বিপ্লবের মহানায়ক



প্রদীপ কুমার দত্ত
বিপ্লবের মহানায়ক

বিপ্লবের মহানায়ক

  • Font increase
  • Font Decrease

মহানায়ক শব্দটি বাঙালি মানসে ছবির জগতে অবিসংবাদিত শীর্ষস্থানীয় উত্তমকুমারকে মনে করিয়ে দেয়। তিনি ছিলেন রূপালী পর্দায় তুলনাহীন। আজও তা-ই আছেন। তবে আমরা আজ স্মরণ করছি দেশমাতৃকার সেবায় আত্মোৎসর্গ করা এক জনগণমন অধিনায়ককে। তিনি বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অত্যাচার ও নাগপাশ থেকে মুক্তির দিশারী, পরাধীনতার জিঞ্জির ছিন্ন করার উদাহরণ সৃষ্টিকারী, লাখো কোটি ভারত উপমহাদেশের তরুণ-তরুণীর জীবনে আদর্শের আলোকবর্তিকা, আমাদের চট্টগ্রামের বীর সন্তান মাস্টরদা সূর্য সেন।

আজ তার ফাঁসি দিবস। ১৯৩৪ এর ১২ জানুয়ারি ইংরেজ শাসকরা চট্টগ্রাম জেলখানার ফাঁসির মঞ্চে তার অত্মাচারে জর্জরিত মৃতপ্রায় নশ্বর দেহকে ঝুলিয়ে জীবনাবসান ঘটায়। একই সঙ্গে তার অন্যতম প্রধান সহযোগী বিপ্লবী নেতা তারকেশ্বর দস্তিদারকেও একইভাবে সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে প্রাণবিয়োগ ঘটায়। নিজের জীবন দিয়ে সূর্য সেন মৃত্যুঞ্জয় হয়ে গেলেন। সারা ভারতবর্ষে, বিশেষ করে বাংলায় মুক্তিকামী জনতার তিনি হয়ে উঠলেন চোখের মণি। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিকালে এবং যুদ্ধকালে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মন মানসে যেসকল বীর বিপ্লবী গভীর প্রভাব ফেলে তাদের অনুপ্রাণিত করতেন তাদের মধ্যে মাস্টারদা ছিলেন অন্যতম।

বণিকের মানদণ্ড রাজদণ্ডে পরিণত করে ছলে বলে কৌশলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শ’খানেক বছর ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের ঔপনিবেশিক ও ব্যবসায়িক নির্মম শোষণ চালায়। একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হয়েও তারা ব্রিটিশ রাজ সরকারের সনদ বলে বাণিজ্য করা, নিজস্ব সেনাবাহিনী গঠন করে বাণিজ্য সুরক্ষার স্বার্থে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া এবং দখলকৃত এলাকায় নিজ শাসন ও কর ব্যবস্থা চালু করে যেকোনও উপায় অবলম্বন করে সেই কর আদায় করাই ঔপনিবেশিক শাসনমূলক কাজে ব্যাপৃত হয়। শ’খানেক বছরের মধ্যে প্রায় সম্পূর্ণ ভারত উপমহাদেশে নিজ কর্তৃত্ব কায়েম করে তারা এদেশের অঢেল সম্পদ লুণ্ঠনে প্রবৃত্ত হয়। ফলশ্রুতিতে তাদের বিরুদ্ধে জন অসন্তোষ দানা বাঁধতে থাকে এবং ১৮৫৭ তে সিপাহী বিপ্লবের মাধ্যমে সেই অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

কোম্পানির সেনা এবং তাদের মিত্র কোনও কোনও দেশীয় করদ রাজ্যের তৎপরতারয় সেই বিদ্রোহ কায়ক্লেশে দমন করলেও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারল না। ব্রিটিশ রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত করা হলো ভারতবর্ষকে। তাতে আমাদের পিতৃপুরুষেরা সাম্রাজ্যবাদী ও তাদের সৃষ্ট স্থানীয় সামন্ততান্ত্রিক শাসন শোষণের বেড়াজালে দৃঢ়তর ভাবে আবদ্ধ হলেন। উচ্চশিক্ষিত, অর্থবান ও দেশপ্রেমিক ভারতীয়রা স্বদেশবাসীর অধিকার আদায়ের জন্য রাজনৈতিক দল গঠন করলেন। কিছু ব্রিটিশ সচেতন ব্যক্তিবর্গও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস গঠনে সাথে থাকলেন। কংগ্রেস ব্রিটিশ ভারতের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দাবিদাওয়া পেশ, দেন-দরবার এবং সময়ে সময়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন চালাতে লাগলো।

কংগ্রেস সৃষ্টির ২০ বছর পর প্রতিষ্ঠিত হলো দ্বিতীয় বৃহত্তম দল মুসলিম লীগ। ইতোমধ্যে দেশের তরুণ সমাজের এইসকল রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রতি মোহভঙ্গ ঘটল। তারা মনে করলেন শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে অত্যাচারী বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান অসম্ভব। শুরু হলো দেশমুক্তির নতুন অধ্যায় অগ্নিযুগ। এই ধারায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল বাংলা এবং পাঞ্জাবের যুবসমাজ। বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে অরবিন্দ ঘোষ, বারীন ঘোষ, হেমচন্দ্র, উধম সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ, আসসফাকুল্লা, রামপ্রসাদ বিসমিল, বীর সাভারকার প্রমুখের নেতৃত্বে দুঃসাহসিক সশস্ত্র আঘাত হানতে থাকেন এই বিপ্লবী দেশমাতৃকার সেবকরা। একটু একটু করে ভিত কেঁপে উঠতে থাকে ব্রিটিশ শাসকদের। সাথে সাথে বৃহত্তর পরিসরে রাজনৈতিক আন্দোলনও চলতে থাকে ঔপনিবেশিক শোষণমুক্ত স্বায়ত্তশাসনের জন্য। এর মাঝেই শুরু হয়ে যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।

এক পর্যায়ে ব্রিটিশ ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী ভারতীয় রাজনৈতিক নেতাদের আহ্বান জানান মহাযুদ্ধে তাদের মিত্র শক্তিকে সমর্থন জানানোর। বিনিময়ে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যুদ্ধ জয় শেষে তারা ভারতীয় উপমহাদেশকে স্বশাসনের দিকে নিয়ে যাবেন। ভারতীয়রা নিজেদের মুক্তির সংগ্রাম স্থগিত রেখে দলে দলে যুদ্ধে গেলো। যুদ্ধ জয়ের পর ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী তাদের প্রতিশ্রুতি বেমালুম ভুলে থাকল। হতাশাগ্রস্ত ভারতীয় নেতারা নতুন করে আন্দোলন সংগঠিত করতে শুরু করলেন। গান্ধীজীর নেতৃত্বে দেশ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনে ফুঁসে উঠল। মওলানা ভ্রাতৃদ্বয় মোহাম্মদ আলী ও শওকত আলী চালু করলেন খেলাফত আন্দোলন। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার মাধ্যমে এই দুই আন্দোলন পাশাপাশি চলে বৃটিশদের ঘুম হারাম করে দিল। কিন্তু চতুর সাম্রাজ্যবাদী শক্তি নানা উপায়ে বিপথে চালিত করে আন্দোলন দুটিকে দুর্বল করে আনতে লাগল। আবারও মোহমুক্তি ঘটল দেশের যুবসমাজের। তারা পুনরুজ্জীবিত করলেন পূর্বেকার সশস্ত্র সংগ্রামের ধারা।

এই সময়েই দেশের অন্যান্য জায়গার মত বিপ্লবের স্ফুলিঙ্গ জ্বলে উঠল চট্টগ্রামেও। আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ গোবেচারা স্কুলশিক্ষক যিনি চট্টগ্রামবাসীর কাছে মাস্টারদা নামে পরিচিত, সেই সূর্য কুমার সেন নেতৃত্বভার নিলেন অগ্নিযুগের একটি অধ্যায়ের বিপ্লবীদের। আসলে চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মাস্টারদা নিজেই তিল তিল করে গড়ে তুললেন এই কিশোর -যুবা মুক্তিকামী বাহিনী। নাম দিলেন তার ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি (চট্টগ্রাম শাখা)। মাস্টারদার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মায় যে কংগ্রেস, মুসলিম লীগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের গতানুগতিক আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশ শাসনের মূল উৎপাটন করা যাবে না।

সাম্রাজ্যবাদী শক্তির থেকে মুক্তির উপায় সশস্ত্র বিপ্লবী কর্মকাণ্ড। এই ব্যাপারে মহানায়ক অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন ১৯১৬ সালে সংঘটিত আইরিশ বিদ্রোহের ইতিহাস পড়ে।এই বিদ্রোহের আরেক নাম ইস্টার বিদ্রোহ। ১৯১৬ সালের ইস্টার সপ্তাহ চলাকালীন আইরিশ মুক্তিকামীরা জনগণকে সংগঠিত করে রাজধানী ডাবলিন ও আয়ারল্যান্ডের অন্যান্য শহরে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করেন। তাদের আদর্শ ও উদ্দেশ্য ছিল বৃটিশ রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করে প্রজাতন্ত্র কায়েম করা। বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে জন্ম নেওয়া প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রজাতান্ত্রিক দল সিন ফেইন (যেটি এখনও আয়ারল্যান্ডের অন্যতম উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দল) ও অন্য সকল ব্রিটিশ শাসনের নাগপাশ থেকে মুক্তি চাওয়া আইরিশ দল এই বিদ্রোহে অংশ নেয়। তারা সেইবার সফল না হলেও আয়ারল্যান্ড, ব্রিটিশ শাসনাধীন অন্য সব দেশ ও পৃথিবীর মুক্তিকামী সকল জাতির মধ্যে অনুপ্রেরণা ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়।

মাস্টারদা সশস্ত্র বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশের মুক্তির জন্য জীবনপণ সংগ্রামের পথে এগোতে উদগ্রীব তার বাহিনীকে প্রস্তুত করলেন চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের জন্য। তিনি নিজে এই বিপ্লবী সংগ্রামকে চট্টগ্রাম ইস্টার বিদ্রোহ নামেও অভিহিত করেছেন। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল ছিল ইস্টার সপ্তাহের গুড ফ্রাইডে। ঐ দিনকেই তিনি ধার্য করেন অভ্যুত্থানের তারিখ হিসেবে।

বিপ্লবী নেতার দলভুক্ত দেশমাতৃকার জন্য প্রাণপাতের শপথ নেওয়া তরুণদের মধ্য থেকে ৬৪ জনকে তিনি বেছে নিলেন সেই দিনের মহান কর্মকাণ্ডের জন্য। পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি দল ধুম স্টেশনের কাছে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অপর একটি দল টেলিগ্রাফ অফিস দখলে নিয়ে চট্টগ্রামের সাথে বহির্বিশ্বের টেলিযোগাযোগ ছিন্ন করে। আরেক দল দখলে নেয় অক্সিলারি ফোর্সের অস্ত্রাগার। ইস্টার উপলক্ষে ক্লাব বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম ক্লাব আক্রমণ শেষ মুহূর্তে স্থগিত করা হয়। মূল দল দখলে নেয় চট্টগ্রাম পুলিশ লাইন এবং এর অস্ত্রাগার। চট্টগ্রাম হয়ে গেল বৃটিশ শাসন থেকে মুক্ত।

যদিও সেটা সাময়িক। সর্বাধিনায়ক মাস্টারদাকে ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি (চট্টগ্রাম শাখা) মুক্ত এলাকার প্রধান হিসেবে গার্ড অব অনার প্রদান করে। ব্রিটিশ শাসনের প্রতিভু সকল ইংরেজরা প্রাণ বাঁচাতে কর্ণফুলী নদী ও নিকটবর্তী বঙ্গোপসাগরে নোঙর করা জাহাজে আশ্রয় নেয়। চট্টগ্রাম হয়ে যায় বৃটিশ শাসনের প্রভাবমুক্ত স্বাধীন এলাকা। মাস্টারদা জানতেন অচিরেই শক্তিশালী ব্রিটিশরা প্রবল আক্রমণ হানবে যা তার অতি ক্ষুদ্র সেনাদল নিয়ে মোকাবিলা সম্ভব হবে না। তিনি চেয়েছিলেন পরাধীন ভারতবর্ষের জনগণকে দেখাতে যে ইংরেজরা অপরাজেয় নয়। তারা যেন জেগে ওঠেন এবং সর্বশক্তি দিয়ে আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটান। মুক্তির সূর্য ছিনিয়ে আনেন।

পুলিশ লাইন দখলের পর যখন তার প্রাথমিক উদ্দেশ্য সফল হলো তখন মাস্টারদা তার ক্ষুদ্র কিন্তু নৈতিকভাবে বলীয়ান ও সদ্য বিজয়ী বাহিনীকে নিয়ে শহরের অদূরবর্তী জালালাবাদ পাহাড়ে অবস্থান নিলেন। তখন ১৯ এপ্রিল ভোর। তারা তাদের সীমিত শক্তি নিয়ে মানসিক প্রস্তুতি নিতে লাগলেন আসন্ন ভয়ংকর যুদ্ধের। জালালাবাদ পাহাড়ের গা ঘেঁসে চলে গেছে রেললাইন। ২১ তারিখে একটি ট্রেন এসে থামলো পাহাড়ের নিচে। সারি ধরে ট্রেন থেকে নামলো ইংরেজদের সেনাদল। যুদ্ধ আসন্ন। মাস্টারদা লোকনাথ বলকে নিয়োগ করলেন সেদিনের সেনাপ্রধান। নেতার পরামর্শ নিয়ে লোকনাথ নামলেন অসম যুদ্ধে। শত্রুদের সংখ্যা ও অস্ত্র অনেকগুণ বেশি ও উন্নততর। অপরদিকে বিপ্লবীদের ছিল পাহাড়ের ওপরে থাকার অবস্থানগত সুবিধা। হাতেগোনা কয়েকজন বিপ্লবী মরণপণ লড়ে গেলেন কয়েকশ' প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্রিটিশ সেনার বিরুদ্ধে। তাদের মন্ত্র লড়েঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। জালালাবাদ পাহাড় দখল করতে পারলো না ইংরেজ সেনাদল। বিফল মনোরথ হয়ে পশ্চাদপসরণ করে ট্রেনে উঠে ফিরে গেল তারা। সেদিনের যুদ্ধে জয়ী কিন্তু শ্রান্ত,ক্লান্ত ও বিপর্যস্ত মাস্টারদার বাহিনী একত্রিত হয়ে নিজেদের পক্ষে সেই যুদ্ধে বীর শহীদ ১২ জনকে সামরিক কায়দায় দিল শেষ বিদায়।মহানায়ক বুঝলেন যে পরবর্তী দিন আরও বেশি শক্তি নিয়ে পুনঃআক্রমণে আসবে শত্রুসেনারা। তাদের অস্ত্র ও রসদের কোনও সরবরাহ পাওয়ার সুযোগ নেই।

তিনি পরবর্তী নির্দেশনা দিলেন অনুগামীদের। তারা যেন রাতের মধ্যেই সহানুভূতিশীল এলাকাবাসীদের সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে যায় এবং গেরিলা পদ্ধতিতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জন যুদ্ধ চালিয়ে যায়। তারা তাই করলেন। ১৯৩৩ এর ফেব্রুয়ারিতে মাস্টারদা লোভী বিশ্বাসঘাতক এক মীরজাফর নেত্র সেনের কারণে আটক হওয়ার আগে পর্যন্ত বিভিন্ন বিপ্লবী কর্মকাণ্ড দিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ইংরেজদের রাতের ঘুম হারাম করে রাখেন বিপ্লবীরা। ১৯৩৩এ তিনি আটক হওয়ার পরও কয়েক বছর তার অনুগামীরা নিজেদের বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত রাখেন।

এদিকে শুরু হয় মাস্টারদা ও তারকেশ্বর দস্তিদারের প্রহসনমূলক বিচার। অবিশ্বাস্য দ্রুততায় মাত্র দশ মাসের মধ্যেই বিচার, আপিল ও হাইকোর্টের কার্যক্রম শেষ করে তাদের উভয়কেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। মৃত্যুর আগে প্রচন্ড অত্যাচারে তাদের মৃতপ্রায় করে আক্রোশ মেটায় বর্বর ব্রিটিশরা। ১২ জানুয়ারি তাদের মৃতপ্রায় দেহকে ফাঁসির মঞ্চে ঝুলিয়ে রায় বলবৎ করা হয়। জীবিত সূর্য সেনের চাইতে মৃত সূর্য সেনও ইংরেজদের কাছে কম ভয়ের পাত্র ছিলেন না। তাই সভ্য জগতের রীতিনীতির বরখেলাপ করে মাস্টারদা এবং তারকেশ্বর দস্তিদারের মরদেহ তাদের আত্মীয় ও নিকটজনদের কাছে হস্তান্তর না করে জাহাজে তুলে বঙ্গোপসাগরে নিয়ে ভারী ওজন মৃতদেহের সাথে বেঁধে ডুবিয়ে দেওয়া হয়।

১১ জানুয়ারি তার বিদায়ী বার্তায় মহানায়ক অনুগামীদের নির্দেশ দেন তারা যেন দেশমাতৃকার মুক্তির সেবায় আত্মোৎসর্গ করা পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যান। তিনি যেমন মৃত্যুর দোরগোড়ায় এসে তার অসমাপ্ত কাজ অনুগামীদের কাছে হস্তান্তর করে যাচ্ছেন, তেমনি তারাও যেন সফল না হওয়া পর্যন্ত এই ধারা অনুসরণ করেন।

তার দেশমাতৃকার মুক্তির সোপানতলে আত্মবলিদানের এই দিনে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। মাস্টারদা এবং চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ নিয়ে বহু নিবন্ধ ও বইপত্র লেখা হয়েছে। তার ও তার দলের কীর্তি গাঁথা সম্পর্কে তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ। অনেক প্রকাশনায় এই বিপ্লবী কর্মকাণ্ডকে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ বা ইস্টার বিদ্রোহ না বলে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন বলে উল্লেখ করা হয়। এটি একটি ঐতিহাসিক ভুল। লুণ্ঠন তস্করের কাজ। ইংরেজরা ঐ নামেই মহানায়ক সূর্য সেন ও তার সহযোগীদের নামে মামলা করেছিল। ইংরেজরাই আমাদের শোষণ ও লুণ্ঠন করে সম্পদের পাহাড় নিজেদের দেশে পাচার করেছে। আমাদের সম্পদে কেনা অস্ত্র দিয়ে আমাদের মেরেছে। তার কিয়দংশ বিপ্লবীরা দখলে নিয়েছেন। আমরা সেই কাজকে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন না বলে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল বলবো না কেন?

মাস্টারদার সম্মানে আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল এবং কিছু ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান নামকরণ করা হয়েছে। তার একটি আবক্ষমূর্তি চট্টগ্রাম জে এম সেন হল প্রাঙ্গণে স্থাপিত হয়েছে। সেটি অবশ্য করেছিলেন ১৯৭৪ এ তার কয়েকজন সহযোদ্ধা কলকাতা থেকে এসে। ভারতে বিভিন্ন জায়গায় তার নামে ভবন, স্ট্যাচু, মেট্রোরেল স্টেশন, রাস্তা, স্কোয়ার ইত্যাদির নামকরণ করা হয়েছে। আমাদের দেশেও এই মহানায়কের স্মরণে উল্লেখযোগ্য রাস্তা এবং প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা উচিত বলে আমরা মনে করি। এতে আমাদের এই গর্ব করার মত পূর্বসূরির প্রতি সম্মান জানানো যেমন হবে, তেমনি নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা যাবে। তাদের করা যাবে ইতিহাস সচেতন। বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটানোর সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া সিংহপুরুষ মাস্টারদা সূর্য সেন... লও লও লও সালাম।

   

হলুদ আভায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখী 



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: প্রাণের উচ্ছ্বাসে সূর্যমুখী

ছবি: প্রাণের উচ্ছ্বাসে সূর্যমুখী

  • Font increase
  • Font Decrease

মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে সূর্যমুখী। বাস্তব জীবনের নিস্তব্ধতা ভাঙছে তার হলুদ আভায়। মৌমাছির আলিঙ্গন পেতে ছড়াচ্ছে উষ্ণ মুগ্ধতা। হলুদের কারুকার্যে বিমোহিত হচ্ছে পথিকের মন। লুকায়িত সৌন্দর্য প্রকৃতির মাঝে তুলে ধরে প্রবল আকর্ষণে টানছে দর্শনার্থীদের। সবুজ পাতা ভেদ করা সেই অনিন্দ্য হাসি যেন কৃষকের মুখেরই প্রতিচ্ছবি। সূর্যমুখী ফুল চাষে জনপ্রিয়তা বাড়ছে কৃষকদের মাঝে।

সূর্যমুখী এক ধরনের একবর্ষী ফুলগাছ। সূর্যমুখী গাছ লম্বায় ৩ মিটার (৯ দশমিক ৮ ফুট) হয়ে থাকে। ফুলের ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়। এই ফুল দেখতে কিছুটা সূর্যের মতো এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এর এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। ফুলের বীজ হাঁস-মুরগির খাদ্যরূপে ও তেলের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

জানা যায়, বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের উৎস হিসেবে ১৯৭৫ সাল থেকে এ ফুলের চাষ শুরু হলেও কৃষকের মাঝে জনপ্রিয়তা পায় নি বহুদিন। পরে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। বর্তমানে রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, নাটোর জেলা, পাবনা, নওগাঁ, দিনাজপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল প্রভৃতি জেলাতে এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে।

সূর্যমুখীর বাঁধভাঙা হাসি আর প্রাণের উচ্ছ্বাস

সোমবার (১২ মে) সকালে সরেজমিনে নওগাঁ সদর উপজেলার মুক্তির মোড় কেন্দ্র শহীদ মিনারের পাশে দেখা যায়, সূর্যমুখী বাতাসে; দুলছে আলোর প্রতিফলনে পাপড়িগুলো যেন চকচকে হলুদ আভা ছড়াচ্ছে। মৌমাছি এক ফুল থেকে অন্যফুলে মধু আহরণে ছুটাছুটি করছে আর এসব দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে পথচারীরা। এছাড়াও নওগাঁর বেশ কিছু অঞ্চলে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী। একদিকে যেমন ফুলগুলো সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে তেমনি বীজ থেকে ভোজ্য তেল উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে সূর্যমুখীর বীজ। সূর্যমুখী গাছ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। 

প্রতিদিন ভোরে সূর্যমুখী বাগানের সকল গাছ অনেকটা পূর্বদিকে মুখ করে থাকে। যেদিকে সূর্য দেখা দেয় এবং ধীরে ধীরে ওপরে উঠতে থাকে। সূর্যের সাথে সাথে সূর্যমুখীগুলোও ধীরে ধীরে নিজেদের দিক পাল্টাতে থাকে। সূর্য যেদিকে যায় তারাও সেদিকে যায়। সবসময়ই এগুলো সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। সূর্য যখন পশ্চিম দিকে অস্ত যায় তারাও তখন পশ্চিম দিক বরাবর থাকে। অস্ত যাওয়ার পরে তারা রাতব্যাপী আবার উল্টো দিকে ঘুরে পূর্বমুখী হয়। এভাবে শুকিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের এই চক্র চলতেই থাকে।

সূর্যের সাথে সাথে নিজেদের দিকও পাল্টাতে থাকে সূর্যমুখী

তবে সবার মাঝে একটি প্রশ্ন অনেক সময় ঘুরপাক খায় যে সূর্যমুখী ফুল কেন সূর্যে দিক হয়ে থাকে! সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের একটি দল সূর্যমুখীর এই দিক পরিবর্তন সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যের রহস্য উন্মোচন করেছেন। তাদের গবেষণা থেকে বেরিয়ে আসে সূর্যমুখীরা তাদের নিজস্ব সার্কাডিয়ান চক্রে আবদ্ধ। এই চক্র সচল থাকার কারণে সূর্যমুখীরা সব সময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। গবেষকরা সায়েন্স জার্নালে তাদের গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশ করেছেন। সার্কাডিয়ান চক্র বা সার্কাডিয়ান ঘড়িকে অনেক সময় ‘দেহঘড়ি’ নামেও ডাকা হয়। মানুষের মাঝেও এই চক্র বিদ্যমান। যেমন প্রত্যেক মানুষেরই দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম চলে আসে।

পথচারী রায়হান বলেন, ফুল শুভ্রতার প্রতীক ও পবিত্র। ফুলকে যারা ভালোবাসে তাদের মনটাও সুন্দর। সূর্যমুখী ফুল সব ফুলের চেয়ে আলাদা কারন সূর্যের দিক মুখ করে বেশিরভাগ থাকে এ ফুল। বিশেষ করে দুপুর শুরু হলে সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে এ ফুল যা দেখতেও খুব সুন্দর লাগে তাছাড়া এ ফুলের বীজ থেকে তেল হয় যা অনেক স্বাস্থ্যকর।

ক্ষুদে শিক্ষার্থী আফরিন (১০) জানায়, আমি ফুল খুবই ভালোবাসি আর সূর্যমুখী ফুলগুলো হলুদ হবার কারনে আরো বেশি ভালো লাগে। নামটা যেমন সুন্দর তেমনি মুগ্ধতাও ছড়ায়। ফুলগুলো থেকে তেল হয় তাই কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না। আমরা দূর থেকে দেখেই শান্তি পাই।

সূর্যের সাথেই একাত্মতা সূর্যমুখীর

স্থানীয় বাসিন্দা আরেফিন তুহিন বলেন, স্বল্প পরিসরে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য যারা সূর্যমুখী ফুলের গাছ লাগিয়েছে তারা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ফুল মানেই সুন্দর সূর্যমুখীও এটিএ ব্যাতিক্রম নয়। মাঝে মাঝে যখন ফুলের দিকে চোখ যায় খুব ভালোলাগা কাজ করে। এ ফুল দেখতে যেমন সুন্দর এটির তেল ও খুব পুষ্টিকর।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে চলতি অর্থবছরে সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ হেক্টর ও অর্জন হয়েছে ৬৫ হেক্টর এবং মোট উৎপাদন হয়েছে ১০০ মেট্রিক টন। 

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বার্তা২৪.কমকে বলেন- সূর্যমুখী একদিকে যেমন শুভ্রতার প্রতীক আবার অন্যদিকে বীজ থেকে তেল উৎপাদন হয় আবার মধুও পাওয়া যায়। বাজারে যে ভৈজ্যতেল গুলো রয়েছে যেমন, সয়াবিন,সরিষা, পাম-ওয়েল ইত্যাদি এগুলোর চেয়েও অনেক বেশি পুষ্টিগুণ আছে সূর্যমুখীর তেলে যা স্বাস্থ্যকর এবং স্বাস্থ্যর জন্য খুবই উপকারী। আমরা বেশি বেশি উৎপাদনে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ দিয়ে থাকি।

;

ওই আকাশে লুকিয়ে আছে মা



সহিদুল আলম স্বপন, লেখক জেনেভা সুইজারল্যান্ড
ওই আকাশে লুকিয়ে আছে মা

ওই আকাশে লুকিয়ে আছে মা

  • Font increase
  • Font Decrease

তো ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকের কথা, তখন সুইস কোম্পনী ফাদসা এস এ তে চাকরী করি। হঠাৎ একদিন কোম্পানীর মালিক মশিউয়্যু মিশেল লাসের (বাংলায় জনাব মিশেল ল্যাসার) তার অফিসে ডেকে পাঠালেন।আমিতো ভয়ে দিশেহারা, ভাবলাম ফ্রেন্স ভাষা না জানার কারণে আমার মনে হয় এবার চাকরীটাই গেল। বলে রাখা ভালো, সুইজারল্যান্ডের চারটি সরকারী ভাষার(ফরাসী, সুইস জার্মান, ইতালীয়ান এবং রোমন্স - রোমান নয়)মাঝে জেনেভা ফরাসী ভাষাভাষী।নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে একটা ভ্যানিশিং ক্রিমের পাবলিসিটি ছিল-ম্যানোলা সিবোঁ ভ্যানিশিং ক্রিম নিয়ে এলো ফরাসী সৌরভ। পরে জেনেছি সিবোঁ ফরাসী শব্দ যার অর্থ খুব ভালো (হয়তো বাংলায় বুঝাতে চেয়েছেন সুগন্ধময়)-আর এটাই শুধু আমার ফরাসী ভাষার ভান্ডার।

যাই হোক, ভয়ে ভয়ে তাঁর খাস কামরায় হাজির হলাম।দেখি কামরায় সোফার এককোনে প্যাট্রিক(আমার সুইস সহকর্মী আমার চেয়ে বছর দুয়েক এর ছোট হবে)আর লরেতা মার্টিনি এইচ আর হেড বসে আছে। বুঝতে আর দেরী হলোনা, এখনি বস বলবেন ইউ আর ফায়ার এবং প্যাট্রিককে তোমার সব কাজগুলো বুঝিয়ে দাও।

কোথায় ফায়ার তা না বলে মশিউয়্যু লাসের বললেন মাই ডিয়ার, আগামী সপ্তাহে প্যাট্রিক আর আলম (আমি) তোমরা দুজনে রটারডাম যাচ্ছো ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং এর জন্য। আলম তুমি কাল ভোরে বার্ণ(সুইজারল্যান্ডের রাজধানী)যাবে নেদারল্যান্ডের ভিসা করাতে। লরেতা তোমাকে সব বুঝিয়ে দেবে। বলে রাখা ভালো তখনো আমি সুইস নাগরিক হয়ে উঠিনি, আর মশিউয়্যু মিশেল লাসের ই আমাকে সুইজারল্যান্ডে স্হায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছিলেন।

রটারডাম উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্র নেদারল্যান্ডসের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর( আমস্টারডামের পরেই)।এটি ইউরোপের বৃহত্তম ও বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর।নেদারল্যান্ডসের দক্ষিণ হল্যান্ড প্রদেশে, উত্তর সাগরের তীরে, রাইন নদীর মোহনায় অবস্থিত এই বন্দর শহরকে প্রায়শই "ইউরোপের প্রবেশদ্বার" নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে।

তো যেই কথা সেই কাজ, সমস্ত আনুষ্ঠিকতা শেষে সপ্তাহান্তে কেএলএম রয়্যাল ডাচ এয়ারলাইন্সে চেপে জেনেভা থেকে আমস্টারডামের শিফল বিমানবন্দরে এসে পৌঁছলাম। আমস্টারডাম শিফল বিমানবন্দর থেকে ট্রেনে রটারডাম সেন্ট্রাল ট্রেন ষ্টেশনে এসে নামলাম। সেখান থেকে টেক্সীকরে সরাসরি রটারডাম ম্যারিয়ট হোটেলে।রটারডাম স্কুল অফ ম্যানেজমেন্ট, ইরাসমাস ইউনিভার্সিটি (আরএসএম) ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় বিসনেস স্কুলগুলির মধ্যে একটি, এখানেই আমাদের কোর্স। বাংলাদেশ আর নেদারল্যান্ডসের মাঝে চার পাঁচ ঘন্টার পার্থক্য। প্রতিদিন বাবা -মা সাথে কথা হয়। বাবা আমার জ্ঞানের পাগল। ৬০ বছর বয়সে উনি তাঁর মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। কিন্তু বাবা মা দুজনের কেউ মানতে পারছিলেন না আমি বিদেশে থাকি। দেশে থাকতে মা এর আহাজারীতে বাবা বিভিন্ন কায়দায় বাংলাদেশ মিলিাটারী একাডেমী থেকে আমায় ছাড়িয়ে এনেছিলেন। রাতে ঘুমাতে যাবার আগের মা কে ফোন করে ঘুমাই। বরাবরের মতে ১৮ ই ফেব্রুয়ারি রাতে মার সাথে কথা বলছি, মা আমার প্রাইমেরীর গন্ডি পেরুনো কিন্তু শিক্ষার প্রতি তাঁর পরম শ্রদ্ধা। গান-নাটক সংস্কৃতির পাগল আমি। মা আমার প্রতিদিন ই জিজ্ঞেস করেন কেমন চলছে গান-বাজনা। অনেক গুলো নূতন গানের ক্যাসেট কিনে রেখেছেন তিনি, সুইজারল্যান্ডে ফিরলেই ডাকযোগে পাঠিয়ে দিবেন, আমার প্রিয় কুমিল্লার খদ্দরের হাউয়াই শার্টসহ। আরো কত কথা, শেষ হয়েও হয়না শেষ। মায়ের প্রতিটি কথায় সেকি এক অনুপ্রেরণা। আজ বাংলাদেশে শেষ রোজা। পরদিন ১৯ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার রোজার ঈদ।

পরদিন ক্লাস নেই, ভেবে রেখেছি সকালে ব্রেকফাস্ট না করে লম্বা একটা ঘুম দিয়ে ফ্রেস হয়ে তারপর সারাদিন ঘুরে বেড়াবো, দেখবো বিশ্বের সবচেয়ে উদ্ভাবনী বন্দর, রটারডাম চিড়িয়াখানা, রিমাস্টারড" ডিজিটাল আর্ট অডিওভিজ্যুয়াল, ইউরোমাস্ট টাওয়ার, কিউব হাউস ইত্যাদি আর রাতে যাবে বাইয়্যাবীচ ক্লাবে নাচতে।

হোটেল রুমের সাইড টেবিলে রাখা ফোনটা সাত সকালেই আজ চিৎকার করে কান্না করে চলেছে, ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং……। ফোনটা যেন পাগল হয়ে গেছে। বিরক্ত হয়েই মিনিট খানেক পর আঁধো বোজা চোখে ফোনটা কানের কাছে নিয়ে বললাম, হোয়াট দ্যা হেল প্যাট্রিক, লেট মি গেট সাম স্লিপ । ফোনের ঐ প্রান্ত থেকে ভেসে এলো ভাইয়া আমি ফরিদ(আমার ছোট বোন পান্নার বর), এক নি:শ্বাসে বলে চলছেন, ভাইয়া আমরা এই মাত্র কবরস্তান থেকে আসলাম, সব কিছুই ঠিক ছিল, দাফন- কাফন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে, কেঁদে আর কি করবেন, আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, এইযে আব্বার সাথে কথা বলেন, আম্মাতো কাউকে কষ্ট দেননি, আল্লাহর কাছে আম্মার রুহের মাগফিরাত কামনা করে নামাজ পড়ুন যেন উনাকে আল্লাহ জান্নাতে স্হান করে দেন।চোখের জলে বালিশ ভিজেঁ যাচ্ছে আমি আজো প্রতিনিয়ত গেয়ে চলছি - " সবাই বলে, "ওই আকাশে লুকিয়ে আছে" "খুঁজে দেখ, পাবে দূর নক্ষত্রমাঝে"রাতের তারা, আমায় কি তুই বলতে পারিস কোথায় আছে, কেমন আছে মা? ভোরের তারা, রাতের তারা, মা-কে জানিয়ে দিস অনেক কেঁদেছি আর কাঁদতে পারি না।

;

১২ মে: আন্তর্জাতিক মা দিবস, মায়েদের ত্যাগের স্বীকৃতির দিন



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মা পৃথিবীর সবচেয়ে মায়াবী শব্দ। এটি কেবল একটি ডাক নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজারও আবেগ, সুখ-দুঃখ, ব্যথা, আনন্দ, আকাঙ্ক্ষা, অভিযোগ- না জানি আরো কত কত অনুভূতি!

হাদিসে বলা আছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। সনাতন ধর্মের পুরাণে লিখিত রয়েছে- জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী অর্থাৎ মা এবং জন্মভূমি স্বর্গের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এমনকী অন্যান্য ধর্মগ্রন্থেও জন্মদাত্রী মায়ের প্রতি অশেষ ভক্তি, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সম্মান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷

অশেষ কষ্ট সহ্য করে আমাদের লালন-পালন করেন জন্মদাত্রী মা। তাদের কষ্ট উপলব্ধি করতে উদযাপন করা হয়, আন্তর্জাতিক মা দিবস। এই বিশেষ দিনে মা এবং মাতৃসমতুল্যদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। সারাবিশ্বের অনেক দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার উদযাপিত হয়, আন্তর্জাতিক মা দিবস। এই দিনটি ‘মাদারিং সানডে’ নামেও পরিচিত। এ বছর ১২ মে পড়েছে মা দিবস।

মা দিবসের আদি ইতিহাস
আন্তর্জাতিক মা দিবসের ইতিহাস বিষয়ে উইকিপিডিয়ায় লেখা হয়েছে, মা দিবস বা মাতৃ দিবস হলো একটি সম্মান প্রদর্শনের অনুষ্ঠান যা, মায়ের সম্মানে এবং মাতৃত্ব, মায়ের প্রতি ঋণ হিসেবে এবং সমাজে মায়েদের ভূমিকার জন্য উদযাপন করা হয়। বিশ্বের অনেক অঞ্চলে বিভিন্ন দিনে, সাধারণত মার্চ, এপ্রিল বা মে মাসে উদ্‌যাপন করা হয়।

বিশ্বের সবখানে মায়ের এবং মাতৃত্বের অনুষ্ঠান উদযাপন করতে দেখা যায়। এগুলির অনেকই প্রাচীন উৎসবের সাক্ষ্য। যেমন- সিবেল গ্রিক ধর্মানুষ্ঠান, হিলারিয়ার রোমান উৎসব, যা গ্রিকের সিবেল থেকে আসে অথবা সিবেল এবং হিলারিয়া থেকে আসা খ্রিস্টান ‘মাদারিং সানডে’ অনুষ্ঠানের মতোই।

একটি গোষ্ঠীর মতে, এই দিনটির সূত্রপাত প্রাচীন গ্রিসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে, যেখানে গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সিবেল-এর উদ্দেশে পালন করা হতো। এশিয়া মাইনরে মহাবিষুবের সময়ে এবং তারপর রোমে আইডিস অব মার্চ (১৫ মার্চ) থেকে ১৮ মার্চের মধ্যে এই উৎসবটি উদযাপন করা হতো।

প্রাচীন রোমানদের ম্যাত্রোনালিয়া নামে দেবী জুনোর প্রতি উৎসর্গিত আরো একটি ছুটির দিন ছিল। সেদিন মায়েদের উপহার দেওয়া হতো। মাদারিং সানডে-তে ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে অনেক দিন আগে থেকেই বহু আচারানুষ্ঠান ছিল, যেখানে মায়েদের এবং মাতৃত্বকে সম্মান জানানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট রোববারকে আলাদা করে রাখা হতো।

মাদারিং সানডের অনুষ্ঠান খ্রিস্টানদের অ্যাংগ্লিকানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পঞ্জিকার অঙ্গ। ক্যাথলিক পঞ্জিকা অনুযায়ী, এটিকে বলা হয়, ‘লেতারে সানডে’ যা লেন্টের সময়ে চতুর্থ রোববার পালন করা হতো ভার্জিন মেরি বা কুমারী মাতার ও প্রধান গির্জার সম্মানে।

প্রতি বছরের মে মাসের দ্বিতীয় রোববার পৃথিবীর সব মায়ের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি জানানোর দিন, গ্রাফিকস- সংগৃহীত

প্রথানুযায়ী, দিনটিতে প্রতীকী উপহার দেওয়া এবং কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রান্না আর ধোয়ামোছার মতো মেয়েদের কাজগুলো বাড়ির অন্য কেউ করার মাধ্যমে উদযাপন করা হতো।

জুলিয়া ওয়ার্ড হোই রচিত ‘মাদার্স ডে প্রোক্লেমেশন’ বা ‘মা দিবসের ঘোষণাপত্র’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস উদযাপনের গোড়ার দিকের চেষ্টাগুলির মধ্যে অন্যতম।

আমেরিকান গৃহযুদ্ধ ও ফ্রাঙ্কো-প্রুশীয় যুদ্ধের নৃশংসতার বিরুদ্ধে ১৮৭০ সালে রচিত ‘হোই’-এর মা দিবসের ঘোষণাপত্রটি ছিল একটি শান্তিকামী উদ্যোগ। রাজনৈতিক স্তরে সমাজকে গঠন করার ক্ষেত্রে নারীর একটি দায়িত্ব ও ভূমিকা আছে, হোই-এর এই নারীবাদী বিশ্বাস ঘোষণাপত্রটির মধ্যে নিহিত ছিল।

ঘোষণা
১৯১২ সালে আনা জার্ভিস ‘মাদার'স ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোশিয়েশন (আন্তর্জাতিক মা দিবস সমিতি) প্রতিষ্ঠা করেন।

জানা যায়, ভার্জিনিয়ায় অ্যান নামে একজন শান্তিবাদী সমাজকর্মী ছিলেন। অ্যান ছিলেন খুবই ধর্মপ্রাণ এবং নারী অধিকার নিয়ে কাজ করতেন। তিনি ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছোট ছোট ওয়ার্ক ক্লাব বানিয়ে সমাজের পিছিয়েপড়া নারীদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা চালাতেন। নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য তিনি উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিতেন।
অ্যানের একটি মেয়ে ছিল। তার নাম ছিল- আনা মারিয়া রিভস জার্ভিস।

একদিন ছোট মেয়ের সামনেই অ্যান হাত জোড় করে বলেছিলেন, আমি প্রার্থনা করি, একদিন কেউ না কেউ, কোনো মায়েদের জন্য একটা দিন উৎসর্গ করুক। কারণ, মায়েরা রোজ মনুষ্যত্বের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে চলেছেন। একটি দিন উৎসর্গ করা তাদের অধিকার।

মায়ের সেই প্রার্থনা হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যায় আনার। অ্যানের মৃত্যুর দিনটিকে সারাবিশ্বের প্রতিটি মায়ের উদ্দেশে উৎসর্গ করেন তিনি। তার পর থেকে মায়েদের প্রতি সম্মানে উদযাপিত হয়ে আসছে, আন্তর্জাতিক মা দিবস হিসেবে।

১৯১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে ‘মা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকে প্রতিবছরের মে মাসের দ্বিতীয় রোববার আন্তর্জাতিক মা দিবস উদযাপন করা হয়ে থাকে।

;

মা দিবস

ছেলে রাখে না সাথে, তবু মায়ের দোয়া ছেলের জন্যই



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,ফেনী
শাহেনা আক্তার, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ছবি: বার্তা২৪.কম

শাহেনা আক্তার, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ফেনী পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মী শাহেনা আক্তার। বয়স প্রায় ৫৫ বছর। অভাবের তাড়নায় গত ৩০ বছর ধরে তিনি সংসারে জন্য কাজ করছেন। এই বয়সেও প্রতিরাতে কাজ করে যান তিনি। স্বামী মারা যাওয়ার পরে একমাত্র সন্তানই অবলম্বন হওয়ার কথা থাকলেও ছেলে স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা থাকেন। পাশাপাশি দুই ঘরে বসবাস করলেও আলাদা রান্না করে খান মা-ছেলে। তবু ছেলের জন্য সব করছেন, এমনকি জায়গাও কিনে রেখেছেন। তার আশা একটাই, সন্তান যেন ভালো থাকে। বলছেন, আমি তাকে (ছেলেকে) বিরক্ত করি না। নিজের অদম্য ইচ্ছায় এখনও কাজ করে যাচ্ছেন এ সংগ্রামী 'মা'।

রোববার (১২ মে) আন্তর্জাতিক মা দিবস। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের উদযাপিত হচ্ছে দিবসটি। মা দিবসে বার্তা২৪.কমের সাথে আলাপকালে নিজের জীবনের আক্ষেপসহ একাকী জীবনের পথচলার নানা কথা জানান শাহেনা আক্তার।

প্রতিদিন রাত ১১টা বাজলেই কাজ শুরু হয়ে যায় শাহেনা আক্তারের। শহরের ট্রাংক রোড দোয়েল চত্বর থেকে জেল রোড অবধি রাস্তার দুই পাশ পরিষ্কারের কাজ করেন তিনি। তার একমাত্র ছেলে পৌরসভায় চাকরি করে। তবে বিয়ের পর থেকে মায়ের সাথে থাকে না। মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্বও নেয়নি ছেলে। স্বামীহারা এ নারীর আশা এখনো মারা যাওয়ার পর এক ছেলেই তার কবরে মাটি দেবে।

মা দিবসে কথা হয় শাহেনা আক্তারের সাথে। তুলে ধরেন তিনি জীবন-সংগ্রামের নানা গল্প।

নিজের জীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে এ মা বলেন, আমার পরিবারে আমার ছেলে আর ছেলের বউ আছে এবং তাদের ৩ সন্তান রয়েছে। আমার স্বামী ৭ বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ছেলের ভবিষ্যতের জন্য আমরা স্বামী-স্ত্রী দুইজন পৌরসভায় চাকুরি নিয়েছিলাম, আমি এখনও করছি। ছেলে বড় হওয়ার পর সেও কাজ করে। তবে এখন ছেলে আমাকে সাথে রাখে না। বিয়ের পর তার বউ রাখতে দেয় না। ছেলের বউয়ের ব্যবহার খারাপ, আমাকে সহ্য করে না। তাই আমি আলাদা থাকি। নিজে উপার্জন করে খাই।

নিজের জীবনে নানা প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, পৌরসভা থেকে আমি প্রতিমাসে ৪ হাজার টাকা পাই। দুইটা রোড এ আমি ময়লা পরিষ্কার করি। কাজ শেষ করতে কোনদিন বেশি সময় লাগে, কোনদিন কম লাগে। জেল রোড থেকে ট্রাংক রোড দোয়েল চত্বরের দুইপাশ আমি পরিষ্কার করি। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে। এরমধ্যে মেয়র সাহেব, দোকানদাররা আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করে। তা দিয়ে চলে যায়।


বৃদ্ধ বয়সে ছেলে পাশে না থাকার আক্ষেপ করে এ মা বলেন, আমার বাসা সহদেবপুর। আমার ঘরের পাশেই তার ঘর। মাঝেমধ্যে কথা হয়। নাতি-নাতনিরা কাছে আসে, আদর করি; ভালো লাগে। মনে আক্ষেপ থাকলেও তাদের জন্য দোয়া করি, তারা যাতে ভালো থাকে। আমার জন্য বিরক্ত যাতে না হয় সেটা আমি খেয়াল রাখি।

তিনি বলেন, খেয়ে সে বাঁচুক, আমি মারা গেলে মাটি দেবে, সে আশায় বসে আছি। বউ-ছেলে নিয়ে সে সুখে থাকুক এটাই আমার চাওয়া। আমি তার জন্য ৯ ডেসিমেল জায়গা নিয়ে রাখছি। আমি মারা গেলে সে এগুলো পাবে।

শাহেনা আক্তার বলেন, ছেলের বউয়ের কার্যকলাপে ছেলে অতিষ্ঠ হয়ে আমাকে আলাদা রাখছে। বউ আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতো। তার ৩ ছেলে আছে। তারা আসে আমার কাছে। তাদের নিয়ে সময় কেটে যায়। ছেলের খারাপ লাগে কিনা জানি না, তবে আমার খারাপ লাগলেও সেটা প্রকাশ করি না। গরিব ঘরের সন্তান হলেও আমার এখন সবকিছু আছে। কর্ম করে সব জোগাড় করেছি। শুধু ছেলে আমার পাশে নেই।

বৃদ্ধ বয়সে ছেলে পাশে নেই এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছেলে আমাকে দেখে না এটা খারাপ লাগে না যে তা না। সব মাই তো আশা করে সন্তান তার খেয়াল রাখবে। ভালোভাবে রাখবে। এখন আমার স্বামী নেই, একা মানুষ, আলাদা ঘরে থাকি। ছেলের সাথে থাকলে জীবনটা আরও সুন্দরভাবে যেতে পারত। এখন কী করব। কাজ করতে হয়। কাজ না করলে খাব কীভাবে। বুড়া বয়সে আমাকে খাওয়াবে কে?

তিনি বলেন, আমি কারও বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। আমি মারা গেলেও যাতে আমার ছেলে ভালো থাকে আমার দোয়া এটাই। আমাকে এখন ছেলে ফিরিয়ে নেবে, এ আশা আমি করি না। আমি নিজে কর্ম করে চলতে পারছি, এটাই আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া। আমি এখন কর্ম করতে পারছি, যখন আরও বয়স হয়ে যাবে তখন তো পারব না। এখন কিছু আয় উপার্জন করে রাখলে ভবিষ্যতে কাউকে বললেও অন্তত ভাত দুইটা আমাকে রান্না করে দেবে। তবে টাকা না থাকলে তো ভিক্ষা করে খেতে হবে। সেটা আমি চাই না।

সব ছেলের উদ্দেশে এই মা বলেন, আমার মতো এমন জীবন কারও না হোক। সকল মায়ের কাছে তার সন্তান থাকুক, এ দোয়া করি। সন্তানরা মায়ের খেয়াল রাখলে মায়ের আয় রোজগার করতেও শান্তি লাগে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়'র সভাপতি মঞ্জিলা আক্তার মিমি বলেন, অনেক মায়ের সন্ধান আমরা পাই যাদেরকে সন্তানরা দেখভাল করে না। বৃদ্ধবয়সে একজন মায়ের চাওয়া একটাই থাকে তার সন্তানরা তাকে ভালো রাখবে। হাসিখুশি ভাবে শেষ জীবনটা কাটাতে চায়। কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বহু মা সংগ্রামের জীবন পার করছেন, কেউ অভাবে কেউবা বাধ্য হয়ে। এসব মানুষগুলোর বিষয়ে সকল স্তরের মানুষদের চিন্তা করা উচিত, বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে কিংবা সমাজ ব্যবস্থায় মাকে রাখার বাধ্যতামূলক করে দেওয়া গেলে মায়েরা ভালো থাকবে।

শাহেনা আক্তারের মতো এমন জীবন সমাজে অনেক মায়ের রয়েছে। আন্তর্জাতিক মা দিবসে পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। সন্তানরা মায়ের যত্ন নিক, আদরে গড়ে তোলা সন্তান বিপথে না গিয়ে মায়ের সেবা যত্ন করুক, মাকে ভালোবেসে সম্মানে নিজের পাশেই রাখুক, এমনটাই প্রত্যাশা সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের।

;