‘গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচ’- সম্পর্কে যা জানা যায়



মানসুরা চামেলী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
'গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচ'- সম্পর্কে যা জানা যায়

'গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচ'- সম্পর্কে যা জানা যায়

  • Font increase
  • Font Decrease

প্লাস্টিক; পরিবেশ দূষণে অন্যতম মাথাব্যথার কারণ। হাজার চেষ্টা করেও বন্ধ করা যাচ্ছে না প্লাস্টিকের ব্যবহার। বরং দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে এর ব্যবহার। দূষণ এতটাই বেড়েছে যে বিজ্ঞানীরা সমুদ্রেও পেয়েছেন প্লাস্টিক দূষণ। যার নাম ‘গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচ’।

যার আবিষ্কারক ক্যাপ্টন চার্লস মুর। ১৯৯৭ সাল চার্লস মুর হাওয়াই থেকে ক্যালিফোর্নিয়া যাওয়ার পথে সমুদ্রে প্লাস্টিকের একটি বিশাল স্রোত দেখতে পান। সেটাই ‘গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচ’। মধ্য-উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর থেকে এক হাজার মাইলও দূরে নয়। আর এই আর্বজনার স্তুপ দেখে সমুদ্র বিজ্ঞানী চার্লস মুর ও জাহাজের ক্যাপ্টেন বিভ্রান্ত হন। দূর থেকে বিষয়টা অতটা বোঝাও যাচ্ছিল না।

চার্লস মুর বলেন, ‘বিষয়টা এমন না যে হ্যানসেল ও গ্রেটারের রূপকথা গল্পের মতো আমাকে কেউ বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। তবে দূর থেকে দেখে ভেবেছি- ‘এটা বড় কিছু হতে যাচ্ছে’।

ক্যাপ্টেন চার্লস মুর, ১৯৯৭ সালে 'গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচ' আবিষ্কার করেন

এর দুই বছর পর গবেষণা ও মডেল তৈরি করে চার্লস মুর আবার অনুসন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘এরপর আমরা দেখি একটি অসাধারণ ব্যাপার।’ সমুদ্রের পৃষ্ঠের নমুনা করার জন্য একটি নেট সিস্টেম ব্যবহার করে, তিনি সাগরে ভাসমান প্লাঙ্কটনের চেয়ে ছয় গুণ বেশি প্লাস্টিক খুঁজে পান।

চার্লস মুর বিশ্বজুড়ে বিশাল পাঁচটি আবর্জনা প্যাচ আবিষ্কার করেন। যেগুলো ঘূর্ণায়মান সমুদ্রের স্রোত দ্বারা সৃষ্ট। যা গাইরস নামে পরিচিত, ঘূর্ণিয়মান আবর্জনা প্লাস্টিক চুষে তৈরি হয়। এ গুলো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তর হয়।

আবিষ্কারের পর থেকে, ‘গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচ’ গণমাধ্যমে প্লাস্টিকের ভাসমান ভর হিসাবে পরিচিত হয়েছে। একে আবর্জনার দ্বীপও বলা হয়েছে।

যদিও মুর দাবি করেন, "এটি আবর্জনার পাহাড় বা আবর্জনার স্তুপ ছিল না। এমনকি আবর্জনার প্যাচও ছিল না। আবর্জনার ফলে সমুদ্রকে একটি ঘোলাটে স্যুপের মতো দেখাচ্ছিল। যা বিভিন্ন আকারের প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি।

তিনি আরও বলেন, এই প্যাচটির কল্পনা করা কঠিন। গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচের ছবি নেই’।

মুর বলেন, স্যাটেলাইট, ড্রোন এবং গুগল আর্থ মোবাইল দিয়ে এই আবর্জনার প্যাচের একটি ওভারভিউ ছবি তোলার জন্য এখনও লড়াই চলছে।

আনুমানিক ১.৮ ট্রিলিয়ন প্লাস্টিকের ৯৪ শতাংশ মাইক্রোপ্লাস্টিক (প্লাস্টিকের অতি ক্ষুদ্র কণা)  যা গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচ তৈরি করে

‘গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচ’নিয়ে আবিষ্কারের ২৫ বছর পার হয়েছে। আবর্জনার প্যাচ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান আরও গভীর হয়েছে। কেউ কেউ সেগুলো পরিমাপ করার এবং পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এই আবর্জনা প্যাচগুলো সম্পর্কে এখনও অনেক ভুল ধারণা বিদ্যমান। এই ভুল ধারণা দূর করতে খুব কম মানুষই উদ্যোগ নিতে পারবে।

‘গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচ’-এর দীর্ঘ এত বড় যে, এটাকে প্রায়ই ল্যান্ডমাস হিসেবে কল্পনা করা হয়। ২০১৮ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন বর্গ কিমি এলাকায় অন্তত ৭৯ হাজার টন প্লাস্টিক সমুদ্রে ভাসছে। যা পূর্বে রিপোর্ট করা থেকে চার থেকে ১৬ গুণ বেশি। এই আবর্জনার স্তুপের আয়তন টেক্সাসের আয়তনের দ্বিগুণ বা ফ্রান্সের আয়তনের তিনগুণ।

এদিকে ‘গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচ’কে বিশ্বের প্লাস্টিক সমস্যার বড় প্রোফাইল হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এটিকে ঘিরে পৌরাণিক কাহিনী গড়ে উঠেছে। গুগলে ছবি সার্চ দিলে ভুল ছবিও দেখানো হয়।

কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে- সমুদ্রে চলাচল করা জাহাজগুলো ‘গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচ’এর ভেতরে এবং বাইরে যেতে পারে। নাবিকরা আবর্জনার প্যাচের মধ্য দিয়ে যেতে পারে। বিভিন্ন গবেষণা বলছে, ‘গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচ’এ পাওয়া আবর্জনার মোট ভর ৭৫ শতাংশ, পানিতে ভাসা ৫ সেমি (১.০ ইঞ্চি) কোন বস্তুকে ধ্বংস করতে পারে।

মাইক্রোপ্লাস্টিক (প্লাস্টিকের অতি ক্ষুদ্র কণা)

যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটির পরিবেশ ও প্রযুক্তির অধ্যাপক ওয়াল্টার লিল বলেন, ‘সমস্যাটি হলো যে বেশিরভাগ মানুষ এই সমস্যাটি সম্পর্কে সচেতন নয়, তাই তারা সমাধান নিয়ে কাজ করতে তাগিদ অনুভব করেন না। এই সমস্যা নিয়ে না ভাবলে আবর্জনার প্যাচ আরও জমা হবে।

‘আসলে, আমরা কথা বলার সাথে সাথে এগুলো আরও বড় হচ্ছে,’ লিল বলেছেন। ২০২১ সালের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান প্রবণতার ওপর ভিত্তি করে এর বৃদ্ধির হার আড়াই শতাংশ।

সমুদ্রের প্লাস্টিক দূষণ কচ্ছপসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণী থেকে শুরু করে পাখি এবং মাছের খাদ্য ঝুঁকি তৈরি করছে। কারণ বিভিন্ন জলজ প্রাণী এবং মাছেরা হামেশাই এইসব প্লাস্টিককে নিজেদের খাবার ভেবে ভুল করে।

সমস্যাটি এতই বিস্তৃত যে এটি ‘প্লাস্টিস্ফিয়ার (প্লাস্টিকভীতি)’-এর জন্ম দিয়েছে। যদি এই শব্দটি বাস্তুতন্ত্রের জন্য ব্যবহৃত একটি শব্দ। যা মানুষের তৈরি প্লাস্টিকের পরিবেশে বসবাসের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করছে।

প্যাসিফিক আবর্জনা প্যাচ

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, গবেষকরা জিপিজিপি থেকে মাছ ধরা প্রায় ১০০ টুকরো প্লাস্টিক থেকে ৮৮৪টি অমেরুদণ্ডী প্রাণী শনাক্ত করেছেন। সমুদ্রের স্রোত কিছু প্রজাতিকে তাদের প্রাকৃতিক বসবাসস্থল থেকে ভাসিয়ে নিয়ে প্লাস্টিকের প্যাচে বসবাস করতে নিয়ে যায়। সেখানে অদ্ভুত মিউটেশন বা জৈব ঝুঁকি তৈরি হয়।

লিল সম্প্রতি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরী ফিজি, দ্য কুক দ্বীপপুঞ্জ এবং ভানুয়াতুসহ কিছু দ্বীপ রাষ্ট্র ভ্রমণ করেছেন। এই দেশগুলোতে প্লাস্টিক উৎপাদন হয় না। তবে কিছু প্লাস্টিক উপকূলে যাওয়ার পথ খুঁজে পায়। পর্যটনের কারণে এ প্রভাব পড়ে বলে যোগ করেন তিনি।

সমুদ্র দূষণ রোধে দেশগুলো সরকারি পদক্ষেপের অভাব রয়েছে বলে মনে করেন যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটির পরিবেশ ও প্রযুক্তির অধ্যাপক ওয়াল্টার লিল।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্লাস্টিক উৎপাদন হ্রাস সমুদ্রে আবর্জনার প্যাচ কমাতে পারে।  

প্লাস্টিক দূষণ রোধে ‘সিলভার লাইনিং’ চুক্তি, ২০২৪ সালে যা আলোচনায় আসছে। এতে বিশ্বের ১৭৫ টি দেশ প্লাস্টিক দূষণ রোধে একটি আইনত বাধ্যতামূলক সাক্ষর করবে। যাতে নতুন করে প্লাস্টিক সমুদ্রের আবর্জনা প্যাচগুলোতে পৌঁছাতে না পারে।

সূত্র: বিবিসি

   

বিলের মাঝে উড়োজাহাজ! দেখতে আসেন সবাই!



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুর (কাপাসিয়া) থেকে ফিরে: দূর থেকে দেখে হবে, ধানের জমির মাঝে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে, এক উড়োজাহাজ। কাছে গেলেই দেখা যাবে, কাগজ দিয়ে তৈরি উড়োজাহাজের আদলে তৈরি একটি ডিজাইন।

ভুল ভাঙবে তখন, যখন ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, আসলে এটি একটি রেস্টুরেন্ট, উড়োজাহাজ নয়! গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের পূর্ব খামের গ্রামের রফিক নামে এক তরুণ তৈরি করেছিলেন এই ‘বিমান বিলাশ রেস্টুরেন্ট’টি।

কয়েক বছর আগে এই রেস্টুরেন্ট-মালিক প্রবাসে চলে গেলে এটিও বন্ধ হয়ে যায়। তারপরেও এটিকে একনজর দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখানে ছুটে আসেন। উড়োজাহাজ আকৃতির এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন তারা।

সরেজমিন দেখা যায়, পলিথিন দিয়ে কারুকার্য করে তৈরি করা এটিতে রয়েছে জানালা ও একটি দরজা। কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়। এখানে শিশুদের আনাগোনাই বেশি। বড়দের হাত ধরে এসে এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে বাড়ি ফিরে যায় তারা।

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ধানক্ষেতের মাঝে উড়োজাহাজ আকৃতির রেস্তরাঁ । নাম- 'বিমান বিলাশ রেস্টুরেন্ট' , ছবি- বার্তা২৪.কম

এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে এটি দেখার জন্য অনেক মানুষ এখানে ছুটে আসেন। এছাড়াও আশপাশের জায়গাগুলোও বেশ মনোরম। প্রকৃতির ছোঁয়া পাওয়া যায়। সে কারণে সবসময়ই লোকজন এখানে বেড়িয়ে যান।

প্রথম যখন উড়োজাহাজ আকৃতির এই রেস্টুরেন্টটি তৈরি করা হয়, তখন এটি দেখতে আরো বেশি সুন্দর ছিল। রাতেও মানুষজন আসতেন। গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এটি দেখে আসল উড়োজাহাজে চড়ার স্বাদ নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।

;

শিশু রায়হানের শ্রমেই মা-নানার মুখে দুমুঠো ভাত ওঠে!



শাহজাহান ইসলাম লেলিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নীলফামারী
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

আমার বাবা মারা গেছেন দুই বছর আগে! আমার বাবা মারা যাওয়ার পরে আমাকে আর মাকে চাচারা বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আমার নানা বৃদ্ধ মানুষ। নানী মারা গেছে। আমরা তার বাড়িতে থাকি।

আমার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে আর আমি স্কুল শেষে হাসপাতালে এসে খেলনা ও বেলুন বিক্রি করি। আমার টাকা দিয়ে চাল কিনি। আমার মায়ের টাকা দিয়ে তরকারি কিনি, বার্তা২৪.কমের সঙ্গে আলাপচারিতায় এমন কথা বলছিল পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া রায়হান ইসলাম।

রায়হান ইসলাম নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের নিতাই ইউনিয়নের মৃত আবু বক্কর আলীর ছেলে ও স্থানীয় নিতাই ডাঙাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে রায়হানকে খেলনা ও বেলুন বিক্রি করতে দেখা যায়। এসময় হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজনেরা তাদের সন্তানদের আবদার পূরণ করতে রায়হানের কাছ থেকে এসব খেলনা কিনছেন।

দারিদ্র্যের কষাঘাতে বাস্তবতা যেন বুঝতে শিখেছে রায়হান। প্রচণ্ড দাবদাহে ও তাপপ্রবাহের মধ্যেও রোদে পুড়ে মায়ের আর বৃদ্ধ নানার মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে যেন রায়হানের চেষ্টার শেষ নেই।

খেলার বয়সে খেলনা আর বেলুন হাতে ছোটে বিক্রি করতে। মাঝে-মধ্যে কোনো ক্রেতা না থাকলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তায় দাঁড়িয়ে খেলনা আর বেলুন বিক্রি করে রায়হান। খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকার কথা থাকলেও বাধ্য হয়ে এই বয়সে ছুটতে হয় পথেঘাটে। দারিদ্র্য রায়হানকে ঠেলে দেয় কাঠফাঁটা রোদের জগতে।

খেলার বয়সে খেলনা বিক্রি করতে ছোটে অসুস্থ মায়ের মুখে দুটো ভাত তুলে দিতে, ছবি: বার্তা২৪.কম

রায়হান বলে, আমি পড়ালেখা করে বড় কিছু করে আমার মায়ের কষ্ট দূর করতে চাই! আমাদের খবর কেউ নেয় না। আমার মা অসুস্থ! মানুষের বাসায় বেশি কাজও করতে পারে না। আমি এগুলো বিক্রি করে রাতে বাজার নিয়ে যাই।

আমাদের কেউ সাহায্য করে না! আমি যে টাকা আয় করি, তা দিয়ে আমার মা আর নানার জন্য চাল, ডাল কিনি। মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন জিনিসও কিনতে হয় এই টাকা দিয়ে। সব কিছু এই বিক্রির টাকা থেকেই কিনি!

এবিষয়ে নিতাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোত্তাকিমুর রহমান আবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছিলাম। তবে বিষয়টা সেভাবে ভাবিনি! আগামীতে কোনো সুযোগ এলে আমি তাদের তা দেওয়ার চেষ্টা করবো।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম আশিক রেজা বলেন, খোঁজখবর নিয়ে তাকে যেভাবে সাহায্য করা যায়, আমরা সেটি করবো।

বিদায় নিয়ে আসার আগে রায়হান বলে, আমাদের নিজের একটা বাড়ি করবো। আমার মাকে নিয়ে সেখানে সুখে থাকবো। পরে সারাক্ষণ শুধু কানে বাজতেই থাকে- আমাদের নিজের একটা বাড়ি করবো। আমার মাকে নিয়ে সেখানে সুখে থাকবো! আমাদের নিজের…!

;

তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ

২৯ এপ্রিল: আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস



প্রমা কান্তা, ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে
তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ।
তারি সঙ্গে কী মৃদঙ্গে সদা বাজে
তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ’॥

কিংবা-
‘সৃজন ছন্দে আনন্দে নাচো নটরাজ
হে মহকাল প্রলয়–তাল ভোলো ভোলো।।
ছড়াক তব জটিল জটা
শিশু–শশীর কিরণ–ছটা
উমারে বুকে ধরিয়া সুখে দোলো দোলো’।।

রবিঠাকুর বা কাজী নজরুল ইসলামের কলমে ছন্দ তোলা এ পংক্তি যেন মনের ভাব প্রকাশের এক অনন্য শিল্প। এ গানগুলো শুনলেই আনমনে আমরা নেচে উঠি।

নাচ বা নৃত্য আনন্দ প্রকাশের চেয়েও আরো বেশি কিছু; শুদ্ধ শিল্প চর্চার পরিশীলিত রূপ। নৃত্যের মুদ্রার শিল্পে মনের পর্দায় প্রকাশ পায় অব্যক্ত ভাব ও ভাষা। নৃত্য প্রাচীন সংস্কৃতির অংশ এবং ভাষার বাহনও বটে। সেটির আরো শিল্পিতরূপ তুলে ধরে ক্ল্যাসিক ধারার নৃত্য। প্রণয়ীর কাছে প্রণয়িনীর কিংবা প্রণয়িনীর কাছে প্রণয়ীর আত্মনিবেদনের চিরায়ত ধারা কিংবা সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে নিবেদন নৃত্যের ভাষা। মনের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ নৃত্যের মুদ্রার ভাষায় ভেসে ওঠে।

নৃত্যের মাহাত্ম্য ও প্রয়োজনীয়তার বার্তা ছড়িয়ে দিতে উদযাপন করা হয়- আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস। প্রতিবছর ২৯ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী নিজের পছন্দের নৃত্যের মুদ্রার মাধ্যমে উদযাপনে মেতে ওঠেন বিভিন্ন দেশের নৃত্যশিল্পীরা। নৃত্য বিনোদন ও আনন্দ প্রকাশের সবচেয়ে পরিশীলিত শিল্প মাধ্যম।

আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস উপলক্ষে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে নিজের আবেগ আর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহকারী পরিচালক জুয়েইরিয়াহ মৌলি (প্রোগ্রাম প্রোডাকশন- নৃত্য)।

মৌলি বলেন, নৃত্য শুধু বিনোদন বা পরিবেশনার বিষয় নয়। নৃত্যের তাত্ত্বিক দিকটিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নৃত্য নিয়ে গবেষণার প্রচুর সুযোগ আছে। পেশাগত জায়গা থেকে নৃত্য সমাজে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হোক!

তিনি বলেন, শুদ্ধ নৃত্য চর্চার মাধ্যমে শিল্পীরা নিজের এবং সমাজের কথা তুলে ধরুক। আজকের দিনে এটাই আমার প্রত্যাশা!

ধ্রুপদী নৃত্য, ছবি- সংগৃহীত

সৃষ্টির শুরু থেকেই তাল ও ছন্দের অস্তিত্ব রয়েছে প্রকৃতিতেও। আকাশে মেঘের আন্দোলন, বাতাসে দুলে ওঠা গাছের পাতা, দল বেঁধে পাখিদের উড়ে চলা, ফুলে মৌমাছির মধু বা প্রজাপতির গরল আহরণ, পানিতে মাছেদের ছলছল চলা, এমনকী বৃষ্টির আগমনে ময়ূরের পেখম তুলে দুলে ওঠা, সবাই যেন ছন্দে নেচে মেতে ওঠে আনন্দে।

আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসের উদযাপনের বিষয়ে উইকিপিডিয়াতে বলা হয়েছে- ফরাসি নৃত্যশিল্পী তথা আধুনিক ব্যালের রূপকার জ্যাঁ-জর্জেস নভেরের জন্মদিন উপলক্ষে ইউনেস্কোর 'পারফর্মিং আর্টস'-এর প্রধান সহযোগী আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) নৃত্য কমিটির উদ্যোগে প্রতিবছর ২৯ এপ্রিল এই দিনটি উদযাপন করা হয়।

আইটিআই ও ইন্টারন্যাশনাল ডান্স কমিটি ১৯৮২ সালে প্রথমবার ‘আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস’ উদযাপন শুরু করে।

;

এক ঘরেই তিন বলী



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

  • Font increase
  • Font Decrease

চুল থেকে দাড়ি-সবই সফেদ। হাঁটাচলায় মন্থর। স্বাভাবিকভাবেই প্রবীণের বয়সটা আঁচ করা যায় প্রথম দেখাতেই। কিন্তু তার ষাটোর্ধ্ব বয়সটা যেন কেবল ক্যালেন্ডারের হিসাব। বয়স যতই ছোবল বসানোর চেষ্টা করুক না কেন-তিনি যেন এখনো ২৫ এর টগবগে তরুণ। সেই বলেই তো ফুসফুসের রোগবালাইকে তুড়ি মেরে ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলা এলেই হাজির হয়ে যান রিংয়ে। এক দুবার নয়, এবার কিনা পূর্ণ হলো সুবর্ণজয়ন্তী!

চট্টগ্রামের অন্যতম আবেগের ঠিকানা ঐতিহাসিক এই বলীখেলার বড় বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠা এই বলীর নাম খাজা আহমদ বলী। ৫০ বছর ধরে বলীখেলায় অংশ নিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে যাওয়া এই বলীর এখন পড়ন্ত বয়স। ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে রোগ। কানেও শোনেন কম। খাজা আহমদ বুঝে গিয়েছেন, তার দিন ফুরাচ্ছে। কিন্তু তিনি যে বলীখেলার স্মৃতি থেকে সহজেই মুছে যেতে চান না। সেজন্যই উত্তরসূরী হিসেবে এরই মধ্যে গড়ে তুলেছেন নিজের দুই ছেলেকে। বাবার পাশাপাশি দুই ভাইও এখন বলীখেলার নিয়মিত প্রতিযোগী।

খাজা আহমেদ বলীর বাবাও বলীখেলায় অংশ নিতেন। বাবার সঙ্গে বলীখেলায় এসে ১৯৭৪ সালে শখের বসে খেলতে নামেন খাজা আহমেদও। বয়স তখন ১২ বছরের আশপাশে। সেই শুরু, আর কোনোদিন মিস করেননি বলীখেলায় অংশ নেওয়া। একবার চ্যাম্পিয়নের গৌরবও অর্জন করেছিলেন। বহু বছর ধরে খাজা আহমেদ বলী ও সত্তরোর্ধ্ব মফিজুর রহমানের ‘বলীযুদ্ধ’ জব্বারের বলীখেলার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে এই দ্বৈরথ হয়তো আর দেখা যাবে না। দুই বছর আগে উৎপত্তি হওয়া ফুসফুসের রোগটা ইদানিং যে খাজা আহমদকে বেশিই ভোগাচ্ছে। সেজন্য গতবছর অবসরের ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার দুই ছেলেকে নিয়ে বলীখেলায় এসে আবেগ সামলাতে পারেননি খাজা আহমেদ। ছেলেদের সঙ্গে নিজেও নেমে পড়েন রিংয়ে। সেজন্য আরও একবার মফিজুর রহমান-খাজা আহমেদের লড়াই দেখল হাজারো দর্শক। যদিওবা যৌথ বিজয়ী ঘোষণা করে দুজনের মুখেই হাসি ফুটিয়েছেন রেফারি।

প্রতিপক্ষ মফিজুর রহমানের সঙ্গে বলী-যুদ্ধে খাজা আহমদ

কেন অবসর ভাঙলেন এমন প্রশ্নে হাসি খেলা করে যায় খাজা আহমেদ বলীর মুখে। বলতে থাকেন, ‘বয়সের কারণে শরীর দস্ত। ফুসফুসও ঠিকঠাক কাজ করছে না। সেজন্য অবসর নিয়েছিলাম। কিন্তু বলীখেলায় আসার পর দেখলাম দর্শকেরা সবাই অনুরোধ করছেন। সেজন্য মন বলল, না খেললে দর্শকদের প্রতি অন্যায় হবে। আর আবেগ ও ভালোবাসার কাছে বয়স-রোগ পেরেছে কবে?’

তবে এখানেই সব শেষ, বলে দিয়েছেন খাজা আহমেদ বলী। বলেছেন, ‘বয়স হয়ে গেছে। মনে হয় না আর খেলতে পারব। অসুখটা বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে। সেজন্য মনে মনে মেনে নিয়েছি এটাই আমার শেষ অংশগ্রহণ। বাকিটা আল্লাহর হাতে।’

তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা খাজা আহমদের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায়। কৃষিকাজ করেই চলে সংসার। তবে বলীখেলা এলে সব কাজ বাধ। কয়েকদিন ধরে চলে প্রস্তুতি। নিজের স্মৃতি ধরে রাখতে এরই মধ্যে খাজা আহমেদ নিজের দুই ছেলেকে গড়ে তুলেছেন বলী হিসেবে। ২০১২ সাল থেকে বলীখেলায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন তার বড় ছেলে মো. সেলিম। গত বছর থেকে যোগ দিয়েছেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। এখন বলীখেলার আগে দুই ছেলেকে নিয়ে চলে খাজা আহমদের প্রস্তুতি।

জানতে চাইলে সেলিম বলেন, ‘বাবার কাছ থেকে আমরা বলীখেলা শিখেছি। বয়সের কারণে বাবা এখন অসুস্থ। হয়তো আর খেলা হবে না। সেজন্য তার উত্তরসূরী হিসেবে আমরা বলীখেলায় অংশ নেব সামনের দিনগুলোতে। এটা শুধু পরিবারের বলীর প্রজন্ম ধরে রাখার জন্য নয়, তরুণদের মাদক-সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগও।’

বাবাকে পাশে রেখে একই কথা বললেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। বলেন, ‘হয়তো বাবা আর খেলবেন না। তবে তিনি না খেললেও যতদিন বেঁচে থাকবেন বলীখেলা দেখতে আসবেন। রিংয়ের নিচে দাঁড়িয়ে আমাদের উৎসাহ দিয়ে যাবেন।’

ছেলের কথা শুনে আবেগ খেলে যায় খাজা আহমেদ বলীর মনে। কাঁধের গামছাটা হাতে তুলে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘না খেললেও যতদিন বাঁচি এখানে, এই বলীর মাঠ লালদীঘি ময়দানে ছুটে আসব। এটা থেকে দূরে থাকতে পারব না।’

খাজা আহমেদ যখন কথা বলছিলেন দূরে কোথাও তখন মাইকে বাজছিল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই অমর গান। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অক্লান্ত গলায় গেয়ে চলেছেন, যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে...

;