নিউইয়র্কের দিনলিপি-৭



আমান-উদ-দৌলা
নিউইয়র্কের দিনলিপি-৭

নিউইয়র্কের দিনলিপি-৭

  • Font increase
  • Font Decrease

১. আমেরিকার সব মিডিয়াতেই দেখানো হচ্ছে বৃটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের খবরাখবর। তিনি ৯৬ বছর বেঁচে ছিলেন। ( জন্ম- ২১ এপ্রিল ১৯২৬- মৃত্যু- ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২)। রানী সারাজীবনে ১১৭টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। তার মধ্যে ৫৬টি কমনওয়েলথভুক্ত দেশ। তিনি বাংলাদেশে আসেন এরশাদের আমলে ১৯৮৩ সালের নভেম্বরে। এর আগে পূর্ব পাকিস্তানে আসেন ১৯৬১ সালে।

দ্বিতীয় এলিজাবেথ ৭০ বছর ধরে বৃটেনের রানী ছিলেন। তার ফিউনারেল অনুষ্ঠিত হবে ১৯ সেপ্টেম্বর।

২. আসছে ১১ সেপ্টেম্বর রোববার নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার ২১তম বার্ষিকী পালন হতে যাচ্ছে। ৯/১১ হিসেবে পরিচিত সেখানে নতুন করে টাওয়ার নির্মিত হয়েছে। সেদিন ৪টি যাত্রীবাহী বিমান আল কায়দার সদস্যরা হাইজ্যাক করে। নিউইউর্কে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে দুইটি বিমান হামলা চালিয়ে দুইটি টাওয়ার ধ্বংস করে দেয়। এতে সেখানে ১১ বাংলাদেশিসহ ৯৬ দেশের প্রায় ৩ হাজার লোক নিহত হয়। সেখানে নিহতদের স্বজনরা এক এক করে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের প্রিয়জনদের নাম উচ্চারণ করবেন।

পেন্টাগনে আর্মি হেডকোয়ার্টারেও একটি বিমান হামলা চালিয়েছিল সেদিন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পেন্টাগনের অনুষ্ঠানে থাকবেন।

৩. প্রাথমিক এক সেন্সাসে জানা গেছে, নিউইউর্ক সিটিতে ১৭ ভাগ এশিয়ান বাস করে। মোট সংখ্যা ১৫ লাখ। এর মধ্যে বাংলাদেশিরাও আছেন। এখানে চীনা, ভারতীয়, কোরিয়ান, জাপানি, ফিলিপিনো এবং ভিয়েতনামীদের সংখ্যা বাড়ছে। ৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক জরিপে বাংলাদেশি, নেপালি, শ্রীলংকান, তাইওয়ানি ও থাই অধিবাসীও ক্রমে বাড়ছে উল্লেখ করা হয়। সেন্সাসের পূর্ণাঙ্গ তথ্য আগামী বছর গ্রীষ্মে প্রকাশ করা হবে।

৪. গাড়ির জ্বালানি তেল বা গ্যাসের দাম নিউইয়র্কে কমতে শুরু করেছে। ৪ ডলারেব উপরে ছিল। এখন নেমে আসছে ৩ ডলারের কাছাকাছি। আরও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। বছরের শেষ নাগাদ ৩ ডলারের নীচে নামবে আশা করা হচ্ছে। অনেকেই জরুরি অবস্থা ছাড়া গাড়ি বের করছেন না। থ্যাংকগিভিংসের সময় কমে আসবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

৫. স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ মিশনে (২ সেপ্টেম্বর) বলেন, আমরা ই-ভিসা চালু করতে যাচ্ছি। প্রবাসীরা যাতে এনআইডি কার্ড পান তার পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে। খুব শিগগিরেই দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক হলে এই ই-ভিসা আমেরিকায় চালু করা যাবে।

৬. নিউইয়র্কে এখন ডলারের দাম ১১৬ টাকা। কিছুদিন আগেও ১০৩/৫ টাকায় ১ ইউএস ডলার মিলতো। জ্যাকসন হাইটসের সব বিনিময় কেন্দ্রগুলোতে ১১৬ টাকা রেট দেখানো হচ্ছে। অন্যান্য দেশেও তাই। গোটা বিশ্বে সব মুদ্রার মান ডলারের বিপরীতে কমেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতেও। বাংলাদেশেও তাই ঘটছে।

৭. ৪০০ কিমি নিউইয়র্ক সাবওয়ে লাইনের শতাধিক স্টেশনের প্রবেশমুখে টিকেট মেশিন আগামী বছর থেকে আর থাকছে না। আধুনিক 'টাচ-টু-পে'র মাধ্যমে ভাড়া পে করার ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। এখনকার মেশিনগুলো ১৯৯৯ সাল থেকে চালু আছে। সেগুলো উঠে যাবে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানায়।

৮. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েট ক্লাব ইউএসের উদ্যোগে ঢাবির শতবর্ষ উদযাপন হলো ৪ সেপ্টেম্বর। নিউইয়র্ক উডসাইডের গুলশান টেরেসে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৭৯, ৮০ থেকে ২০০৯ ব্যাচের গ্রাজুয়েটরা অংশ নেয়। গান বাজনা ছাড়াও বক্তব্য রাখেন অনেক সদস্য। বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। সকলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোর কথা স্মরণ করেন।

৯. আমেরিকায় মাইগ্রেট করার জন্য সবচেয়ে ভাল সময় বর্তমান সময়কে ধরা হচ্ছে। কেউ ভ্রমণ ভিসায় এসে ( বি-১, বি-২) কিংবা শিল্পীদের ভিসায় আসে ( পি-১,পি-২,পি-৩)। তারা কাজের ভিসায় (এইচ১বি) রুপান্তরে আগ্রহী। তাদের জন্য সময়টা ভাল। এদেশে প্রচুর কাজের লোকের সংকট চলছে। কংগ্রেসে এ বিষয়ে উভয় দলের সমর্থনে একটি বিল উঠেছে। শিগগিরই বিলটি আইনে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

(bbc, nytimes, cnn, wsj, apnews সহ সকল ওয়েবনিউজ ও স্থানীয় পত্রপত্রিকা থেকে বাছাই করা সংক্ষিপ্ত সংবাদ প্রতি ৭ দিনে বার্তা২৪-এর পাঠকদের জন্য 'নিউইয়র্কের দিনলিপি' পরিবেশন করা হচ্ছে।)


আমান-উদ-দৌলা, সিনিয়র সাংবাদিক। সাবেক সম্পাদক-বাংলা বিভাগ, রেডিও ফ্রি এশিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি ( ২০১৪-১৬)। সাবেক কূটনৈতিক রিপোর্টার-দৈনিক জনকন্ঠ ( ১৯৯৪-২০০০) One of the founders and First GS of DCAB in 1998. ( Diplomatic Correspondent Association, Bangladesh)

   

নগরে ফুলের জলসা, গ্রীষ্মের উত্তাপে সৌরভ, স্বস্তি 



মানসুরা চামেলী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
হাতিরঝিলে নাগরিক পর্যটকদের স্বাগত জানায় উচ্ছল জারুল, রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া ও সোনাইল/ছবি: নূর এ আলম

হাতিরঝিলে নাগরিক পর্যটকদের স্বাগত জানায় উচ্ছল জারুল, রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া ও সোনাইল/ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

চারিদিকে খাঁ খাঁ রোদ্দুর। যেন বইছে গনগনে আগুনের ফুলকি। চারপাশের পরিবেশ ফুটন্ত কড়াইয়ে মতো টগবগে। দাবদাহের তেজে ব্রহ্মতালু ফেটে যাওয়ার উপক্রম। তাপদগ্ধ চরাচর ক্লান্ত, স্তব্ধ, স্থবির। বৈশাখের রুদ্র রূপে বিপর্যস্ত নাগরিক পরিসর আর জনজীবন। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় উচ্চারিত গ্রীষ্মের প্রতিচ্ছবিই দেখা যাচ্ছে রাজধানীর প্রকৃতিতে: 'প্রখর তপনতাপে, আকাশ তৃষায় কাঁপে,/বায়ু করে হাহাকার।’

পরিস্থিতি যখন এমনই খরতাপে পোড়া ও তামাটে, ঠিক তখন একপশলা বৃষ্টির ছোঁয়া ঢাকা নগরীর পথে পথে জাগিয়েছে খণ্ড খণ্ড ফুলের জলসা। গ্রীষ্মের এই রংবাহারের উজ্জ্বলতা এবং সৌরভ; নাগরিক বিড়ম্বনা মুছে বুলিয়ে দিয়েছে অনিন্দ্য স্বস্তির পরশ।

সাদা গোলাপীর মিশলে সোনাইল—দূর থেকে মনে হয় পুষ্পিত পোস্টকার্ড/ছবি: নূর এ আলম


নগরের ইটপাথর, কংক্রিটের কংকালের মধ্যে তাপ ও দূষণের সাম্রাজ্যে নানা রঙের বর্ণিল ফুলের বৃন্ত ও পত্রালীতে খেলা করছে মুক্তি ও স্বাধীনতার আরাম। কৃষ্ণচূড়ার বুনো ঘ্রাণ, টগরের শুভ্রতা এবং সোনালুর স্নিগ্ধ সৌন্দর্য দাবদাহে পীড়িত রাজধানীতে বসিয়েছে ফুলের জলসা। নিয়ে এসেছে রঙের উল্লাস। গন্ধের মাদকতা। ভালোলাগার এক অনির্বচনীয় অনুভূতি।

উচ্ছল জারুল


গ্রীষ্মের তপ্ত রোদের মধ্যেই শুক্রবার ও শনিবার ছুটির জোড়া দিনে হাতিরঝিলের নাগরিক পর্যটকদের স্বাগত জানাল উচ্ছল জারুল, রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া, কনকচূড়া ও সাদা গোলাপীর মিশলে সোনাইল। খুব কাছ থেকে দেখলে মনে হাতিরঝিলে ‘সোনাইল ব্লসম উৎসব’ চলছে। আর দূর থেকে মনে হয় পুষ্পিত পোস্টকার্ড।

কৃষ্ণচূড়ার বুনো ঘ্রাণ, টগরের শুভ্রতা এবং সোনালুর স্নিগ্ধ সৌন্দর্য দাবদাহে পীড়িত রাজধানীতে বসিয়েছে ফুলের জলসা/ছবি: নূর এ আলম


হালকা বাতাসে সোনাইল দুলুনির সমান্তরালে গুঞ্জরিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে বহে কিবা মৃদু বায়' গানের শিহরণ জাগানিয়া আবেশ। হাতিরঝিলের পথে পথে হেঁটে ক্লান্ত হলে ছায়া দিতেও প্রকৃতি তৈরি হয়ে আছে। ফুলে ভরা মেঘশিরীষ গাছ প্রসারিত শাখা ও পল্লবে কাছে টানছে পথিকের মনোযোগ। এখানে জারুলের এমন অপূ্ব রূপ— চলতি পথে গাড়ি থামিয়ে, হাঁটতে হাঁটতে থমকে গিয়ে ক্যামেরাবন্দী করছেন নগরীর মানুষ।

নানা রঙের বর্ণিল ফুলের বৃন্ত ও পত্রালীতে খেলা করছে মুক্তি ও স্বাধীনতার আরাম/ছবি: নূর এ আলম


‘কি বলব- এত গরম, সহ্য করার মতো না। আমার বাসা মধুবাগে। প্রায় হাতিরঝিলে বাতাস খেতে আসি। এত ভালো লাগে বোঝাতে পারব না। তার সঙ্গে বাহারি ফুল তো রয়েছেই। অনেক ফুল চিনি না— কিন্তু ব্যাপারটা অসাম’, বলছিলেন হাতিরঝিলের বেঞ্চ বসা ইরাব নামের এক টগবগে যুবক। এখানকার প্রকৃতি যেন অগোচরে ইরাবের মতো অনেক তরুণ-যুবককে প্রকৃতিপ্রেমী ও ভাবুক বানিয়ে দিয়েছে।

গ্রীষ্মের এই রূপ শুধু ঢাকার পর্যটন-হটস্পট হাতিরঝিলে নয়, প্রাচীন ও রমনীয় রমনা পার্ক, কলোনিয়াল আরবান নস্টালজিয়া মিন্টো রোড, আধুনিক এয়ারপোর্ট রোড, কুড়িল, স্থাপত্যকলার নান্দনিক সংসদ ভবন এলাকা ও ক্রিসেন্ট লেকসহ যেদিকে চোখ যায়- শুধু চোখে পড়ে ফুলের হাসি, রঙের খেলা। ইন্দ্রিয় স্পন্দিত হয় উদ্ভিদজাত গন্ধে ও সৌরভে।

কুড়িলে কৃষ্ণচূড়ার উচ্ছ্বাস/ছবি: নূর এ আলম


নগরীর সর্বাধুনিক সংযোজন মেট্রোরেলে বা এক্সপ্রেস ওয়ে থেকে বিস্তৃত রাজধানীর দিকে তাকালে সুবিশাল দালান-কোঠা আর সবুজের ফাঁকে মাথা চাড়া দিচ্ছে জারুল, কৃষ্ণচূড়া ও গ্রীষ্মকালীন গাছপালার উচ্ছ্বাস। কোথাও কোথাও ছাদবাগানের বিভা। ফুলে ফুলে রঙিন এসব দৃশ্য প্রাচ্যের রোমান্টিক নগরী ঢাকার প্রাচীন স্মৃতি মনে দোলা দেয়। ক্ষণিকের জন্য বর্ণিল ফুলে ছাওয়া এক অন্য ঢাকা হৃদয়ের অলিন্দে জায়গা করে নেয় সুভাষিত আবাহনে।

সবুজ পাতা ছাপিয়ে সোনালি রঙের ফুলে সেজেছে সোনালু গাছ/ছবি: নূর এ আলম


সংসদ ভবন এলাকা ও ক্রিসেন্ট লেকে গেলে তো মনে হবে সুনীল আকাশের পানে চেয়ে কৃষ্ণচূড়া বলছে- ‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-/আমি ভুবন ভোলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’। এখানে চোখে পড়ে লেকের দু’ধারে কৃষ্ণচূড়ার সুদৃশ্য বীথি-  ‘ডাক দিয়ে যায় পথের ধারের কৃষ্ণচূড়ায়।’ বাতাসে কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি ঝরে রঙিন হয়ে ওঠা চলার পথ।

চন্দ্রিমা উদ্যান; গাছের পাতার সবুজ রঙ আজ যেন আরও গাঢ় হয়েছে


এমন মনোরম প্রকৃতিতে ক্রিসেন্ট লেকে গরম নিবারণে নেমে পড়েছে একদল ডানপিটে কিশোর। যারা কৈশারকাল উদযাপনে মেতেছে। 

পাশেই চন্দ্রিমা উদ্যান; গাছের পাতার সবুজ রঙ আজ যেন আরও গাঢ় হয়েছে। গত রাতে ঝরেছে বহু প্রতীক্ষার বৃষ্টি। দীর্ঘ তাপদাহে পোড়ার পর বৃষ্টির পরশ পেয়ে গাছগুলো যেন- প্রাণ পেয়েছে। চড়া রোদে স্নিগ্ধ হয়ে দেখাচ্ছে সবুজ পাতা। নেতিয়ে পড়া ফুল আড়মোড়া ভেঙে সুভাষ ছড়াচ্ছে। প্রাণবন্ত সবুজ পাতার ফাঁক গলে উঁকি দিচ্ছে হরেক রঙ ও রূপের ফুল।

কংক্রিটের নগরীতে কৃষ্ণচূড়ার স্পর্শ/ছবি: নূর এ আলম


‘শোনো বন্ধু শোনো,/ প্রাণহীন এই শহরের ইতিকথা/ ইটের পাঁজরে, লোহার কাটায়/দারুণ মর্মব্যথা।/এখানে আকাশ নেই,/এখানে বাতাস নেই,/ এখানে অন্ধ গলির নরকে/মুক্তির আকুলতা।/জীবনের ফুল মুকুলেই ঝরে...।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তার গানে নগরীকে তুলনা করেছেন ইটপাথরের প্রাণহীন গলি হিসেবে। যেখানে ব্যস্ততার ফাঁকে লুকিয়ে থাকে নানা কষ্ট। তবে এমন প্রাণহীন নগরীতে প্রশান্তির গান ধরেছে আগুন ঝরা কৃষ্ণচূড়া, সোনালু আর জারুল। সঙ্গে অফুরান শোভা ছড়িয়েছে ডুলি চাপা, বরুণ, নাগলিঙ্গম, মাধবীলতা ও কাঠগোলাপ। গরমে ওষ্ঠাগত জীবনে ঢাকার প্রকৃতির রূপ-রস মনে শান্তির সু-বাতাস বইয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে নগরীর ফুলের নৈসর্গিকতা উপভোগ করার সবচেয়ে ভালো সময় ছুটির দিন।

হাতিরঝিলের পথে দেখা মেলে কাঠগোলাপের


‘উষ্ণ তাপমাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবুজ ও মনোরম পরিবেশ তৈরির দিকে জোর দেওয়া প্রয়োজন’ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীমউদ্দিন।

তিনি বলেন, ঢাকার প্রকৃতিকে মনোমুগ্ধকর করতে দেশি ফুলের গাছ দিয়ে সাজালে আরো ভালো হত। পরিকল্পিতভাবে ১০টি প্রধান অ্যাভিনিউকে ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো যেতে পারে। তাহলে শোভা বর্ধনের পাশাপাশি মানুষকে প্রশান্তি দিত- এই নগর।

সোনালুর ছায়া মাখানো পথ/ছবি: নূর এ আলম


মাঝে মাঝে এই ঢাকা, একদিন স্বপ্নের দিন হয়ে, ফুলের জলসার মুগ্ধতা দগ্ধ নাগরিক জীবনের সকল গ্লানি মুছে দিয়ে যায়।  

;

হারিয়ে যাওয়া বিয়ের আংটি খুঁজে পেলেন ৫৪ বছর পর!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

৫৪ বছর পর হারিয়ে যাওয়া বিয়ের আংটি খুঁজে পেয়েছেন ম্যারিলিন বার্চ (৭৬)। তিনি যুক্তরাজ্যের ওয়েলসের পন্টারডাউইর বাসিন্দা।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

ম্যারিলিন বার্চ স্কাই নিউজকে বলেন, এতো বছর পর আংটিটি খুঁজে পাওয়া সত্যিই অবাক করা বিষয়। ১৯৭০ সালে পারিবারিক খামারে গরুকে খড় খাওয়ানোর সময় আংটিটি হারিয়ে গিয়েছিল। পরে অনেক খোঁজার পরও না পেয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। ভেবে নিয়েছিলাম এটা আর কখনো পাবো না।

তবে শনাক্তবিদ কিথ ফিলিপসের মনে ছিল অন্য কিছু। তিনি খামারের লোকজনকে বিভিন্ন সময় সেখানকার ভূমি খননের পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। তাঁর হিসাবে, সেখানে মাটির নিচে অনেক মূল্যবান জিনিস থাকতে পারে।

সেখান থেকে পাওয়া বিভিন্ন মুদ্রা এবং বিটের টুকরা আমাদের দেখাতেন। কিন্তু আংটিটির খোঁজ মেলেনি। 

ম্যারিলিন বলেন, ‘এক সন্ধ্যায় ফিলিপস যখন খামার ত্যাগ করছিলেন, আমি তাঁকে ঠাট্টাচ্ছলে বলি, ফিলিপস শোনো, যেসব আবর্জনা তুমি উদ্ধার করেছ এসব ফেলো। যাও, আমার বিয়ের আংটিটি খুঁজে বের করতে পার কি না, দেখো।’

এ কথা শোনার পর তারা দুজনেই তখন হেসেছিল। তবে এক সপ্তাহ বা তারও কিছু সময় পরে ফিলিপস ম্যারিলিনের আংটিটি নিয়ে হাজির হন।

ম্যারিলিন বলেন, আংটিটিকে খামারের মাঠে মাটির প্রায় ৮ ইঞ্চি নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে সেটিকে তিনি ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করেছেন এবং তখন থেকেই তিনি এটিকে আঙ্গুল দিয়ে রেখেছেন।

মিসেস বার্চের স্বামী পিটার বার্চ গত জানুয়ারিতে ৮০ বছরে পা দিয়েছেন। সে উপলক্ষে অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। কিন্তু এমন ঘটনার পর সব আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে। এখন সবকিছু এই আংটিটি ঘিরেই হচ্ছে।

;

সাংবাদিকের ফেসবুকে পোস্ট: মিললো আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর, ইজিবাইক



রাকিবুল ইসলাম রাকিব, বার্তা২৪.কম, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) করেসপন্ডেন্ট
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

৭৭ বছরের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানের স্ট্রোক হয়েছে একাধিকবার। এই বয়সে যখন তার বিছানায় শুয়ে-বসে বিশ্রাম করার কথা, তখন তাকে একটি রিকশার প্যাডেল মেরে অবিরাম ছুটে চলতে হয় ঢাকার রাস্তা-ঘাটে।

দিন শেষে যা আয় হয়, তার একটা অংশ নিজের জন্য রেখে, বাকিটা পাঠাতেন গ্রামে থাকা বৃদ্ধ স্ত্রীর কাছে। জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় এসে এভাবেই চলছিল তার দিনকাল।

হাবিবুরের ইচ্ছে ছিল, শেষ বয়সের সময়টা তিনি শহর ছেড়ে গ্রামে থাকা স্ত্রীর সঙ্গে কাটাবেন। কিন্ত সেখানে থাকার মতো ঘর ও জীবিকার নিশ্চয়তা না থাকায় বাধ্য হয়েই ঢাকায় রিকশা চালাতে হতো তাকে।

হাবিবুরের দুরবস্থার খবর জানার পর সে বিষয়ে ঢাকায় কর্মরত সাংবাদিক জ. ই. মামুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন।

সে পোস্টটি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেনের দৃষ্টিগোচর হয়। এরপর তার উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর উপহারের সুখবর পান হাবিবুর। পাশাপাশি হাবিবুরের কর্মসংস্থানের জন্য ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী তাকে একটি ইজিবাইক উপহার দেন।

এতে করে গ্রামের ফেরার ইচ্ছা ও গ্রামেই কর্মসংস্থানের সুযোগ মিলেছে এই অসহায় বৃদ্ধের।

হাবিবুর রহমানের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের সহনাটি ইউনিয়নে সোনাকান্দি গ্রামে।

বৃহস্পতিবার (২ মে) বিকেলে গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাকিল আহমেদ উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে জেলা প্রশাসকের দেওয়া উপহারের ইজিবাইকের চাবি হাবিবুর রহমানের হাতে তুলে দেন। পাশাপাশি সোনাকান্দি গ্রামে এই বৃদ্ধের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, বাবার মৃত্যুর পর জীবিকার তাগিদে ১৯৬৯ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করেন হাবিবুর রহমান। সংসারে তার স্ত্রী ও চার মেয়ে রয়েছে। মেয়েদের সবাই গরিব ঘরে বিয়ে হওয়ায় বাবাকে দেখার সামর্থ্য নেই তাদের। স্ত্রী থাকেন গ্রামের বাড়িতে। সেখানে মাত্র আধা শতাংশ ভিটে ছাড়া আর কিছু নেই হাবিবুর রহমানের। সে কারণে বাধ্য হয়েই ঢাকায় রিকশা চালাতেন তিনি। ঢাকায় মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় রাত্রিযাপন করতেন রাস্তায় রাস্তায়।

এদিকে, রিকশাচালক হাবিবুর রহমানের দুরবস্থা নিয়ে গত ২৫ এপ্রিল সাংবাদিক জ.ই. মামুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। পোস্টটি নজরে আসে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেনের। এরপরই নির্দেশনা আসে হাবিবুরকে তার এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার।

ওপর থেকে নির্দেশনা আসার পর গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাকিল আহমেদ সোনাকান্দি গ্রামে গিয়ে হাবিবুর রহমানের বাড়ি পরিদর্শনে করে দেখেন, তার মাত্র আধা শতাংশ জমি রয়েছে। এটুকু জমিতে ঘর নির্মাণ করা সম্ভব না হওয়ায় বিপত্তি বাধে। এ সময় হাবিবুর রহমানের জমির পাশেই দুই শতাংশ জমি দানের ঘোষণা দেন সহনাটি ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. দুলাল আহমেদ। ইতোমধ্যে, জমির দলিল সম্পাদন হয়ে গেছে। শিগগিরই ঘরের নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

হাবিবুর রহমান বলেন, সারাজীবন কষ্ট করেছি। আধা শতাংশ ভিটে ছাড়া নিজের আর কিছুই ছিল না আমার। সাংবাদিক মামুন ভাইয়ের লেখালেখির কল্যাণে এখন বাড়ি ও একটি ইজিবাইক হয়েছে। এখন স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আমার দিন ‘রাজার হালে’ কাটবে। আমি অনেক আনন্দিত ও খুশি। সেইসঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাসহ যারা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাকিল আহমেদ বলেন, বৃদ্ধ বয়সে হাবিবুর রহমানের রিকশা চালানো নিয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক জ.ই. মামুনের একটি পোস্ট প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মহোদয়ের দৃষ্টিগোচর হয়। তার প্রেক্ষাপটে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে হাবিবুরকে নিজ গ্রামে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তার কর্মসংস্থানের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয় একটি ইজিবাইক উপহার দিয়েছেন। এছাড়াও হাবিবুর ও তার স্ত্রীকে বয়স্ক ভাতা দেওয়ারও উদ্যোগ নে্ওয়া হয়েছে।

 

;

টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম: রসে সেরা, স্বাদে সেরা!



আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, টাঙ্গাইল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

চমচমের কথা শুনলে কার না জিভে জল আসে! তারপরে যদি হয় সেই টাঙ্গাইলের চমচম! তাহলে তো কথাই নেই! ছোট-বড় সব বয়েসি মানুষের পছন্দের তালিকায় থাকে- টাঙ্গাইলের চমচম।

কথায় আছে, ‘চমচম, টমটম ও শাড়ি, এই তিনে টাঙ্গাইলের বাড়ি।’

টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচমের কথা তো সবারই জানা। কেবল নামেই নয়, আকৃতি আর স্বাদ-গন্ধেও এই মিষ্টি সেরাদের সেরা। ঐতিহ্য আর বাংলার লোক-সংস্কৃতির ইতিহাসের উত্তরাধিকার টাঙ্গাইল জেলা। জানা যায়, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচমের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আনুমানিক প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো ইতিহাস।

ইতিহাস বলছে, দশরথ গৌড় নামে এক ব্যক্তি ব্রিটিশ আমলে আসাম থেকে টাঙ্গাইলের যমুনা নদীর তীরবর্তী সদর উপজেলার পোড়াবাড়িতে আসেন। তিনি যমুনার পানি ও গরুর দুধ দিয়ে প্রথমে চমচম তৈরি শুরু করেন। পরে সেখানেই মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে পোড়াবাড়িতে প্রায় অর্ধশত চমচম তৈরির কারখানা গড়ে ওঠে। এখন পোড়াবাড়ির সে জৌলুস আর নেই।

বর্তমানে ‘টাঙ্গাইল মিষ্টিপট্টি’ হিসেবে খ্যাতি পাওয়া শহরের পাচঁআনি বাজরের মিষ্টির দোকানগুলোতেও চমচম তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে। এখানকার প্রতিটি মিষ্টির দোকানেই এখন নির্ভেজাল পোড়াবাড়ির চমচম পাওয়া যায়।

টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চম চম, স্বাদে সেরা, মানে সেরা, ছবি-বার্তা২৪.কম

এই পাঁচআনি বাজারে প্রায় অর্ধশত মিষ্টির দোকান রয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থানেই এখন গড়ে উঠেছে, চমচমের দোকান। চমচমের গড়ন অনেকটা লম্বাটে। হালকা আঁচে পোড় খাওয়া বলে রঙটা তার গাঢ় বাদামি। বাইরে থেকে দেখতে অনেকটা পোড়া ইটের মতো। বাইরেটা একটু শক্ত হলেও এর ভেতরের অংশ একেবারে নরম আর রসে টইটম্বুর। লালচে গোলাপি আভাযুক্ত ভেতরের নরম অংশের প্রতিটি কোষ কড়া মিষ্টিতে পূর্ণ। ঘন রস আর টাটকা ছানার গন্ধমাখা এ মিষ্টির স্বাদ অতুলনীয়। সুস্বাদু চমচম তৈরির মূল উপাদান দুধ, চিনি, পানি, সামান্য ময়দা ও এলাচ দানা।

বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশে এই পোড়াবাড়ির মিষ্টির সুনাম রয়েছে। বড় বড় মিষ্টির দোকানগুলোতে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে ১০ মণ চমচম তৈরি হয়। বর্তমানে মিষ্টি শিল্পে টাঙ্গাইলের ঘোষ ও পাল সম্প্রদায় বংশানুক্রমিকভাবে নিয়োজিত আছে। তবে দে, নাগ ইত্যাদি উপাধিধারী অনেকেও মিষ্টান্ন তৈরিতে নিয়োজিত হয়েছেন।

টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের ভৌগলিক নিদের্শক ইউনিট ভৌগলিক নিদের্শক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন-২০১৩ অনুয়ায়ী, চলতি বছরের (৯ জানুয়ারি) টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচমকে জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ স্বীকৃতি পাওয়ায় খুশি চমচম ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিন দেখা যায়, এই সুস্বাদু চমচম তৈরির কাজে জড়িত শত শত কারিগর কাজ করছেন। আগুনের তাপে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে জ্বাল হচ্ছে চমচমের। নিজেদের তৈরি চমচম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় কারিগররাও খুশি।

বর্তমানে চমচম বিক্রি হচ্ছে, মান ভেদে তিনশ থেকে চারশ টাকা কেজি দরে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা লোকজন ছুটে আসেন মিষ্টির দোকানগুলোতে ঐতিহ্যবাহী চমচমের স্বাদ নিতে।

মিষ্টি কিনতে আসা সাগর বার্তা২৪.কমকে বলেন, টাঙ্গাইলের মিষ্টি আমাদের ঐতিহ্য ও আমাদের গর্বের। টাঙ্গাইলের পাঁচআনি বাজারে আসলে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য মিষ্টি কিনে নিয়ে যাই। ছোট বড় সবাই টাঙ্গাইলের মিষ্টি পছন্দ করেন।

মিষ্টি কিনতে আসা আরেকজন হরিপদ সরকার বলেন, টাঙ্গাইলের মিষ্টির সুনাম শুধু দেশেই নয়, সারাবিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। আমি যেমন টাঙ্গাইলের মিষ্টির জন্য এসেছি, আমার মতো অনেকেই টাঙ্গাইলের মিষ্টি নিতে এসেছেন। এই মিষ্টির স্বাদ অন্যরকম! না-খেলে বোঝা যাবে না।

মিষ্টি ব্যবসায়ী গৌরাঙ্গ কর্মকার বলেন, আমাদের টাঙ্গাইলের ঐতিহ্য পোড়াবাড়ির চমচম। প্রায় দুইশ বছর আগে থেকেই টাঙ্গাইলে পোড়াবাড়ির মিষ্টি তৈরি হয়ে থাকে। টাঙ্গাইলের মিষ্টির সুনাম দেশ ও দেশের বাইরে রয়েছে। আমাদের পোড়াবাড়ির চমচমে ভেজাল কোনো কিছু যুক্ত করা হয় না। চমচম স্বাদ হওয়ার কারণ খাঁটি দুধ, ছানা ও ময়দা দিয়ে পোড়াবাড়ির চমচম তৈরি করা হয়। এজন্য এত স্বাদ! প্রতিদিন দোকানগুলিতে ৫ থেকে ১০ মণ মিষ্টি তৈরি করা হয়।

টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম তৈরিতে ব্যস্ত কারিগরেরা, ছবি- বার্তা২৪.কম 

মিষ্টি ব্যবসায়ী কালাচাঁদ বলেন, আমি ৪০-৪৫ বছর ধরে মিষ্টি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

তিনি বলেন, টাঙ্গাইলের মিষ্টি স্বীকৃতি পাওয়ায় আমাদের জন্য ভালো হয়েছে। মিষ্টির স্বীকৃতি পাওয়ায় আমাদের সুনাম সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। আমাদের মিষ্টি দেশের বাইরে পাঠাতে পারবো। আমাদের মিষ্টি চাহিদা আরো বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে আমাদের আগ্রহও বেড়ে যাবে।

সরকারের কাছে দাবি, বিদেশে এই মিষ্টি রফতানি করার ব্যবস্থা করলে আমাদের বিক্রি আরোও বাড়বে। তখন আমরা আরো বেশি বেশি মিষ্টি তৈরি করতে পারবো।

টাঙ্গাইল জেলা রেস্তোরাঁ ও মিষ্টি ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি স্বপন ঘোষ বলেন, সারাদেশে এই পোড়াবাড়ির মিষ্টির সুনাম রয়েছে। জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা মিষ্টি ব্যবসায়ীরা অনেক খুশি। এই মিষ্টি যদি বিদেশে রফতানি করা যায়, তাহলে আমাদের ব্যবসা আরো প্রসার পাবে।

তিনি বলেন, আমার বাবা মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন। বাবার হাত ধরেই মিষ্টির ব্যবসায় আসা। আমি করছি। আমার ছেলেও এই পেশায় আছে। পোড়াবাড়ির চমচমের ইতিহাস প্রায় দুইশ বছরের। টাঙ্গাইলের চমচম সুস্বাদু হওয়ার একটা কারণ হচ্ছে, গাভির দুধ চরাঞ্চল থেকে আসে। এখানকার দুধ অনেক ভালো হয় আর জলেরও একটা বিষয় আছে! দুধ, জল ও কারিগরের সমন্বয়েই এই মিষ্টির স্বাদ হয় অন্যরকম। মিষ্টিগুলো খুবই প্রাকৃতিক। এই মিষ্টি তৈরিতে কোনো ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না।

;