখে নেয়া যাক কী আছে বিএনপির ১৫ দফা দাবির খসড়ায় -

১. (ক) বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।
(খ) সব বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।
(গ) নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন মামলা না দেওয়ার নিশ্চয়তা আদায়।
(ঘ) পুরোনো মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার না করা।
(ঙ) কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের ন্যায্য আন্দোলন এবং সামাজিক ও গণমাধ্যমে মতপ্রকাশের অভিযোগে গ্রেপ্তার ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির নিশ্চয়তা আদায়।

২. ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া।
৩. আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা।
৪. আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা।
৫. নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা।
৬. ভোটকেন্দ্রে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সশস্ত্রবাহিনী নিয়োগ করা।
৭. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা।
৮. রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অবসানে ঐকমত্য গঠন করা।
৯. রাষ্ট্রকে দলীয়করণের ধারার বদলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা।
১০. রাষ্ট্রক্ষমতায় গ্রহণযোগ্য ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা।
১১. স্বচ্ছ নিয়োগপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা।
১২. দুর্নীতি প্রতিরোধে দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার ও কার্যকর।
১৩. নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা।
১৪. সর্বনিম্ন আয়ের মানুষের মানবিক জীবন নিশ্চিত করে আয়ের বৈষম্যের অবসান করতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ধারণ করা।
১৫. রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা।

১৫ দফা দাবি আমার মনে কিছু কৌতুহলের জন্ম দিয়েছে। বিএনপির একটি অন্যতম দাবি হলো বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার সহ সব বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার। বিএনপির দৃষ্টিতে যে মামলা মিথ্যা আওয়ামী লীগের বিবেচনায় তা পুরোপুরি সত্য। কোনো মামলা মিথ্যা না সত্য আইন অনুযায়ি তা নির্ধারণের দায়িত্ব কার? যদি ধরে নেই বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান সহ বিএনপি নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে যেসব মামলার বিচার হয়েছে ও বিচারাধীন রয়েছে সেসব মামলা মিথ্যা এবং বিএনপির দাবি অনুযায়ি সেসব মামলা প্রত্যাহারও করা হলো, তাহলে প্রশ্ন আসবে যে পুলিশ অফিসার এসব মিথ্যা মামলায় চার্জশিট দিয়েছেন তাদেরকে চাকুরিচ্যুতি ও বিচারের সন্মুখীন করা হবে কি না? যদি চাকুরিচ্যুতি ও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো না হয় তবে ক্ষমতার পালাবদল হলে এ পুলিশ অফিসাররাই যে আাওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় চার্জশিট দিবে না তার গ্যারান্টি কী? বেগম জিয়া ও তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে যেসব মামলার রায় হয়ে গিয়েছে এবং তারা দোষী সাব্যস্থ্য হয়েছেন সেসব মামলা থেকে তাদের মুক্তির জন্য ফৌজদারি কার্যবিধি ও সংবিধানে খালাস, দণ্ড মওকুফ ও ক্ষমার পদ্ধতি উল্লেখ রয়েছে। তাদের সামনে দুটি পথ রয়েছে – এক. আইনি লড়াই চালিয়ে মামলা মিথ্যা প্রমাণ করে খালাস পাওয়া। দুই. সাজাপ্রাপ্তদের রাষ্ট্রপতি বরাবরে ক্ষমার আবেদন করা ও সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতা বলে রাষ্ট্রপতির তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া। বেগম জিয়া ও তারেক রহমান তাতে রাজি হবেন কি?

ফৌজদারি কার্যবিধি ও সংবিধানে বর্ণিত পদ্ধতিকে উপেক্ষা করে তথা আইন লংঘন করে মুক্তি দেয়ার কোনো উপায় আছে কি? আর যদি তেমনটি করা হয় তা গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে কি? কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের ন্যায্য আন্দোলন এবং সামাজিক ও গণমাধ্যমে মত প্রকাশের অভিযোগে গ্রেপ্তার ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির নিশ্চয়তা আদায়ের দাবি কোনভাবেই আইনের শাসন, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কি? কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে যারা পরিকল্পিতভাবে হত্যার গুজব ছড়িয়ে, উপাচার্যের বাসা ভাংচুর করে ফৌজদারি অপরাধ করলো তাদের বিরুদ্ধে মামলা কেন প্রত্যাহার করা হবে? নিরাপদ সড়কের নিষ্পাপ আন্দোলনকে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ দিতে যারা চারজনকে হত্যা, কয়েকজন আন্দোলনকারী মেয়েকে ধর্ষণ ও চোখ উপড়ে ফেলার মিথ্যা, বানোয়াট ও পরিকল্পিত ভিডিও প্রচার করলো, ফেসবুক লাইভ করে দেশে-বিদেশে সরকার ও রাষ্ট্র সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে অপরাধ করলো তাদেরকে বিচারের সন্মুখীন না করে কেন মুক্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে। অপরাধীর বিচার না করা গণতন্ত্রের কোন বিধানে লিখা আছে?

ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার বিএনপির দাবি সংবিধানের ১২৩ (৩)(খ)অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পূরণ করা সম্ভব। আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করার দাবি কিভাবে পূরণ করা হবে সে রুপরেখা কোথায়? সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ি নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনার জন্য একটি প্রাতিষ্ঠিানিক কাঠামো ছিলো। কাঠামোতে পরপর চারটি অপশন ছিলো উচ্চ আদালতের বিচারককে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়োগ করার। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি, তাকে পাওয়া না গেলে তার অব্যবহিত পূর্বে যিনি অবসরগ্রহণ করেছেন তাকে, তাকে না পাওয়া গেলে আপিল বিভাগের সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, তাকেও না পাওয়া গেলে তার অব্যবহিত পূর্বে যিনি অবসরগ্রহণ করেছেন তাকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের একটি কাঠামোবদ্ধ বিধান ছিলো। এখন তো সেরূপ কাঠামো নেই।

তদুপরি বিচার বিভাগের স্বার্থে বিচারকদের নির্বাচনকালীন সরকারে যুক্ত না করার জন্য উচ্চ আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শিক্ষক নিরপেক্ষ নয়, আমলা নিরপেক্ষ নয়, সুধীরা নিরপেক্ষ নয়, বিচারকের নিরপেক্ষতা নিয়েও বার বার প্রশ্ন ওঠেছে, তাহলে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার কাদের নিয়ে গঠন করা হবে?

তবে বর্তমান সাংবিধানিক ব্যবস্থায় আলোচনার মাধ্যমে বিরোধী শিবির বা সুধীসমাজ থেকে কয়েকজনকে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী বানিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের একটি রেওয়াজ চালু করা যেতে পারে। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার বিএনপির দাবি আলোচনার মাধ্যমে সহজেই সমাধানযোগ্য।

আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থার দাবিপূরণ খুব কঠিন কাজ নয়। ভোটকেন্দ্রে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সশস্ত্রবাহিনী নিয়োগ করার দাবি ক্ষমতারপৃথক্করণ নীতির পরিপন্থী, গণতন্ত্রের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অবসানে ঐকমত্য গঠন করতে হলে সবার আগে বিএনপিকেই এগিয়ে আসতে হবে।

জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক কিছু বিষয়ের নিষ্পত্তি ছাড়া কিভাবে ঐকমত্য সম্ভব? বঙ্গবন্ধুর খুনিদের স্বীকারোক্তি ও দেশি-বিদেশী লেখকদের ভাষ্য মতে বঙ্গবন্ধু হত্যা পরিকল্পনায় জিয়ার সম্পৃক্ততা, স্বাধীনতাবিরোধীদের সাথে মিলেমিশে রাজনীতি করা ও তাদের মন্ত্রী বানানো, ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় বিএনপির কতিপয় নেতার সম্পৃক্ততা, মুক্তিযুদ্ধের প্রাণভোমরা বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার ঘোষক ও জাতির স্থপতি হিসাবে বিএনপির অস্বীকার করা, ৬-দফা দিবস, ৭ মার্চ ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রকে বিএনপির অবজ্ঞা-অস্বীকার করা এসব বিষয়ে নিষ্পত্তি হওয়া ছাড়া কিভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অবসান ও ঐকমত্য গঠন করা যাবে? বিএনপির বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগের বাংলাদেশ এর মধ্যে যোজন যোজন দূরত্ব কমানো ছাড়া সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী দুই বাংলাদেশের মধ্যে কোনভাবেই ঐকমত্য সম্ভব হবে না বলে আমার বিশ্বাস।

বিএনপির অপর সাতটি দাবি যথা, রাষ্ট্রকে দলীয়করণের ধারার বদলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা, রাষ্ট্রক্ষমতায় গ্রহণযোগ্য ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা, স্বচ্ছ নিয়োগপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা, দুর্নীতি প্রতিরোধে দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার ও কার্যকর, নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা, সর্বনিম্ন আয়ের মানুষের মানবিক জীবন নিশ্চিত করে আয়ের বৈষম্যের অবসান করতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ধারণ করা, রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা এদেশে এতবার উচ্চারিত হয়েছে যে মাতৃগর্ভে থাকা সন্তানও যদি মুখস্থ করে ফেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সব দলই এ কথা গুলো বলে থাকে। আর এসব যে কেবলই বাগাড়ম্বর তা কোন অভিযোগ ছাড়াই আমরা মেনেও নিয়েছি।

বিএনপির এ ১৫ দফা দাবির মূল লক্ষ্য ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’। এটিও বেশ কৌতুহলোদ্দীপক। বাংলা অভিধান অনুযায়ি পুনরুদ্ধার বলতে বুঝায় হারানো, হস্তচ্যুত বা অধিকারচ্যুত বস্তু আবার পাওয়া। প্রশ্ন হলো, বিএনপির বিবেচনায় গণতন্ত্র কখন বাংলার সীমানা থেকে নিঁখোজ বা নিরুদ্দেশ হয়েছে? বিএনপি যদি বিশ্বাস করে তাদের শাসনামলেও গণতন্ত্র বাংলার জমিনে ভিড়তে পারে নি, তবে তাদের পুনরুদ্ধার মিশনের জন্য শুভকামনা। কিন্তু বিএনপি যদি এ বিশ্বাস নিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে নামে যে তাদের সময় বাংলার জমিনে গণতন্ত্র ঠিকঠাক ছিলো আওয়ামী লীগ এসে গণতন্ত্রকে বাংলার ত্রিসীমানা থেকে বিতাড়িত করেছে তাহলে সর্বনাশের ওপরে সাড়ে সর্বনাশ হবে। বিএনপির শাসনামলে আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকে পুলিশি নির্যাতন হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা নাসিম, মতিয়া চৌধুরি, আসাদুজ্জামান নূর, বাহাউদ্দিনকে রাজপথে পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। যুবলীগের মোস্তফা মিলনকে রাজপথে পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করার পর পরিবারের কাছে লাশও হস্তান্তর করা হয় নি। শব্দ-দূষণ হবে এই অজুহাতে আওয়ামী লীগকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয় নি। গ্রেনেড মেরে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হরেও ২৪ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। হামলার বিচারকে জজ মিয়া নাটকে রুদ্ধ করা হয়েছে। আহসান উল্লাহ মাস্টার, শাহ এম এস কিবরিয়া, মমতাজ উদ্দীনসহ অনেক নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। সাংবাদিক মানিক সাহা, হুমায়ূন কবিরদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। ২০০১ এর নির্বাচনের পর ভয়ানক সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে। একজন অসহায় মায়ের আর্তনাদ পত্রিকার পাতায় এভাবে প্রকাশিত হয়েছে ‘বাবারা আমার মেয়ে ছোট। তোমরা একজন একজন করে যাও’। জঙ্গীবাদ, হাওয়া ভবনের উত্থান হয়েছে বিএনপির শাসনামলেই।

আওয়ামী লীগকে পরাজিত করে বিএনপি যদি তাদের আমলের পুরোনো গণতন্ত্রকেই পুনরুদ্ধার করেন তাহলে সে ভয়ংকর গণতন্ত্র বাংলাদেশকে যে গন্তব্যে নিয়ে যাবে সেখান থেকে বাংলাদেশ আর প্রত্যাবর্তন করতে পারবে কি?

লেখক: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর