হাদিস সংকলনের ইতিহাস



তানভীর মাহতাব আবীর, অতিথি লেখক, ইসলাম
হাদিস সংকলনের ইতিহাস, ছবি: সংগৃহীত

হাদিস সংকলনের ইতিহাস, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কোরআন শরীফে থাকা ইসলামি বিধি-বিধানের বিশ্লেষণ এবং তা বাস্তবায়নের কার্যকর পন্থার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে হাদিসে।

হাদিসের পরিচয়
আল্লাহতায়ালা হজরত জিবরাইল আলাহিস সালামের মাধ্যমে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যে অহি নাজিল করেন সেগুলোই হাদিসের মূল উৎস।

অহি প্রধানত দুই প্রকার। একটি হচ্ছে প্রত্যক্ষ অহি। এই অহি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর সরাসরি নাজিল হতো। অন্যটি হচ্ছে পরোক্ষ অহি। এই অহি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ওপর প্রচ্ছন্নভাবে নাজিল হতো। নবী করিম (সা.) নিজের ভাষা, কথা, কাজ এবং সম্মতির মাধ্যমে তা প্রকাশ করেছেন। এগুলোই হাদিস নামে পরিচিত।

তবে মুহাদ্দিসগণ (হাদিস চর্চা করেন এবং বহুসংখ্যক হাদিসের সনদ ও মূল আরবি বক্তব্য (মতন) সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান রাখেন এমন ব্যক্তি) হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কিত বর্ণনা ও তার গুণাবলি সম্পর্কিত বিবরণকেও হাদিসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

হাদিস সংকলনের ইতিহাস
সাহাবায়ে কেরাম (রা.) নবী করিম (সা.)-এর প্রতিটি কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন এবং তার প্রতিটি কাজ ও আচরণ সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে লক্ষ্য করতেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদেরকে ইসলামের আদর্শ ও এর যাবতীয় নির্দেশ যেমন মেনে চলার হুকুম দিতেন, তেমনি তা স্মরণ রাখতে এবং অনাগত মানব জাতির কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি সাহাবিদেরকে সম্বোধন করে বলেছেন, ‘আমার পরে লোকেরা তোমাদের নিকট হাদিস শুনতে চাইবে। তারা এই উদ্দেশ্যে তোমাদের নিকট এলে তাদের প্রতি সদয় হয়ো এবং তাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করো।’ -মুসনাদ আহমদ

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বাণীর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সাহাবিরা হাদিস সংরক্ষণে উদ্যোগী হন। প্রধানত তিনটি শক্তিশালী উপায়ে নবী করিম (সা.)- এর হাদিস সংরক্ষিত হয়। ১. উম্মতের নিয়মিত আমল, ২. হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর লিখিত ফরমান, সাহাবিদের কাছে লিখিত আকারে সংরক্ষিত হাদিস ও পুস্তিকা এবং ৩. হাদিস মুখস্থ করে স্মৃতির ভাণ্ডারে সঞ্চিত রাখা, তারঃপর বর্ণনা ও শিক্ষাদানের মাধ্যমে লোক পরম্পরায় তার প্রচার।

সেকালে আরবদের স্মরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর ছিল। কোনো কিছু স্মৃতিতে ধরে রাখার জন্য একবার শ্রবণই তাদের জন্য যথেষ্ট ছিল। স্মরণশক্তির সাহায্যে আরববাসীরা হাজার বছর ধরে তাদের জাতীয় ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করে আসছিল। হাদিস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্রাথমিক উপায় হিসেবে এই মাধ্যমটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নবী করিম (সা.) যখনই কোনো কথা বলতেন, উপস্থিত সাহাবিরা পূর্ণ আগ্রহ ও আন্তরিকতা সহকারে তা শুনতেন, অতঃপর মুখস্থ করে নিতেন। প্রায় এক লাখ সাহাবি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বাণী ও কাজের বিবরণ সংরক্ষণ করেছেন এবং স্মৃতিপটে ধরে রেখেছেন।

এ ছাড়া উম্মতের নিরবচ্ছিন্ন আমল, পারম্পারিক পর্যালোচনা ও শিক্ষাদানের মাধ্যমেও হাদিস সংরক্ষিত হয়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যে নির্দেশই দিতেন, সাহাবিরা সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যে পরিণত করতেন। তারা মসজিদ অথবা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে একত্র হতেন এবং হাদিস আলোচনা করতেন। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘আমার নবী করিম (সা.)-এর নিকট হাদিস শুনতাম। তিনি যখন মজলিস থেকে উঠে চলে যেতেন, আমরা শ্রুত হাদিসগুলো পরস্পরে পুণরাবৃত্তি ও পর্যালোচনা করতাম। আমাদের এক একজন করে সবাই হাদিসগুলো মুখস্থ শুনিয়ে দিতেন। এ ধরনের প্রায় বৈঠকেই অন্তত ষাট-সত্তরজন লোক উপস্থিত থাকতেন। বৈঠক থেকে আমরা যখন উঠে যেতাম তখন আমাদের প্রত্যেকেরই সবকিছু মুখস্থ হয়ে যেত।’ –আল মাজমাউয যাওয়াইদ: ১/১৬১

প্রাথমিক পর্যায়ে কোরআনে কারিম ব্যাতিত সাধারণতঃ অন্য কিছু লিখে রাখা হতো না। পরবর্তীকালে হাদিসের বিরাট সম্পদ লিপিবদ্ধ হতে থাকে। ‘হাদিস নবী করিম (সা.)-এর জীবদ্দশায় লিপিবিদ্ধ হয়নি, বরং তার ইন্তেকালের শতাব্দীকাল পর লিপিবদ্ধ হয়েছে’ বলে যে ভুল ধারণা প্রচলিত আছে তার আদৌ কোনো ভিত্তি নেই। অবশ্য একথা ঠিক যে, কোরআনের সঙ্গে হাদিস মিশ্রিত হয়ে জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে- কেবল এই আশঙ্কায় ইসলামি দাওয়াতের প্রাথমিক পর্যায়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, ‘আমরা কোনো কথাই লিখো না। কোরআন ব্যাতিত আমার নিকট থেকে কেউ অন্যকিছু লিখে থাকলে তা যেন মুছে ফেলে।’ –সহিহ মুসলিম

কিন্তু যেখানে এরূপ বিভ্রান্তির আশঙ্কা ছিলো না নবী করিম (সা.) সেসব ক্ষেত্রে হাদিস লিপিবদ্ধ করে রাখতে বিশেষভাবে উৎসাহিত করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি হাদিস বর্ণনা করতে চাই। তাই যদি আপনি অনুমতি দেন, তাহলে আমি স্মরণশক্তির ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে লেখনীরও সাহায্য গ্রহণ করতে ইচ্ছুক। তিনি বললেন, আমার হাদিস কণ্ঠস্থ করার সঙ্গে সঙ্গে লিখেও রাখতে পারো।’ –দারামি

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) আরও বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট যা কিছু শুনতাম, মনে রাখার জন্য তা লিখে নিতাম। কতিপয় সাহাবি আমাকে তা লিখে রাখতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) একজন মানুষ, কখনও স্বাভাবিক অবস্থায় আবার কখনও রাগান্বিত অবস্থায় কথা বলেন। এ কথা বলার পর আমি হাদিস লেখা থেকে বিরত থাকলাম, অতঃপর তা হজরত রাসূলুল্লাহকে (সা.) জানালাম। তিনি নিজ হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে স্বীয় মুখের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘তুমি লিখে রাখো। যেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, এই মুখ দিয়ে সত্য ছাড়া অন্য কিছু বের হয় না।’ –আবু দাউদ

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক আনসারি সাহাবি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যা কিছু বলেন, আমার কাছে খুবই ভালো লাগে, কিন্তু মনে রাখতে পারি না। নবী করিম (সা.) বললেন, ‘তুমি ডান হাতের সাহায্য নাও।’ তারপর তিনি হাতের ইশারায় লিখে রাখার প্রতি ইঙ্গিত করলেন।’ -তিরমিজি, হাদিসটি যইফ

হজরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) হাদিস লিখে রাখতেন। চামড়ার থলের মধ্যে রক্ষিত সংকলনটি তার সঙ্গেই থাকত। তিনি বলতেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট থেকে এ সহিফা ও কোরআন মজিদ ব্যাতিত আর কিছু লিখিনি। সংকলনটি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) লিখিয়েছিলেন। এতে জাকাত, রক্তপাত (দিয়াত), বন্দী মুক্তি, মদিনার হেরেম এবং আরও অনেক বিষয় সম্পর্কিত বিধান উল্লেখ ছিল। -বোখারি, ফাতহুল বারি

এ সব ঘটনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, নবী করিম (সা.)-এর সময় থেকেই হাদিস লেখার কাজ শুরু হয়। সাহাবিরা যেভাবে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট থেকে হাদিসের জ্ঞান লাভ করেন, তেমনিভাবে হাজার হাজার তাবিঈ সাহাবিদের কাছে হাদিসের শিক্ষা লাভ করেন।

হিজরি দ্বিতীয় শতকের শুরু থকে কনিষ্ঠ তাবিঈ ও তাবিঈ-তাবিঈনের এক বিরাট দল সাহাবা ও প্রবীণ তাবিঈনের বর্ণিত ও লিখিত হাদিসগুলো ব্যাপকভাবে একত্র করতে থাকেন। এ সময় খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রাহ.) দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রশাসকদের নিকট হাদিস সংগ্রহ করার জন্য রাজকীয় ফরমান প্রেরণ করেন। ফলে সরকারি উদ্যোগ সংগৃহীত হাদিসের বিভিন্ন সংকলন সিরিয়ার রাজধানী দামেশক পৌঁছতে থাকে। খলিফা সেগুলোর একাধিক পাণ্ডুলিপি তৈরি করে দেশের সর্বত্র পাঠিয়ে দেন।

হিজরি দ্বিতীয় শতকের শেষার্ধ থেকে চতুর্থ শতকের শেষ পর্যন্ত হাদিসের চর্চা আরও ব্যাপকতর হয়। এ সময়কালে বোখারি, মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাঈ ও ইবনে মাজার মতো সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য ছয়খানি হাদিস গ্রন্থ (সিহাহ সিত্তাহ) সংকলিত হয়। এ যুগেই ইমাম শাফিঈ (রহ.) তার কিতাবুল উম্ম ও ইমাম আহমদ (রহ.) তার আল মুসনাদ গ্রন্থ সংকলন করেন।

হিজরির চতুর্থ শতকে মুসতাদরাক হাকিম, সুনানে দারে কুতনি, সহিহ ইবনে হিব্বান, সহিহ ইবন খুযায়মা, তাবারানির আল-মুজাম, মুসান্নাফুত তাহাবি এবং আরও কতিপয় হাদিস গ্রন্থ সংকলিত হয়।

ইমাম বায়হাকির সুনানে কুবরা ৫ম হিজরি শতকে সংকলিত হয়। চতুর্থ শতকের পর থেকে এ পর্যন্ত সংকলিত হাদিসের মৌলিক গ্রন্থগুলোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের সংকলন ও হাদিসের ভাষ্য গ্রন্থ এবং এই শাস্ত্রের শাখা-প্রশাখার ওপর ব্যাপক গবেষণা ও বিভিন্ন গ্রন্থ রচিত হয়। বর্তমানকাল পর্যন্ত এ কাজ অব্যাহত রয়েছে।

   

হাফপ্যান্ট পরা বিষয়ে ইসলাম কী বলে?



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ইসলামে পোশাক কেমন হবে এমন নীতিমালা রয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

ইসলামে পোশাক কেমন হবে এমন নীতিমালা রয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রাস্তাঘাটে নানা বয়সী হাফপ্যান্ট পরা মানুষের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে, যা আগে কল্পনাও করা যেত না৷ অথচ হাঁটু ঢেকে কাপড় পরা ফরজ, হাঁটু খোলা রাখা হারাম৷ আর এটা এমন হারাম যা গোপনে নয়, প্রতিনিয়ত জনসম্মুখে পাপে লিপ্ত হতে হয়৷ সমাজের মুসলমানদের মাঝে সেই হারামে লিপ্ত হওয়ার প্রবণতা ও ঝোঁক বেড়েই চলেছে৷ যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, কোনো গোনাহ প্রকাশ্য করতে করতে একসময় ভেতর থেকে অনুশোচনাবোধের অনুভূতিটুকু নষ্ট হয়ে যায়৷ হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের সবাইকে মাফ করে দেওয়া হবে, কেবল প্রকাশ্য গোনাহকারী ছাড়া৷’ -সহিহ বোখারি

হাফপ্যান্ট পরা কি জায়েজ?
ইসলাম একজন মুসলিমকে শালীন পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। ইসলাম ঘোষণা করেছে, পুরুষকে আবশ্যকীয়ভাবে ঢাকতে হবে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। আর নারীর জন্য হাতের কব্জি মুখমণ্ডল পায়ের পাতা ছাড়া সব সতর (মানব শরীরের যেসব অংশ অপরের সামনে ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক, সেটাকে সতর বলে)।

ইসলামে পোশাক কেমন হবে এমন নীতিমালা রয়েছে। প্যান্ট, পায়জামা ইত্যাদি হাঁটুর নিচ অবধি থাকবে, তবে টাখনুর নিচে নয়। আবার পোশাক এতটা আঁটসাঁট হবে না যে, সতরের আকৃতি কাপড়ের ওপর প্রকাশ পায়। হ্যাঁ, পরিধানের প্যান্ট-শার্ট যদি উপর্যুক্ত খারাবি থেকে মুক্ত হয়, তাহলে পরিধান করা নাজায়েজ নয়। অবশ্য এরপরও তা পরিধান করা মাকরুহ। তা ব্যবহার না করাই বাঞ্ছনীয়। -দরসে তিরমিজি : ৫/৩৩২

জ্ঞানের অভাবে অনেকে সঠিক পোশাক নির্বাচন ও অবলম্বন করতে পারেন না। এ প্রসঙ্গে কিছু নীতি ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা নারী-পুরুষ সবার জন্য প্রযোজ্য। আবার কিছু স্বতন্ত্র বিষয় রয়েছে। এর কয়েকটি হলো-

সতর আবৃত করা
পোশাক এমন হতে হবে যা পুরোপুরি সতর আবৃত করে। পুরুষের জন্য নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত আর নারীর পুরো শরীর সতর। পোশাকের প্রধান উদ্দেশ্যই হলো- সতর ঢাকা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে বনী আদম! আমি তোমাদের জন্য অবতীর্ণ করেছি পোশাক, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং সৌন্দর্য দান করে।’ -সুরা আরাফ : ২৬

সুতরাং যে পোশাক এই উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ তা শরিয়তের দৃষ্টিতে পোশাক নয়। তা নাজায়েজ পোশাক। এটা পরিত্যাগ করে পূর্ণরূপে সতর আবৃত করে এমন পোশাক গ্রহণ করা জরুরি। যেমন পুরুষের জন্য হাফ প্যান্ট পরা। নারীদের পেট-পিঠ উন্মুক্ত থাকে এমন পোশাক পরিধান করা।

পোশাক অধিক পাতলা ও আঁটসাঁট না হওয়া
যে পোশাক পরিধানের পরও সতর দেখা যায় কিংবা সতরের আকৃতি পোশাকের ওপরে প্রকাশ পায়, তা সতর আবৃত না করার কারণে নাজায়েজ পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের পোশাক পরিধান হারাম।

অহংকার প্রকাশ পায় এমন পোশাক না হওয়া
এমন পোশাক পরিধান করা নিষিদ্ধ, যেগুলোকে শরিয়ত অহংকারীদের নিদর্শন সাব্যস্ত করে। যেমন পুরুষের জন্য রেশমি কাপড় ব্যবহার। হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের পুরুষের জন্য রেশম এবং স্বর্ণ হারাম করা হয়েছে। আর নারীদের জন্য এগুলো হালাল করা হয়েছে। -জামে তিরমিজি : ১/৩০২

হজরত আবু জুরাই (রা.)থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেন, টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান থেকে বিরত থাকো। কেননা এটা অহংকারবশত হয়ে থাকে। আর আল্লাহতায়ালা অহংকারীকে ভালোবাসেন না। -সুনানে আবু দাউদ : ২/৫৬৪

হাফপ্যান্ট পরে অজুর বিধান
নামাজের মতো মৌলিক ইবাদত ছাড়াও সবসময় অজু করার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেছিলেন, ‘হে আমার বেটা! সম্ভব হলে সবসময় অজু অবস্থায় থাকবে। কেননা মৃত্যুর ফেরেশতা অজু অবস্থায় যার জান কবজ করেন তার শাহাদাতের মর্যাদা লাভ হয়।’ -শোয়াবুল ঈমান, বায়হাকি : ২৭৮৩

স্বাভাবিক শালিন পোশাকে অজু করা উচিত। কারণ, সতর ঢাকা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর আবশ্যক। অপরদিকে হাফপ্যান্ট পরলে সতর অনাবৃত থাকে। তাই হাফপ্যান্ট পরা এবং পরিধান করে অজু করা উচিত নয়।

হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা নগ্নতা থেকে বেঁচে থাক। কেননা তোমাদের এমন সঙ্গী আছেন (কিরামান-কাতিবীন) যারা পেশাব-পায়খানা ও স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের সময় ছাড়া অন্যকোনো সময় তোমাদের হতে আলাদা হন না। সুতরাং তাদের লজ্জা কর এবং সম্মান কর।’ -সুনানে তিরমিজি : ২৮০০

তারপরও কেউ যদি হাফপ্যান্ট পরে করে অজু করে তাহলে তার অজু হয়ে যাবে। তবে কাজটি অনুচিত এবং এ ব্যাপারে কাউকে উৎসাহিত না করা।

;

এক সপ্তাহে মসজিদে নববিতে ৬০ লাখ জিয়ারতকারী



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মসজিদে নববি, ছবি : সংগৃহীত

মসজিদে নববি, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতারের পর এবার সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনায় ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে এ দুই শহরে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশটির জাতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর। এমন আশঙ্কার মাঝে এক সপ্তাহে মদিনার মসজিদে নববিতে প্রায় ৬০ লাখ জিয়ারতকারী নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মোবারক জিয়ারত করেছেন।

সৌদি বার্তা সংস্থা এসপিএ-এর বরাতে জানা যায়, রমজান পরবর্তী সময়ে গত এক সপ্তাহে মসজিদে নববিতে রেকর্ড সংখ্যক জিয়ারতকারী বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নবী কারিম (সা.)-এর রওজা জিয়ারত করতে এসেছেন। তাদের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৫৯ লাখ ৬০ হাজার ৭২৪ জন।

এসপিএ আরও জানায়, গত এক সপ্তাহে ১ লাখ ৮০ হাজার পবিত্র জমজমের পানির বোতল মসজিদে নববিতে আসা মুসল্লিদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

রিয়াজুল জান্নাত তথা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মিম্বর ও কামরার (নবী কারিম সা.-এর বাসস্থান) মধ্যবর্তী স্থানে ২ লাখ ৫৪ হাজার ২০৯ জন নামাজ আদায় করেছেন। যার মধ্যে ১ লাখ ২৩ হাজার পুরুষ ও ১ লাখ ৩০ হাজার ২৭৭ জন নারী রয়েছে।

পবিত্র উমরা পালনকারীরা মক্কায় যাওয়ার আগে বা পরে মদিনা ভ্রমণ করেন। মদিনায় মসজিদে নববিতে নামাজ আদায়ের পাশাপাশি রাসুলে কারিম ( সা.)-এর রওজায় সালাম পেশ, রিয়াজুল জান্নাতে নামাজসহ অন্যান্য নফল ইবাদত পালন করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখেন।

উল্লেখ্য, এ বছর এপ্রিল মাসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে দেখা দিয়েছে নজিরবিহীন আবহাওয়া বিপর্যয়। বিরল বৃষ্টিতে প্লাবিত হচ্ছে একের পর এক মরুর দেশ।

সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের প্রতিবেদন অনুসারে, আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহে উত্তর রিয়াদ ও পূর্ব প্রদেশের পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার তালিকাভুক্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের এই সময়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও আগাম সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে।

উর্দু নিউজ অবলম্বনে মুফতি উমর ফারুক আশিকী

;

বিপদাপদ কাটছেই না, কারণ জেনে নিন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ফজরের নামাজ আদায়কারী আল্লাহর জিম্মায় থাকে, ছবি : সংগৃহীত

ফজরের নামাজ আদায়কারী আল্লাহর জিম্মায় থাকে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নানাবিধ আমল, চিকিৎসা ও চেষ্টা-তদবির সত্ত্বেও অসুস্থতা থেকে সুস্থ হতে বিলম্ব হয় কিংবা নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়- ফরজ নামাজ ঠিকমতো আদায় না করার কারণে। বিশেষ করে ফজরের নামাজ।

ফজরের নামাজ আদায়কারী দয়াময় আল্লাহর জিম্মায় থাকে। আল্লাহতায়ালা তাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখেন। সুতরাং তাকে যে অযথা কষ্ট দেবে, অন্যায়-অবিচার করবে, আল্লাহ তাকে কঠোর শাস্তি দেবেন। এ সম্পর্কে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করল, সে আল্লাহর নিরাপত্তা লাভ করল। আর আল্লাহতায়ালা যদি তার নিরাপত্তা প্রদানের হক কারও থেকে দাবি করে বসেন, তাহলে সে আর রক্ষা পাবে না। তাই তাকে মুখ থুবড়ে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন।’ -সহিহ মুসলিম : ৬৫৭

এর মানে হলো, যে ফজরের নামাজ আদায় করল না; সে আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকে না। তো যে ব্যক্তি আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকে না, তাকে পৃথিবীর কে নিরাপত্তা দেবে? তাকে কে সুস্থ করবে?

সমাজের অনেকেই আছেন, বাকি চার ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো আদায় করেন। ফজরের নামাজ মাঝে-মধ্যে ছাড়েন কিংবা মাঝে-মধ্যে পড়েন। তাদের নিরাপত্তায় তো সমস্যা হবেই।

সারা বছরে একদিনও ফজরের নামাজ ছাড়া যাবে না। কখনও ঘুম থেকে উঠতে দেরি হলে উঠেই সর্বপ্রথম ফজরের নামাজ পড়তে হবে- যদি সেটা নিষিদ্ধ সময় না হয়। এভাবে চলতে থাকলে আমল ও প্রচেষ্টার ফল দ্রুত পাওয়া যাবে- ইনশাআল্লাহ।

আরেকটি কথা, আমল নিয়মিত করতে হবে এবং কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি চাইতে হবে। আমরা অনেকেই অনেক আমল করি, কিন্তু আমলের বিনিময়ে আমি কী চাচ্ছি; এটাই জানি না। প্রত্যেকটি আমলের বিনিময়ে আখেরাতের ফজিলত তো পাবেনই, দুনিয়ার কোনো নেক উদ্দেশ্যও হাসিল করতে পারেন।

মনে রাখতে হবে, আমল, নিয়ত, ফজরের নামাজ ও দীর্ঘদিনের বদ অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসা সহজ ও সুন্দর জীবনের অন্যতম নিয়ামক।

;

সৌদি আলেমদের অভিমত

অনুমোদন ছাড়া হজ করা পাপ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আরাফাতের ময়দানে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল হজপালনকারীরা, ছবি : সংগৃহীত

আরাফাতের ময়দানে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল হজপালনকারীরা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র হজপালন করার ক্ষেত্রে যথাযথভাবে রাষ্ট্রীয় অনুমতি নেওয়াকে বাধ্যতামূলক ঘোষণা করেছে সৌদি সরকার। পবিত্র স্থানগুলোর পবিত্রতা নিশ্চিত করতে শরিয়া আইনের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সৌদি আরব।

সৌদির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, সৌদির সর্বোচ্চ ধর্মীয় সংস্থা ‘সিনিয়র কাউন্সিল অব উলামা’ মতামত দিয়েছে, যারা রাষ্ট্রীয় অনুমতি ছাড়া হজ করতে যাবেন তাদেরকে হজ করার সুযোগ দেওয়া হবে না। তা সত্ত্বেও যারা হজ করবেন তারা এর মাধ্যমে পাপ করবেন।

শুক্রবার (২৬ মার্চ) সৌদির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় এবং দুই পবিত্র মসজিদের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা এ ব্যাপারে আলেমদের কাছে তাদের মতামত তুলে ধরেন। এরপর আলেমরা ঘোষণা দেন, হজ করতে হলে অবশ্যই পূর্বে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।

‘সিনিয়র কাউন্সিল অব উলামা’ জানায়, হজ আয়োজনের দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো একটি বিস্তৃত পরিকল্পনা সাজিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, খাবার সরবরাহ এবং অন্যান্য সেবা। যারা সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধন করে হজ করবেন তারা আরও ভালো ও উন্নত সেবা পাবেন।

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম একটি হলো- হজ। প্রতি বছর জিলহজ মাসে হজ করেন বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। যেসব মুসল্লির আর্থিক ও শারীরিক সক্ষমতা রয়েছে, তাদের জীবনে অন্তত একবার হলেও হজ করার বিধান রয়েছে।

মুসল্লিরা যেন নির্বিঘ্নে হজ করতে পারেন, সেজন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব। এবার তারা হজ করার জন্য অনুমতির বিষয়টি আবশ্যিক করে দিয়েছে।

;