ব্ল্যাকে টিকিট কিনে বিপাকে ১৩ যাত্রী, কালোবাজারির নাম 'জসিম'



মাসুম বিল্লাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাইবান্ধা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বুড়িমারী (লালমনিরহাট) থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন বুড়িমারী এক্সপ্রেস। এই ট্রেনে দ্বিগুণ দামে ঢাকার টিকিট কিনেও যাত্রীদের পড়তে হয়েছে চরম বিপাকে। হাতে টিকিট থাকা সত্বেও কর্তৃপক্ষের কাছে সাভ্যস্ত হতে হয়েছে বিনা টিকিটের অবৈধ যাত্রী হিসেবে। শুধু কি তাই? সিনেমার মতো যেন অভিনয় দেখতে থাকেন ট্রেনের অন্য যাত্রীরা। আর দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা পালন করে ক্যামেরাম্যান এবং সাংবাদিকের ভূমিকা।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাতে এমনই হতাশাজনক এক ঘটনা ঘটেছে ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেসে'। যাত্রীরা দ্বিগুণ মূল্য দিয়ে টিকিট কিনেও পড়তে হয়েছে তোপের মুখে। এদিন ট্রেন সংশ্লিষ্টদের প্রশ্নের কোনও সদত্তোর দিতে পারেনি পাঁচ টিকিটে থাকা ‘ঞ’ বগীর ১৩ যাত্রী। তাদের মধ্যে দুই সন্তানসহ যেন দুমরে-মুচরে গেছেন এক নারীও। কারণ তাদের টিকিটগুলো ছিল ব্ল্যাকে ক্রয় করা।

কিভাবে পেয়েছেন এসব টিকিট?  এমন প্রশ্নের উত্তরে যাত্রীদের মুখে ছিল একটিই নাম 'জসিম'। প্রশ্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রেতা কে এই জসিম?

এদিন বুড়িমারী এক্সপ্রেসে নাটোর যাচ্ছিলেন বার্তা২৪.কমের গাইবান্ধার এই প্রতিবেদক। তিনি গাইবান্ধা রেল স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠেন। এদিন বুড়িমারী এক্সপ্রেস রাত ১০ টা ৫৬ মিনিটে গাইবান্ধা রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে গিয়ে বোনারপাড়া স্টেশনে প্রবেশ করে রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে। সেখান থেকে ‘ঞ’ বগিতে বেশ কিছু যাত্রী ওঠেন। ট্রেনে উঠেই এক নারী যাত্রীসহ চারজন যাত্রীর মধ্যে আসনে বসা নিয়ে বিবাদ বাধে। কারণ তাদের হাতে থাকা টিকিটের প্রত্যেকটি টিকিটই ছিল একই আসন নম্বর। মূলত কোনটা কার আসন সেটিই নিয়েই বিবাদের শুরু হয়। পরে উপস্থিত যাত্রীদের সহায়তায় বিষয়টির সমাধান হয় এবং ঞ- ৫, ৬, ৭ ও ১১ নম্বর আসনে বসেন বিবাদে ওই নারীসহ জড়ানো যাত্রীরা।

বিবাদ হওয়া চার যাত্রীর কাছে থাকা টিকিটে দেখা যায়, টিকিট দুটি ১৩ এপ্রিল একই তারিখে ক্রয় করা। যার একটিতে ঞ-৫,৬,৭, ও ১১ এই চারটি আসন এবং নারীর হাতের অপর টিকিটেও রয়েছে ঞ-৫ ও ৭ ও ১১ আসন নম্বর। ওই টিকিটে যাত্রীরা বোনারপাড়া থেকে ঢাকা পর্যন্ত যাত্রা করবেন।

ঘটনার এখানেই শেষ নয়; 

এদিন রাত ১ টার দিকে বুড়িমারী এক্সপ্রেস যখন সান্তাহার-নাটোর স্টেশনের মাঝামাঝিতে তখন ট্রেনের এই ‘ঞ’ বগিতে আসেন টিকিট কালেক্টর 'টিটিই' গোলাম হাফিজ রিজু। এসময় টিকিট চেক করার এক পর্যায়ে বিতর্কিত এই দুটি টিকিটসহ একই ধরণের আর পাঁচটি টিকিট দেখতে পান তিনি। যা দেখে ওই সব টিকিটের যাত্রীদের সাথে চটে যান টিকিট কালেক্টর। রাগান্বিত হয়ে কোথায় আর কার কাছ থেকে কেনা হয়েছে এসব টিকিট এমন প্রশ্নে দুই সন্তানসহ ঢাকাগামী এক নারী ছাড়া যাত্রী ১১ যাত্রীই বলেন একটিই নাম জসিম। তারা বোনারপাড়ার জসিমের থেকে দ্বিগুণ দামে ক্রয় করেছেন এসব টিকিট। এসময় টিটিই'র সাথে থাকা পুলিশ সদস্য তাদের ছবি ও কথা ভিডিও রেকর্ড করতে থাকেন। এদিন শত আপত্তি সত্ত্বেও ওই নারীরও ভিডিও বক্তব্য রেকর্ড করেন দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য। এ সময় ওই নারী চরম বিব্রতবোধ করে কাপড়ে ভিতরে মুখ লুকানোর চেষ্টা করেন।

এদিনের ব্ল্যাকে ক্রয় করা টিকিটগুলো বিশ্লেষন করে দেখা যায়, একই তারিখে ক্রয় করা ওই সব টিকিটে আসন সংখ্যা ছিল ১৩ টি। যার দুটি টিকিট ৮ যাত্রী, একটিতে ২ যাত্রী এবং অপর দুটি টিকিটে আসন সংখ্যা ৭ টি দেওয়া থাকলেও যাত্রী ৩ জন। টিকিট ক্রয়ে যে এনআইডি, মোবাইল নম্বর, এবং যাদের নামে ক্রয় করা হয়েছে তাদেরকে যাত্রীদের কেউই চেনেন না। শুধু তাই নয়, তাদের মধ্যে পাঁচ যাত্রীর কেউ কাউকেই চেনেন না!

১৩ যাত্রীর হাতে থাকা পাঁচ টিকিটের একটিতে দেখা যায়, ১৩ এপ্রিল তারিখে ক্রয় করা। ক্রয়কারীর নাম মো.আব্দুর রাজ্জাক বেরারি। টিকিটে এনআইডি নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে ৮৬৭...৬৮৪ এবং মোবাইল নম্বর ০১৩০......৬৩৩ ।

এছাড়া আরেকটি টিকিটে দেখা যায় টিকিট ক্রয় কারীর নাম হাওয়া আকতার হাসি। যেখানে এনআইডি নম্বর ৩৩১...৩৭৯, আর মোবাই নম্বর ব্যবহার হয়েছে ০১৭০...৫৮১। 

ওইসব টিকিটে যাত্রীদের মধ্যে একজন শাহিন (৫৫)। তার বাড়ি বোনারপাড়ায়। তিনি ফার্নিচারের ব্যবসা করেন, জরুরী কাজে ঢাকায় যাচ্ছেন তিনি। তার কাছে থাকা টিকিটের আসন নম্বর ঞ-৫, ৬, ৭ ও ১১। টিকিট দেওয়ার সময় তাকে বলা হয়েছে তার আসন নম্বর ঞ-৭। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে অপর তিনটি আসন কার? এছাড়া তার এই টিকিটে ক্রয়কারীর নাম দেখাচ্ছে আব্দুর রাজ্জাক বেরারি।

এ সময় জানতে চাইলে যাত্রী শাহিন বলেন, ‘কয়েকদিন চেষ্টা করেও টিকিট পাইনি। পরে জসিমের থেকে বাধ্য হয়ে দ্বিগুণ দামে টিকিট কিনেছি। কিছু করার নাই সবখানেই একই অবস্থা। যেতে হবে তো!’

আপনার হাতের টিকিটে আব্দুর রাজ্জাক কে? এনআইডি আর এই মোবাইল নম্বরইবা কার? এমন প্রশ্নের যাত্রীর সরল উত্তর, মোবাইল নম্বর এবং এনআইডি আর আব্দুর রাজ্জাক কে আমি জানিনা।

এছাড়া যাত্রীদের মধ্যে ওই নারীর বাড়ি সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়ার শিমুলতাইর গ্রামে। মেয়ে মাহমুদা (১১) ও ছেলে মামুন (৬) কে সাথে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন তিনি। তার হাতের টিকিটে আসন নম্বর ছিল ঞ-৫, ৭, ও ১১ নম্বর। ওই নারীর দাবি তাকে বলা হয়েছে তার আসন নম্বর ৫ ও ৭। তাহলে কোচের ১১ নম্বর আসনের যাত্রী কে?

এ সময় জানতে চাইলে ওই নারী বলেন, ঢাকা যাওয়ার জন্য আমার স্বামী দুটি টিকিট ১৭০০ টাকা দিয়ে কিনেছে। স্টেশন থেকে নয়। তবে, কার থেকে কিনেছে তা জানা নেই ওই নারীর। তিনি বলেন, টিকিট থাকার পরেও এমন ঘটনা খুব কষ্টের। এসময় পুলিশের নেওয়া ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দিবে কি না-এমন প্রশ্ন করে আতঙ্কগ্রস্ত ছিলেন তিনি।

ব্লাকে টিকিট ক্রয় করা আরেক যাত্রীর নাম শাকিল (২৩) । তবে, শাকিলের কাছে একটি নয় রয়েছে দুটি টিকিট। ওই দুই টিকিটের ৮টি আসনে ঢাকা যাচ্ছেন তারা আট যুবক।

শাকিলের হাতে থাকা দুটি টিকিটই কাউন্টার থেকে প্রিন্ট করা। যার মধ্যে ১, ৪,২৮ ও ৩০ নম্বরের ৪ টি আসনের একটি টিকিটে যাত্রীর নাম দেখাচ্ছে হাওয়া বেগম।  

হাওয়া বেগম কে? শাকিলের কাছে টিটিই'র এমন প্রশ্নে শাকিল বলেন, চিনিনা। তাহলে তার নামের টিকিটটি তোমার হাতে এলো কিভাবে? শাকিল বলেন, বোনারপাড়ার জসিম ভাইয়ের থেকে প্রতিটি টিকিট ৮০০ টাকা করে কিনেছি। এসময় জসিমের নাম শুনে ক্ষিপ্ত হন টিটিই। এসময় টিটিই সহ ট্রেন সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি এসব কালোবাজারিতে টিকিট ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে বোনারপাড়া স্টেশনের বর্তমান স্টেশন মাস্টার খলিলও জড়িত আছে বলে অভিযোগ তোলেন।

এ সময় জানতে চাইলে টিকিট কালেক্টর গোলাম হাফিজ রিজু বার্ত২৪.কমকে বলেন, এই ঞ বগীর পাঁচটি টিকিটে থাকা ১৩ যাত্রীর প্রত্যেকেই ব্ল্যাকে টিকিট কিনেছেন। বিধি মোতাবেক তারা প্রত্যকেই অবৈধ যাত্রী। কেননা, তাদের কাছে থাকা টিকিট ক্রয়ে যে এনআইডি ব্যবহার করা হয়েছে সেই নামের বা সেই এনআইডিধারীর সাথে যাত্রীদের কোন মিল নেই । তাদের সবগুলো টিকিট ব্ল্যাকে পাওয়া। নিয়ম অনুযায়ী এসব যাত্রীদের এখন জরিমানাসহ টিকিট ক্রয় করতে হবে। যদিও তিনি তা করেন নি।

কে এই জসিম?

সেদিনের একটি বগীর ১৩ যাত্রীর কাছে ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রেতা কে এই জসিম? তার পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করেছেন বার্তা২৪.কমের গাইবান্ধার এই প্রতিবেদক। খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে-

সাঘাটা উপজেলার রাঘবপুর গ্রামের বীর মুক্তযোদ্ধা মৃত হায়দার আলীর ছেলে 'জসিম'। তিনি এক সময় বোনারপাড়া স্টেশনে ব্যবসা করতেন। জসিম ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর টিকিট কালোবাজারে বিক্রির সময় বোনারপাড়া থেকে তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে বোনারপাড়া রেলওয়ে পুলিশ। সে সময় তার (জসিম) কাছ থেকে ট্রেনের চারটি টিকিট উদ্ধার করা হয়। পরে একই তারিখে রেলওয়ে পুলিশ বাদি হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে তাকে কারাগার পাঠানো হয়। যার মামলা নম্বর-২। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত জসিম মুঠোফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, "এখন টিকিট সব অনলাইনে, আর টিকিটে আমার নাম বা আমার নম্বর (এনআইডি-মোবাইল) নাই। বোনারপাড়াতে মানুষকে ভালবেসে কিছু করতে যায়া (গিয়ে) আমার নামে একটা ঘটনা ঘটে গেছে। তারপর থেকে আমি অনেকটাই দূরে।

এ সময় তিনি বলেন, বোনারপাড়া স্টেশন মাস্টার থেকে শুরু করে সবাই এই ব্যবসার সাথে জড়িত। মূলত তারাই এসব টিকিট বিক্রি করে যদি কোনো সমেস্যা হয়, তারা আমার (জসিম) নামটা তাদেরকে বলতে বলে দেয়।

এ সময় তিনি আরো বলেন, ট্রেনে সেদিনের ঘটনা আমি শুনেছি, যাত্রীরা নাকি আমার নাম বলেছে। আপনিও নাকি সেদিন ট্রেনে ছিলেন আমি জানি।

বোনারপাড়া রেলওয়ে ষ্টেশনের ষ্টেশন মাস্টার খলিল মোবাইল ফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, টিকিট কালোবাজরীর বিষয়টি দেখার দায়িত্ব জিআরপি এবং আরএমপি পুলিশের। তারা কী করে? টিকিট এখন শতভাগ অনলাইনে। যদি কেউ আমার কথা বলে থাকে তা মিথ্যা বলেছে। আমি জসিমকে সেরকমভাবে চিনিওনা। 

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা রেলওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলাম মুঠোফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন,' অভিযুক্ত জসিমকে ২০১৯ সালে কালোবাজারে টিকিট বিক্রিকালে হাতেনাতে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় রেলওয়ে পুলিশ। এই অভিযোগের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 

এ বিষয়ে ডিভিশনাল ট্রাফিক সুপারিনটেনডেন্ট (লালমনিরহাট) আব্দুল্লাহ আল মামুন মুঠোফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করতে শতভাগ টিকিট এখন অনলাইনে।

তিনি বলেন, অনেক সময় সিন্টিকিটেরা এক সিটের টিকিট একাধিক ব্যক্তিকে দিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে ট্রেনে থাকা সংশ্লিষ্টরা যাদের টিকিটের সাথে নাম বা এনআইডির মিল পায় তাদেরকে ওই সীটে বসিয়ে দেয় এবং অন্যজনকে জরিমানাসহ নতুন টিকিট করে দেওয়া হয়।

তবে, ট্রেনের টিকিট শতভাগ অনলাইন করা সত্ত্বেও এখনো শতভাগ কালোবাজারী নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি স্বীকার করে তিনি বলেন, একজন কৃষক যখন কোনো দোকানে টিকিট নিতে যান, আর সেই দোকানদার যদি সিন্ডিকেট হয় তাহলে তার আইডি দিয়েই ওরা চারটি টিকিট ক্রয় করে বেশি দামে বিক্রি করে থাকে।

এ সময় ষ্টেশনের আশেপাশে টিকিট কালোবাজারী থাকার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ষ্টেশনের আশেপাশে চিপায়-চাপায় ট্রেনের টিকিট কালোবাজারীর একটি সিন্ডিকেট আছে। যারা টিকিট কেনে তারাও বিষয়টি জানেন। বিষয়টি একটি ফৌজদারী অপরাধ।

এ ব্যাপারে সৈয়দপুর রেলওয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) ফারহাত আহমেদ মুঠোফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বিষয়টি জানলাম; অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পুলিশ কালোবাজারী নির্মূলে শতভাগ চেষ্টা করছে, তৎপর রয়েছে। টিকিট সিন্ডিকেট ধরতে রেলওয়ে পুলিশের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই।’

 

   

হকার উচ্ছেদ বন্ধসহ ১০ দফা দাবিতে ডিসি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজধানীর বংশাল, কোতোয়ালী, সূত্রাপুর, সদরঘাট ও কামরাঙ্গীচর এলাকায় ফুটপাত থেকে বিকল্প পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে নির্বিচারে হকার উচ্ছেদ বন্ধসহ ১০ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়ন ও উচ্ছেদ হওয়া হকাররা।

বুধবার (৮মে) রাজধানীর লালবাগ উপ-পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে এই বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। পরে লালবাগ ডিসি বরাবর একটি স্মারকলিপি দেন সংগঠনটির নেতারা।

জীবন-জীবিকা রক্ষায় হকারদের ১০ দফা দাবিগুলো হলো- পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ করা চলবে না। হকারদের অর্থনৈতিক অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে। জীবিকা সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে। চাঁদাবাজি বন্ধ করে হকারদের নিকট থেকে রাজস্ব আদায় করতে হবে। হকারদের উপর মামলা-গ্রেফতার দমন-পীড়ন-নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। প্রকৃত হকারদের তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। দখলকৃত সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করে হকারদের বরাদ্দ দিতে হবে। হকারদের পুনর্বাসনের জন্য ৫ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। জাতীয় বাজেটে হকারদের জন্য বরাদ্দ দিতে হবে। হকার্স মার্কেটগুলোতে প্রকৃত হকারদের নামে বরাদ্দ দিতে হবে।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল হাশিম কবির, সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী, বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মো. ফিরোজ মোল্লা, বংশাল থানা হকার্স ইউনিয়নের উপদেষ্টা সালাউদ্দীন, কোতোয়ালি থানার সভাপতি কায়ুম, সূত্রাপুর থানার সাধারণ সম্পাদক নাদিম, মহিলা সম্পাদিকা শাহিনা আক্তার প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের লালবাগ বিভাগের বংশাল, কোতোয়ালী, সূত্রাপুর, সদরঘাট ও কামরাঙ্গীচর এলাকায় নির্বিচারে হকার উচ্ছেদ ও মালামাল ধ্বংস করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। এর ফলে পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ লাখো মানুষের জীবনে অবর্ণনীয় ক্ষতি নিয়ে এসেছে।

তারা বলেন, পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ হলে বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি, দিন আনে দিন খায় এই অসহায় হকাররা কি করবে? কোথায় যাবে? পরিবারের ভরণ-পোষণ দিতে পারছে না, বৃদ্ধ মা-বাবার ওষুধের ব্যবস্থা করতে পারছে না, বাড়ি ভাড়া বকেয়া, সমিতির কিস্তি বকেয়ার হয়রানি হতে হচ্ছে।

তারা আরও বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢাকাসহ সারা দেশে ফুটপাতের হকারদের বিরুদ্ধে চলছে এক নির্মম ও নিষ্ঠুর অভিযান। উচ্ছেদের নামে প্রতিদিন ব্যাপক ভাঙচুর, মালামাল নষ্ট, লুটপাট চালানো হচ্ছে। হাজার হাজার স্বল্প পুঁজির হকার মালামাল হারিয়ে, রুটি-রুজির জায়গা থেকে বিতাড়িত হয়েছে। এই মানুষগুলো সর্বশান্ত অবস্থায় পরিবার, পরিজন নিয়ে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।

;

খুলনায় ভোক্তা অধিকারের অভিযান, জরিমানা আদায়



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, খুলনা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

খুলনায় দুই প্রতিষ্ঠানকে ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের খুলনা বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়।

বুধবার (৮ মে) খুলনার ডুমুরিয়ার থুকড়া এলাকার আনন্দ আশ্রয় ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার-কে মেয়াদ উত্তীর্ণ রি-এজেন্ট সংরক্ষণ ও ব্যবহার ও প্রতিশ্রুত সেবা প্রদান না করার অপরাধে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় ৩৫ হাজার টাকা এবং সিটি বাইপাস রোড এলাকার খুলনা রিজিওনাল ক্যান্সার হসপিটাল এন্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটকে মেয়াদ উত্তীর্ণ রি-এজেন্ট সংরক্ষণ ও ব্যবহার করার অপরাধে ২০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়াধীন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের খুলনা বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয় খুলনা ডুমুরিয়া থানার থুকড়া ও সিটি বাইপাস এলাকায় তদারকিমূলক অভিযান পরিচালনা করে। এসময় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী, চাল, ঔষধ, ডাব, তরমুজ, বিদেশি ফল, ডিম, ডায়াগনস্টিক, হসপিটাল ও ফ্যানের বাজার দর ও ক্রয় ভাউচার যাচাই করা হয়। তাছাড়া সকল ব্যবসায়ীকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রির নির্দেশনা প্রদান করে।

তদারকিকালে সরকার নির্ধারিত মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির জন্য ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয় এবং কেউ সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকে বেশি মূল্য নিলে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ সেলিম এর নেতৃত্বে অভিযানে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ওয়ালিদ বিন হাবিব, কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শাহরিয়ার আকুঞ্জি, ক্যাব খুলনার সদস্য জেড. এন. সুমন, আনসার ও পুলিশ সদস্যবৃন্দ।

;

‘খাদ্যদ্রব্য পচনরোধে আধুনিক কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ হবে’



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশে পচনশীল খাদ্যদ্রব্য মজুতের লক্ষ্যে আধুনিক কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ করা হবে বলে সংসদে জানিয়েছে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।

বুধবার (৮ মে) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এই তথ্য জানান। এ সময় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

আধুনিক হিমাগার নির্মাণের বিষয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় ‘পেঁয়াজসহ পচনশীল কৃষিজাত পণ্যদ্রব্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে আধুনিক হিমাগার নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।

কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণের জন্য ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) চারশত ২৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা সম্পূর্ণ জিওবি অনুদানে ব্যয়ে মার্চ ২০২৪ হতে জুন ২০২৭ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে । টিসিবি থেকে প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি ১০০% জিওবি অনুদানে বাস্তবায়নের প্রেক্ষিতে অর্থ বিভাগের অনুমতি গ্রহণের জন্য অর্থ বিভাগে পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অর্থ বিভাগের অনুমোদন পাওয়া গেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ফরিদপুরে ১০ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি এবং পাবনা জেলায় ১০ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি হিমাগার নির্মিত হবে। এতে সর্বমোট ২০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ অথবা পচনশীল কৃষিজাত পণ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করা যাবে। সংরক্ষিত পণ্যদ্রব্য দেশের বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে। মৌসুমের সময় পেঁয়াজসহ পচনশীল কৃষিজাত পণ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করে কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবে।

;

দেশব্যাপী চলছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা

  • Font increase
  • Font Decrease

জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের অর্থায়নে এবং পৃষ্ঠপোষকতায় ৬৪ জেলায় শুরু হয়েছে ৪৫তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ এবং মেলা।

২২ এপ্রিল শুরু হওয়া এ বিজ্ঞান মেলায় অংশ নিয়ে নবীন শিক্ষার্থী ও ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা তাদের উদ্ভাবিত বিজ্ঞানের নানা প্রকল্পের উপস্থাপনা নিয়ে হাজির হয়েছে। বিজ্ঞান মেলায় জুনিয়র, সিনিয়র এবং বিশেষ ৩টি গ্রুপে প্রকল্পগুলো উপস্থাপিত হচ্ছে।

মূলত ৪৫তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের আওতায় উপজেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত বিজ্ঞান মেলার বিজয়ী ও সেরা প্রকল্পগুলোই উপস্থাপিত হচ্ছে জেলা পর্যায়ের বিজ্ঞান মেলায়। ৮ মে পর্যন্ত ২৮টি জেলায় এ বিজ্ঞান মেলা সম্পন্ন হয়েছে। এতে প্রায় ৮ শতাধিক বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন প্রকল্প উপস্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, রোবটিক্সের আধুনিক ব্যবহার, সৌর বিদ্যুতের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার, বাসাবাড়িতে অগ্নিকাণ্ড ও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, পরিবেশবান্ধব নগরায়ণ, অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহারসহ বিভিন্ন বিষয়। বিজ্ঞান মেলা ছাড়াও অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, বিজ্ঞান বিষয়ক কুইজ এবং বিজ্ঞান বিষয়ক সভা-সেমিনার।

জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী বলেছেন, তরুণ প্রজন্মকে সামাজিক অবক্ষয় থেকে সুরক্ষার লক্ষ্যে জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চায় সম্পৃক্ত রেখে তাদের মনস্তাত্বিক উন্নয়ন ও উদ্ভাবনী চেতনার বিকাশ ঘটাতে হবে। বাংলাদেশকে একটি আধুনিক বিজ্ঞানবান্ধব রাষ্ট্রে রূপান্তরের মহৎ লক্ষ্য নিয়ে বিজ্ঞান জাদুঘর কাজ করছে। বিজ্ঞান মেলা শুধু আনুষ্ঠানিক প্রদর্শনী নয়, মেলায় উদ্ভাবিত প্রকল্পগুলো বিভিন্ন সেক্টরে প্রয়োগ করে জনগণের জীবনমান উন্নত এবং নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করার অন্যতম লক্ষ্য। এখন বছরে কেবল নির্ধারিত সময়ে নয়, সারা বছরই তৃণমূল পর্যায়ে ছোট ছোট বিজ্ঞান মেলা আয়োজনের মাধ্যমে বিজ্ঞানের মহাসমুদ্রে তরুণ প্রজন্মকে অবগাহন করাতে বিজ্ঞান জাদুঘর পরিকল্পনা করছে।

;