শিষ্টাচার একটি মহৎ গুণ ও উন্নতির সোপান



মাহমুদুল হাসান খোকন, অতিথি লেখক, ইসলাম
শিষ্টাচারের বীজ বপন হয় শিশুকালেই, ছবি : সংগৃহীত

শিষ্টাচারের বীজ বপন হয় শিশুকালেই, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ভদ্রতা, নম্রতা, মার্জিত ও রুচিসম্মত আচরণের সুন্দর এক বহিঃপ্রকাশ। তাই প্রতিটি মানুষের অবস্থান ভালো না মন্দ তার মান নির্ণয় হয় মূলত ওই ব্যক্তির আচরণে। শিষ্টাচার মানুষকে সবসময় আত্মসংযমী ও বিনয়ী করে তুলতে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। শিষ্টাচারময় মানুষ যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো পরিবেশে নিজেকে সামলে নিতে পারে।

বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মানুষের সুন্দর সুন্দর মানবীয় গুণের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে শিষ্টাচার। আর এগুলো প্রকাশিত হয় মানুষের কথাবার্তা, চলাফেরা ও ভাবভঙ্গিমার মধ্য দিয়ে। শিষ্টাচারময় ব্যক্তিদের কথা বলার ধরণ, ভাষাগত উচ্চারণ ও চেহারার অভিব্যক্তি মানুষের রুচি ও স্বভাবের প্রকাশ ঘটে।

পৃথিবীতে যেসব মানুষ সেরা মানবের বিশেষ ভূমিকায় রয়েছেন তারা কিন্তু শিষ্টাচারে পরিপূর্ণ। বিশেষ করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন শিষ্টাচারের এক অনন্য প্রতীক। অন্যান্য গুণের ন্যায় শিষ্টাচারের জন্য তিনি ছোট-বড় সবার নিকট অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ছিলেন। ভুল করে তিনি কারো সঙ্গে কোনো প্রকার খারাপ ব্যবহার করেননি। এসব কারণেই তিনি যুগে যুগে সব মানুষের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন। একজন প্রকৃত শিষ্টাচারসম্পন্ন ব্যক্তি নিজের সুন্দর ও সেরা আচরণ দিয়ে সহজেই আরেকজনকে প্রভাবিত করার ব্যাপারে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

আমরা জানি, মানুষ দলবদ্ধভাবে সমাজে বাস করতে পছন্দ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ফলে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রত্যেকে চায়। অতীব দুঃখের বিষয়, আমাদের বর্তমান সমাজব্যবস্থার দিকে তাকালে বিবেকহীন হতে হয়। পৃথিবী যতই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে- সমাজ জীবন কেমন জানি ততই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে সামান্য বিষয় নিয়ে মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি, রাহাজানি, খুন, ধর্ষণ, ইভটিজিং প্রভৃতি নানা অপকর্মে চারপাশ কলুষিত হয়ে যাচ্ছে। সমাজব্যবস্থার সর্বক্ষেত্রে চলছে নানারকম দুর্নীতি ও অন্যায়। সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে সমাজের প্রতিটি মানুষকে শিষ্টাচারসম্পন্ন হতে হবে। তবেই দেশ ও জাতির জনগণ কাঙ্ক্ষিত ফল পাবে।

আজকের প্রজন্ম আগামী দিনের জন্য জাতির বিশেষ কর্ণধার। তাই একজন ছাত্রের কেবল বিদ্যা অর্জনের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, তাকে বিভিন্ন বিষয় চারিত্রিক গুণাবলিও অর্জন করতে হবে। একজন ভালো ছাত্র যদি শিষ্টাচারসম্পন্ন না হয়, তাহলে সে শিক্ষক কিংবা সহপাঠী কারো কাছ থেকেই ভালোবাসা বা অনুপ্রেরণা পাবে না বা পেতে পারে না। উদ্ধত আচরণের কারণে সে সবার কাছে ঘৃণার পাত্র হয়ে উঠবে। ফলে সে শিক্ষাজীবনে পরিপূর্ণ সাফল্য অর্জন করতে পারবে না। শিষ্টাচার একজন ছাত্রকে বিনয়ী ও নম্র করে তোলে যার মাধ্যমে সে সহপাঠী ও শিক্ষকদের হৃদয়ে সহজে স্থান করে নিতে পারে।

একটি সুন্দর জীবনের আশায় মানুষ জীবিকা নির্বাহের তাগিদে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত হয়। ফলে এই শিষ্টাচার একজন মানুষের কর্মজীবনকে সাফল্যমন্ডিত ও আকর্ষণীয় করে তোলে। দেখা যায় শিষ্টাচারসম্পন্ন ব্যক্তিরা খুব তাড়াতাড়ি ও সহজেই সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। কাজেই সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, সাহসিকতার উন্নততর দৃষ্টিভঙ্গির সবকিছু নিয়েই গড়ে ওঠে এই শিষ্টাচার।

একজন মানুষের জীবনের এক একটি গুণকে এক একটি সৌরভ ও সুবাসিত ফুলের সঙ্গে তুলনা করা যায়। একটির সঙ্গে আরেকটি ফুল গেঁথে যেমন একটি সুন্দর মালা তৈরি করতে হয়, তেমনি মানুষের মানবীয় গুণগুলো যত্ন সহকারে একটির সঙ্গে অপরটির সমন্বয় সাধন করে অর্জিত হয় শিষ্টাচার।

শিষ্টাচার কিন্তু হঠাৎ করে কারো মধ্যে গড়ে উঠতে পারে না। এ জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ প্রস্তুতিমূলক পর্ব ও আন্তরিক প্রচেষ্টা। আসলে শিষ্টাচারের বীজ বপন হয় শিশুকালেই। আর এক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকাই প্রধান। আমরা জানি শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। যা দেখে তাই শিখে নেয়। বাল্যকালে শিশুদের সংযম ও বিনয় দিয়ে মানুষের মধ্যে শিষ্টাচার গড়ে তোলা সম্ভব।

শিষ্টাচার কিন্তু যেকোনো মহৎ হৃদয়ের মনোমুগ্ধকর প্রকাশ। শিষ্টাচারসম্পন্ন মানুষজন সাধারণত অন্যের সামনে অত্যন্ত বিনম্র ও ভদ্র ব্যবহার প্রদর্শন করে থাকে। পরিতাপের বিষয় হলো, তাদের এমন সুন্দর আচার-আচরণের সুযোগ নিয়ে অনেকে তাদের ওপর নানা ধরনের অন্যায়-অবিচার করতে দ্বিধাবোধ করে না। শিষ্টাচারময় মহান ব্যক্তিরা লজ্জায় খুব সহজে তা মেনে নেয়। শিষ্টাচারের নামে এরকম অন্যায়কে ন্যায় বলে স্বীকার করা বা শত অত্যাচারে মুখ বুজে বসে থাকা কখনো উচিত নয়। এটা কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত শিষ্টাচার। যা অন্যায়কারীর সাহস বৃদ্ধি করতে সহায়ক হয়। তাই শিষ্টাচারের সঙ্গে সঙ্গে সত্য স্বীকার করা ও সব অন্যায়ের প্রতিবাদ করার মতো শক্তি রাখা বাঞ্ছনীয়।

শিষ্টাচারসম্পন্ন ব্যক্তিরা সমাজের সব শ্রেণির মানুষের কাছে গ্রহণীয়। চাই সে যেমনই হোক ধনী, গরিব কিংবা সুন্দর অসুন্দর। শিষ্টাচারময় প্রিয়জনরা খুব সহজেই অন্যের মন জয় করে নিতে সক্ষম। মূল কথা হলো- শিষ্টাচার প্রতিটি মানুষের ক্ষুদ্র জীবনকে ব্যাপক তাৎপর্যময় করে তোলে। এ ধরনের মানুষ তার মন থেকে সকল আত্ম-অহংকারের কালিমা মুছে হৃদয়কে করে পবিত্র।

   

১১ হাজার ১৬৭ হজযাত্রী ভিসার অপেক্ষায়



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজযাত্রায় বাংলাদেশি হজযাত্রীরা, ছবি: সংগৃহীত

হজযাত্রায় বাংলাদেশি হজযাত্রীরা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজযাত্রীদের ভিসার জন্য আবেদনের শেষ হয়েছে ১১ মে (শনিবার)। তবে এখনও ১১ হাজার ১৬৭ জনের ভিসা হয়নি। সৌদি সরকার যদি সময় না বাড়ায় তবে এসব হজযাত্রীদের চলতি বছর হজে যাওয়া অনিশ্চয়তায় পড়বে।

হজ অফিসের সর্বশেষ তথ্য বলছে, রোববার (১২ মে) দুপুর পর্যন্ত মোট ভিসা পেয়েছেন ৭২ হাজার ১৩৮ জন। ২৫৯ জনের ভিসা প্রিন্টের অপেক্ষায় রয়েছে। সে হিসেবে এখনও ভিসা পাননি ১১ হাজার ১৬৭ জন।

জানা গেছে, যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভিসা পায়নি, তাদের জন্য নতুন করে ভিসার আবেদন করা হয়েছে। এখনও ভিসা অনলাইন সিস্টেম চালু আছে। বাকিদের ভিসা দুয়েক দিনের মধ্যে হয়ে যাবে।

ভিসার জন্য আবেদনের সময় বাড়ানো হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম জানান, সময় বাড়ানো হবে কি না তা রোববার বা সোমবারই জানা যাবে। তবে হজ ভিসা সিস্টেম চালু আছে এবং ভিসা ইস্যু চলমান আছে।

এদিকে তৃতীয় দফায় ভিসা আবেদনের সময় বাড়ানোর জন্য সৌদি সরকারকে চিঠি দিয়েছেন ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান।

এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মু: আ: হামিদ জমাদ্দার জানান, হজযাত্রীদের ভিসা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। সব হজযাত্রীর ভিসা হওয়ার বিষয়ে কাজ করছে মন্ত্রণালয়।

তিনি বলেন, ‘আমরা সৌদি সরকারের উমরা ও হজ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। আশা করছি, ভিসা আবেদনের সময় বাড়বে।

মু: আ: হামিদ জমাদ্দার জানান, বেশিরভাগ হজযাত্রী বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালন করতে যায়। এজেন্সিগুলো বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও তারা সৌদিতে বাড়ি ভাড়া করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত তা মন্ত্রণালয়ের ওপর এসে বর্তায়।

এর আগে ২৯ এপ্রিলের মধ্যে ভিসা আবেদন সম্পন্ন করার নির্দেশনা দিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়। এরপর তা ৭ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তারপরও প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় ভিসা আবেদনের সময় বাড়িয়ে ১১ মে করা হয়।

১১ মের মধ্যে ভিসা কার্যক্রম শেষ করতে না পারলে এর দায়ভার সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে নিতে হবে বলে আগেই সতর্ক করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। তারপরও ভিসা আবেদনের সময় বাড়াতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছরের মতো এবারও হজ এজেন্সিগুলো সৌদি আরবের মক্কা মদিনায় বাড়ি ভাড়া করতে গাফিলতি করেছে। কম রেটে বাড়ি ভাড়া করার জন্য শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে।

এছাড়া এজেন্সিগুলোর বাড়ি ভাড়ার জন্য নির্ধারিত প্রতিনিধি মোনাজ্জেমদের ভিসা আটকে দেয় সৌদি সরকার। সেই ভিসার জট খুলতে দেরি হওয়ায় অনেক ইচ্ছা থাকার পরও বাড়ি ভাড়া করতে পারেনি। এতে হজযাত্রীদের ভিসা আবেদন করতে পারেনি এজেন্সিগুলো। কারণ হজ ভিসা আবেদনের পূবশর্ত হলো, সৌদিতে হজযাত্রীর বিপরীতে বাড়ি বাড়ার চুক্তি থাকতে হবে। বাড়ি ভাড়া না করলে ভিসার জন্য আবেদন করা যায় না।

এদিকে হজ অফিস সূত্রে জানা গেছে, রোববার বিকাল পর্যন্ত ১৪ হাজার ২১২ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন।

এবার বাংলাদেশ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার ৫৬২ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এজেন্সির মাধ্যমে ৮০ হাজার ৬৯৫ জনসহ মোট ৮৫ হাজার ২৫৭ জন হজ করতে যাবেন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন এবারের হজ অনুষ্ঠিত হবে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় অনুমোদিত হজ এজেন্সির সংখ্যা ২৫৯টি।

হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাওয়ার প্রথম ফ্লাইট ৯ মে শুরু হয়। ১০ জুন পর্যন্ত যাওয়ার ফ্লাইট চলবে। হজ শেষে ২০ জুন ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে। দেশে ফেরার ফ্লাইট শেষ হবে আগামী ২২ জুলাই।

;

অমুসলিমরাও হালাল খাদ্যের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
এফবিসিসিআইয়ের মতিঝিল কার্যালয়ে হালাল ফুড বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা, ছবি: সংগৃহীত

এফবিসিসিআইয়ের মতিঝিল কার্যালয়ে হালাল ফুড বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হালাল খাদ্যের বৈশ্বিক বাজারে বড় সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। তবে সেজন্য খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ এবং বাজারজাতকরণের প্রতিটি ধাপে কমপ্লায়েন্স ইকো-সিস্টেম গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে, বিশ্বব্যাপী হালাল খাদ্যের বাজারে নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে ইকো-সিস্টেম উন্নয়নের আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

রোববার (১২ মে) এফবিসিসিআইয়ের মতিঝিল কার্যালয়ে হালাল ফুড বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি সভায় এ বিষয় উঠে আসে। সভায় সভাপতিত্ব করেন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন ইউসুফ। কমিটির ডিরেক্টর ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এফবিসিসিআইর পরিচালক মুনতাকিম আশরাফ টিটু।

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, মানবস্বাস্থ্যের জন্য হালাল খাদ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি অনুধাবন করে মুসলিমদের পাশাপাশি সারা বিশ্বে অমুসলিমরাও হালাল খাদ্যের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে বেশকিছু দেশ হালাল খাদ্যের বৈশ্বিক বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করেছে। এই বাজারে বাংলাদেশেরও অপার সম্ভাবনা রয়েছে। খাদ্যসহ হালাল শিল্পের উন্নয়নে দেশে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা হওয়া জরুরি বলেন জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।

বিএসটিআই এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন এই দুটি প্রতিষ্ঠান দেশে বর্তমানে হালাল সার্টিফিকেট প্রদান করছে। সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া সহজ করা, গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে হালাল সনদ প্রদানের জন্য সুনির্দিষ্ট একটি কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলার ওপর জোর দেন এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী। এ সময় হালাল শিল্পের উন্নয়নে কমিটির সদস্যদের সুনির্দিষ্ট পরামর্শ লিখিত আকারে জমা দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এফবিসিসিআই সেসব পরামর্শ বিশ্লেষণ করে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে উপস্থাপন ও তা বাস্তবায়নে কাজ করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সভায় উপস্থিত ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, হালাল ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সবার আগে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে নিরাপদ এবং গুণগত খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য উৎপাদনকারী, বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান, সরকারসহ এই খাতের বড় অংশীজনদের সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। এ সময় বিএসটিআই এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে হালাল সার্টিফিকেট প্রাপ্তির প্রক্রিয়া সহজ করাসহ সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন এবং হালাল শিল্পের জন্য নীতি সুবিধা আহ্বান করেন কমিটির সদস্যরা। পাশাপাশি হালাল শিল্পের জন্য দক্ষ জনবল গড়ে তোলা, অর্থায়ন সুবিধা, গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতার গুরুত্ব তুলে ধরেন তারা।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক হাফেজ হাজী হারুন-অর-রশিদ, মো. নিয়াজ আলী চিশতি, সৈয়দ মো. বখতিয়ার, এফবিসিসিআইয়ের মহাসচিব মো. আলমগীর, স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রমুখ।

;

৭৯ বছর পর জুমার নামাজ হলো যে মসজিদে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কারিয়া মসজিদে ৭৯ বছর পর জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হলো, ছবি: সংগৃহীত

কারিয়া মসজিদে ৭৯ বছর পর জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হলো, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দীর্ঘ ৭৯ বছর পর পবিত্র জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হলো তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত ঐতিহাসিক কারিয়া মসজিদে। গত শুক্রবার (১৯ মে) মসজিদটিতে অনুষ্ঠিত জুমার নামাজে অসংখ্য মুসল্লি অংশ নেন। এর আগে ৬ মে পুনঃনির্মাণের পর মসজিদটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান।

২০২০ সালের আগস্টে দীর্ঘ দিন জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত ঐতিহাসিক মসজিদটিকে পুরনো রূপে নিয়ে আসার ঘোষণা দেন এরদোগান। এরপর শুরু হয় এর পুনঃনির্মাণের কাজ। অবশেষে চার বছর পর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ায় ফের এটি মুসল্লিদের জন্য খুলে দেওয়া হলো।

চতুর্থ শতাব্দীর শুরুর দিকে কারিয়া স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয় একটি চার্চ হিসেবে। পরে উসমানিয়া শাসক সুলতান দ্বিতীয় বায়জিদের শাসনামলে প্রধান উজির আতিক আলি পাশার নির্দেশে এটিকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়।

এরপর চার শতাব্দীরও অধিক সময় এটি মসজিদ হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। কিন্তু উসমানিয়া খেলাফত বিলুপ্তির পর আয়া সোফিয়ার মতো এটিকেও ১৯৪৮ সালে জাদুঘর বানিয়ে ফেলে তৎকালীন ইসলামবিরোধী তুর্কি সরকার।

দীর্ঘ দিন পর গত শুক্রবার মসজিদটিতে জুমার নামাজ আদায় করতে পেরে বেশ উল্লসিত মুসল্লিরা। এদিন তারা তাকবির ধ্বনিতে মসজিদ ও এর প্রাঙ্গণ আন্দোলিত করে তোলেন। মসজিদের অভ্যন্তর, সামনের চত্বর ও আশপাশের সড়কগুলোও মুসল্লিদের সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে।

শুধু এই মসজিদ নয়, ক্ষমতায় আসার পর থেকে এরদোগান বন্ধ থাকা ও জাদুঘরে রূপান্তর করা অনেক মসজিদ পুনরায় চালু করেন। এর মধ্যে আয়া সোফিয়া অন্যতম। এরদোগানের উপস্থিতিতে সেখানে ৮৬ বছর পর নামাজ শুরু হয়।

পুরনো মসজিদ উদ্ধার ছাড়া তিন বেশ কিছু নতুন মসজিদ নির্মাণ করেন। তুরস্কের তাশামালিজা মসজিদ এর অন্যতম। আয়তনগত দিক বিবেচনায় এশীয় ও ইউরোপ অঞ্চলে এটিকে বলা হচ্ছে- সর্ববৃহৎ মসজিদ। বিগত প্রায় এক শতাব্দীতে আধুনিক তুরস্ক প্রতিষ্ঠার পর এটিই তুরস্ক নির্মিত সর্ববৃহৎ মসজিদ।

;

মাকে খুশি করলে জান্নাত, কষ্ট দিলে জাহান্নাম



মাওলানা আবদুল জাব্বার, অতিথি লেখক, ইসলাম
প্রিয় এবং মূল্যবান একটি শব্দ মা, ছবি: সংগৃহীত

প্রিয় এবং মূল্যবান একটি শব্দ মা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মা, মা, এবং মা। প্রিয় এবং মূল্যবান একটি শব্দ। শুধু প্রিয় শব্দ নয়, প্রিয় বচন- মা। প্রিয় অনুভূতি- মা। পৃথিবীর সব প্রিয় শুধুমাত্র মাকে কেন্দ্র করে। কারণ মা-ই পৃথিবীতে একমাত্র ব্যক্তি, যে নিঃশর্ত ভালোবাসা দিয়ে যায় সন্তানকে কোনো বিনিময় ছাড়া। অথচ আমরা সেই প্রিয় মাকে সময়ের প্রেক্ষিতে ভুলে যাই, যে মা ছোটবেলা থেকে আদরযত্ন করে লেখাপড়া শিখিয়ে; মানুষের মতো মানুষ হয়ে মাথা উঁচু করে সমাজের মানুষের সামনে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন- তাকে অবহেলার পাত্র বানিয়ে ফেলি। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

মাকে নিয়ে ইসলাম যত কথা বলেছে, অন্যকোনো ধর্ম তত কথা বলেছে কি-না জানি না। মাকে নিয়ে বলতে বলতে শেষ পর্যন্ত মাকেই জান্নাত, মাকেই জাহান্নাম বলেছে ইসলাম। মাকে খুশি করলে জান্নাত, কষ্ট দিলে জাহান্নাম। এত সম্মান যে মানুষের, সে মানুষের প্রতি আমাদের কত না অবহেলা! অথচ যে বেহেশত মায়ের পায়ের নিচে, সেই বেহেশত মাকে খুশি করা ছাড়া পাওয়া সম্ভব নয়।

মা ঘরে অসুস্থ হয়েছে, ওষুধটা পর্যন্ত এনে দিই না আমরা। বয়স হয়েছে বলে, বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিই। অথচ এই আপন মানুষটা কী চান আমাদের কাছে? শুধু একটু আদর, স্নেহ ও ভালোবাসা। নাতি-নাতনিদের সঙ্গে একটু খেলা করা, এ ছাড়া আর কিছুই না। মা অসুস্থ, হাসপাতালে নিতে চাইলে নিজেই যেতে চান না। কারণ, সন্তানের টাকা খরচ হবে বলে। সন্তানের ওপর কোনো রকম বোঝা চাপিয়ে দিতে চান না তিনি। শুধু একটু মায়া চান। যে মায়া তিনি সারাজীবন করে এসেছেন, তার কিঞ্চিৎ তাকে ফেরৎ দিলেই তিনি খুশি। তিনি প্রতিদান চান না, তিনি প্রাপ্য চান না, অধিকার নিয়ে কোনো কথা বলেন না। শুধু একটু মায়া চান। তাও কি আমরা দিতে পারি না?

কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘আমি মানুষকে তাদের পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সঙ্গে এমন কিছু শরিক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব, যা কিছু তোমরা করতে।’ -সুরা আনকাবুত : ৮

‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাকে ছাড়া অন্যকারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।’ -সুরা বনি ইসরাইল : ২৩

‘আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দু বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে।’ -সুরা লোকমান : ১৪

‘আর উপাসনা করো আল্লাহর, শরিক করো না তার সঙ্গে অপর কাউকে। পিতা-মাতার সঙ্গে সৎ ও সদয় ব্যবহার করো এবং নিকটাত্মীয়, এতিম-মিসকিন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-গর্বিতজনকে।’ -সুরা আন নিসা : ৩৬

মা সম্পর্কে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, এক ব্যক্তি নবী কারিম (সা.)-এর কাছে এসে বলল, সদ্ব্যবহার পাওয়ার অধিকার বেশি কোন মানুষের? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটা বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, এরপরও তোমার মা। লোকটা বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, এরপরও তোমার মা। লোকটা বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, এরপর তোমার বাবা। -সহিহ বোখারি

এক ব্যক্তি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে জিহাদের অনুমতি চাইল। নবী কারিম (সা.) বললেন, তোমার পিতা-মাতা কি বেঁচে আছেন? লোকটা বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে তাদের জন্যই পরিশ্রম করো (এতেই তুমি জিহাদের সওয়াব পাবে)। -সহিহ বোখারি

পরিবারে মায়েরও রয়েছে অনেক অধিকার, ছবি: সংগৃহীত

একদা নবীজী (সা.) বললেন, ধ্বংস হোক। ধ্বংস হোক। পুনরায় ধ্বংস হোক। বলা হলো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কার কথা বলছেন? তিনি বললেন, যে তার পিতা-মাতা উভয়কে বা কোনো একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েছে, অথচ এরপরও সে (তাদের সেবা করে) জান্নাতে যেতে পারেনি। -সহিহ মুসলিম

নবী কারিম (সা.) বলেছেন, সর্বোত্তম কাজ হলো- পিতার সুহৃদদের (বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন) সঙ্গে সম্পর্ক রাখা। -সহিহ বোখারি

নবীজী (সা.) বলেছেন, পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন, আর পিতা-মাতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। -জামে তিরমিজি

হজরত আবু দারদা (রা.) বলেন, আমি নবী কারিম (সা.) বলতে শুনেছি, পিতা-মাতা জান্নাতের মাঝের দরজা। যদি চাও, দরজাটি নষ্ট করে ফেলতে পারো, নতুবা তা সংরক্ষণও করতে পারো। –জামে তিরমিজি

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ কোনগুলো তা বলব না? সাহাবারা বললেন, অবশ্যই ইয়া রাসুলাল্লাহ। তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। বর্ণনাকারী বলেন, এতটুকু বলে নবী কারিম (সা.) বসে পড়লেন, এতক্ষণ তিনি হেলান দিয়ে ছিলেন। এর পর নবীজী (সা.) বললেন, মিথা সাক্ষ্য দেওয়া। এ কথাটি তিনি এতবার বলতে থাকলেন যে, আমরা মনে মনে বললাম; আর যদি না বলতেন! -জামে তিরমিজি

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, অন্যতম কবিরা গোনাহ হলো, ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে গালমন্দ করা। সাহাবারা বললেন, পিতা-মাতাকেও কি কেউ গালমন্দ করে? নবী কারিম (সা.) বললেন, হ্যাঁ। কেউ কারও পিতাকে গালি দিলে সেও তার পিতাকে গালি দেয়। আবার কেউ কারও মাকে গালি দিলে, সেও তার মাকে গালি দিলে। (এভাবে অন্যের পিতা-মাতাকে গালমন্দ করলে প্রকারান্তরে নিজের পিতা-মাতাকেই গালমন্দ করা হয়।) -জামে তিরমিজি

;