ব্যাটারিচালিত রিকশার উৎপত্তিস্থল
জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছি: ডিসি ট্রাফিক
ব্যাটারিচালিত রিকশার মূল উৎপত্তিস্থল চার্জিং পয়েন্ট এবং যেখানে গ্যারেজ আছে, যে সব ব্যক্তিরা এগুলোর সঙ্গে জড়িত সেসব ব্যক্তিদেরও তালিকা প্রণয়নের কাজ ইতিমধ্যে শুরু করেছি বলে জানিয়েছেন তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের ডিসি উপ-পুলিশ কমিশনার মোস্তাক আহম্মেদ।
তিনি বলেন, আমরা সম্মিলিতভাবে আমাদের ডিএমপি পুলিশ কমিশনার যেভাবে পরবর্তী নির্দেশনা দেয় সেভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ নিব।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে ট্রাফিক-তেজগাঁও বিভাগ আয়োজিত ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন পরিকল্পনার আনুষ্ঠানিক বাস্তবায়ন অনুষ্ঠানে এসব জানানো হয়।
মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, ঢাকা শহরের মোহাম্মদপুর এলাকার বাসস্টান্ড কেন্দ্রিক মানুষ প্রায়ই ট্র্যাফিক জ্যাম নিয়ে অভিযোগ দেয়। এই এলাকায় স্কুল-কলেজের আধিক্য হিসেবে এই এলাকাতে যে ধরনের মানুষ বসবাস করে মানুষের আচরণ এবং যানবাহনের যে ধরন সেটা আমরা দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলাম না। আমরা সিটি কর্পোরেশন লোকাল জনপ্রতিনিধি এবং অন্যান্য সব লোকের সঙ্গে সমন্বয় করে কোনোভাবেই এই এলাকা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলাম না। এখানে রিকশা, সিএনজি বা যানজট হয় এমন গাড়ির আধিক্য আছে। তাই আমরা ট্রাফিক পুলিশ কদিন ধরেই ছোট ছোট আকারে পরিকল্পনা তৈরি করেছিলাম। রমজান মাসে শিয়া মসজিদ এলাকায় একটা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার আয়োজনও করেছিলাম। সেটার কারণে অনেকটা স্বস্তিদায়কও হয়েছে।
তিনি বলেন, মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে শুরু করে শিয়া মসজিদ এবং বসিলা এলাকাতে যাতে কোনো ধরনের হকার না থাকে তার জন্যও আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। পাশাপাশি রিকশা বা অন্যান্য গাড়ির জন্য আলাদা লেন বা ওয়ান ওয়ে করে দিয়েছি যাতে গাড়ি-ঘোড়া উল্টা রোডে না যেতে পারে তার জন্য ব্যবস্থা করেছি।
মোহাম্মদপুর এলাকায় টোটাল ২২টি স্কুলে ৩০ হাজারের ওপরে পড়াশোনা করে। আমরা প্রত্যেক স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইতিমধ্যে মিটিং করেছি এবং জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মিটিং করেছি। এখানে সমস্যা হলো এই স্কুলগুলোতে বিভিন্ন ব্যক্তিগত গাড়ি আসে আবার পাশাপাশি রিকশা আসে। আমরা এই স্কুলকেন্দ্রিক এলাকাগুলো নিয়ে কিছু পরিকল্পনা করেছি রাস্তার ব্যবস্থা করেছি এবং আরো কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে। আশা করি ১০-১৫ দিনের মধ্যে এগুলো সব বাস্তবায়ন করতে পারব।
ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচল প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাটারি চালাতে রিকশার বিষয়ে হাইকোর্টের একটা নির্দেশনা ছিল। ট্রাফিক যে সমস্ত এলাকাতে থাকে সেই সমস্ত এলাকাতে ব্যাটারি চালিত রিকশা যাতে কোনোভাবে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা অনেক আগে থেকেই সচেষ্ট আছি। কিন্তু আপনারা জানেন ব্যাটারিচালিত রিকশা যে পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে তা দ্রুত সময়ে ঢাকা শহর থেকে নির্মূল করা সম্ভব না।
ব্যাটারি চালিত রিকশা ধরে ডাম্পিং স্টেশনে প্রেরণ না করে জরিমানা করে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত ডাম্পিং ব্যবস্থা নেই। যে পরিমাণ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা রয়েছে সেগুলো ডাম্পিং করতে গেলে তো পর্যাপ্ত ডাম্পিং স্টেশন প্রয়োজন। এখন আমাদের যে ডাম্পিং স্টেশন রয়েছে সেখানে দেখা গেল ৫০টি অটোরিকশা ডাম্পিং করা যাবে। কিন্তু তারপরে আমরা যেগুলো ধরব সেগুলো কি করব? তাছাড়াও তো অন্যান্য অনেক গাড়ি আছে যেগুলো ডাম্পিংয়ে নেয়া হয়। রিক্সা দিয়ে স্টেশন পরিপূর্ণ করে রাখলে অন্য যানবাহন গুলো ডাম্পিং স্টেশনে নেয়া হবে না। এই কারণে অনেক সময় আমাদের রিকশাগুলো ধরে ডাম্পিং স্টেশনে না পাঠিয়ে জরিমানা করে ছেড়ে দিতে হয়।
তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের থেকে যানজট নিরসনে পরিকল্পনায় একাধিক পদক্ষেপের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সকল গণপরিবহনের অস্থায়ী পার্কিং অপসারণ, বসিলা থেকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ননস্টপ সার্ভিস চালু করা, বাসস্ট্যান্ড থেকে বসিলা চার রাস্তার মোড় পর্যন্ত সকল অবৈধ হকার উচ্ছেদ করে শতভাগ রাস্তা যানবাহন চলাচল উপযোগী করা, বাসস্ট্যান্ড কেন্দ্রিক বিআরটিসি'র বাস ডিপো থাকায় বিআরটিসি'র বাস দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় অপেক্ষা করার সুযোগ না দেওয়া এবং এ সংক্রান্তে কর্তৃপক্ষের সাথে যথাযথ সমন্বয় করা, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড কেন্দ্রিক নতুন সার্কুলেশন প্ল্যান বাস্তবায়ন করা।
এমনকি, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সার্বিক উন্নতির স্বার্থে বাসস্ট্যান্ডর অপ্রয়োজনীয় বিষয়াদি অপসারণ করে রাস্তা ও ইন্টারসেকশন প্রশস্ত করার উদ্দেশে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।