বাসাবোতে তিন শ্রমিকের মৃত্যু
কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে নিথর দেহে বাড়ির পথে আলতাবুর!
জামালপুরের মাদারগঞ্জ থানার গুইনারবাড়ি এলাকার গোলাপ শেখের ছেলে আলতাবুর রহমান (৪০)। রাজমিস্ত্রীর কাজ করে পরিবার নিয়ে রাজধানীর বাসাবো মায়াকানন এলাকায় নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। জীবন যুদ্ধে স্ত্রী আফরোজা বেগমকে সঙ্গে করে ঢাকায় থাকলেও দুই সন্তান থাকতেন গ্রামের বাড়িতে বাবা-মায়ের কাছে। মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ঢাকায় ফিরে সকালে কাজে যোগ দিয়েছিলেন আলতাবুর। কিন্তু দিন পার হওয়ার আগে ফের বাড়ির পথে। তবে এবার নিথর দেহে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে চেপে।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছয় দিন আগে আলতাবুরের বড় বোন ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বোনের মৃত্যুর খবরে বাড়িতে যান। পাঁচদিন পর গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকায় ফিরেছিলেন। আজ সকালে কাজে যোগ দিয়ে কাজ শুরুর আগেই ১০ তলা ভবন থেকে পড়ে মারা যান।
শুধু আলতাবুর নয় রাজধানীর সবুজবাগ থানার আহমেদবাগ ফাস্ট লেন মায়াকানন মসজিদের পেছনের একটি নির্মাণাধীন ভবনের ১০ তলায় কাজ করতে গিয়ে তিন নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই আলতাবুর ও মো. অন্তরের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে মফিজুল ইসলামকে (২০) উদ্ধার করে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করে স্থানীয়রা। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর ২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তিনজনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আনা হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে গিয়ে দেখা যায়, নিহত তিন জনের কারোই স্বজন উপস্থিত নেই। কয়েকজন পরিচিত, বন্ধু ও দূর সম্পর্কের আত্মীয় এসেছেন। তাদের কাছ থেকে নিহত তিন শ্রমিকের সঙ্গে কাজ করা মিস্ত্রী মো. হালিমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, গতকাল ভবনের বাইরের দিকে প্লাস্টার করার জন্য বাঁশ দিয়ে মাচা বানানো হয়েছে। আজ সকালে প্লাস্টারের কাজ শুরুর আগে পানি দেওয়ার জন্য আলতাবুর, মফিজ ও শান্ত মাচার ওপরে যান। হঠাৎ মাচার একটি বাঁশ ভেঙে তারা দুই ভবনের মাঝে পড়ে যায়। কপাল খারাপ ছাড়া কিছুই বলার নেই।
তিনি আরও বলেন, আলতাবুর ছয়দিন পর আজ সকালে কাজে আসেন। তার বড় বোন ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলো। হঠাৎ তার মৃত্যুর খবর পেয়ে গ্রামের বাড়িতে যান। গতকাল রাতে জামালপুর থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। আজ সকালে কাজে এসে পানি দিতে গিয়ে বাঁশ ভেঙে নিচে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ঘটনার সময়ে আমি নিচে ছিলাম ওরা ওপরের দিকে ছিলো। নিচে পড়ে যাওয়ার পরপরই মৃত্যু হয় আলতাবুর ও অন্তরের। হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান মফিজুর।
নিরাপত্তা বেল্ট ব্যবহার করতেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না। আমরা কোনো বেল্ট ব্যবহার করতাম না। কেউ কখনো এগুলো ব্যবহার করতে দেয়নি।
রাজমিস্ত্রীর সহকারীর কাজ করা মফিজুর রহমানের মৃত্যুর খবরে তার কয়েকজন বন্ধু ছুটে এসেছেন ঢামেকের মর্গের সামনে। তারা বন্ধুর মরদেহের অপেক্ষা করছেন। মফিজুরের বন্ধুরা বার্তা২৪.কমকে বলেন, মফিজুর তিন মাস আগে বিয়ে করেছে। তার বাবাও একজন রাজমিস্ত্রী। তাদের গ্রামের বাড়ি জামালপুরের সদর থানার চরপাড়া এলাকায়। তিন ভাইয়ের মধ্যে সে বড়। গতকাল রাত ১০টার দিকে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে বাসায় গেছে। সকালে কাজে এসে ভবন থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়।
একই ঘটনায় নিহত অন্তরের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থানার তাড়াটিয়া চরপাড়া এলাকায়। তিনি রাজমিস্ত্রীর সহকারী হিসেবে কাজ করতেন।
তিন শ্রমিকের ঘটনায় সবুজবাগ থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সবুজবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রলয় কুমার সাহা।
তিনি বলেন, বাসাবোর মায়াকানন এলাকায় ভবন থেকে পড়ে তিন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি করেছেন আলতাবুরের স্ত্রী আফরোজা। মামলায় অবহেলা জনিত কারণে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।