আমাদের প্রজাপতি



অধ্যাপক ড. আ ন ম আমিনুর রহমান, পাখি ও বন্যপ্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ
মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে চাতুল (Monkey Puzzle) প্রজাপতি। ছবি- লেখক।

মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে চাতুল (Monkey Puzzle) প্রজাপতি। ছবি- লেখক।

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রজাপতির (Butterfly) মতো এতো সুন্দর পতঙ্গ এই ধরনীতে আর আছে কি? সম্ভবত নেই। কল্পনায় যত রঙ আঁকা যায়, তার সবগুলো রঙেরই প্রজাপতি থাকা সম্ভব। বাহারি কারুকাজযুক্ত রঙির ডানাওয়ালা পতঙ্গগুলোকে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ বাদে বিশ্বের প্রায় সবখানেই দেখা যায়। ছোট্ট বর্নিল নিরীহ পতঙ্গগুলোকে দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে। রঙিন এই পতঙ্গগুলো যখন নরম ডানায় ভর করে কারো পাশ দিয়ে ধীর গতিতে উড়ে যায় তখন মূগ্ধ দৃষ্টিতে না তাকিয়ে কি থাকা যায় না।

প্রজাপতি লেপিডপটেরা বর্গের সদস্য, গ্রীক ভাষায় যার অর্থ আঁশযুক্ত ডানাওয়ালা পতঙ্গ। প্রজাপতি ছাড়া এই বর্গে আরও রয়েছে মথ (Moth)। আর সেকারণেই মথ প্রজাপতির নিকটাত্মীয়। প্রজাপতির বিভিন্ন গোত্র বা পরিবারগুলোকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন- ১. সত্যিকারের প্রজাপতি (True Butterfly), ২. কাপ্তান (The Skipper) ও মথ-প্রজাপতি (Moth-Butterfly)। লেপিডপটেরার বাদবাকি পরিবারগুলোর সদস্যরাই হলো মথ। এ বর্গের ৮৯-৯৪%-ই মথ ও বাকি মাত্র ৬-১১% প্রজাপতি। প্রায় ২০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে ওদের উদ্ভব হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। বিশ্বব্যাপী ১৫-২০ হাজার প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৪৩০টি প্রজাতি তালিকাভুক্ত হলেও মোট প্রজাতি সংখ্যা পাঁচশ-এর বেশি হতে পারে। এদেশে বর্তমানে তিনটি প্রজাপতি পার্ক রয়েছে। প্রথমটি চট্রগ্রামের পতেঙ্গায়, দ্বিতীয়টি গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে ও তৃতীয়টি গাজীপুরের বাঘের বাজারে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্কের ভেতর।

পুরুষ চোরকাটা কমলা (Leopard Lacewing) প্রজাপতি। ছবি- লেখক

হাতির যেমন শুঁড় (proboscis) আছে প্রজাপতিরও তেমনি শুঁড় রয়েছে যা দিয়ে এরা ফুলের ভিতর থেকে নির্যাস বা রস (Nectar) বের করে আনে। পাপুয়া নিউ গিনির ‘রাণী আলেকজান্দ্রার বিহন’ বিশ্বের বৃহত্তম প্রজাপতি, যার প্রসারিত ডানা ২৫০ থেকে ২৮০ মিলিমিটার এবং উত্তর আমেরিকা ও আফ্রিকার ‘পশ্চিমা বামন নীল’ বিশ্বের ক্ষুদ্রতম প্রজাপতি (প্রসারিত ডানা ১০ মিলিমিটার)। ‘বেনুবিহন’ বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রজাপতি (প্রসারিত ডানা ১৪০ থেকে ১৯০ মিলিমিটার) ও ‘সলমা’ ক্ষুদ্রতম (প্রসারিত ডানা ২০ থেকে ২২ মিলিমিটার)। বিশ্বব্যাপী বহু সুন্দর সুন্দর প্রজাপতি ও মথ রয়েছে, যেমন- নীল প্রজাপতি, সচ্ছ প্রজাপতি, ৮৮ প্রজাপতি ইত্যাদি। এসব প্রজাপতি বা ওদের নিকটাত্বীয় কিছু প্রজাতি এদেশেও রয়েছে, যেমন- বেণুবিহন, শ্বেত ফড়িংলেজী, তিতিমৌরল, মরাপাতা ইত্যাদি। অন্যান্য সুন্দর প্রজাপতির মধ্যে রয়েছে গর্দাপেয়ারী, নিশি সিন্ধুপ, রতœচূড়, চোরকাটা কমলা, নীল শিখীপর্ণ, বিদুষক ইত্যাদি।

আমাদের প্রজাপতির মধ্যে সচরাচর যেগুলোকে দেশজুড়ে দেখা যায় তার মধ্যে উদয়াবল্লী, সাত ডোরা,  নীরদ সিন্ধু, মনমেঘা, কস্তুরী শার্দুল, নীল ডোরা, চোরকাটা কমলা, উষসী বায়স, নীল পুনম, অংশশুচপল, কমলা শিখীপর্ণ, ধূসর শিখীপর্ণ, বনবেদে, নাবিক, কৃষ্ণতরঙ্গ, গুণনকর বনপাল, কুম্ভীধনু, তৃণাঙ্গুরী, উষসী কপিল, ভোল ভ্রামরী, রাগ নকশী, হেমশুভ্র, চৈতালী দূত, তৃণ গোধুম, তৃণ বিদুষক, তিলাইয়া, কৃষ্ণতিলা, পঞ্চতিলা, তিন্নি, নীলবিজুড়ী, মলয় মশাল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। দুলর্ভ ও বিরল প্রজাতির মধ্যে রয়েছে বেণুবিহন, কেশবতী, কাজল, চন্দ্রাবল্লী, হলদে খঞ্জর, শ্বেত ফড়িংলেজী, তিতিমৌরল, নীল বায়স, বনমালী, নীল শিখীপর্ণ, পালিপার্বন, দেতাবকী, নিশি সিন্ধুপ, একাঙ্ক গোধুম, বান্দর, ময়ূরী রেণূ, পীতরতœ, চাতুল, নীল খয়ের, আকাশচারী, ভাটুরে বউল, শিখা বউল, জলদ আকাশি, ছিটকুল, সূর্যচঞ্চল, স্বর্ণছরা, ছাযাকরণ ইত্যাদি। মহাবিপন্ন ও বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় রয়েছে স্বর্ণবিহন, সিঁদুরী পদ্মরাগ, চুমকি, সুন্দরী বায়স, শ্বেত শার্দুল, চিত্রল বায়স, সুন্দরী বনদেবী, বনবেণু, রত্মচূড়, উদয়ধনু, রক্তডানা, কৃষ্ণ অধিরাজা, কৃষ্ণ যুবরাজ, তালডিঙি, পিপুলকাঠি, উর্মিমালা, কুল মুকুল, ভাঁড় ইত্যাদি।  

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাগ নকশী (Common Jezebel) প্রজাপতি। ছবি- লেখক। 

প্রজপাতি নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক সংস্কার বা কুসংস্কার রয়েছে। যেমন- কারো গায়ে প্রজাপতি বসাকে সৌভাগ্যের লক্ষণ বলে ধরে নেয়া হয়। এদেশে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক অবিবাহিত লোকের দেহে প্রজপাতি বসলে তার বিয়ের ফুল ফুটলো বলে ধরে নেয়া হয়। সাদা রঙের প্রজপতিকে কোথাও কোথাও সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করা হয়। এছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রজাপতি নিয়ে বহু পৌরাণিক কাহিনী বা কিংবদন্তী প্রচলিত আছে। প্রাচীন গ্রীক ভাষায় Psyche (সাইকি) অর্থ হলো প্রজাপতি। Psyche-এর শাব্দিক অর্থ Soul বা আত্মা অথবা Mind বা মন। গ্রীকরা বিশ্বাস করে যে, প্রাতিটি মথ প্রজাপতি থেকে বের হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আত্মার জন্ম হয়। প্রজাপতি নিয়ে জাপানী মিথ হলো- যার ঘরে প্রজাপতি প্রবেশ করে, সবচেয়ে পছন্দের ব্যাক্তিটি তাকে দেখতে আসে। দু’টি প্রজাপতি একসঙ্গে উড়াকে চীনারা ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে দেখে। ফিলিপিনোরা মনে করে, কোন ঘরে যদি কালো প্রজাপতি প্রবেশ করে বা এর মথ আনা হয় বা জন্ম হয়, তবে ঐ পরিবারের কেউ মারা গেছে বা শীঘ্রই মারা যাবে। প্রাচীন ইউরোপিয়রা মনে করতো মানুষের আত্মা নেয়া হয় প্রজাপতির রূপে, তাই তারা প্রজাপতিকে খুবই শ্রদ্ধা ও ভয়ের সাথে দেখতো। আইরিশরা মনে করে, মৃত ব্যক্তিদের আত্মা স্বর্গে প্রবেশের আগ পর্যন্ত প্রজাপতি হযে থাকে। মেক্সিকোর কোন কোন আদিবাসী বিশ্বাস করে যে, প্রজাপতি হলো পৃতিবীর উর্বরতার প্রতীক। মায়া আদিবাসীরা মনে করে, মৃত যোদ্ধাদের আত্মা প্রজাপতির রূপ নিয়ে পৃথিবীতে বিরাজ করে। আসামের নাগাস অঞ্চলের লোকেদের বিশ্বাস এই যে, আত্মা পৃথিবীতে এক রূপ থেকে অন্য রূপে রূপান্তরিত হচ্ছে। এর সর্বশেষ ধাপে প্রজাপতি হয়ে জন্মগ্রহণ করে। এই প্রজাপতির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে আত্মার রূপান্তরও শেষ হয়।

মৌলভীবাজারের আদমপুর বিটে ভাঁড় (Harlequin) প্রজাপতি। ছবি- লেখক।   

প্রজাপতি দিনের বেলায় ফুল থেকে ফুলে ওড়ে বেড়ায় ও ফুলের রস পান করে। ফুলের পরাগায়ণে অর্থাৎ গাছের বংশবিস্তারে এরা বেশ সাহায্য করে। এদের পঞ্চেন্দ্রিয় উন্নত ধরনের। পূর্ণবয়ষ্ক প্রজাপতির মাথায় একজোড়া প্রায় গোলাকার যৌগিক চোখ বা পুঞ্জাক্ষি (Compound Eye) থাকে যা দিয়ে এরা চারদিক দেখতে পারে। প্রজাপতি পুঞ্জাক্ষির সাহায্যে ভিন্ন ভিন্ন রঙ ও বস্তু শণাক্ত করতে পারে। এদের লম্বা দেহটি তিনভাগে বিভক্ত, যেমন মাথা, বুক ও উদর বা পেট। উদর লম্বা বেলুনাকার যা দশটি খন্ডে বিভক্ত। সাধারণত দেহ এবং ডানার উপর ও নিচের দিকের রঙ এবং কারুকাজে ভিন্নতা থাকে। মাথার দু’পাশে একটি করে অ্যান্টেনাও রয়েছে। চোখ বাদে পুরো দেহ ছোট ছোট রোম ও চ্যাপ্টা আঁশে আবৃত থাকে। এদের ডানা চারটি ও পা তিন জোড়া।

ঠাণ্ডা মৌসুমে প্রজাপতি উড়তে পারে না। এদের স্বাভাবিক কাজকর্ম বা ওড়াউড়ি করার জন্য পরিবেশের তাপমাত্রা ২৮-২৯- সেলসিয়াস থাকা বাঞ্ছনীয়। এরা শীতল রক্তসম্পন্ন প্রাণী, তাই দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এজন্য পরিবেশের তাপমাত্রা এদের দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পরিবেশের তাপমাত্রা যদি ১৩- ডিগ্রী সেলসিয়াসের কম থাকে তবে এরা নড়াচড়া করতে পারে না, এমনকি নিজেদের জন্য খাদ্য সংগ্রহেও যেতে পারে না। শীতে প্রজাপতিদের চলাফেরার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সূর্যের তাপের প্রয়োজন হয়। নতুন জন্ম নেয়া প্রজাপতি উড়তে পারে না। কারণ এদের পাখাগুলো দেহের সাথে লেগে থাকে। প্রজাপতির পুরো দেহ শুষ্ক হওয়ার জন্য কয়েক ঘন্টা সময় লাগে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাদামি শঙ্কু (Chestnut Angle) প্রজাপতি। ছবি- লেখক। 

প্রজাপতির জীবন চক্র চারটি পর্বে বিভক্ত। যথা- ১) ডিম, ২) শুককীট (বা শুঁয়াপোকা), ৩) মূককীট (বা কোকুন) ও ৩) পূর্ণাঙ্গ পতঙ্গ (বা ইমাগো)। এটিকে বলে সম্পূর্ণ রূপান্তর। প্রজাপতি ও মথের ধরনের উপর নির্ভর করে জীবন চক্রের দৈর্ঘ্য মাস থেকে বছরব্যাপী হতে পারে। জীবন চক্রের প্রথম পর্যায় হলো ডিম। ডিমের আকার ও আকৃতি ওদের ধরনের উপর নির্ভর করে। ডিম ছোট, গোলাকার, ডিম্বাকার বা নলাকার হয় ও কমবেশি সচ্ছ থাকে। স্ত্রী সচরাচর পছন্দনীয় উদ্ভিদ অর্থাৎ পোষক গাছের কচি পাতা, অঙ্কুর বা কাণ্ডে ডিম পাড়ে। বসন্ত ও গ্রীষ্ম ডিম পাড়ার উপযুক্ত মৌসুম, তবে অন্য সময়েও ডিম পাড়তে সক্ষম। স্ত্রী একসঙ্গে প্রচুর ডিম পাড়ে, তবে শেষ পর্যন্ত মাত্র কয়েকটি বেঁচে থাকে। জীবন চক্রের দ্বিতীয় পর্যায় হলো শুককীট। এটি দেখতে লম্বা পোকার মতো যার চোখ বয়ষ্কগুলোর মতো যৌগিক নয় বরং সরল। ডিম ফুটে বের হওয়ার পর প্রথমেই শুককীট ডিমের খোসাটি খেয়ে ফেলে। ওরা গাছের পাতা খেয়ে ও কয়েকবার (সচরাচর পাঁচবার) দেহের খোলস পাল্টে আকারে বড় হয় ও পরের ধাপে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। বেশিরভাগ শুককীটই গাছের ক্ষতি করে। অবশ্য কোনো কোনো প্রজাতি ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে কৃষকদের উপকারও করে। মূককীট হলো জীবন চক্রের তৃতীয় পর্যায়। এ পর্যায়ে শুককীট খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেহের চারিদিকে একটি খোলস সৃষ্টি করে এবং নিজেকে তার মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলে। শক্ত খোলসের ভিতরে এটি দ্রুত পরিবর্তিত বা রূপান্তরিত হয়ে মূককীটে পরিণত হয়। এই রূপান্তরে, শুককীটের কলা, অঙ্গ, প্রতঙ্গ ইত্যাদি পরিবর্তিত হয়ে প্রজাপতিতে পরিণত হয়। এক সপ্তাহ থেকে কয়েকমাস, এমনকি বছর পর্যন্ত এটি সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। জীবন চক্রের চতুর্থ বা চূড়ান্ত পর্যায় হলো প্রাপ্তবয়স্ক ধাপ বা ইমাগো। মূককীটের ভিতরে রূপান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর উপযুক্ত সময় ও পরিবেশে সুপ্তিকালশেষে একদিন খোলস কেটে বেরিয়ে আসে প্রজাপতি। এ সময় তার দু’ডানাই ভেঁজা, নরম ও দেহের সঙ্গে ভাঁজ হয়ে থাকে। ডানা পুরোপুরি শুকানোর পর সে ওড়াউড়ি শুরু করে।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে উতলকুট (Great Mormon) প্রজাপতি। ছবি- লেখক। 

যেহেতু প্রাপ্তবয়স্ক প্রজাপতির মূল কাজ হলো বংশবিস্তার করা তাই সে সঙ্গী খোঁজে, মিলিত হয়, ডিম পাড়ে ও বংশবিস্তার করে। এই পর্যায়ে কিছু প্রজাপতি ফুল থেকে নির্যাস পান করে। অন্যরা গাছের রস, মল, ভিজা মাটির রস, পচনশীল ও মৃত প্রাণীজ পদার্থ এবং অন্যান্য জৈব পদার্থ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। প্রজাপতি মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাঁচে, কারণ ওদের জীবকাল গড়ে ৩-৪ সপ্তাহ। তবে, পরিযায়ী প্রকৃতিরগুলো বছরখানেকও বাঁচতে পারে। প্রজাপতিরা সাতটি গোত্রে বিভক্ত। তবে এদেশে হেডিলিডি গোত্রের কোনো প্রজাপতি না থাকায় বাংলাদেশের প্রজাপতিগুলোকে ছয়টি গোত্রেই দেখানো হয়, যেমন- ১) প্যাপিলিওনিডি বা সোয়ালোলেজী প্রজাপতি (উদাহরন- উতলকূট, অভ্রকূট), ২) নিম্ফালিডি বা চারপেয়ে প্রজাপতি (চোরকাটা কমলা, কস্তুরী শার্দুল), ৩) পিয়েরিডি বা সাদা ও হলুদ প্রজাপতি (রাগ নকশী, শুদ্ধ হরিদ্রা), ৪) লাইকিনিডি বা নীল প্রজাপতি (জলদ আকাশী, চাতুল), ৫) রিওডিনিডি বা ধাতবচিহ্নযুক্ত প্রজাপতি (ভাঁড়, বিদুষক) ও হেস্পারিডি বা অধিনায়ক (বাদামি শঙ্কু, শিকনদেও) প্রজাপতি। কোনো কোনো পুরনো শ্রেণিবিন্যাসে কিছু অতিরিক্ত গোত্র, যেমন- ড্যানাইডি, হেলিকোনিডি, লিবিথিইডি, স্যাটিরিডি, অ্যাকারিইডি, অ্যামাসথুসিইডি ইত্যাদিকে স্বীকৃতি দিলেও আধুনিক শ্রেণিবিন্যাসে এগুলোকে নিম্ফালিডি গোত্রের অর্ন্তগত উপগোত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

প্রজাপতি দেখতে বেশ সুন্দর ও বর্নিল হলেও শুককীটগুলো অনেক ক্ষেত্রেই তেমন একটা সুন্দর হয় না। তাছাড়া এরা গাছের বেশ ক্ষতি করে। অবশ্য কোন কোন প্রজাতির শুককীট ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে কৃষকদের বেশ উপকারও করে। আবার শূককীট বা শুয়াপোকা অনেক পাখির কাছেই অত্যন্ত প্রিয় খাবার। কাজেই অনেক প্রজাতির পাখিও প্রজাপতির ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে। গাছের বৈচিত্র্য তৈরিতে প্রজাপতি ভূমিকা রাখে।

প্রকৃতির সুন্দর সৃষ্টিগুলোর মধ্যে ফুল, পাখি ও প্রজাপতি অন্যতম। সুন্দর এই প্রজাপতিগুলো দেখে আমরা মুগ্ধ হই। কিন্তু এদের প্রতি আমরা মোটেও সচেতন নই। আামদের দেশের শিশু-কিশোর এমনকি বড়রাও সঠিকভাবে প্রজাপতি চিনে না। এদের উপকারিতা সম্পর্কেও বিশেষ কিছু জানে না। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় উদ্ভিদ ও প্রাণী-পাখির মতো প্রজাপতিরও যে ভূমিকা রয়েছে তা অনেকেরই জানা নেই। প্রজাপতি পরিবেশের সুস্থতার নির্নায়ক। এদেশে বর্তমানে কয় প্রজাতির প্রজাপতি বিলুপ্তির দোড়গোড়ায় ও কয়টি ইতোমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে তার কোন সঠিক হিসাব নেই। কাজেই এ বিষয়ে জ্ঞানার্জন করা প্রয়োজন। তবে আমাদের প্রাকৃতিক গাছগুলোকে সংরক্ষণ করে প্রজাপতিকে রক্ষা করা সম্ভব। কেননা কিছু কিছু গাছ রয়েছে যার ওপর প্রজাপতিরা সরাসরি নির্ভরশীল। তবে কিছু কিছু প্রজাতি মারাত্মকভাবে হুমকীর সম্মূখীন রয়েছে। কাজেই এদের রক্ষা করার ব্যাপারে এখনই সচেতন না হলে এদেরকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা যাবে না।

কেশবতী (Common Batwing) প্রজাপতির পাশে লেখক

 E-mail:[email protected], [email protected]

   

এক ঘরেই তিন বলী



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

  • Font increase
  • Font Decrease

চুল থেকে দাড়ি-সবই সফেদ। হাঁটাচলায় মন্থর। স্বাভাবিকভাবেই প্রবীণের বয়সটা আঁচ করা যায় প্রথম দেখাতেই। কিন্তু তার ষাটোর্ধ্ব বয়সটা যেন কেবল ক্যালেন্ডারের হিসাব। বয়স যতই ছোবল বসানোর চেষ্টা করুক না কেন-তিনি যেন এখনো ২৫ এর টগবগে তরুণ। সেই বলেই তো ফুসফুসের রোগবালাইকে তুড়ি মেরে ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলা এলেই হাজির হয়ে যান রিংয়ে। এক দুবার নয়, এবার কিনা পূর্ণ হলো সুবর্ণজয়ন্তী!

চট্টগ্রামের অন্যতম আবেগের ঠিকানা ঐতিহাসিক এই বলীখেলার বড় বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠা এই বলীর নাম খাজা আহমদ বলী। ৫০ বছর ধরে বলীখেলায় অংশ নিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে যাওয়া এই বলীর এখন পড়ন্ত বয়স। ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে রোগ। কানেও শোনেন কম। খাজা আহমদ বুঝে গিয়েছেন, তার দিন ফুরাচ্ছে। কিন্তু তিনি যে বলীখেলার স্মৃতি থেকে সহজেই মুছে যেতে চান না। সেজন্যই উত্তরসূরী হিসেবে এরই মধ্যে গড়ে তুলেছেন নিজের দুই ছেলেকে। বাবার পাশাপাশি দুই ভাইও এখন বলীখেলার নিয়মিত প্রতিযোগী।

খাজা আহমেদ বলীর বাবাও বলীখেলায় অংশ নিতেন। বাবার সঙ্গে বলীখেলায় এসে ১৯৭৪ সালে শখের বসে খেলতে নামেন খাজা আহমেদও। বয়স তখন ১২ বছরের আশপাশে। সেই শুরু, আর কোনোদিন মিস করেননি বলীখেলায় অংশ নেওয়া। একবার চ্যাম্পিয়নের গৌরবও অর্জন করেছিলেন। বহু বছর ধরে খাজা আহমেদ বলী ও সত্তরোর্ধ্ব মফিজুর রহমানের ‘বলীযুদ্ধ’ জব্বারের বলীখেলার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে এই দ্বৈরথ হয়তো আর দেখা যাবে না। দুই বছর আগে উৎপত্তি হওয়া ফুসফুসের রোগটা ইদানিং যে খাজা আহমদকে বেশিই ভোগাচ্ছে। সেজন্য গতবছর অবসরের ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার দুই ছেলেকে নিয়ে বলীখেলায় এসে আবেগ সামলাতে পারেননি খাজা আহমেদ। ছেলেদের সঙ্গে নিজেও নেমে পড়েন রিংয়ে। সেজন্য আরও একবার মফিজুর রহমান-খাজা আহমেদের লড়াই দেখল হাজারো দর্শক। যদিওবা যৌথ বিজয়ী ঘোষণা করে দুজনের মুখেই হাসি ফুটিয়েছেন রেফারি।

প্রতিপক্ষ মফিজুর রহমানের সঙ্গে বলী-যুদ্ধে খাজা আহমদ

কেন অবসর ভাঙলেন এমন প্রশ্নে হাসি খেলা করে যায় খাজা আহমেদ বলীর মুখে। বলতে থাকেন, ‘বয়সের কারণে শরীর দস্ত। ফুসফুসও ঠিকঠাক কাজ করছে না। সেজন্য অবসর নিয়েছিলাম। কিন্তু বলীখেলায় আসার পর দেখলাম দর্শকেরা সবাই অনুরোধ করছেন। সেজন্য মন বলল, না খেললে দর্শকদের প্রতি অন্যায় হবে। আর আবেগ ও ভালোবাসার কাছে বয়স-রোগ পেরেছে কবে?’

তবে এখানেই সব শেষ, বলে দিয়েছেন খাজা আহমেদ বলী। বলেছেন, ‘বয়স হয়ে গেছে। মনে হয় না আর খেলতে পারব। অসুখটা বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে। সেজন্য মনে মনে মেনে নিয়েছি এটাই আমার শেষ অংশগ্রহণ। বাকিটা আল্লাহর হাতে।’

তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা খাজা আহমদের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায়। কৃষিকাজ করেই চলে সংসার। তবে বলীখেলা এলে সব কাজ বাধ। কয়েকদিন ধরে চলে প্রস্তুতি। নিজের স্মৃতি ধরে রাখতে এরই মধ্যে খাজা আহমেদ নিজের দুই ছেলেকে গড়ে তুলেছেন বলী হিসেবে। ২০১২ সাল থেকে বলীখেলায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন তার বড় ছেলে মো. সেলিম। গত বছর থেকে যোগ দিয়েছেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। এখন বলীখেলার আগে দুই ছেলেকে নিয়ে চলে খাজা আহমদের প্রস্তুতি।

জানতে চাইলে সেলিম বলেন, ‘বাবার কাছ থেকে আমরা বলীখেলা শিখেছি। বয়সের কারণে বাবা এখন অসুস্থ। হয়তো আর খেলা হবে না। সেজন্য তার উত্তরসূরী হিসেবে আমরা বলীখেলায় অংশ নেব সামনের দিনগুলোতে। এটা শুধু পরিবারের বলীর প্রজন্ম ধরে রাখার জন্য নয়, তরুণদের মাদক-সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগও।’

বাবাকে পাশে রেখে একই কথা বললেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। বলেন, ‘হয়তো বাবা আর খেলবেন না। তবে তিনি না খেললেও যতদিন বেঁচে থাকবেন বলীখেলা দেখতে আসবেন। রিংয়ের নিচে দাঁড়িয়ে আমাদের উৎসাহ দিয়ে যাবেন।’

ছেলের কথা শুনে আবেগ খেলে যায় খাজা আহমেদ বলীর মনে। কাঁধের গামছাটা হাতে তুলে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘না খেললেও যতদিন বাঁচি এখানে, এই বলীর মাঠ লালদীঘি ময়দানে ছুটে আসব। এটা থেকে দূরে থাকতে পারব না।’

খাজা আহমেদ যখন কথা বলছিলেন দূরে কোথাও তখন মাইকে বাজছিল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই অমর গান। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অক্লান্ত গলায় গেয়ে চলেছেন, যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে...

;

চাকরি ছেড়ে বসের সামনেই ঢোল বাজিয়ে নাচলেন যুবক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নিত্যদিনের অফিসের কর্মপরিবেশে অনেকের মধ্যেই 'বিরক্তি' চলে আসে। তবুও ধৈয্য নিয়ে সব সহ্য করে টিকে থাকার জন্য চালিয়ে যান লড়াই। তবে এ যাত্রায় সকলের দ্বারা টিকে থাকা সম্ভব হয় না। অফিসের 'বিষাক্ত' কর্মপরিবেশে অনেকেই ভোগেন মানসিক সমস্যায় কিংবা ব্যক্তিজীবনে। এমন পরিবেশ থেকে বাঁচতে একেক জন একেক পন্থা অবলম্বন করে থাকেন।

তবে অনিকেত নামের এক যুবক এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে যা করেছেন নেট দুনিয়ায় তা রীতিমতো ভাইরাল। এসব থেকে মুক্তি পেতে চাকরিটাই ছেড়ে দিয়েছেন এই যুবক। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি, বসের সামনেই ঢাকঢোল বাজিয়ে নেচে উদযাপন করেছেন এমন মুহূর্তের।

ঘটনাটি ভারতের পুনে রাজ্যের। অনিকেত নামের ওই যুবক বিক্রয় সহযোগী হিসেবে চাকরি করতেন।

তার এমন উদযাপনের একটি ভিডিও ইন্সটাগ্রাম শেয়ার করেছেন অনীশ ভগত।

ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, গত তিন বছর ধরে এই কোম্পানির সাথে কাজ করেও বেতন খুব একটা বাড়েনি। এছাড়াও অফিসের বসের দ্বারাও তাকে বিভিন্ন সময়ে অপমানিত হতে হয়েছে।

তাই তার কাজের শেষ দিনে বন্ধুরা অফিসের বাইরে ঢোল নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন এবং নেচেছিলেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, এ ঘটনায় তার বস অনেক উত্তেজিত হয়েছেন। পাশাপাশি তার বস লোকজনকে ধাক্কা দিয়েছেন এবং চিৎকারও করেছেন।

ভিডিওটির ক্যাপশনে ভগত লিখেছেন, আমি মনে করি আপনারা অনেকেই এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারবেন। আজকাল বিষাক্ত কাজের সংস্কৃতি খুব বেশি দেখা যায়। সম্মান এবং অধিকারের অভাব খুবই সাধারণ। অনিকেত তার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। আমি আশা করি এই গল্প মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।

পোস্ট করা ভিডিওটি এক মিলিয়নেরও (১০ লাখের বেশি) বেশি ভিউ পেয়েছে। পোস্টটিতে অসংখ্য লাইক ও কমেন্টও রয়েছে।

একজন ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি জানি না কেন এটি আমাকে এত সন্তুষ্ট করেছে।'

আরেকজন লিখেছেন, 'নাচটি আমাকে অন্য মাত্রার তৃপ্তি দিয়েছে।'

'আপনি সত্যিই আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ইতিবাচক এবং উত্সাহী ব্যক্তি'- তৃতীয় একজন ঠিক এভাবেই নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন।

তথ্যসূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস 

;

অভয়ারণ্যে মানুষ যখন বন্দিখাঁচায়



প্রমা কোয়েল, ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চিড়িয়াখানা, নানানরকম পশুপাখি ও প্রাণীর বন্দিশালা। কেবল রং-বেরঙের চিড়িয়াই নয়; বাঘ, সিংহ, ভালুক, বানর, গণ্ডারসহ কত বন্যপ্রাণীই না খাঁচায় বন্দি থাকে!

চিড়িয়াখানায় রাখতে বন্য প্রাণীদের প্রকৃতির স্বাধীন জীবন থেকে ছিনিয়ে আনা হয়। তাদের খাঁচায় বন্দি করা হয় যেন, মানুষ তাদের দেখে আনন্দ পায়। অনেক প্রাণীর জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি খাঁচাতেই কেটে যায়।

ছোট থেকে বড় সব বয়সের মানুষই চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন। শিশুরা না হয় অবুঝ! তবে যারা প্রাপ্তবয়স্ক তারাও চিড়িয়াখানায় এই বন্দি প্রাণীদের জীবনকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারেন না।

এশিয়ার বড় দেশ চীনে রয়েছে, এক অদ্ভুত চিড়িয়াখানা। চংকিংয়ে অবস্থিত সেই চিড়িয়াখানার নাম ‘লেহে লেদু বন্যপ্রাণী চিড়িয়াখানা’। একে ‘রিভার্স জু’ (বিপরীত চিড়িয়াখানা) বলেও ডাকা হয়।

এখানেও মানুষ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে পশু দেখতে আসেন। তবে একেবারেই ভিন্ন উপায়ে। মূলত, একটি খাঁচা রয়েছে, যেখানে মানুষদের সেই খাঁচায় পুরা হয়। তারপর সেই খাঁচাবন্দি মানুষদের নিয়ে রাখা হয়, অভয়ারণ্যে। সেখানে বন্য প্রাণীরা মানুষের খাঁচার চারপাশে অবাধে ঘুরতে থাকে। চিড়িয়াখানায় বন্দি প্রাণীদের বন্দিজীবনের এক প্রতীকী দৃশ্য!

অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের জন্য এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা!

অভয়ারণ্যে খাঁচায় বন্দি মানুষ, ছবি-সংগৃহীত

খুব কাছে থেকে হিংস্র বন্যপ্রাণীদের মুক্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যেমন লোমহর্ষক, ঠিক তেমনই আতঙ্কজনকও হতে পারে। বিপরীতধর্মী এই চিড়িয়াখানাটি সবার জন্য প্রথম উন্মুক্ত করা হয়, ২০১৫ সালে। তখন বিশ্বের সংবদমাধ্যমের শিরোনাম কেড়েছিল এ চিড়িয়াখানাটি।

একটি শক্ত লোহার খাঁচাবেষ্টিত দর্শনার্থীদের একটি ট্রাকে তুলে অভয়ারণ্যে রেখে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের ঘিরে ধরে ঘুরতে থাকে বাঘ, ভালুক, সিংহ ইত্যাদি হিংস্র প্রাণী।

এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার প্রধান চ্যান লিয়াং বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা রক্ষার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। খাঁচার ফাঁকা অংশ দিয়ে হাতের আঙুলও বের না করার নির্দেশনা দেওয়া থাকে।

তবে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই চিড়িয়াখানাটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে অনেক। এর নৈতিকতা নিয়ে অনেকে প্রশ্নও তুলেছেন।

অনেকে মনে করেন, এরকম ব্যবস্থাপনায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কারণ, শিকারী প্রাণীগুলো প্রচণ্ড হিংস্র। তাই, সে কারণে যে কোনো সময় বিপজ্জনক ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

আবার এরকম চিন্তাভাবনার প্রশংসাও করেছেন অপর একটি পক্ষ। তাদের বক্তব্য, পৃথিবীটা কেবল মানুষদের নয়। প্রকৃতিতে সব প্রাণীদের একটা ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। তাদের বন্দি করে রাখা মানুষের উচিত নয়। কারণ, মুক্ত প্রকৃতিতে বিরাজ করার অধিকার সব প্রাণীরই রয়েছে।

তাদের মন্তব্য, আমরা প্রাণীদের আবাসস্থল বনজঙ্গল সব উজাড় করেছি। সে কারণে তাপমাত্রাও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। আবার প্রাণীদের বন্দি রেখে তাদের জীবন চরম দুর্বিষহ করে তুলি।

চাইলে এবং সুযোগ পেলে এই ধরনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে চিড়িয়াখানাটি ঘুরে আসতে পারেন বৈকি!

তথ্যসূত্র: এনিমেল অ্যারাউন্ড দ্য গ্লোব

;

৫ বছরের শিশুর বিস্ময়কর প্রতিভা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বয়স সবে ৫ কিংবা ৬। এই বয়সেই তার প্রতিভা দেখে অবাক হবে যে-কেউ!

গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভিডিওটি ১ মিলিয়নের (১০ লাখের বেশি) বেশি মানুষ দেখেছেন। খবর এনডিটিভি। 

ভিডিওতে রিলি নামের ওই শিশুটিকে প্রথমে শ্বাস নিতে দেখা যায়। তারপর সে একটি শক্তিশালী গর্জন দিয়ে শ্বাস ছাড়ে। ওই গর্জনটি হুবুহ সিংহের গর্জনের অনুরূপ।

রিলির মা অ্যামি ভিডিওটি এক্সে শেয়ারের পরই তা ভাইরাল হয়ে যায়। শিশুটির এমন নিখুত দক্ষতা দেখে মুগ্ধ দর্শকরা। ভিডিওটিতে অনেকেই নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, এত অল্প বয়সে এমন বাস্তবসম্মত গর্জন তৈরি করার রিলির ক্ষমতার বিস্ময় প্রকাশ করে।

আরেকজন লিখেছেন, শিশুরা খুব দ্রুত শিখে। তার এমন প্রতিভা সত্যিই অবাক করার মতো।

;