জাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি

, ক্যাম্পাস

জাবি করেসপন্ডেট, বার্তা ২৪.কম, ঢাকা | 2024-03-11 21:00:52

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণকাণ্ডে ধর্ষক ও তার সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ৫ দফা দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কর্মসূচি আরম্ভ করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম 'নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ'।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার (১১ মার্চ) সকালে প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশপথের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিনব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। এসময় প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাইরে অবস্থান করতে লক্ষ্য করা যায়।

আন্দোলনকারীদের অন্য দাবিগুলো হলো- ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি, নিপীড়কদের সহায়তাকারী প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের অপরাধ তদন্ত এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান; মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্ত করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা; নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমানের (জনি) বহিষ্কারাদেশের প্রজ্ঞাপন জারি ও অফিস আদেশ প্রণয়ন করতে হবে এবং ইতিপূর্বে যৌন নিপীড়ন সেলে উত্থাপিত সব অমীমাংসিত অভিযোগসহ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা; মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে জড়িত ব্যক্তিদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

প্রশাসনিক ভবনে অবরোধ কর্মসূচির প্রথমদিন আন্দোলনের সমর্থনে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আ র ক রাসেল বলেন, আমাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিতে। আমরা বারবার প্রশাসনের কাছে আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো উপস্থাপন করেছি। আমরা আশা করেছিলাম গতকালের সিন্ডিকেট সভায় আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু রোববার সিন্ডিকেট সভা শেষে উপাচার্য আমাদের কিছু না জানিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে চলে যান। পরে বাধ্য হয়ে আমরা দাবি আদায়ে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেছি।

অবরোধকারীদের মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসিব জামান বলেন, মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্ট এবং প্রক্টরের ব্যাপারে গত পরশু একটা অভিযোগপত্র দিয়েছি। যে নিপীড়নের কারণে একজন শিক্ষককে (মাহমুদুর রহমান) বরখাস্ত করা হয়েছে, সেই ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রীকে দায়মুক্তিপত্র লেখানোর অভিযোগ রয়েছে প্রক্টরের বিরুদ্ধে। তারপরও প্রক্টরের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, প্রশাসন বারবার ব্যর্থ হয়েছে তাদের কথা রাখতে। এখন পর্যন্ত তারা অছাত্রদের হল থেকে বের করতে পারেনি, তারা বিভিন্ন সময়ে নতুন নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের আই ওয়াশ করছে।

এর আগে গতকাল রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে আন্দোলনরত শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা না বলে পেছনের দরজা দিয়ে তার প্রস্থান করে ভিসি। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম 'নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ'র আন্দোলনকারীদের পক্ষে সংগঠক অধ্যাপক পারভীন জলি এ কর্মসূচির ঘোষণা করেন।

সিন্ডিকেটের বিশেষ সভায় ধর্ষণকাণ্ডে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, প্রক্টর ও প্রভোস্টের অপসারণ, অছাত্রদের হল ত্যাগ, শহীদ রফিক-জব্বার হল ও শেখ রাসেল হলের মাঝখানের দেয়াল অপসারণসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল।

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নেয়া সিদ্ধান্তগুলো জানতে সভা শুরুর পর থেকেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে অপেক্ষা করছিলেন আন্দোলনকারী ও শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে সিন্ডিকেট সভা শেষ হয়েছে জানতে পেরে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ প্রশাসনিক ভবনের সিঁড়ি দিয়ে উপাচার্যের কক্ষের দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় উপাচার্য সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে লিফট ব্যবহার করে নিচে নেমে পেছনের ফটক দিয়ে প্রশাসনিক ভবন ত্যাগ করেন। এসময় তার একান্ত ব্যক্তিগত সহকারীকেও রেখে চলে যান।

প্রসঙ্গত, গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে কৌশলে বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান এবং তার পরিচিত মামুনুর রশীদ মামুনের বিরুদ্ধে। পরে ভুক্তভোগীর স্বামী ছয় জনকে আসামি করে ঘটনার রাতেই আশুলিয়া থানায় ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন’ আইনে মামলা করেন।

ধর্ষণকাণ্ডে জড়িতদের ও তাদের সহযোগীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ৫ দফা দাবিতে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের ব্যানারে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর