অপাঠ্য ভ্রমণ

সিয়েরভা মারিয়ার স্মৃতি



এনামুল রেজা
গ্রাফিক : বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

গ্রাফিক : বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

শহুরে সন্ধ্যার অনেকগুলো নিজস্ব আলো আছে। লালাভ, উজ্জ্বল ছাইবর্ণ, সবুজ। প্রায় অভ্যেসে পরিণত হয়ে যাওয়া নিত্য জীবনে সেই আলোর দিকে আলাদা করে তাকাবার অবসর মেলে কই? আজ তাই গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপে কাঁপতে থাকা নগরী যখন দিবস শেষের ক্ষীণ আলোটুকুতে ঝিমুচ্ছে, আকাশের দিকে চেয়ে মনে হলো, বেশ, এমন গাঢ় নীল কি হয় কোনো কোনো সন্ধ্যা?

প্লাস্টারবিহীন ছ’তলা-চারতলা দালানগুলোর শরীরে ঝরে পড়ছে নীলের গুঁড়ো, একটু একটু করে আঁধার হচ্ছে চারধার। নীল থেকে কালো হবে পৃথিবী। মিরপুর সি ব্লকের বাস্তুহারা গলিটা দিয়ে আমি মুসলিম বাজারের দিকে যাচ্ছি। আম্মার জন্য পান কিনব। দেখলাম ঘোলাটে নীলাভ আলোয় ঘাড় কাত করে আমার দিকে এগিয়ে আসছে একটা কুকুর। ঘিয়ে হবে গায়ের রঙ। ও কাছাকাছি আসতে আমি থেমে গেলাম। লুঙ্গিতে নাক ঠেকিয়ে কিছু শুঁকতে চেষ্টা করল কুকুরটা। তারপর যেখান থেকে এসেছিল সেই পুরনো আমলের মিরপুরীয় একতলা টিনশেড ঘরটার দিকে চারপায়ে তেরছা ভঙ্গিতে ফিরে গেল, লোহার বন্ধ দরজার সামনে থাবা গেড়ে বসে ধুঁকতে লাগল জিভ বের করে।

পান কিনতে কিনতে মনে হলো, শৈশবে এমন সামান্য একটা ঘটনারও ক্ষমতা ছিল আমার কয়েক রাতের ঘুম শুষে নেবার। কুকুরভীতি ছিল আমার, কুকুর কামড়ে দিলেই নিশ্চয়ই জলাতঙ্ক হবে। যে প্রাণঘাতী অসুখে আস্ত একটা মানুষ কুকুরে রূপান্তরিত হয়। পানির তৃষ্ণায় চিৎকার করে, কেউ পানি এগিয়ে দিলেই ভয়ে কুঁকড়ে ওঠে আর আশপাশে যাকেই পায় আক্রমণ করে। গ্রামসূত্রে আমার এক চাচার বউ অমন অসুখে মারা গিয়েছিলেন। কোন এক বিয়ে বাড়িতে গিয়ে কুকুরের কামড় খেয়েছিলেন সেই চাচী, কেউই গুরুত্ব দেয়নি। অনেকে ধারণা করেছিল, কামড়ের মাস দুয়েক পরেই জলাতঙ্ক থাবা গেড়ে বসেছিল তার শরীরে। মৃত্যুর বহুদিন পরেও যাকে নিয়ে আলাপ করত সবাই। গ্রামে নতুন করে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল নিরীহ গোবেচারা কুকুরের দল।

মুসলিম বাজার থেকে ঘরে ফিরেও কুকুর ও জলাতঙ্ক বিষয়ক ভাবনা মন থেকে সরল না। বরং মনে হলো, সিয়েরভা মারিয়ার স্মৃতি এখনো সতেজ আছে আমার হৃদয়ে। দিন কয়েক আগেই পড়ে শেষ করেছি মার্কেসের উপন্যাস ‘প্রেম ও অন্যান্য দানব’ (১৯৯৪ সালে এসপানিওল থেকে Edith Grossman কৃত ইংরেজি অনুবাদ হওয়া বই, বাংলা অনুবাদক আলী আহমদ)

মানুষের পৃথিবীতে কে আসল দানব? ছোট্ট বইটায় এ প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল শব্দের পর শব্দে। উপন্যাসটির শুরু হয় র‍্যাবিজ আক্রান্ত এক কুকুরের কামড় থেকে। অমন গল্পে ঘোর তৈরি না হবার কোনো কারণ আসলে নেই।

পড়তে পড়তেই দেখতে পাওয়া যায় আঠারশো শতকের সেই সমুদ্রলাগোয়া জনবহুল বন্দর শহরটি। দাস বেচাকেনা হচ্ছে। বহু আকাঙ্ক্ষিত দাসবাহী এক জাহাজের অনেকেই মারা গিয়েছে অজ্ঞাত কারণে, সেসব মৃত নিগ্রো আর তাদের প্রভুদের ফুলে ওঠা দেহ ও দূষিত রক্তে লাল হয়ে উঠেছে সমুদ্রের জল। ওসবের মাঝখানেই নিজের দ্বাদশতম জন্মদিন উপলক্ষে কেনাকাটা করতে আসা সিয়েরভা মারিয়াকে দেখতে পেলাম, উন্মত্ত একটা কুকুর আরো তিনজন মানুষসহ তাকেও কামড় দিল। বাজার ভর্তি লোকজন দেখল ক্ষীয়মান তবু ক্ষমতাশীল এক জমিদারের কন্যা সিয়েরভা মারিয়ার এই দুর্ঘটনা। র‍্যাবিজ আক্রান্ত কুকুরের কামড়ে বাকি তিনজন একে একে মারা গেলেও সিয়েরভা মারিয়ার কিছু হলো না, কোনো অসুখের চিহ্নই দেখা দিল না তার মধ্যে। মধ্যযুগের শেষ প্রান্তে দাঁড়ানো শহরবাসী, প্রবল প্রতাপশালী চার্চ, যে দুজন নর-নারীর ঘৃণাজর্জর সঙ্গমে মেয়েটির জন্ম, তারা সবাই কি এই অস্বাভাবিক সুস্থতা মেনে নিতে পারবে?

২.
লেখকের অন্যান্য বইয়ের মতোই কাহিনীটা বলা হচ্ছে উঁচু থেকে। নইলে একটা গ্রামোফোন রেকর্ডে বেজে চলেছে দূরবর্তী এক রহস্যময় পুরুষকণ্ঠ। যিনি পড়ে যাচ্ছেন এমন এক কিশোরীর শোকগাথা, যার লালচে ঝাঁকড়া চুল জন্মের পর আর কাটা হয়নি। বড় হতে হতে যে বিস্ময়কর চুলের রাশি মাটি ছুঁয়েছে, যার মা জন্মের পর থেকেই তাকে ঘৃণা করেছে, মেয়েটা বড় হয়েছে কৃতদাসদের তত্ত্বাবধানে, তাদের সঙ্গেই। সমাজের চোখে মানুষ বা মানুষের চোখে সমাজ, দুটোই দুটির কাছে যে বন্দী, তার নিদারুণ জলরঙ আঁকতে চেষ্টা করে এই উপন্যাস।

সময়টা আঠারশো শতক, এ তো আগেই বলেছি। সিয়েরভা মারিয়ার বাবা একজন মার্কিস বা জমিদার। যদি সমাজের শীর্ষস্থানীয় একজন লোকের মেয়ে জলাতঙ্কে মারা যায়, গোটা শহরের কাছে পরিবারটি অপমানিত হবে ও ছোট হয়ে যাবে, এই তাদের ধারণা। সম্মান ধরে রাখতে অনেক কিছুই করতে হয় মার্কিসকে, অথচ এমন নয় যে কিছু না করে থাকাটা অসম্ভব ছিল তার পক্ষে।

প্রথমত, মার্কিস চিকিৎসকের কাছে যান গোপনে। জানতে পারেন কুকুরে কামড়াবার কয়েকদিনের মধ্যেই আক্রান্ত হয়েছে ভিকটিমেরা। একে একে মারাও গিয়েছে সবাই। এমনও হতে পারে সিয়েরভা মারিয়ার হবেই না জলাতঙ্ক। চিকিৎসক আব্রেনুনসিওর কথাতে ভরসা মেলে না তার। ধীরে ধীরে মার্কিসের সুস্থ মেয়েটিকে প্রায় অসুস্থ করে তুলতে চায় স্থানীয় চিকিৎসক ও কবিরাজের দল। কেন এই মেয়েটি অসুস্থ হচ্ছে না? কুকুরের কামড়াবার পর অবশ্যই জলাতঙ্ক হবার দরকার ছিল তার, যেহেতু তা হয়নি, শহরের মানুষেরা বিশ্বাস করতে শুরু করে দীর্ঘ চুলের রহস্যময় কিশোরিটি স্বাভাবিক কেউ না, নিশ্চয়ই সে একটা অশুভ শক্তি বা অশুভ কোনো কিছুই তার ওপরে ভর করেছে। এমন অবস্থাতেই কাহিনীতে প্রবল বিক্রমে প্রবেশ করে চার্চ। বিশপ। নান। কনভেন্ট।

৩.
লেখক হিসেবে মার্কেস তার চরিত্রগুলো কিভাবে নির্মাণ করেছেন?
এখানে স্বভাবতই লোকটা ব্যবহার করেছেন তার চিরচেনা কৌশল। চরিত্রগুলোকে অনবরত তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাদের খণ্ডখণ্ড গল্প। উপন্যাসের একমাত্র প্রগতিশীল চরিত্র আব্রেনুনসিও। এই চিকিৎসক শহরটিতে কিংবদন্তি এবং চার্চ ও স্থানীয় অন্যান্য চিকিৎসকেরা তাকে শত্রু মনে করে। এর পেছনে কারণ হিসেবে আমরা জানতে পারি রোগী কখন মারা যাবে তার ঠিকঠিক ঘোষণা দেন আব্রেনুনসিও। তিনি এমন একটা ট্যাবলেট আবিষ্কার করেন যেটা খেলে সারা বছর সুস্থ থাকা যায়। কিন্তু সেবনের প্রথম কয়েকদিন রোগী হয়ে যাবে উন্মাদ। যে কারণে ওই বিদঘুটে ট্যাবলেট আব্রুনেনসিও নিজেকে ছাড়া আর কাউকেই খাওয়াতে পারেন না।

সিয়েরভা মারিয়া যাদের মাধ্যমে পৃথিবীতে এলো, সেই মার্কিস আর তার দ্বিতীয় স্ত্রী বের্নাদা-র পটভূমি প্রায় নারকীয়। যার রেশ পুরো উপন্যাস জুড়েই চলতে থাকে, আমরা অনুমান করতে পারি কেন বের্নাদা নিজের জন্ম দেওয়া কন্যা সন্তানকে এত ঘৃণা করেন, আর মার্কিসই বা কেন নিজের মেয়েকে স্বাভাবিক ভালোবাসাটুকু দিতে না পারার যন্ত্রণায় প্রতিনিয়ত দগ্ধ হন।

আরো পড়ুন ➥ গেরাসিম কেন মুমুকে হত্যা করে?

পিতা-মাতার ঘৃণ্য দাম্পত্য জীবনের পাশাপাশি আমাদের সামনে উন্মোচিত হয় চার্চের গ্রন্থাগারিক কায়েতানো দেলাউরার সঙ্গে সিয়ের্ভা মারিয়ার প্রেম। চার্চ মনে করে কনভেন্টে বন্দী মারিয়ার ওপর ভর করেছে এক দানব, আর সেই দানব তাড়ুয়া হিসেবে নিয়োগ পায় দেলাউরা। চরিত্র হিসেবে দেলাউরা নিজের অর্জিত বিবেক আর নিয়তির সঙ্গে অনবরত সংগ্রামরত এক যুবক। সম্ভবত চিকিৎসক আব্রেনুনসিওর পর এ উপন্যাসে সে আমার সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র। ছত্রিশ বছর বয়সী এ যুবক একই সঙ্গে যুক্তিবাদী ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন। দুটি বিষয়ের একটা চিরন্তন দ্বন্দ্বে প্রতি মুহূর্তে বিধ্বস্ত হতে থাকে সে। ধর্মে বিশ্বাসী যে হৃদয় নিয়ে সে ভাবে প্রেম হলো আদিমতম পাপ, আবার প্রেমের সুতীব্র তাড়না তাকে করে তুলতে চায় বিদ্রোহী, হয়তো করেও তোলে শেষের দিকে?

আর সিয়েরভা মারিয়া? সে বুনো একটা ঝড়ের মতো। মিথ্যে বলার ওস্তাদ। সৌন্দর্যে অলৌকিক। ক্রীতদাসদের সঙ্গে বড় হয়ে উঠবার কারণে যে কোনো স্বাভাবিক আদপ-কেতা জানে না, বড়দের শত্রু মনে করে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়েও মেয়েটা ভালোবাসার কাঙাল। তাকে মনে হয় প্রকৃতির একটা বন্য শক্তি, প্রাণের উৎস। বয়স যাকে বড় করে তোলে প্রতিদিন, আর সৌন্দর্য করে তোলে রহস্যময়। যে রহস্য তার আশপাশের কেউই স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারে না।

৪.
প্রেমের গল্পের আবরণে হয়তো মার্কেস কুসংস্কারের কুড়ালে ছিন্নমস্তক সব হতাভাগ্য মানুষের গল্পই করতে চেয়েছেন ছোট আকারের এই আখ্যানে। নর-নারীর প্রেম, গুরু-শিষ্যের প্রেম, জ্ঞানের সঙ্গে জ্ঞানীর প্রেম।

প্রত্যেকটি প্রেমের গল্পেই আমাদের এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়, প্রেমই কি সেই দানব যা মানব জীবনকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেয়? নাকি আসল দানবেরা লুকিয়ে আছে মানুষের মাঝেই, যারা প্রেমের মতো স্বর্গীয় ব্যাপারটিকে চিরকাল অপবিত্র করতে চেয়েছে, ধ্বংসের পক্ষ নিয়ে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়েছে?

পুরাতন শিষ্য কায়েতানোকে কুষ্ঠরোগীদের হাসপাতালে পাঠান বিশপ, প্রেম হেরে যায়। চার্চের আদেশে প্রিয় কন্যাকে কনভেন্টে পাঠান মার্কিস, প্রেম হেরে যায়। কিন্তু দেলাউরা আর সিয়ের্ভা মারিয়া? তাদের প্রেমের পরিণতি চিরন্তন। সেখানে কল্পনার কোনো আশ্রয় নিতে হয় না।

৫.
সবশেষে তাহলে কী অবশিষ্ট থাকে? নিখাদ গল্পই। চার্চ তার পূর্বেকার ক্ষমতা হারায়। প্রাচীন সেই কনভেন্ট পরিণত হয় হাসপাতালে, তারপর যা ভেঙে তৈরি হবে সুপার মার্কেট।

এক তরুণ সাংবাদিক কনভেন্টের নিচে ঘুমিয়ে থাকা অজস্র কঙ্কালের মাঝে আবিষ্কার করেন সিয়েরভা মারিয়াকে, যাকে সময় পুরোপুরি গিলে নিতে পারেনি, রয়ে গেছে তার আগুনরঙা ও শতাব্দীর দীর্ঘতম চুলের বহর। কবর খুঁড়তে থাকা আবেগহীন শ্রমিকদের ফোরম্যান সাংবাদিকটিকে জানান, ‘সে কি আপনি জানেন না? মৃত্যুর পর প্রতি মাসেই তো মানুষের চুল এক সেন্টিমিটার করে বাড়ে?’

যা নেই তাকে ফিরিয়ে আনতে মানুষ অনন্ত সংগ্রাম করে। আর যা আছে, তাকে বিলুপ্ত করতেও মানুষের প্রচেষ্টা তুলনাহীন। কথাগুলো অনবরত মাথার ভেতরে শাফল হয় আর সুদূর দ্বীপের হতভাগ্য রাজকন্যা সিয়েরভা মারিয়ার জন্য আমার মন কেমন করে।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;