যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০০টি আধুনিক যাত্রীবাহী কোচ কিনতে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান আরআইটিইএস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে।
সোমবার (২০ মে) রাজধানীর রেলওয়ে ভবনে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম, রেলপথ সচিব হুমায়ুন কবীর, মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী, ভারতীয় কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাহুল মিত্তাল, ভারতীয় রেলওয়ের প্রোডাকশন ইউনিটের অতিরিক্ত সদস্য সঞ্জয় কুমার পংকজ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব করপোরেশন মিচেল ক্রেজা ও রেলওয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় রেলপথ মন্ত্রী জিল্লুল হাকিম বলেন, আমাদের ক্যারেজের খুব সমস্যা। এই মূহুর্তে আপনারা (ভারতীয়) যে ক্যারেজ দিচ্ছেন এর জন্য ধন্যবাদ।
তিনি বলেন, চুক্তিতে ক্যারেজ কবে দেওয়া হবে সেই সময় উল্লেখ নেই। সময় উল্লেখ থাকলে আমাদের সুবিধা হবে। আমরা সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে পারবো। আগামী দুই মাসের মধ্যে যদি দুই সেট ক্যারেজ দেওয়া যায় তবে সেটা আমাদের জন্য ভালো হবে। বাকিগুলো শিডিউল করে নিলে হবে।
মন্ত্রী বলেন, রেলের কর্মকর্তারা স্লো। এটা আমার জন্য দুঃখজনক। তারা ভাবে এটা ৫ থেকে ৬ মাস লাগবে। আমাদের আরও বগি লাগবে।
রেলসচিব হুমায়ুন কবীর বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণাঞ্চলে রেলের সংযোগ স্থাপন হয়েছে। এতে করে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণের জেলাগুলোর যোগাযোগ বাড়ছে। এরফলে এসব প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ রেল যোগাযোগকে ত্বরান্বিত করবে।
মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, রেলের লক্ষ্য হচ্ছে যোগাযোগ পরিধি বাড়ানো, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রেল সংযোগ স্থাপন করা, যাত্রীসেবা দেওয়া। আর এই প্রকল্পের মাধ্যমে সেটা অনেকাংশে সম্ভাব হবে।
জানা যায়, প্রকল্পের সময় ১ জুলাই ২০২২ থেকে ৩০ জুন ২০২৬। বাংলাদেশ সরকার ও ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (ইআইবি) অর্থায়নে প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ২৯৮ কোটি ৫৮ লাখ ৭৭ হাজার ১৩৯ টাকা (ডলার ১১৬ টাকা ৭১ পয়সা)। এতে করে প্রতিটি বগির দাম আসে ৬ কোটি ৪৯ টাকা। এটি দিবে ইআইবি যা ম্যাটিরিয়াল চার্জ। এরপর দেশে বগি আসার পর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সেটি খালাস বাবদ আরও ৩৫ শতাংশ টাকা দিতে হবে। এই অর্থ দিবে বাংলাদেশ সরকার যা প্রায় ৩০৩ কোটি টাকা।
চুক্তি অনুযায়ী সবধরনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ২০ মাসের পর থেকে বগি দেওয়া শুরু হবে, যা চলবে ৩৬ মাস পর্যন্ত। অর্থ্যাৎ ১৬ মাসের মধ্যে রেলওয়ে এই বগিগুলো পাবে।
রেলওয়ে বলছে, বগিগুলো হবে স্টেইনলেস স্টিলের, দ্রুতগতি সম্পন্ন, বগির ছাদে এসি থাকবে, অটোমেটিক এয়ার ব্রেক পদ্ধতি ও পরিবেশবান্ধব হবে। এই বগিগুলো পরবর্তীতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলোর সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
প্রকল্পের উদ্দেশ হিসেবে বলা হয়েছে, ক্যারেজের প্রাপ্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে যাত্রীদের আধুনিক, নিরাপদ ও আরামদায়ক সেবা প্রদান, যাত্রী চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন রুটে রেল পরিচালনা, পুরোনো ও আয়ুষ্কাল শেষ হওয়া যাত্রী ক্যারেজগুলো প্রতিস্থাপন এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা।
রেলওয়ে নিজস্ব নথিতে স্বীকার করে বলেছে, সারাদেশে রেলের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পড়লেও যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে রয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প দ্রুততার সাথে শেষের দিকে এগিয়ে চলেছে।
রেলওয়ে আশা করছে, এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বাংলাদেশে রেলপথে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। তবে এ প্রকল্প দুটি পরিপূর্ণভাবে শেষ হলে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাত্রী বহনের সুবিধার্থে সাহায্য করবে।