আগামীতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে

, ক্যাম্পাস

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 07:24:09

বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গত ৫০ বছর যাবৎ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আগামী ৫০ বছরে আরও শক্তিশালী হবে বলে প্রয়াত মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডি’র ছেলে এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদ এডওয়ার্ড (টেড) এম কেনেডি জুনিয়র আশা প্রকাশ করেন।

সোমবার (৩১ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বে ‘Commemorating the 50th Anniversary of US Bangladesh Relations’ শীর্ষক এক বিশেষ বক্তৃতা প্রদান তিনি এ কথা বলেন।

কেনেডি জুনিয়র বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, আমার বাবা বাংলাদেশের মানুষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৭১ সালের গণহত্যা সম্পর্কে আমাদের অনেক গল্প শুনিয়েছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বর্বর গণহত্যার বিরুদ্ধে তিনি সাহসী অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। সেসময় মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।

তিনি আরও বলেন, আমার বাবা ১৯৭১ সালে ভারতে শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের পর বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বর্বরতার চিত্র তুলে ধরেছিলেন। মিয়ানমারের শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারকেও ধন্যবাদ জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান পিতার মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার জন্য এডওয়ার্ড (টেড) এম কেনেডি জুনিয়রকে ধন্যবাদ জানান।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রয়াত মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডির অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করে উপাচার্য বলেন, সেসময় বাংলাদেশের পক্ষে তিনি আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তুলেছিলেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। এডওয়ার্ড (টেড) এম কেনেডির বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মি. পিটার ডি হাস এবং কালচারাল অ্যাফেয়ার্স অ্যাটাচি মিস শার্লিনা, মরণান-হুসেন বক্তব্য রাখেন।

এর আগে বেলা সাড়ে নয়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিতার লাগানো ‘বট বৃক্ষ’ পরিদর্শন করেন এডওয়ার্ড এম কেনেডির পুত্র এডওয়ার্ড এম কেনেডি, জুনিয়র। এসময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ড. ক্যাথেরিন ‘কিকি’ কেনেডির (স্ত্রী), টেডি কেনেডি (ছেলে), গ্রেস কেনেডি অ্যালেন (ভাতিজি) ও ম্যাক্স অ্যালেন (ভাতিজা)।

কেনেডি জুনিয়র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আমার বাবা ১৯৭২ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি বটগাছের চারা রোপণ করেছিলেন। বটগাছটি দুই দেশের মানুষের বন্ধুত্বের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আগামীদিনেও এই গাছ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন বহন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।


বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছামাত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামন কেনেডি পরিবারকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এরপর রিকশা যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকা রিকশা যোগে সপরিবারে ঘুরে দেখেন তাঁরা।

জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন সম্মুখ সংগ্রাম ও প্রতিবাদের প্রতীক বটতলার ‘বটগাছ’ উপড়ে ফেলে পাকিস্তানি হানাদাররা। সেই স্থানেই দেশ স্বাধীনের তিন মাস পর বাহাত্তরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে এসে, উপড়ে ফেলা সেইস্থানেই বটগাছ লাগান এডওয়ার্ড এম কেনেডি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটগাছ যেভাবে ‘কেনেডির বটগাছ’ হয়ে উঠল: মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সরকার যখন পাকিস্তানি শাসকদের পক্ষ নিয়ে রাজনৈতিক ও অস্ত্র সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছিল, তখন এর বিপক্ষে জনমত গড়ে তুলেছিলেন প্রয়াত যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি। যুদ্ধকালীন সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ) আসার অনুমতি পান নি। অনুমতি না পেলেও তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জনমত গঠন করেছিলেন কেনেডি।

গণহত্যার বিরুদ্ধে নিজের কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পী সমাজ থেকে শুরু করে অনেক মানুষ মুক্তিকামী বাঙালির পক্ষে অবস্থান নিতে থাকেন। একপর্যায়ে পাকিস্তানের কাছে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের প্রস্তাবও উঠেছিল মার্কিন কংগ্রেসে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের তিন মাসের মধ্যে ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরে আসেন টেড কেনেডি। ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) আয়োজনে শিক্ষার্থী ও জনতা এক সমাবেশে অংশ নেন তৎকালীন মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম. কেনেডি।

এসময় সিনেটর টেড কেনেডি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। সেসময় তিনি বলেন, “আপনারা জানেন যে কিছু সরকার আপনাদেরকে এখনও চিনতে পারেনি, তবে বিশ্বের মানুষ আপনাদেরকে চিনেছে এবং অত্যাচার ও নিপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য আপনারা এখানে যা করেছেন তা বিশ্ববাসী স্বীকার করে।”

পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলা থেকে “বটবৃক্ষ” হানাদার যেইস্থান থেকে বটবৃক্ষ উপড়ে ফেলে সেখানেই আরেকটি বটবৃক্ষের চারা রোপণ করা হয়। আজকের যে দরিদ্র আকৃতির বটগাছটি দেখা যায়, সেটির চারা রোপণ করা হয় বাহাত্তরের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে ; যা আজ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার (২৯ অক্টোবর) কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সপরিবারে ঢাকায় এসেছেন কেনেডি জুনিয়র। আট দিনের ঐতিহাসিক এ সফরে আগামী ৫ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করবেন তাঁরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর