সুন্দরীদের প্রেমের ফাঁদ; সুযোগ বুঝে নগ্ন ভিডিও ধারণ-ব্ল্যাকমেইল
মিষ্টি কথা ও সুন্দর চেহারার আড়ালে প্রেমের ফাঁদ পেতে সুযোগ বুঝে নগ্ন ভিডিও করে ব্ল্যাকমেইল করাই তাদের মূল পেশা। এই অপরাধীদের চক্রে কেউ সাজে পুলিশ, কেউ সাংবাদিক। লোক লজ্জার ভয়ে প্রায়ই ঘটনা এড়িয়ে যান ভুক্তভোগীরা। আশুলিয়ায় বিভিন্ন অভিযানে এমন একাধিক চক্র আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলেও কমছে না তাদের দৌরাত্ম।
গত ২০ এপ্রিল। পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে এমনই এক চক্র আশুলিয়ার জিরানী এলাকায় সড়ক থেকে মোটরসাইকেলে এক যুবককে তুলে নিয়ে যায় পাশ্ববর্তী জঙ্গলে। স্ত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কের আখ্যা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতিবাদ করে মারধর করে ক্ষতবিক্ষত করা হয় ভুক্তভোগীর পুরো শরীর। বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে যুবকের মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে অপরাধীর স্ত্রীর মুঠোফোনে নানা মেসেজ পাঠায় চক্রের সদস্যরাই। টাকার বিনিময়ে ৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার হন ভুক্তভোগী ইমন। পরে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হয় এই চক্রের সদস্য ফাহিম ও সাথী আক্তার দম্পতি।
ভুক্তভোগী ইমন হোসেন বার্তা ২৪.কমকে বলেন, হঠাৎ করে একটা মোটরসাইকেল আসে আমাকে অস্ত্র ঠেকিয়ে জোরজবরদস্তি করে জিরানী থেকে তুলে নিয়ে আসে। ওখান থেকে শ্রীপুর এলাকায় ল্যাব ওয়ান হসপিটাল এর পিছনে জঙ্গলের ভিতরে নিয়ে যেয়ে আমাকে জিম্মি করে রাখেন। আমার কাছ থেকে মোবাইলটা নিয়ে উনারা এই প্ল্যান করেছে। আমাকে নিয়ে যায় ফাহিম ওর স্ত্রীর সাথে অস্ত্র ঠেকিয়ে আমার কাছে থেকে জবানবন্দী নিয়ে রেকর্ড করে রাখেন। পরে তাদের ২০ হাজার টাকা দেওয়ার পরে আমাকে মুক্তি দেওয়া হয়। আমি চলে আসার পরে আমাকে ফোন করে জানানো হয় এটা নিয়ে পরবর্তীতে যদি কোন ধরনের আলোচনা হয় বা কেউ যদি জানে তাহলে যে কোন সময় আমাকে মেরে ফেলা হবে।
জনবহুল এই অঞ্চলে প্রায়ই ঘটে এমন প্রতারণার ঘটনা। প্রেমের ফাঁদে পা দিয়ে গত ২ মে চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে এসে আশুলিয়ার জামগড়ায় রিয়া মনি নামে নারীর ব্লাকমেইলের শিকার হন যুবক সানাউল মাহমুদ। ঘরে আটকে রেখে অসামাজিক কাজের আখ্যা দিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয় প্রায় ৬০ হাজার টাকা। অভিযোগ পেয়ে এই চক্রের ৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে পোশাক শ্রমিক এক তরুণকে একই কায়দায় আটকে রেখে টাকা হাতিয়ে নেয় অপর একটি চক্র।
ভুক্তভোগী সানাউল মাহমুদ বার্তা ২৪.কমকে বলেন, দশ দিন আগে ফেসবুকে একটি মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বাইপাইলে ভাইয়ের কাছে গেলে তারপর তার সাথে দেখা করি। দেখা হওয়ার পরে তার বাসায় নিয়ে যায় আমাকে। বাসায় আমাকে আটকে রেখে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে আমার কাছ থেকে নগদ ৩৫ হাজার ৬০০ টাকা ও বিকাশ থেকে ২৯ হাজার ৩৫০ টাকা হাতিয়ে নেয় ।
ভুক্তভোগীর স্বজন মো. জুলহাস বার্তা ২৪.কমকে বলেন, তারা অনেক ধরনের প্রতারণা করে। যেমন পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দেয়। নেশা যোগ্য জিনিস অনেক কিছু ঢুকিয়ে দিয়ে তারা বলে পুলিশকে জানাই এ ধরনের প্রতারণা করেন তারা।
এই সব প্রতারকদের মিষ্টি কথায় না ভুলে আরো সচেতন হওয়ার পরামর্শ আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর। আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন্স) নির্মল কুমার দাস বার্তা ২৪.কমকে বলেন, কারো সাথে কোন সম্পর্কে জড়ানোর আগে আগে তার পরিচয় জানতে হবে। তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। অন্যথায় আমাদের বড় ধরনের যে কোনো সমস্যা হতে পারে। এছাড়া অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি চক্রকে আমরা আইনের আওতায় এনেছি। কিন্তু নিজে সতর্ক থাকলে এ ধরণের প্রতারকদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।