ঢাবি’র ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন ৫৫ বছরের বেলায়েত

, ক্যাম্পাস

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 09:44:26

 

সন্তানদের ব্যর্থতা নিজের কাঁধে তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা দিলেন ৫৫ বছর বয়সী বেলায়েত শেখ।

শনিবার (৪ জুন) সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত (দেড় ঘণ্টা) এ পরীক্ষা চলে। বিশ্ববিদ্যালয়টির এফ এম মুজিবুর রহমান গণিত ভবনের ৮ম তলার ৮০২ নম্বর কক্ষে পরীক্ষা দেন বেলায়েত।

পরীক্ষা শেষে বেলায়েত শেখ জানান, পরীক্ষা মোটামুটি আল্লাহর রহমতে ভাল হয়েছে। তবে সব প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারি নি। চান্স পাওয়াটা কিছুটা আল্লাহর ইচ্ছে ও মায়ের দোয়া। এ বয়সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত জায়গা ভর্তি পরীক্ষায় বসাকে ‘সাগর পাড়ি’ দেয়া বলে মনে করেন বেলায়েত।

তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমি আসতে চেয়ে ছিলাম অভিভাবক হয়ে কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ও পারিবারিক কিছু সমস্যার কারণে অভিভাবক হয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা হয়ে উঠে নি। শেষ-মেশ নিজের স্বপ্নগুলো পূরণে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী হয়ে আসতে হল। ‘৫৫ বছর বয়সে পরীক্ষায় বসা কিছুটা সাগর পাড়ি দেয়ার মত। আর আমার সাথে বসা শিক্ষার্থীরা খাল পাড়ি দেয়ার পরীক্ষা দিয়েছে।’ বলে মন্তব্য করেন বেলায়েত শেখ।

চান্স পেলে বেলায়েত শেখ বিশ্ববিদ্যালয়টির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়বেন বলে জানিয়েছেন। জানা যায়, দেশের একটি দৈনিক ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে সাংবাদিকতা করেন তিনি।

এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস, সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র দিয়ে দোয়া চেয়েছেন ৫৫ বছর বয়সী গাজীপুর জেলার শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিমখণ্ড এলাকার মৃত হাসেন আলী শেখ ও জয়গন বিবির চার সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান বেলায়েত শেখের।

১৯৬৮ সালে জন্ম নেয়া বেলায়েত, ছোট থেকেই পড়াশোনার প্রতি ছিল আগ্রহ। প্রবল আগ্রহ থাকলেও দারিদ্র্যের কারণে কূল পেয়ে উঠেননি তিনি। এত বিপত্তির মাঝে ১৯৮৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা (এসএসসি) যে না মাত্র বসতে যাবে তখনই অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁর বাবা হাসেন আলী। পরীক্ষার জন্য ফর্ম ফিল আপের পুরো টাকা ব্যয় হয় বাবার চিকিৎসার পেছনে। পরবর্তীতে যে-না পরীক্ষায় বসতে যাবেন আবারও বিধি-বাম, ১৯৮৫ সালে বন্যা এসে আবার তা ভণ্ডুল হয়ে যায়। এদিকে ১৯৯১-৯২ তে গিয়ে মা অসুস্থ হয়ে পড়লে আবারও বাঁধ সাধে।

এসএসসি দিতে না পারায় মেকানিক্যাল কোর্স করে মোটর গাড়ির ওয়ার্কশপ কাজ শুরু করেন; তা দিয়েই চলে সংসার। সঙ্গে ভাই-বোনদের পড়াশোনার দায়িত্ব পড়ে তাঁর কাঁধে। অভাবের মাঝে ভাই-বোনদের উচ্চ শিক্ষা দিতে না পেরে সন্তানদের নিয়ে স্বপ্ন বুনেন, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) উচ্চ শিক্ষা নিয়ে। তিন সন্তানের জনক বেলায়েত শেখ।

বড় ছেলে গাজীপুরের একটি কলেজ থেকে স্নাতকে পড়ছেন, সেই সঙ্গে মাওনা চৌরাস্তায় তাঁকে স্যানেটারির দোকান করে দিয়েছেন বেলায়েত শেখ। সম্প্রতি তাকে বিয়েও করিয়েছেন। একমাত্র মেয়েকে ঘিরে বেলায়েত শেখের ছিল সকল স্বপ্ন। সেজন্য রাজধানীর নামকরা কলেজে ভর্তিও করিয়েছিলেন কিন্তু মেয়ে সেখানে পড়াশোনা না করেই গ্রামে চলে আসে। সেখানে এইচএসসি শেষে একটি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হয়।

তখনই সকল স্বপ্ন যেন তখনই শেষ হয়ে যায়, বেলায়েত শেখের। ওই কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়েছে তার মেয়ে। এরপর তাকেও বিয়ে দিয়ে দেন। এদিকে বেলায়েত শেখের সবচেয়ে ছোট ছেলে এ বছর মাধ্যমিক পাস করেছেন, তিনিও পড়ছেন একটি ইঞ্জিনিয়ারিংএ কলেজে।

জানা যায়, তিন সন্তানের জনক বেলায়েত চলতি বছরে ঢাকা মহানগর কারিগরি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি-ভোকেশনাল) জিপিএ ৪.৪৩ নিয়ে পাস করেন। এর আগে ২০১৯ সালে বাসাবোর দারুল ইসলাম আলিম মাদ্রাসা থেকে জিপিএ ৪.৫৮ পেয়ে মাধ্যমিক সমমান দাখিল (ভোকেশনাল) পাস করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেলে পড়াশোনা ছেড়ে দিবেন কি’না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কখনোই না! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) আমার স্বপ্ন বটে, তবে পড়াশোনা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।” জীবদ্দশায় যতদূর পারা যায় তদ্দূর পর্যন্তই পড়বেন বলে জানান, জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে চাওয়া ও স্বপ্নের পানে ছুটে চলা বেলায়েত শেখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর