আহিল-ওয়াকিল এখনো জানে না মা বেঁচে নেই



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
আহিল-ওয়াকিল

আহিল-ওয়াকিল

  • Font increase
  • Font Decrease

নানু বাড়ির উঠানে আপন মনে খেলছে দুই ভাই। কখনো আবার এক দৌড়ে ঢুকে যাচ্ছে ঘরের ভেতরে। বাড়িতে যেই আসছেন ‘ফুলের মতো’ দুই ভাইকে কোলে তুলে নিয়ে করছেন আদর। ব্যক্তিগত শোক লুকিয়ে দুই ভাগ্নেকে হাসিখুশি রাখার সব চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন মামা-খালারাও। আব্রারুল আমিন আহিল আর আঝফারুল আমিন ওয়াকিল নামের দুই ভাইকে ঘিরে সবার এতটা ব্যাকুলতা তার একটাই কারণ। আচমকা এক ঝড় যে দুই শিশুর জীবন থেকে মাকে আলাদা করে দিয়েছে। এখন চাইলেও আর কখনো মায়ের বুকে ঘুমাতে পারবে না তারা।

দুই ছেলে আর স্ত্রী তাহমিনা আক্তারকে নিয়ে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোহাম্মাদ হুমায়ুন আমিন রিংকুর ছিল সুখের সংসার। সেই সংসারে আজ অজস্র দুঃখের আনাগোনা। ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে রিংকুর প্রিয়তমা স্ত্রী তাহমিনা যে চলে গেছেন পরপারে। স্ত্রীকে বাঁচাতে কম চেষ্টা করেননি রিংকু। নিয়ে গিয়েছিলেন ভারতের মুম্বাই শহরে। ভর্তি করিয়েছিলেন সুশ্রুত হাসপাতাল ও গবেষণা কেন্দ্রে। সেখানেই রোববার (২২ জানুয়ারি) রাত ৮টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তাহমিনা। জীবনের শেষ মুহূর্তে প্রিয় সন্তানদের সঙ্গেও দেখা হলো না মায়ের, হবে না আর কোনোদিন।

মাঝে মাঝে অসুস্থ হলেও কখনো তাহমিনা আক্তারের স্বাস্থ্য তেমন একটা খারাপের দিকে যায়নি। আপাত দৃষ্টিতে ‘সুস্থ’ সেই শরীরের ভেতরেই যে কবে গোপনে বাসা বেঁধে ফেলেছে মরণঘাতী ব্ল্যাড ক্যানসার কেউ বুঝে উঠতে পারেননি, আঁচ করেননি তাহমিনাও। যখন জানতে পারলেন ততদিনে বহু দেরি হয়ে গেছে। গত ২৩ নভেম্বর হঠাৎ অতিরিক্ত রক্তপাত হলে তাহমিনাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। একগাদা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা গেল ব্ল্যাড ক্যানসারে আক্রান্ত তাহমিনা। প্রথম পর্যায়ে চট্টগ্রাম নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিন-চারদিন চিকিৎসা নিয়ে মোটামুটি সুস্থ হয়ে উঠেন তাহমিনা। পরে আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে ১০ দিন ধরে চিকিৎসা দেওয়া হয় তাকে। এরই মধ্যে পাসপোর্ট-ভারতীয় ভিসা প্রস্তুত করা হয়। সব প্রক্রিয়া শেষে ১৩ জানুয়ারি তাহমিনাকে নিয়ে মুম্বাই যান স্বামী আর স্বজনেরা। সুশ্রুত হাসপাতাল ও গবেষণা কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়ে মোটামুটি সুস্থতার দিকে ফিরছিলেন তাহমিনা। চিকিৎসকেরাও দিচ্ছিলেন ভরসা। কিন্তু গত বুধবার অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। রোববার দ্রুতই সেটি আরও খারাপের দিকে চলে যায়। যেখান থেকে আর ফিরতে পারেননি তাহমিনা।

মা, যে আর নেই সেটি বলা হয়নি দুই শিশু সন্তানকে। অবশ্য ৮ বছরের আহিল আর চার বছরের ওয়াকিলের সেটি বোঝারও বয়স এখনো হয়নি। তারা এখনো জানে, ‘মায়ের অসুখ হয়েছে, অসুখ ভালো হলে ফিরে আসবে।’

বাবার সঙ্গে আহিল-ওয়াকিল

হঠাৎ বোন হারিয়ে পাগলপ্রায় মুবিনুল হক। অন্য দশটা পিঠাপিঠি বয়সের ভাই-বোনের মতো তাহমিনা আর মুবিনুলের মাঝেও ছোটকালে ছিল দুষ্টুমির মারামারি, একে অপরকে খোঁচানো আবার দ্রুতই সব ভুলে গলায় গলায় ভাবের কত শত গল্প। বোনকে হারানোর পর বোনের সঙ্গে কাটানো সেই সব মুর্হূতগুলো এখন যেন চোখের পাতায় ছায়াছবির মতো ভেসে ভেসে আসছে মুবিনুলের।

শোকের সব শব্দ জড়ো করে মুবিনুল বললেন, ‘জীবনে বোন জিনিসটা কি, সেটা যাদের নেই তারাই শুধু বুঝতে পারে। যখন বোনটার বিয়ের কথা হচ্ছিল, তার আগে মক (মজা) করে বলছিলাম তোর জ্বালা-যন্ত্রণা থেকে বেঁচে যাচ্ছি। কিন্তু বিয়ের দিন বুঝতে পারি কি হারাচ্ছি। সে যখন শ্বশুরবাড়িতে যেতে গাড়িতে উঠছিল, তখন আমি কান্না আর আটকাতে পারিনি। এরপর থেকে সবসময় না দেখার কারণে ওর জন্য কষ্ট হতো। আমার সেই বড় আদরের বোনটা এতদূরে চলে গেল, একেবারে ধরাছোঁয়ার বাইরে। কীভাবে সহ্য করব? কষ্ট পাচ্ছি অনেক, বুকের মধ্যে মনে হয় কেউ হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করছে। বোনের দুইটা দুনিয়া সমান বাচ্চাকে কি বলব? কীভাবে বলব তুমি নেই আর?’ বলতে বলতে মুবিনুলের কথা বুজে যায় কান্নায়।

তাহমিনার সঙ্গে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত একসঙ্গে পড়েছেন হুমাইরা সুলতানা। প্রিয় বন্ধুর অন্তিম পরিণতির কথা শোনার পর থেকে মন একটু ভালো নেই এই তরুণীর। বললেন, ‘ভেজা দৃষ্টিতে যেন দেখতে পাচ্ছি সেই সব দিনগুলো। একসঙ্গে শ্রেণিকক্ষ শেয়ার করা। পাশাপাশি বসে কত আড্ডা-খুনসুঁটি। বিয়ের পর শারীরিক দূরত্ব বাড়লেও অনলাইনে সবসময় কথা বলা। এই তো কদিন আগেও কথা হলো। ওকে সাহস দিলাম, সেও দুশ্চিন্তা না করতে বলল। আমার সেই বন্ধুটা আর নেই ভাবতেই যেন একদলা কান্না বুক ঠেলে উঠতে চাচ্ছে।’

সময় যে ফুরিয়ে আসছে হয়তো বুঝে গিয়েছিলেন তাহমিনাও। গত ১৮ নভেম্বর নিজের ফেসবুকে শেষবারের মতো একটা লাইন লিখেছিলেন এই নারী। সেটি ছিল-‘মৃত্যু আমাদের অনেক কাছে।’ শেষ পর্যন্ত সেটিই নির্মমভাবে সত্যি হয়ে গেল।

স্ত্রীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন মোহাম্মাদ হুমায়ুন আমিন রিংকু। কথা বলার সব শক্তিই যেন হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। স্ত্রীর মৃত্যুর খবর শোনে সুশ্রুত হাসপাতাল ও গবেষণা কেন্দ্রের সামনের সড়কের পাশে বসে কাঁদছেন এমন একটি ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। স্ত্রী উন্নত চিকিৎসার সুযোগটুকুও দিলেন না, কীভাবে মানবেন রিংকু। এই তরুণ ফেসবুকে স্ত্রীকে নিয়ে দিয়েছেন আবেগঘন স্ট্যাটাস, ‘তোমার সঙ্গে পথচলা প্রায় ৮টি বছর। তোমার মতো নারী যেন প্রত্যেক ঘরে ঘরে জন্ম নেয়। আল্লাহ আমার কলিজাকে তুমি জান্নাতের মেহমান বানিয়ে নাও।’

তাহমিনাকে হারানোর পর এখন স্বজনদের সব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তার দুই শিশুপুত্রকে ঘিরে। মা হারা দুই শিশুকে কীভাবে বড় করে তুলবেন, কি বলে সান্ত্বনা দেবেন সেটি ভেবে কুল পাচ্ছেন না তারা।

সৃষ্টিকর্তার কাছে তাদের সবার একটাই যেন প্রার্থনা-‘মা হারানোর যন্ত্রণা যখন দিয়েছো, তখন কষ্ট সইবার শক্তিও দিও।’

   

এক ঘরেই তিন বলী



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

  • Font increase
  • Font Decrease

চুল থেকে দাড়ি-সবই সফেদ। হাঁটাচলায় মন্থর। স্বাভাবিকভাবেই প্রবীণের বয়সটা আঁচ করা যায় প্রথম দেখাতেই। কিন্তু তার ষাটোর্ধ্ব বয়সটা যেন কেবল ক্যালেন্ডারের হিসাব। বয়স যতই ছোবল বসানোর চেষ্টা করুক না কেন-তিনি যেন এখনো ২৫ এর টগবগে তরুণ। সেই বলেই তো ফুসফুসের রোগবালাইকে তুড়ি মেরে ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলা এলেই হাজির হয়ে যান রিংয়ে। এক দুবার নয়, এবার কিনা পূর্ণ হলো সুবর্ণজয়ন্তী!

চট্টগ্রামের অন্যতম আবেগের ঠিকানা ঐতিহাসিক এই বলীখেলার বড় বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠা এই বলীর নাম খাজা আহমদ বলী। ৫০ বছর ধরে বলীখেলায় অংশ নিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে যাওয়া এই বলীর এখন পড়ন্ত বয়স। ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে রোগ। কানেও শোনেন কম। খাজা আহমদ বুঝে গিয়েছেন, তার দিন ফুরাচ্ছে। কিন্তু তিনি যে বলীখেলার স্মৃতি থেকে সহজেই মুছে যেতে চান না। সেজন্যই উত্তরসূরী হিসেবে এরই মধ্যে গড়ে তুলেছেন নিজের দুই ছেলেকে। বাবার পাশাপাশি দুই ভাইও এখন বলীখেলার নিয়মিত প্রতিযোগী।

খাজা আহমেদ বলীর বাবাও বলীখেলায় অংশ নিতেন। বাবার সঙ্গে বলীখেলায় এসে ১৯৭৪ সালে শখের বসে খেলতে নামেন খাজা আহমেদও। বয়স তখন ১২ বছরের আশপাশে। সেই শুরু, আর কোনোদিন মিস করেননি বলীখেলায় অংশ নেওয়া। একবার চ্যাম্পিয়নের গৌরবও অর্জন করেছিলেন। বহু বছর ধরে খাজা আহমেদ বলী ও সত্তরোর্ধ্ব মফিজুর রহমানের ‘বলীযুদ্ধ’ জব্বারের বলীখেলার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে এই দ্বৈরথ হয়তো আর দেখা যাবে না। দুই বছর আগে উৎপত্তি হওয়া ফুসফুসের রোগটা ইদানিং যে খাজা আহমদকে বেশিই ভোগাচ্ছে। সেজন্য গতবছর অবসরের ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার দুই ছেলেকে নিয়ে বলীখেলায় এসে আবেগ সামলাতে পারেননি খাজা আহমেদ। ছেলেদের সঙ্গে নিজেও নেমে পড়েন রিংয়ে। সেজন্য আরও একবার মফিজুর রহমান-খাজা আহমেদের লড়াই দেখল হাজারো দর্শক। যদিওবা যৌথ বিজয়ী ঘোষণা করে দুজনের মুখেই হাসি ফুটিয়েছেন রেফারি।

প্রতিপক্ষ মফিজুর রহমানের সঙ্গে বলী-যুদ্ধে খাজা আহমদ

কেন অবসর ভাঙলেন এমন প্রশ্নে হাসি খেলা করে যায় খাজা আহমেদ বলীর মুখে। বলতে থাকেন, ‘বয়সের কারণে শরীর দস্ত। ফুসফুসও ঠিকঠাক কাজ করছে না। সেজন্য অবসর নিয়েছিলাম। কিন্তু বলীখেলায় আসার পর দেখলাম দর্শকেরা সবাই অনুরোধ করছেন। সেজন্য মন বলল, না খেললে দর্শকদের প্রতি অন্যায় হবে। আর আবেগ ও ভালোবাসার কাছে বয়স-রোগ পেরেছে কবে?’

তবে এখানেই সব শেষ, বলে দিয়েছেন খাজা আহমেদ বলী। বলেছেন, ‘বয়স হয়ে গেছে। মনে হয় না আর খেলতে পারব। অসুখটা বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে। সেজন্য মনে মনে মেনে নিয়েছি এটাই আমার শেষ অংশগ্রহণ। বাকিটা আল্লাহর হাতে।’

তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা খাজা আহমদের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায়। কৃষিকাজ করেই চলে সংসার। তবে বলীখেলা এলে সব কাজ বাধ। কয়েকদিন ধরে চলে প্রস্তুতি। নিজের স্মৃতি ধরে রাখতে এরই মধ্যে খাজা আহমেদ নিজের দুই ছেলেকে গড়ে তুলেছেন বলী হিসেবে। ২০১২ সাল থেকে বলীখেলায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন তার বড় ছেলে মো. সেলিম। গত বছর থেকে যোগ দিয়েছেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। এখন বলীখেলার আগে দুই ছেলেকে নিয়ে চলে খাজা আহমদের প্রস্তুতি।

জানতে চাইলে সেলিম বলেন, ‘বাবার কাছ থেকে আমরা বলীখেলা শিখেছি। বয়সের কারণে বাবা এখন অসুস্থ। হয়তো আর খেলা হবে না। সেজন্য তার উত্তরসূরী হিসেবে আমরা বলীখেলায় অংশ নেব সামনের দিনগুলোতে। এটা শুধু পরিবারের বলীর প্রজন্ম ধরে রাখার জন্য নয়, তরুণদের মাদক-সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগও।’

বাবাকে পাশে রেখে একই কথা বললেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। বলেন, ‘হয়তো বাবা আর খেলবেন না। তবে তিনি না খেললেও যতদিন বেঁচে থাকবেন বলীখেলা দেখতে আসবেন। রিংয়ের নিচে দাঁড়িয়ে আমাদের উৎসাহ দিয়ে যাবেন।’

ছেলের কথা শুনে আবেগ খেলে যায় খাজা আহমেদ বলীর মনে। কাঁধের গামছাটা হাতে তুলে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘না খেললেও যতদিন বাঁচি এখানে, এই বলীর মাঠ লালদীঘি ময়দানে ছুটে আসব। এটা থেকে দূরে থাকতে পারব না।’

খাজা আহমেদ যখন কথা বলছিলেন দূরে কোথাও তখন মাইকে বাজছিল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই অমর গান। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অক্লান্ত গলায় গেয়ে চলেছেন, যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে...

;

চাকরি ছেড়ে বসের সামনেই ঢোল বাজিয়ে নাচলেন যুবক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নিত্যদিনের অফিসের কর্মপরিবেশে অনেকের মধ্যেই 'বিরক্তি' চলে আসে। তবুও ধৈয্য নিয়ে সব সহ্য করে টিকে থাকার জন্য চালিয়ে যান লড়াই। তবে এ যাত্রায় সকলের দ্বারা টিকে থাকা সম্ভব হয় না। অফিসের 'বিষাক্ত' কর্মপরিবেশে অনেকেই ভোগেন মানসিক সমস্যায় কিংবা ব্যক্তিজীবনে। এমন পরিবেশ থেকে বাঁচতে একেক জন একেক পন্থা অবলম্বন করে থাকেন।

তবে অনিকেত নামের এক যুবক এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে যা করেছেন নেট দুনিয়ায় তা রীতিমতো ভাইরাল। এসব থেকে মুক্তি পেতে চাকরিটাই ছেড়ে দিয়েছেন এই যুবক। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি, বসের সামনেই ঢাকঢোল বাজিয়ে নেচে উদযাপন করেছেন এমন মুহূর্তের।

ঘটনাটি ভারতের পুনে রাজ্যের। অনিকেত নামের ওই যুবক বিক্রয় সহযোগী হিসেবে চাকরি করতেন।

তার এমন উদযাপনের একটি ভিডিও ইন্সটাগ্রাম শেয়ার করেছেন অনীশ ভগত।

ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, গত তিন বছর ধরে এই কোম্পানির সাথে কাজ করেও বেতন খুব একটা বাড়েনি। এছাড়াও অফিসের বসের দ্বারাও তাকে বিভিন্ন সময়ে অপমানিত হতে হয়েছে।

তাই তার কাজের শেষ দিনে বন্ধুরা অফিসের বাইরে ঢোল নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন এবং নেচেছিলেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, এ ঘটনায় তার বস অনেক উত্তেজিত হয়েছেন। পাশাপাশি তার বস লোকজনকে ধাক্কা দিয়েছেন এবং চিৎকারও করেছেন।

ভিডিওটির ক্যাপশনে ভগত লিখেছেন, আমি মনে করি আপনারা অনেকেই এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারবেন। আজকাল বিষাক্ত কাজের সংস্কৃতি খুব বেশি দেখা যায়। সম্মান এবং অধিকারের অভাব খুবই সাধারণ। অনিকেত তার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। আমি আশা করি এই গল্প মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।

পোস্ট করা ভিডিওটি এক মিলিয়নেরও (১০ লাখের বেশি) বেশি ভিউ পেয়েছে। পোস্টটিতে অসংখ্য লাইক ও কমেন্টও রয়েছে।

একজন ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি জানি না কেন এটি আমাকে এত সন্তুষ্ট করেছে।'

আরেকজন লিখেছেন, 'নাচটি আমাকে অন্য মাত্রার তৃপ্তি দিয়েছে।'

'আপনি সত্যিই আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ইতিবাচক এবং উত্সাহী ব্যক্তি'- তৃতীয় একজন ঠিক এভাবেই নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন।

তথ্যসূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস 

;

অভয়ারণ্যে মানুষ যখন বন্দিখাঁচায়



প্রমা কোয়েল, ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চিড়িয়াখানা, নানানরকম পশুপাখি ও প্রাণীর বন্দিশালা। কেবল রং-বেরঙের চিড়িয়াই নয়; বাঘ, সিংহ, ভালুক, বানর, গণ্ডারসহ কত বন্যপ্রাণীই না খাঁচায় বন্দি থাকে!

চিড়িয়াখানায় রাখতে বন্য প্রাণীদের প্রকৃতির স্বাধীন জীবন থেকে ছিনিয়ে আনা হয়। তাদের খাঁচায় বন্দি করা হয় যেন, মানুষ তাদের দেখে আনন্দ পায়। অনেক প্রাণীর জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি খাঁচাতেই কেটে যায়।

ছোট থেকে বড় সব বয়সের মানুষই চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন। শিশুরা না হয় অবুঝ! তবে যারা প্রাপ্তবয়স্ক তারাও চিড়িয়াখানায় এই বন্দি প্রাণীদের জীবনকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারেন না।

এশিয়ার বড় দেশ চীনে রয়েছে, এক অদ্ভুত চিড়িয়াখানা। চংকিংয়ে অবস্থিত সেই চিড়িয়াখানার নাম ‘লেহে লেদু বন্যপ্রাণী চিড়িয়াখানা’। একে ‘রিভার্স জু’ (বিপরীত চিড়িয়াখানা) বলেও ডাকা হয়।

এখানেও মানুষ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে পশু দেখতে আসেন। তবে একেবারেই ভিন্ন উপায়ে। মূলত, একটি খাঁচা রয়েছে, যেখানে মানুষদের সেই খাঁচায় পুরা হয়। তারপর সেই খাঁচাবন্দি মানুষদের নিয়ে রাখা হয়, অভয়ারণ্যে। সেখানে বন্য প্রাণীরা মানুষের খাঁচার চারপাশে অবাধে ঘুরতে থাকে। চিড়িয়াখানায় বন্দি প্রাণীদের বন্দিজীবনের এক প্রতীকী দৃশ্য!

অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের জন্য এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা!

অভয়ারণ্যে খাঁচায় বন্দি মানুষ, ছবি-সংগৃহীত

খুব কাছে থেকে হিংস্র বন্যপ্রাণীদের মুক্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যেমন লোমহর্ষক, ঠিক তেমনই আতঙ্কজনকও হতে পারে। বিপরীতধর্মী এই চিড়িয়াখানাটি সবার জন্য প্রথম উন্মুক্ত করা হয়, ২০১৫ সালে। তখন বিশ্বের সংবদমাধ্যমের শিরোনাম কেড়েছিল এ চিড়িয়াখানাটি।

একটি শক্ত লোহার খাঁচাবেষ্টিত দর্শনার্থীদের একটি ট্রাকে তুলে অভয়ারণ্যে রেখে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের ঘিরে ধরে ঘুরতে থাকে বাঘ, ভালুক, সিংহ ইত্যাদি হিংস্র প্রাণী।

এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার প্রধান চ্যান লিয়াং বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা রক্ষার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। খাঁচার ফাঁকা অংশ দিয়ে হাতের আঙুলও বের না করার নির্দেশনা দেওয়া থাকে।

তবে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই চিড়িয়াখানাটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে অনেক। এর নৈতিকতা নিয়ে অনেকে প্রশ্নও তুলেছেন।

অনেকে মনে করেন, এরকম ব্যবস্থাপনায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কারণ, শিকারী প্রাণীগুলো প্রচণ্ড হিংস্র। তাই, সে কারণে যে কোনো সময় বিপজ্জনক ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

আবার এরকম চিন্তাভাবনার প্রশংসাও করেছেন অপর একটি পক্ষ। তাদের বক্তব্য, পৃথিবীটা কেবল মানুষদের নয়। প্রকৃতিতে সব প্রাণীদের একটা ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। তাদের বন্দি করে রাখা মানুষের উচিত নয়। কারণ, মুক্ত প্রকৃতিতে বিরাজ করার অধিকার সব প্রাণীরই রয়েছে।

তাদের মন্তব্য, আমরা প্রাণীদের আবাসস্থল বনজঙ্গল সব উজাড় করেছি। সে কারণে তাপমাত্রাও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। আবার প্রাণীদের বন্দি রেখে তাদের জীবন চরম দুর্বিষহ করে তুলি।

চাইলে এবং সুযোগ পেলে এই ধরনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে চিড়িয়াখানাটি ঘুরে আসতে পারেন বৈকি!

তথ্যসূত্র: এনিমেল অ্যারাউন্ড দ্য গ্লোব

;

৫ বছরের শিশুর বিস্ময়কর প্রতিভা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বয়স সবে ৫ কিংবা ৬। এই বয়সেই তার প্রতিভা দেখে অবাক হবে যে-কেউ!

গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভিডিওটি ১ মিলিয়নের (১০ লাখের বেশি) বেশি মানুষ দেখেছেন। খবর এনডিটিভি। 

ভিডিওতে রিলি নামের ওই শিশুটিকে প্রথমে শ্বাস নিতে দেখা যায়। তারপর সে একটি শক্তিশালী গর্জন দিয়ে শ্বাস ছাড়ে। ওই গর্জনটি হুবুহ সিংহের গর্জনের অনুরূপ।

রিলির মা অ্যামি ভিডিওটি এক্সে শেয়ারের পরই তা ভাইরাল হয়ে যায়। শিশুটির এমন নিখুত দক্ষতা দেখে মুগ্ধ দর্শকরা। ভিডিওটিতে অনেকেই নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, এত অল্প বয়সে এমন বাস্তবসম্মত গর্জন তৈরি করার রিলির ক্ষমতার বিস্ময় প্রকাশ করে।

আরেকজন লিখেছেন, শিশুরা খুব দ্রুত শিখে। তার এমন প্রতিভা সত্যিই অবাক করার মতো।

;