চবি ছাত্রীকে চড়-থাপ্পড় ও বিবস্ত্র ভিডিও ধারণের চেষ্টা, গ্রেফতার ৪

, ক্যাম্পাস

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম | 2023-09-01 02:58:16

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে যৌন হেনস্তার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রসহ ৬ জনকে শনাক্ত করেছে র‌্যাব। তারা ওই ছাত্রীকে চড়-থাপ্পড় মেরে শরীরের কাপড় বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারনের চেষ্টা করেছিল। বৃহস্পতিবার ঘটনার মূলহোতাসহ সরাসরি জড়িত চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

শনিবার (২৩ জুলাই) সকাল ১১ টায় র‌্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম.এ ইউসুফ।

যৌন নিপীড়নে জড়িতদের মধ্যে তিনজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং তিনজন স্থানীয় বহিরাগত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হলেন, ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের আজিম হোসাইন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের নুর হোসেন শাওন ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের নুরুল আবছার বাবু। বহিরাগতরা হলেন মো. সাইফুল, হাটহাজারী কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাসুদ রানা ও মো. সাইফুল। এদের মধ্যে সাইফুল নামের দুইজন পলাতক রয়েছে।

অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম.এ ইউসুফ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি, সেদি রাত সাড়ে ১০ থেকে সাড়ে ১০ টার দিকে ওই ছাত্রীর তার এক ছেলে বন্ধু সহ বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকা থেকে হলের দিকে ফিরছিল। এসম ঘটনার মূল হোতা আজিম ও তার যে গ্রুপটি (তারা নিয়মিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন জায়গায় মোটরসাইকেলের ঘোরাফেরা ও আড্ডাবাজি করা থাকে, মোটরসাইকেল দুটি ছিল সাইফুল ও শাওনের) মোটরসাইকেল যোগে ওই এলাকায় ঘোরাফেরা করার সময় হঠাৎ তারা দেখেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের (নির্জন একটি এলাকা) বোটানিক্যাল গার্ডেনের দিকে থেকে হেঁটে আসছে। আজিম তার সহযোগিরা গিয়ে তাকে সার্জ করেন। এবং এত রাতে কেন বাইরে?, এই ছেলে কে? নানাধরনের প্রশ্ন করতে থাকেন। পরে ওই ছাত্রীর ছেলে বন্ধুর কাছ থেকে তারা চাঁদা দাবি করেন। এক পর্যায়ে মেয়ে ও তার ছেলে বন্ধুর মোবাইল দুটি কেটে নেন। এসময় তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়।

তিনি আরও বলে, পরবর্তীতে এই ছয়জন ওই দুইজনের উপর আরও বেশি করে চড়াও হয়ে পড়ে। তখন ছেলে বন্ধুটিকে আটকিয়ে রেখে মেয়েটিকে গিয়ে নির্যাতন করেন। তারা প্রথমে চড়-থাপ্পড় মারে। তারপর মেয়েটির শরীরের কাপড় বিবস্ত্র তার ভিডিও ধারণ করার চেষ্টা করে। এসময় তারা তিনটি মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে। এর মধ্যে দুটি মোবাইল ওই ছাত্রী ও তার ছেলে বন্ধুর। অন্যটি ঘটনার মূলহোতা আজিমের। আজিন নিজেও আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন যে, সে তার নিজের মোবাইল দিয়ে ভিড়িও ধারণ করেন।

এরপর মেয়ে ও ছেলেটিকে নির্যাতন করে তাদের মোবাইল, টাকা ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে তারা ওই স্থান ত্যাগ করে।

পরে ওই দুইজনে হলে এসে অন্য এক ছাত্রের মোবাইল থেকে চবি প্রশাসনকে এই বিষয়টি জানাই।

শুক্রবার ঘটনার মূল অভিযুক্ত আজিমকে রাউজানের তার ফুপুর বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং স্থানীয়। তার নেতৃত্বে পুরো ঘটনা ঘটেছে। তাকে গ্রেপ্তারের পর আমরা বাকিদের নাম পাই।

ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত না দাবি করে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, এখানে আমরা কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাইনি। যার নেতৃত্বে ঘটনা ঘটেছে, আজিম, সে অকপটে বলেছে, ঘটনাটি ঘটেছে তাৎক্ষণিক। কোনো পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না বা মেয়েটিকে টার্গেট করার কোনো প্ল্যান ছিল না। এমনকি মেয়েটিও আমাদের বলেছে, সে আজিমকে আগে থেকে চিনতো না।

মূলহোতা আজিমের বিষয়ে তিনি বলেন, আজিম যেহেতু এলাকায় অবস্থান করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে, এই কারণে এলাকায় তার প্রভাব ছিল। এই প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে সে হয়তো ছোটখাটো কিছু ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জেনেছি। এগুলো তদন্ত করে আমরা বের করব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযুক্ত সবাই বলছে তারা ছাত্রলীগ সমর্থন করে। সমর্থন তো যে কেউ করতে পারে। কিন্তু তাদের কোনো পদ-পদবি নেই। তারা যেটা বলছে যে, তাদের মধ্যে দুই গ্রুপেরই সমর্থক রয়েছে। এখানে নির্দিষ্ট কোনো গ্রুপের কেউ না। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী একেক জন একেক গ্রুপ সমর্থন করে। সমর্থন করা মানেই আমি বলতে পারিনা যে, তারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সমর্থন তো যে কেউ করতে পারে, জনসাধারণ হিসেবে তার অধিকার রয়েছে।

এর আগে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বাদী হয়ে গত ২০ জুলাই হাটহাজারী মডেল থানার মামলা দায়ের করেন। মামলার ধারা-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০(সংশোধণী ২০০৩) এর ১০ তৎসহ ১৪৩/৩৪১/৩৪২/৩২৩/৩৭৯/৫০৬।

এ সম্পর্কিত আরও খবর