কুবি শিক্ষক সমিতি স্থগিতের এক বছর, নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়ে দ্বিধা

, ক্যাম্পাস

অনন মজুমদার, কুবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-01-11 14:38:57

এক বছরের বেশি সময় ধরে নেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শিক্ষক সমিতির কার্যকরী কার্যনির্বাহী পরিষদ। ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মোকাদ্দেস-উল-ইসলামের কমিটি নির্বাচন দিলেও শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে সেই নির্বাচন স্থগিত হয়। এরপর আর আলোর মুখ দেখেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।

নির্বাচন স্থগিতের পর কিভাবে আবারও নির্বাচনের মাধ্যমে একটি কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন হবে সে বিষয়েও শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্রে নেই কোনো উপায়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এবার শিক্ষকরা চাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনও।

শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্রের ১০ ধারার 'ক'তে বলা হয়েছে, কার্যনিবাহী পরিষদের নির্বাচন প্রতি বছরের ১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। অনিবার্য কারণবশত যদি উপরোল্লিখিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব না হয়, তবে কর্মরত কার্যনির্বাহী পরিষদ ১৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সমিতির সাধারণ সভা আহ্বান করবেন এবং সেই সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

তবে পূর্বের কার্যনির্বাহীর মেয়াদ না থাকায় তারা সাধারণ সভা আহ্বান করার অধিকারও হারিয়েছেন। ফলে প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে কে? এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষকদের সাথে কথা হয়। তারা নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে নির্দিষ্ট কোন পন্থা বলতে পারেননি। কেউ বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের এগিয়ে আসতে আবার কেউ বলছেন দুই তৃতীয়াংশ শিক্ষকদের সম্মতিতে পুনরায় নির্বাচন আয়োজনের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, 'আমি চাই শিক্ষক সমিতির নির্বাচন ও কমিটি গঠন হোক ৷ কিন্তু এখন এমন হয়েছে যে এই দায়িত্ব কে নেবে? কে উদ্যোগ নিয়ে সকল শিক্ষকের সাথে কথা বলে নির্বাচনের আয়োজন করবে? আমার একার কথা তো কেউ শুনবে না। কমপক্ষে দুই তৃতীয়াংশ একমত হলে একটি সাধারণ সভা ডেকে এই ব্যপারে ব্যবস্থা নেওয়া যেত।'

সামাজিক অনুষদের ডিন ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এন এম রবিউল আউয়াল চৌধুরী বলেন, 'শিক্ষক সমিতি খুবই দরকার৷ এটা শুধু শিক্ষকদের জন্যই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে ও বিশ্ববিদ্যালয়কে একসাথে এগিয়ে নিয়ে যেতেও প্রয়োজন৷ এ বিষয়ে সিনিয়র শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে৷ নির্বাচন করার উদ্যোগ নিলে এ বিষয়ে আমি সাথে থাকবো।'

এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ একাংশের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, 'প্রত্যেক বছর নিয়মের মধ্যে থেকেই এটা হয়ে আসছে৷ আমি মনে করি যাদের কারণে নির্বাচন ভণ্ডুল হয়েছে তাদের উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকের কাছে কৃতকর্মের ক্ষমা চাওয়া এবং নিজেদেরই নির্বাচনের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া উচিত৷ নইলে অন্য কেউ উদ্যোগ নিলে আগেরমতো এবারও তারা নির্বাচন বাধাগ্রস্থ করবে বলে আমার মনে হয়।'

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের ১ ডিসেম্বর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি-২০২২ এর সভাপতি অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী ও ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম বিদ্যুতের কমিটি নির্বাচন দিলেও শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে নির্বাচনটি ভণ্ডুল হয়। এরপর ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকদের পক্ষে ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী ওমর সিদ্দিকী ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক হাসেনা বেগম শিক্ষক সমিতি-২০২২ এর কার্যনির্বাহী পরিষদের সভাপতি বরাবর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শিক্ষক সমিতি নির্বাচনটি আয়োজনের আবেদন করেছিলেন৷ সে বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি তখন৷

এ ব্যাপারে কুবি বঙ্গবন্ধু পরিষদের আরেক অংশের সভাপতি ড. কাজী ওমর সিদ্দিকীকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, ‘আমরা সেই বার আবেদন করেছিলাম, কিন্তু কিছু হয়নি। আর আমরা উদ্যোগ নেওয়ার মতো কেউ না৷ তবে আমরা চাই নির্বাচন হোক।’

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সর্বশেষ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম বলেন, 'আমরা সবসময়ই চাই শিক্ষক সমিতি কার্যকর থাকুক৷ বেশ কিছুবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ আমাদের কমিটি সাংবিধানিকভাবে এখন আর নেই। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি৷ এতদিন জাতীয় নির্বাচন ছিল৷ এখন অনেকেরই দেখলাম মত আছে৷ হয়তো খুব দ্রুত কিছু একটা হবে।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর