বুকশপ ক্যাফে : রাজধানীর বইপ্রেমী মানুষের নিয়মিত গন্তব্য



শেহজাদ আমান, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
বইপ্রেমী ও সব ধরনের মানুষের প্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে বেঙ্গল বই

বইপ্রেমী ও সব ধরনের মানুষের প্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে বেঙ্গল বই

  • Font increase
  • Font Decrease

বই পড়া হোক, বা বইয়ের সাথে সংযুক্ত থাকার ব্যাপার, তার জন্য প্রয়োজন একটি নির্দিষ্ট পরিবেশ। তাই তো বই সাধারণত বাসাতেই পড়ে বেশিরভাগ মানুষ। ধোঁয়া ওঠা চা বা কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে একটু কাত হয়ে, হেলান দিয়ে, আরাম করে বই পড়ার অভ্যাস অধিকাংশ মানুষের। পাঠক ও বইপোকাদের সেরকম পরিবেশই দিচ্ছে বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন বুকশপ ক্যাফেগুলো। পাশাপাশি সেখানে বন্ধুবান্ধবের সাথে হালকা নাস্তা খেতে খেতে আড্ডা দিতে পারেন পাঠকরা। আলাপ করতে পারেন সাহিত্যজগৎসহ রাজ্যের সব বিষয়ে।

এধরনের অসাধারণ ও ‘হোমলি’ পরিবেশের জন্যই শহরের তরুণ-তরুণীসহ প্রায় সব বয়সের মানুষ ভিড় করছে বিভিন্ন বুকশপ ক্যাফেতে। বুকশপ ক্যাফেগুলো হয়ে উঠছে তাদের নিয়মিত গন্তব্য। নিজেদের মতো করে সময়টা কাটাতে পারছেন। আর যেতে-আসতে সংগ্রহ করছেন পছন্দানুযায়ী দেশি-বিদেশি বই। পাশাপাশি বুকশপ ক্যাফেগুলোতে মাঝেমধ্যেই অনেকে আয়োজন করছে শিল্প-সাহিত্যের ওপর বিভিন্ন অনুষ্ঠান। সেখানে লোকজনের উপস্থিতিও কম নয়। এভাবে ক্যাফেগামী মানুষের স্রোত নাগরিকজীবনে এনেছে নতুন মাত্রা, জীবনধারায় যোগ করেছে উন্নত এক সংস্কৃতি।

বুক ক্যাফে কালচার উন্নত দেশগুলোতে অনেকদিন ধরে উপস্থিত থাকলেও বাংলাদেশে এর আগমন সমসাময়িক। দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বুকক্যাফে ধরনের প্রতিষ্ঠান হিসেবে ধরা যেতে পারে ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এলিফ্যান্ট রোডে অবস্থিত ‘দীপনপুর’কে। এরপর এই অঙ্গনে এসেছে বাতিঘর, বেঙ্গল বই, কবিতা ক্যাফে ও নালন্দা বুকক্যাফে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/29/1564391031913.jpg
◤ বাংলাদেশে বুকশপ ক্যাফের অগ্রপথিক ‘দীপনপুর’ ◢

 

প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনের ৪৫তম জন্মদিনে, ২০১৭-তে এলিফ্যান্ট রোডে যাত্রা শুরু করে বুকশপ ক্যাফে ‘দীপনপুর’। ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে উগ্রবাদীদের হামলায় নিহত হন প্রকাশক দীপন। দীপনের মৃত্যুর পর তার সহধর্মিনী ডা. রাজিয়া রহমান জলি দীপনের স্মৃতি ও চেতনাকে ধরে রাখতে রাজধানীতে প্রতিষ্ঠা করেন ভিন্নধর্মী বুকশপ ক্যাফে ‘দীপনপুর।’ এলিফ্যান্ট রোডের ২৩০ নম্বর ভবনে প্রায় তিন হাজার স্কয়ার ফুটের বিশাল পরিসরে এই বুকশপ ক্যাফে করা হয়েছে। ঢুকতেই চোখে পড়বে প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনের মৃত্যুকালীন তিনি যে চেয়ারে বসেছিলেন সেটি, সঙ্গে টেবিল এবং রক্তাক্ত পাণ্ডুলিপি, কলম ও অন্যান্য জিনিসপত্র।

দীপনপুরে বই ছাড়াও রয়েছে ‘দীপনতলা’ নামের অনুষ্ঠানস্থল। চাইলে যে কেউ এখানে সাহিত্য, কবিতা পাঠ, বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে পারবেন। রয়েছে ‘ক্যাফে দীপাঞ্জলি।’ এখানে বই পড়া ও দেখার পাশাপাশি চা, কফি ও ফ্রেশ জুস পাওয়া যাবে। পাওয়া যাবে স্বাস্থ্যসম্মত নাস্তা। রয়েছে শিশু-কিশোরদের জন্য স্বপ্নরাজ্য ‘দীপান্তর।’ শিশুরা এ কর্নারে বই পড়তে পারবে, আঁকতে পারবে, পাশাপাশি পারবে খেলতেও।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/29/1564391138190.jpg
◤ নান্দনিক নকশার বাতিঘর ঢাকা, যেখানে নিয়মিত আসা-যাওয়া রুচিশীল বইপ্রেমীদের ◢

 

এরপরই বলতে হয় বাতিঘর ঢাকার কথা। ২০১৭-এর ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করা এই নান্দনিক বুক ক্যাফেটি ইতোমধ্যেই সব ধরনের বইপ্রেমী মানুষের প্রিয় একটি গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। লাল ইটের দেয়াল এবং মোঘল সম্রাজ্যের অন্যতম বিখ্যাত স্থাপত্য লালবাগ কেল্লার আদলে তৈরি এই বুকশপ ক্যাফেটি। প্রায় পাঁচ হাজার বর্গফুট জায়গা জুড়ে লক্ষাধিক বই নিয়ে রাজধানীর বাংলামটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ৮ম তলায় এর অবস্থান। এখানে রয়েছে সফট ড্রিংকস ও কফির ব্যবস্থা। পাঠকের গল্প করবার জন্য রয়েছে খোলা বারান্দা।

বাতিঘরের ভেতরে রয়েছে ছোট্ট একটি মঞ্চ। যেখানে হয় সাহিত্য আলোচনা কিংবা বই সম্পর্কিত কোনো অনুষ্ঠান। এখানে এসে ঘুরে গিয়েছেন ওপার বাংলার সমরেশ মজুমদার। মজার ব্যাপার হলো, মঞ্চটির অভ্যন্তরীণ সজ্জা করা হয়েছে লালবাগ কেল্লার পরীবিবির মাজারের মতো করে। এখানে থাকা চেয়ারগুলোও সাজানো মোঘল রীতি অনুসারে। সেলস কর্নারটি সাজানো আছে ফতেহপুরের সিক্রির মতো করে, যেখানে বসে গান করতেন সংগীতজ্ঞ তানসেন। শিশুদের জন্য রয়েছে আলাদা কর্নার। সেই জায়গাটি সজ্জিত হয়েছে কাচ ও কাঠ খোদাইয়ের বাহারি সব নকশায়। বাতিঘরে সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত ইচ্ছেমত বই পড়া যাবে কোনো ধরনের ফি প্রদান ছাড়াই। রয়েছে বাংলা ও ইংরেজি বইয়ের বিশাল সমাহার।

‘বেঙ্গল বই’ নামের বুকশপ ক্যাফেটি অবস্থিত ধানমন্ডিতে। মিরপুর রোড থেকে ২৭ নম্বর রোডে ঢুকে প্রায় শেষের দিকে বামপ্রান্তের এক রাস্তায় এর অবস্থান। তিনতলা ভবনের পুরোটা জুড়েই এই বুকক্যাফে। মন কাড়বে এর চমৎকার সব স্থাপত্যশৈলি ও খোলামেলা পরিবেশ। প্রতিটি তলা ভাগ করা হয়েছে আলাদা আলাদাভাবে। একদম উপর থেকে অর্থাৎ তৃতীয় ও দ্বিতীয় তলায় রয়েছে দেশি ও বিদেশি বইয়ের সমাহার। নিচতলায় রয়েছে ক্লাসিক সব বই ও ম্যাগাজিন, যেগুলোর অনেকাংশই অবশ্য পুরনো। দেয়ালজুড়ে রয়েছে সব অনন্য চিত্রকর্ম। অসুস্থ কিংবা চলাফেরায় অক্ষম মানুষদের জন্য রয়েছে হুইলচেয়ারে চলাফেরা করা কিংবা বই পড়ার সুযোগ।

‘বেঙ্গল বই’ নামের বুকশপ ক্যাফেটিকে ভাগ করা হয়েছে চারটি অংশে। আর সেগুলো হলো, ‘বারান্দায় কফি’, ‘বইয়ের হাট’, ‘আকাশকুসুম’ ও ‘বৈঠক খানা’। শিগগিরই ছাদে শুরু হবে নতুন আয়োজন ‘চিলেকোঠায় কাবাব’। বারান্দায় কফি নামের আয়োজন দোতলায়। বারান্দায় বসে কফি খেতে খেতে বই পড়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে সেখানে। এখানে কবিতা পাঠের আসর থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সাহিত্য আড্ডার আয়োজন করা হয় মাঝেমধ্যেই, যেখানে উপস্থিত থাকেন লেখকেরাও। বেঙ্গল বইয়ের ‘বৈঠকখানা’য় কেউ পুরনো দুইটি বই ডোনেট করলে বিনিময়ে বেঙ্গল বইয়ের পুরনো সংগ্রহ থেকে নিতে পারবে সে একটি বই।

বেঙ্গল বইয়ের স্থাপত্যের নকশা করেছেন তাহমিদা আফরোজ। পুরো ভবনজুড়ে তিনি রেখেছেন সবুজের ছোঁয়া। তারই ধারাবাহিকতায় বেঙ্গল বইতে দেখা মিলবে ঝুলন্ত বারান্দার। এখান থেকে যে কোনো দেশি বিদেশি বই কেনা যাবে নির্দিষ্ট ডিসকাউন্টে। ভেতরে বসে সকাল নয়টা থেকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত বই পড়া যাবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। লাগবে না কোনো অর্থ কিংবা রেজিস্ট্রেশন।

দোতলাতেই রয়েছে ‘বইয়ের হাট’, যা আসলে বই কেনার জায়গা। এখানে রয়েছে ১২ হাজার আইটেমের প্রায় ৭০ হাজার বই। সবাই কিনতে পারবে এসব বই। অসুস্থ বা প্রতিবন্ধীরা হুইলচেয়ারে পুরো জায়গা ঘুরে নিজের পছন্দমাফিক বই কিনতে পারবে। রয়েছে বারান্দায় বসে কফি খাওয়ার ব্যবস্থা।

তৃতীয় তলাটা শিশুদের জন্য। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘আকাশকুসুম’। বাচ্চাদের বই পড়া ও খেলাধুলার ব্যবস্থা আছে এখানে। পাওয়া যায় পাঠ্যপুস্তকও। খাতা-কলম-পেনসিল ছাড়াও মিলবে ছবি আঁকার কাগজ, তুলি, রঙ। মাঝেমধ্যে বাচ্চাদের জন্যও এখানে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান হয়। সঙ্গে আসা অভিভাবকদের জন্য আছে ম্যাগাজিন পড়ার ব্যবস্থা।

নিজের বাসার মতো পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্যে বসে বই পড়ার সুযোগ বুক ক্যাফেগুলোর মধ্যে কেবল বেঙ্গল বইতেই পাওয়া যায়। চেয়ার-টেবিলে বসে বসে বই পড়া ছাড়াও দোতলার একপাশে এমন ব্যবস্থা করা আছে, যাতে পাঠক হেলান দিয়ে বা পা-তুলে বসেও বই পড়তে পারেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/29/1564391273779.jpg
◤ ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থী ও ধানমন্ডির স্থানীয় অভিজাতদের গন্তব্য ‘দ্য নার্ডি বিন কফি হাউজ’ ◢

 

ইংরেজি সাহিত্য পড়ুয়া কিশোর-কিশোরীদের স্বর্গরাজ্য বইলা যায় ধানমন্ডিতে অবস্থিত ‘দ্য নার্ডি বিন কফি হাউজ’কে। ভিনটেজ স্টাইলে করা অভ্যন্তরীণ সজ্জা ও মনোরম পরিবেশে কফির ধোঁয়া ওঠানোর সাথে সাথে হাতে ইংরেজি বই নিয়ে মেতে থাকতে অনেকেই ভিড় করছেন এখানে। তাদের বেশিরভাগই অবশ্য অল্পবয়স্ক বা তরুণ। এখানের ইংরেজি বইয়ের সংগ্রহশালাটা বেশ ভালোই। হালকা স্ন্যাক, আড্ডা ও কফি থাকায় কিশোর কিশোরী পাঠকদের মাঝে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এটি। মাঝেমধ্যে এখানে আয়োজন করা হয় লাইভ মিউজিকের।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/29/1564391350164.jpg
◤ ‘কবিতা ক্যাফে’তে আয়োজিত নানারকম অনুষ্ঠানে আগমন ঘটছে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের ◢

 

কবিতা ক্যাফে চালু হয়েছে ২০১৮-এর সেপ্টেম্বর থেকে। এলিফ্যান্ট রোডে দীপনপুরের পাশের ভবনেই এর অবস্থান। ধীরে ধীরে নিজেদের গুছিয়ে এনে পূর্ণাঙ্গ বুক ক্যাফে হিসেবেই এখন কার্যক্রম পরিচালনা করছে তারা। তাদের সংগ্রহে রয়েছে ১২,০০০-এর মতো বই। ক্যাফেতে রয়েছে হালকা নাস্তা থেকে শুরু করে চাওমিন, বার্গারের মতো আইটেমও। এমনকি দুপুরের লাঞ্চেরও ব্যবস্থা রয়েছে। একপাশে ছোট একটি মঞ্চে নিয়মিত আয়োজিত হয় অনুষ্ঠানমালা। প্রতি সপ্তাহে ২-৩টি অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। শিল্প-সাহিত্যভিত্তিক অনুষ্ঠানই সেখানে বেশি হয়ে থাকে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/29/1564391556414.jpg
◤ সম্প্রতি চালু হওয়া নালন্দা বুক ক্যাফেতে রয়েছে দেশি, ভারতীয় বাংলা সেরা বইগুলোর সমাহার ◢

 

সম্প্রতি জুলাইয়ের ১২ তারিখে চালু হয়েছে ‘নালন্দা বুক ক্যাকে’ নামের নতুন বুকশপ ক্যাফে। এটিরও অবস্থান এলিফ্যান্ট রোডের দীপনপুরের পাশের ভবনে, কবিতা ক্যাফের পাশে। ১৫,০০০ বুক আইটেম নিয়ে বেশ ছিমছাম নকশায় চালু হয়েছে এটি। মোটামুটি স্বল্প পরিসরে পাঠকদের বুক ক্যাফের অভিজ্ঞতা প্রদান করতে সক্ষম। ভেতরে বসে বই পড়ার ও আড্ডা দিতে দিতে চা, কফি, সিঙ্গারা, সমুচার মতো খাবার উপভোগ করতে পারবেন পাঠকরা। দেশি বইয়ের ওপর এখানে রয়েছে ২৫% ডিসকাউন্ট এবং ভারতীয় বই কেনা যাবে গায়ের দামের ১.৬ গুণ টাকায়। ভিতরে অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে, তবে সেক্ষেত্রে তা হতে হবে কেবল শিল্প-সাহিত্যের ওপর।

বহুমুখী সুবিধা দিচ্ছে বলে এইসকল বুকশপ ক্যাফেগুলো প্রকৃত অর্থেই হয়ে উঠেছে সামাজিক মিলনমেলার এক উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র। পাঠক বা কাস্টোমারদের জন্য এগুলো সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খোলা থাকে সপ্তাহের প্রতিটি দিন।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;